নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানবসম্পদ ও কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনা আমার পেশা হলেও, লেখালিখির মাধ্যমে নিজের ভাবনাগুলো ভাগ করে নিতে আমি সবসময় আগ্রহী।

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু

আমি ইতিবাচক চিন্তার শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং আমার কাজ এবং কথার মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। আমার ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ। আসুন, একসাথে কাজ করে সফলতার পথে এগিয়ে যাই!

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

রক্তকমল

০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৪৯


(ষড়ঋপু সিরিজের প্রথম কাহিনি — কাম)

সে ছিল এক স্বপ্নের মতো কিশোর—নিরীহ, শান্ত স্বভাবের, যাকে দেখলে মনে হতো যেন নিসর্গের আঁচলে গড়া কোনো দুর্লভ মানুষ। নাম তার শুদ্ধ। নামের মতোই যার চোখে মুখে ছিল এক পবিত্র মায়া, যার আচরণে ছিল আস্থা আর শ্রদ্ধার আশ্বাস। প্রতিবেশীরা তাকে ভালোবাসত। শিক্ষকেরা বলত, "শুদ্ধর মতো ছেলে আজকাল আর হয় না।"

কিন্তু এই প্রশংসার জবাব সে কখনো দেয়নি। হাসি দিয়ে পাশ কেটে গেছে। কারণ সে জানত, তার ভেতরে গোপনে বেড়ে উঠছে এক অজানা আগুন—নিবৃত্ত কামনার নিঃশব্দ দাবানল।

শুদ্ধর দিন কাটত লেখাপড়া, বই আর ছাদের খোলা হাওয়ায়। কিন্তু রাত… রাত ছিল ভিন্ন এক পৃথিবী। তার শোবার ঘরের জানালা থেকে দেখা যেত পাশের বাড়ির লোহার গেট, উঠোন, আর মাঝে মাঝে খোলা জানালার আলোকিত চৌকাঠ।

সেই জানালাতেই মাঝে মাঝে দেখা যেত লীলাকে—এক পরিণত নারীর, সদ্য বিধবা। লীলা ছিলেন এক রহস্যময় উপপত্তি। শুদ্ধ তাকে দেখত দূর থেকে—বিভোর হয়ে, বরং যেন এক নিষিদ্ধ ফুলের ঘ্রাণ নিতে আসা প্রজাপতির মতো।

লীলার চলাফেরা ছিল একধরনের ধীর অভিজাততা, প্রতিটি ভঙ্গিতে ছিল স্তব্ধ এক বেদনার ছাপ। কিন্তু সেই বেদনার মধ্যেও যেন কামনার এক অদ্ভুত আলো জ্বলে থাকত, যা শুদ্ধর নিস্তব্ধ হৃদয়ে এক পশু সত্তার ঘুম ভাঙিয়ে দিত।

সে লুকিয়ে দেখত, যখন লীলা বাথরুমে যেতেন, উন্মুক্ত জানালার হালকা পর্দায় ছায়া আঁকতেন। তাঁর পিঠের রেখা, ভেজা চুল থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়া, কিংবা বুক ঢেকে রাখা হাত—এই সবকিছুই একেকটা ছায়া যেন শুদ্ধর মনের ভেতর নতুন করে কামনাবোধ জাগিয়ে তুলত।

তাকে দেখার পরে, সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকত—নিজের চোখের গভীরে সেই আলো-ছায়ার খেলা খুঁজে পেত। আর তখন, আয়নার মধ্যেই সে দেখতে পেত এক বিকৃত প্রতিবিম্ব।

সেই ‘অন্য’ শুদ্ধ ছিল হিংস্র, জর্জরিত, আর তীব্রভাবে কামনার্ত। তার চোখ জ্বলত। ঠোঁটের কোণে একধরনের নির্লজ্জ হাসি। যেন সে বলছে:"তুমি ভাবো তুমি বিশুদ্ধ? আমি তো তোমারই ছায়া।"

এই ছায়াটি প্রথম সে অনুভব করেছিল তেরো বছর বয়সে, এক রাতে, যখন হঠাৎ করে তার শরীরে শিহরণ হয়েছিল—কারণ, সে প্রথমবার লীলাকে দেখেছিল সাদা শাড়িতে, সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে। সেই দৃশ্য তার মনে গেঁথে যায়। তখন সে জানত না, এই অনুভবের নাম কী, কিন্তু এখন জানে—এই কামনাবোধ তাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে।

তবে শুদ্ধ চেয়েছিল মুক্তি। সে লিখত, আঁকত, ভাবত—এই পাপবোধ থেকে রক্ষা পেতে। কিন্তু লীলার প্রতিটি উপস্থিতি তার ভেতরের ছায়াকে শক্তিশালী করে তুলছিল। সে রাত্রিবেলা বইয়ের ফাঁকে তার বর্ণনার ছবি আঁকত, বৃষ্টির শব্দে কল্পনায় তার শরীরের ধ্বনি শুনত।

এভাবেই দিন চলছিল। আর তার মনোজগতের ছায়া ঘন হচ্ছিল।

এক রাতে, ঝড় উঠল। শহরে বিদ্যুৎ নেই। ছাদ থেকে ভেসে এল শব্দ। শুদ্ধ বাইরে বেরিয়ে এল—হাতে একটা পুরোনো টর্চ। ছাদে গিয়ে সে দেখতে পেল লীলা—ভেজা, চোখে আতঙ্ক।

"ছাদে কেউ ছিল… আমি চমকে গেছি," লীলা বলল।

শুদ্ধ তার দিকে তাকাল। সে অনুভব করল, তার ভেতরের ‘ছায়া’ এবার সত্যিকার অর্থে শ্বাস নিচ্ছে। লীলার ভেজা শাড়ি, ভিজে চুল থেকে গড়িয়ে পড়া জলের ধারা—তাকে যেন দুঃস্বপ্নে ডুবিয়ে দিল।

সে বলল, "আপনি ভেতরে যান। আমি দেখছি।"

ছাদে কিছু ছিল না। শুধু একটা ভাঙা আয়না। সে আয়নার দিকে তাকাতেই নিজের প্রতিবিম্বে সেই ‘অন্য’ শুদ্ধকে আবার দেখতে পেল।

সময় হয়েছে,” সে ফিসফিস করল। “তুমি শুধু দেখনি, আমি তৈরি করেছি তোমাকে।

তারা মুখোমুখি দাঁড়াল। যেন আয়নায় সে নিজেকেই দেখছে না—দেখছে তার কামনাবিধ্বস্ত ছায়ার দৈত্যকে।

সে আয়নার কাচ ভেঙে ফেলল। কিন্তু কিছুতেই কিছু থামল না। সে নিচে নেমে এলো। লীলা তখনও দাঁড়িয়ে। তাদের চোখে চোখ পড়ল। মুহূর্তে সময় থেমে গেল। বাতাস থেমে গেল।

তখন শুদ্ধ তার মনের গভীরে অনুভব করল—সে আর স্বপ্নে নেই। এই নারী, এই কামনা, এই রাত—সবই বাস্তব।

সে চাইল ছুঁতে। কিন্তু হাত বাড়িয়ে থেমে গেল। কারণ জানালার বাইরে দেখা গেল—কেউ দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে। সেই ছায়ামূর্তি। তার চোখ জ্বলছে। মুখে এক নির্মম হাসি। সে বলল না কিছু, শুধু আঙুল তুলে দেখাল শুদ্ধকে।

শুদ্ধ পিছিয়ে এলো। লীলা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

পরদিন সকালে কেউ লীলার খোঁজ পায়নি। দরজা খোলা, ঘর খালি, এক কোণে পড়ে আছে একটা ছেঁড়া শাড়ির টুকরো আর কিছু শুকিয়ে যাওয়া পানির দাগ।

শুদ্ধ আগের মতোই শান্ত, বিনীত। স্কুলে যায়, বই পড়ে, হাসে। কেউ বোঝে না, তার ভেতরে এক সত্তা ধীরে ধীরে জয়ী হয়ে উঠছে।

তার ঘরের আয়নায় মাঝে মাঝে দেখা যায়, পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে—এক রহস্যময় ছায়া। কারো চোখে পড়লে কেউ হয়তো বলত, ওটা আলোছায়ার খেলা। কিন্তু শুদ্ধ জানে, ওটা ‘সে’। তার কামনাবিধ্বস্ত ছায়া।

আর আয়নার নিচে লুকিয়ে রাখা সেই ছেঁড়া শাড়ির টুকরো, এখনো মাঝে মাঝে জেগে ওঠে রাত্রির বাতাসে।

তখনই শুদ্ধর ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে এক অদ্ভুত হাসি—
রক্তকমলের হাসি।

শেষ নয়… শুরু মাত্র।



মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:২১

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: কাম নিয়ে আরো কড়া গল্প হলে ভালো লাগতো ! :D

১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:০০

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: বেশি কড়া হলে ওটা আর গল্প থাকবেনা অন্যকিছু হয়ে যাবে।

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: ঠিক জমলো না।

১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৩৯

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: সাবজেক্টটা এমন যে এটা নিয়ে লিখতে অসস্তিবোধ হয়। কিন্তু মানুষের ছয়টি রিপুর মধ্যে এটা একটি অন্যতম উপাদান। দেখি পরের পর্বে ইমপ্রুভ করার জন্য চেষ্ট করবো।

৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৯

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: ভালো লিখেছেন ।

১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:১২

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ

৪| ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: আমার মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যনাদ।

১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫৪

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনাকেও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ

৫| ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৫

নকল কাক বলেছেন: কাম followed by অনুতাপ, এরকম হলে মনে হয় আরও মিনিংফুল হত।

১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: সত্যি! 'কাম' আর 'অনুতাপ' যেন দুই প্রহরীর খেলা—একটা আগুন জ্বালায়, অন্যটা পুড়িয়ে ছাই করে। আপনার কথায় মনে পড়ল, রিপুদের জয় হলেই কি প্রকৃত পরাজয় শুরু হয়? ধন্যবাদ এমন গভীর পাঠের জন্য!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.