![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ইতিবাচক চিন্তার শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং আমার কাজ এবং কথার মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। আমার ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ। আসুন, একসাথে কাজ করে সফলতার পথে এগিয়ে যাই!
(ডার্ক ফ্যান্টাসি সিরিজ "ষড়ঋপু"-এর চতুর্থ গল্প "মোহ")
১. রক্তিম কুয়াশার আয়না
রাঙামাটির ভোরের কুয়াশা, কোনো রক্তিম অভিশাপের মতো পাহাড়ের ভাঁজে নেমে আসে। সেই কুয়াশার আবছা আয়নায় দাঁড়িয়ে সাজ্জাদ হোসেন, নিজের চোখের অতল গভীরে ডুব দেয়। সেখানে কোনো বহিরাগত প্রবেশাধিকার নেই, কেবল তার আত্মপূজার অন্ধকার জগৎ। "তুমিই সেই নক্ষত্র," সে ফিসফিস করে নিজের প্রতিবিম্বের কাছে, "যা পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য চুরি করে নিজের কারাগারে বন্দী করেছে।" কিন্তু পাহাড়ের দীর্ঘশ্বাস যেন প্রতিধ্বনি তোলে—মিথ্যা... শুধু মিথ্যা... কুয়াশার মতো ক্ষণস্থায়ী।
সাজ্জাদের ফ্ল্যাটের প্রতিটি দেওয়াল জুড়ে কবিতার পঙক্তি, নিজের হাতে লেখা। টেবিলে স্তূপীকৃত ডায়েরি, যার প্রতিটি পাতায় কেবল তার নিজেরই বন্দনা। শহরের কোলাহল থেকে দূরে, এই পাহাড়ি নির্জনতা যেন তার আত্মমুগ্ধতার স্বর্গরাজ্য। সে বিশ্বাস করে, তার ভেতরের শিল্পীসত্তা একদিন বিশ্বকে আলোকিত করবে, যদিও সেই আলোর কোনো বহিঃপ্রকাশ আজও ঘটেনি।
২. পাহাড়ের বৃষ্টি আর প্রথম স্পর্শ
ঝুলন্ত ব্রিজের ওপর তাদের প্রথম সাক্ষাৎ। জুনে চাকমার ঠোঁটে যেন পাহাড়ি বৃষ্টির হিমেল স্পর্শ, যা গ্রীষ্মের দাবদাহেও শীতলতা আনে। সাজ্জাদ যখন তার ছবি তুলছিল, জুনের গভীর কালো চোখ ফোনের স্ক্রিনে নিজের ছায়া দেখছিল—যেন কোনো সুদূর নক্ষত্রের আলো। "আপনার ক্যামেরায় আমার চোখ... এত অচেনা উজ্জ্বল কেন?" তার কণ্ঠস্বরে যেন বহু যুগের রহস্য।
"কারণ তুমিই সেই সত্য," সাজ্জাদ বলেছিল, নিজের কণ্ঠস্বরের গভীরতা অনুভব করে বিস্মিত। এই প্রথম তার ভেতরের আত্মমুগ্ধতার দুর্গে কেউ যেন একটি ক্ষীণ আলোর রেখা ফেলেছিল।
সেদিন সন্ধ্যায় কাপ্তাই লেকের নিস্তব্ধ তীরে, যখন জুনে হঠাৎ থমকে দাঁড়াল এবং সাজ্জাদের দিকে তাকাল—তার দৃষ্টিতে এক ভয়ংকর স্থিরতা, যেন সে সবকিছু জানে। "আমি জানি আপনি কে," তার কণ্ঠস্বর যেন রাতের বাতাস ফুঁড়ে আসা তীক্ষ্ণ ফিসফিসানি, "আপনি সেই মানুষ, যে আয়নায় নিজের মুখ দেখে ভাবে সে মৃত ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি।"
তারপরই ঘটল সেই অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত। জুনে ঝুঁকে পড়ল, তার ঠোঁট সাজ্জাদের ঠোঁটের ওপর বরফের মতো শীতল স্পর্শ বুলিয়ে গেল—একই সাথে যেন আগুনের হলকা। চুম্বনটি ছিল বৃষ্টিভেজা পাহাড়ের মতো—একসাথে হিমেল ও উষ্ণ, যেন জীবন ও মৃত্যুর আলিঙ্গন।
সাজ্জাদের মনে হলো সে অনন্ত শূন্যে তলিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু জুনে তার বাহু ধরে টেনে ফিসফিস করল—"এইবার... আয়নার দিকে তাকাও। দেখো, তোমার সিংহাসনে কে বসে আছে।"
৩. প্রতিচ্ছবির অভিশাপ
চুম্বনের পর থেকে সাজ্জাদের পরিচিত জগৎ ধূলিসাৎ হয়ে গেল। আয়নায় এখন সে কেবল জুনেকে দেখে—কখনো বিষণ্ণ হাসিতে তার মুখ ভরে ওঠে, কখনো কান্নার নীরব ঢেউ তার চোখে ভাসে, আবার গভীর রাতে আয়নার অন্ধকার থেকে ভেসে আসে তার শীতল কণ্ঠ—"তুমি আমাকে ভালোবাসো না, মিথ্যুক। তুমি শুধু ভালোবাসো সেই অন্ধকারকে, যেখানে তুমি একা রাজা।"
সাজ্জাদ চিৎকার করে ওঠে—"তুমি আমার কল্পনা! তুমি সত্যি নও!"
জুনে হাসে—সে হাসি যেন ভেঙে যাওয়া কাঁচের টুকরোগুলো, করুণ এবং শীতল—"মোহই তো সবচেয়ে বড় সত্য, সাজ্জাদ। আর তুমি... তুমি এখন সেই আয়না, যেখানে আমি আমার ইচ্ছেরা দেখি।" আয়নার কাঁচ ভেদ করে জুনের ঠান্ডা আঙুল যেন তার গালে স্পর্শ করে, এক হিমশীতল স্রোত তার শরীরে বয়ে যায়।
৪. জলের ডাক
জুনের নিথর দেহ যখন লেকের ঢেউয়ে ভেসে উঠল, সাজ্জাদ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল তীরে। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামছিল, যেন প্রকৃতির কান্না। জলের কালো আয়নায় সে দেখল জুনে হাত বাড়িয়ে ডাকছে—তার চোখ যেন গভীর খাদ, যেখানে আলো প্রবেশ করে না।
"এবার তোমার পালা," জুনের কণ্ঠস্বর জলের নিস্তব্ধতা ভেদ করে এলো, "ডুব দাও... আর দেখো, কোন সত্য বেশি নিষ্ঠুর—তুমি, নাকি আমি?" তার কণ্ঠস্বরে কোনো মিনতি নেই, কেবল এক শীতল আদেশ।
সাজ্জাদ যন্ত্রচালিতের মতো জলের দিকে এগিয়ে গেল। হিমশীতল স্রোত তার শরীর বেয়ে উঠতে লাগল, যেন মৃত্যুর শীতল আলিঙ্গন। তার পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে, কিন্তু তার চোখ স্থির জলের আয়নার দিকে—সেখানে জুনের রহস্যময় হাসি ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে।
তার শেষ চিন্তা, কুয়াশার মতো অস্পষ্ট—আয়নায় যে মুখ আমি দেখতাম, সে কি সত্যিই আমি ছিলাম? নাকি... আমি কেবল একটি মায়া, যা এক শীতল চুম্বনে ভেঙে গেল?
শেষের কবিতা:
"রক্তিম কুয়াশার চাদরে মুখ ঢেকেছি, তুমি খুঁজে নিয়েছো অভিশাপের মতো।
এবার শীতল জলের গভীরে ডুব, দেখব—মোহের ছুরি, নাকি সত্যের দংশন বড়?"
১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:১৯
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভ নববর্ষ
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:০২
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর।