![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ইতিবাচক চিন্তার শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং আমার কাজ এবং কথার মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। আমার ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ। আসুন, একসাথে কাজ করে সফলতার পথে এগিয়ে যাই!
(উপকূলের জীবন, দাদনের জাল, ও এক প্রতীকী প্রতিশোধের বাস্তবতা)
নদী আর সমুদ্রের মধ্যবর্তী যে রেখাটি বাংলাদেশের উপকূল বলে পরিচিত, সেখানে প্রতিদিন সূর্য ওঠে এক অনিশ্চয়তার সাথে। বরগুনা, কুয়াকাটা কিংবা পাথরঘাটার মতো অঞ্চলে জীবন আর জীবিকার প্রতিটি মুহূর্ত যেন সমুদ্রের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। সেখানে মাছ ধরার ট্রলারগুলো শুধুই যানবাহন নয়—তা যেন এক যুদ্ধের নৌকা। এই যুদ্ধ বেঁচে থাকার, ঋণ শোধের, পরিবারের মুখে ভাত তুলে দেওয়ার।
উপকূলের মানুষজন, বিশেষ করে জেলেরা, বছরের বেশিরভাগ সময় সাগরের উপর নির্ভর করে। কিন্তু মাছ ধরার মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই শুরু হয় তাদের অন্যরকম লড়াই—দাদন প্রথার সঙ্গে। ট্রলার, জাল, বরফ, ডিজেল—সবকিছুর জন্য টাকা চাই, আর এই টাকাই আসে মহাজনের কাছ থেকে। বিনিময়ে জেলেদের বন্ধক রাখতে হয় ভবিষ্যৎ। এই দাদনের কোনো লিখিত চুক্তি নেই, নেই কোনো ব্যাংকিং নীতিমালা। আছে শুধু এক পক্ষের দাবি এবং আরেক পক্ষের বাধ্যতা। সুদের হার এতটাই অমানবিক যে মৌসুম শেষে জেলেরা কেবল আরও একটি ঋণের গর্তে ঢুকে পড়ে।
বরগুনার আমতলী উপজেলার এক বৃদ্ধ জেলে, আব্দুল গফুর, জীবনের চল্লিশ বছর কাটিয়েছেন এই প্রথার ভেতর দিয়ে। গত মৌসুমে তার ছেলে কালু যখন সমুদ্রে যায়, তারা এক লক্ষ টাকার মতো দাদন নেয়। সেই ট্রলার আর ফিরে আসেনি। সমুদ্র গিলে খেয়েছে তার সন্তানকে, আর মহাজন গিলে নিয়েছে তার ঘর। এখন গফুর থাকে মসজিদের বারান্দায়। তার চোখে আজও বেঁচে থাকার আকুতি, কিন্তু গলায় শুধু দীর্ঘশ্বাস।
এই একান্ত বাস্তবতা শুধু আব্দুল গফুরের নয়। প্রতিটি ট্রলারে এমন কোনো না কোনো পরিবারকাহিনি মিশে থাকে। অনেক সময় জেলেরা জানে, ফিরে না এলে পরিবার সর্বস্বান্ত হবে—তবু তারা যায়। কারণ ঋণ স্থগিত হয় না, আর পেটের ক্ষুধা অপেক্ষা করে না। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্রের রুদ্ররূপ—এসব আজকাল আর আলাদা করে ভয়ের বিষয় নয়, বরং এগুলোকেই সহ্য করেই চলতে হয়।
এই নিরব, নিঃস্ব, অথচ প্রতিদিনের সংগ্রামে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে যাওয়া মানুষেরা যেন বাস্তবের এক ছায়া চরিত্র। যেন তারা কোনো এক ঈশ্বরের ভুলে পাঠানো, যেখানে জীবন আর মৃত্যু দুটোই ঋণের খাতায় লেখা। তারা জন্মায় কষ্ট নিয়ে, বড় হয় শ্রম দিয়ে, আর হারিয়ে যায় ঋণ রেখে।
এই উপকূলীয় বাস্তবতা একরকম সমাজ-মনস্তত্ত্বের প্রতিচ্ছবি। যেখানে মানুষ চায় বাঁচতে, কিন্তু তার সেই চাওয়া অন্যের লোভের খাদ্যে পরিণত হয়। দাদন প্রথার ভেতরে মহাজনেরা যে শোষণের জাল বিছিয়ে রেখেছে, তা যেন সমুদ্রের জালের চেয়েও ঘন, অথচ অদৃশ্য। প্রশাসনের ভূমিকা সেখানে নীরব—কখনোবা প্রভাবশালী মহাজনের ছত্রছায়ায় পক্ষপাতদুষ্ট।
তবু সব আলো নিভে যায়নি। কিছু স্বেচ্ছাসেবী দল এগিয়ে আসছে। বরগুনায় লাইভ জিপিএস ব্যবস্থার প্রশিক্ষণ চলছে, কুয়াকাটায় একটি কো-অপারেটিভ প্রতিষ্ঠান জেলেদের স্বল্প সুদের ঋণ দিয়ে ট্রলার কিনতে সাহায্য করছে। প্রতিরোধ গড়ে উঠছে ধীরে ধীরে, যদিও পথ এখনও দীর্ঘ।
এইসব গল্প শহরের মানুষের কাছে হয়তো শুধুই খবরের কাগজের উপকরণ, অথবা সামাজিক মাধ্যমে চোখে পড়ে যাওয়া ভিডিও। কিন্তু বাস্তবে এগুলো রক্তমাংসের জীবন। এইসব মানুষ বেঁচে থাকে না শুধু মাছের জন্য, তারা বেঁচে থাকে—ঋণ শোধের প্রতিজ্ঞা নিয়ে। কিন্তু সমুদ্র যদি ফিরে না দেয়? যদি ট্রলার না আসে?
তখন তাদের গল্প হয়ে ওঠে এক শূন্যে হারিয়ে যাওয়া প্রতিধ্বনি। তখন তারা আর মানুষ থাকে না—তারা ছায়া হয়ে ফেরে, অথবা ফেরা হয় না আর কোনোদিন।
১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৫২
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: ছায়া ভূতের খোঁজে থাকুন… এখনো অনেক ছায়া বাকি!
পড়ছেন জেনে ভীষণ ভালো লাগল — পাশে থাকুন, অন্ধকারটা আরও ঘন হবে…
Thanks for reading till the shadows!
২| ১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:০০
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: ভালো লেগেছে ।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই মে, ২০২৫ রাত ৮:১৪
শায়মা বলেছেন: ছায়া ভূত!
সব লেখাগুলো পড়ছি.....