![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ইতিবাচক চিন্তার শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং আমার কাজ এবং কথার মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। আমার ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ। আসুন, একসাথে কাজ করে সফলতার পথে এগিয়ে যাই!
ঈশ্বরের ভুল ছায়া সিরিজ এর দ্বিতীয় গল্পঃ শেষ সুর
গাজীপুরের পুবাইলের প্রাচীন একটি গির্জা, বহু বছর আগে যেখানে ঘণ্টা বেজেছে শেষবার, আজ তার ভিতর প্রতিধ্বনিত হলো এক অশরীরী সুর। কুয়াশায় ঢাকা জীর্ণ দেয়ালের গা বেয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো ডেভিড—তার হাতে গিটার, চোখে ঘোরের মতো অচেনা আকাঙ্ক্ষা।
গিটারটা ছিল অস্বাভাবিক। কাঠের গায়ে খোদাই করা নোটেশনগুলো হঠাৎ করেই আলো ছড়াতে শুরু করল, আর ভেতর থেকে কেমন যেন একটা আর্তনাদ ভেসে এল। যেন শতাব্দীর পুরোনো কান্না কাঠের ফ্রেমে দগ্ধ হয়ে আছে।
ডেভিড জানে না, কিন্তু সে একজন সুরধারী—ঈশ্বরের তৈরি করা এক রহস্যময় অস্ত্র, যার গায়ে সুরের ছোঁয়া লাগলেই সত্য উন্মোচিত হয়। সুর শুধু মুক্তি দেয় না, সেটি ধ্বংসও আনে।
শব্দদণ্ড পরীক্ষা
ডেভিডকে হাজির করা হলো গির্জার এক অন্ধকার ঘরে। মোমবাতির আলোয় বসে আছে এক শিশু—তার চোখ অবিকল স্বচ্ছ, যেন সে কিছুতেই মিথ্যে বলবে না। ভেনেসা বলল, "একটা সুর বাজাও, যা সত্যকে জাগিয়ে তোলে।"
ডেভিডের আঙুল ছুঁয়ে দিল সেই অভিশপ্ত তার, আর বাতাসে যেন এক শীতল কম্পন ছড়িয়ে পড়ল। গিটারের সুর যেন বাতাস কাঁপিয়ে দিল। শিশুটি হঠাৎ কেঁদে উঠল, বলল, “আমি মাকে বলেছিলাম, আমি কিছু খাইনি... কিন্তু খেয়েছিলাম।” আর তার পর মুহূর্তেই সে নিজের গলায় দড়ি পেঁচিয়ে বসে পড়ল। ডেভিড ভয়ে কেঁপে উঠল। এটাই ছিল প্রথম “শব্দদণ্ড”।
ভেনেসা: এক প্রাক্তন সুরধারীর দুঃখগাথা
ভেনেসার গলার পাশে ছিল অদ্ভুত এক ট্যাটু—সুরের নোটেশন। বহু আগে, সে নিজেও ছিল এক সুরধারী। তার সুরে একবার পুরো একটি গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়। সে নিজেই বলেনি কখনও, কিন্তু ডেভিড গিটারে বাজাতে বাজাতে সেই অতীতের স্মৃতি দেখতে পেল।
ভেনেসা বলল, “সুর আমাকে ছাড়েনি। আমি তাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম, সে আমাকেই ব্যবহার করল।”
জ্যাকের বিদ্রোহ ও আত্মবিসর্জন
জ্যাক, যে ডেভিডকে অপহরণ করেছিল, এক সময় নিজেও একজন সুরধারীর ভাই ছিল। তার ভাই আত্মহত্যা করে, কারণ ডেভিডের এক সুর তার মধ্যে অন্ধকারের দরজা খুলে দেয়। সে নিজের চোখ দুটো খুঁচিয়ে ফেলে, যেন সে আর কোনো সুরের আলো না দেখতে পায়।
শেষ সিদ্ধান্তের ঠিক আগে, জ্যাক গির্জার গোপন চেম্বার থেকে এক বিষাক্ত পানীয় পান করে। এটি শুধু সুরধারীদের জন্য বানানো—অন্তিম শক্তি দেয়, বিনিময়ে প্রাণ নেয়। গিটারের তার ছিঁড়ে ফেলেই সে বাজায় সেই ‘শেষ সুর’।
ভেনেসার পতন ও প্রতিশোধ
ভেনেসা যেন পাগল হয়ে গেল। কিন্তু শেষ সুর বাজানোর সময়, হঠাৎ গির্জার ভাঙা স্টেইনড গ্লাস থেকে আটটি বিকৃত মুখ ফুটে উঠল। তারা চিৎকার করল—আগের আট সুরধারী, যাদের আত্মা সুরের দাসত্বে বন্দি ছিল। তারা এসে ঘিরে ফেলল ভেনেসাকে। তার শরীরের ট্যাটু জ্বলে উঠল, চামড়া ফেটে বেরিয়ে এলো আগুন, আর সে নিঃশেষ হয়ে গেল।
ডেভিডের রক্তস্নাত মুক্তি
রক্ত আর ছাইয়ের ভেতর দিয়ে পা ফেলল ডেভিড। গিটারটি ধীরে তুলে নিল—একটা অভিশপ্ত প্রতিশ্রুতির মতো। জ্যাকের গিটার হাতে তুলে নিল—মানুষের হাড় দিয়ে গড়া সেই পবিত্র অভিশপ্ত যন্ত্র। চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল, কিন্তু সে হাসছিল। “তুমি ক্ষমা পাও, জ্যাক।”
তারপর সে ইচ্ছাকৃতভাবে বাজাল শেষ সুর। সুরটা হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ল, আর পুরো গির্জা কেঁপে উঠে ধসে পড়ল।
পোস্ট-ক্রেডিট
একটি ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল এক অচেনা কিশোর। তার হাতে সেই রক্তাক্ত গিটার। তার পকেট থেকে একটি চিরকুট পড়ে গেল। তাতে লেখা:
"ডেভিড, তুমিই নবম সুরধারী।"
সে কুড়িয়ে নিল গিটার। বাতাসে আবার এক ক্ষীণ সুর বেজে উঠল।
দূরে, ছায়ামূর্তি ভেনেসার ছিন্ন গলার চামড়া হাতে দাঁড়িয়ে রইল—তার চোখে আবার সেই নোটেশন জ্বলছে...
মেমোরেবল ডায়ালগ
ভেনেসা: “সুর কখনও মুক্তি দেয় না... সে শুধু নতুন খাঁচা বানায়!”
ডেভিড: “তাহলে আমি এই খাঁচা ভেঙে ফেলব—এমন সুর বাজাবো, যা শুনে সবাই মুক্ত হবে!”
শেষ
২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:২৭
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: ঠিকই বলেছেন! ঢাকায় আসলে তো সব রাস্তায় 'শেষ সুর' বাজবে!
তাই ওকে পুবাইলেই গিটার ঝাঁকাতে বলেছি — কুয়াশা, গির্জা আর পুরনো দেয়ালই ওর জন্য পারফেক্ট স্টেজ।
ঢাকার ট্র্যাফিকের ভিড়ে সুরের থেকেও আগে হারিয়ে যাবে ওর ঘোর!
২| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:২৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: পড়তে ভালো লেগেছে খুব, তাড়াহুড়ো করে পড়েছি, কিন্তু মেসেজটা ধরতে পারি নি। লেখার মান খুব উন্নত।
২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৩০
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুবই অনুপ্রাণিত লাগছে!
'শেষ সুর' আসলে একটু ধোঁয়াটে রহস্যের গল্প—তাড়াহুড়োয় পড়লে ছায়ারা হাতছাড়া হয়ে যায়।
সময় করে একটুখানি মনোযোগ দিলে, শব্দের আড়ালে লুকানো সেই ছায়ার মেসেজটা হয়তো ধরা দেবে...
আপনার মতো পাঠকের মন্তব্যই লেখাকে আরও ধারালো করে তোলে। ধন্যবাদ
৩| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৩৭
যামিনী সুধা বলেছেন:
লিখে আপনি আনন্দ পাচ্ছেন তো?
২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪৫
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আনন্দ? উফ্, লিখতে লিখতে তো এমন ফুর্তিতে আছি, মনে হয় আমি নিজেই গির্জার ভেতর গিটার বাজাচ্ছি!
৪| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪১
যামিনী সুধা বলেছেন:
মনে হচ্ছে, সোনাবীজ ব্যস্ত আছেন! উনি যখন সময় নিয়ে পড়েন, তখন লেখকদের কমপক্ষে কিছু উপদেশ দিয়ে থাকেন; আপনিও কিছু পাবেন এক সময়।
২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪৭
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: সোনাবীজ ভাইয়ের পাঠ আর মন্তব্য — সেটা তো লেখার জন্য একধরনের আশীর্বাদ!
আমি অপেক্ষায় আছি, যেন তার নজরে পড়ে একটা শব্দও যদি ঠিকঠাক লাগে, সেটাই হবে বড় প্রাপ্তি।
ধীরে ধীরে সবকিছুই আসে... সময়ের সুরেই তো আসল মেলোডি বাজে!
৫| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:২৬
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: গল্পগুলো আরো বাস্তব ধর্মী ফিকশন হলে আরো পাঠক পেত । এখন ভাবনার জগতে পাড়ি দেই আপনার লেখা পড়ে।
২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৫১
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য! বাস্তবতার সীমানা এবং ভাবনার দুনিয়া একেবারে আলাদা হলেও, দুটোই গল্পের শক্তি। আমি চেষ্টা করি কিছুটা রহস্য এবং চমক রেখে, যাতে পাঠকরা বাস্তবতা ও কল্পনার মধ্যে সেতু তৈরি করতে পারেন। তবে, আপনার পরামর্শ মাথায় রাখব — কখনো কখনো বাস্তবতা এবং কল্পনা একে অপরকে সুন্দরভাবে পূর্ণ করতে পারে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৮
শায়মা বলেছেন: হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মত পূবাইল গীর্জার গিটারওয়ালা মনে হচ্ছে ভাইয়া।
যাইবলো আর তাই বলো ঐ গিটারওলা যেন পুবাইলেই থাকে ঢাকার দিকে না আসে।