![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ইতিবাচক চিন্তার শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং আমার কাজ এবং কথার মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। আমার ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ। আসুন, একসাথে কাজ করে সফলতার পথে এগিয়ে যাই!
১। ময়মনসিংহের শহরটা সকালে কুয়াশার চাদরে মোড়া থাকে। ব্রহ্মপুত্রের ধার দিয়ে হাঁটলে নদীর কুয়াশার গন্ধে মনে হয়—সময়ের বুক চিরে কোনো প্রাচীন কিছু ফিসফিস করছে। এই শহরের প্রাণ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অগণিত রোগীর নিঃশ্বাসে সেখানে জীবন আর মৃত্যুর ভারসাম্য রোজ বদলায়।
ডা. রাফি—সদ্য বিসিএস পাস করা এক তরুণ ডাক্তার, মেডিসিন ইউনিটে তার প্রথম পোস্টিং। উচ্চতায় লম্বা, চোখে গাঢ় এক বিষণ্ণতা, যা যেন কোনো পুরনো জীবনের স্মৃতি বহন করে। তার জন্ম নেত্রকোনায়। মা ছিলেন লোকগানের শিল্পী। বাবার মৃত্যু এক রোড অ্যাক্সিডেন্টে—তখন রাফি দশ বছরের। সেই থেকেই জীবনকে আঁকড়ে ধরার অদ্ভুত ইচ্ছা জন্মায় তার মনে।
২। হাসপাতালের রাত মানে প্যাথেডিনের গন্ধ, জীবনের শেষ আকুলতা, আর পেছনে ফিসফিস করা নার্সদের ক্লান্তি। এমন এক রাতে একজন মা তার জন্মান্ধ ছেলেকে নিয়ে আসে। চোখ পরীক্ষা করতে গিয়ে রাফি ছেলেটির চোখে আঙুল রাখে। হঠাৎ তার শরীর কেঁপে ওঠে, কানে নদীর গর্জন শোনে। তারপর ছেলেটি বলে ওঠে—"আমি দেখতে পাচ্ছি! আম্মু, আলো!"
রাফি চমকে ওঠে। সে জানে, এমন হবার কথা নয়। কিন্তু হল। সেই রাতেই ডায়েরিতে সে লেখে: "আজ আমার হাত দিয়ে কোনো এক অলৌকিকতা ঘটেছে। আমি কি মাত্র একজন চিকিৎসক? নাকি কিছু বেশি?"
৩। দিন পেরোয়। কয়েক সপ্তাহ পর ICU-তে একজন ক্লিনিক্যালি ডেড রোগীকে শেষবার দেখে যাচ্ছিল রাফি। নিঃশ্বাস নেই, হার্টবিট নেই। কেবল মৃত শরীর। সহানুভূতির বশে সে তার ঠান্ডা হাত ধরে। ঠিক তখনই, রোগীর বুক ধকধক করে ওঠে। মনিটরে লাইনের দোলা। জীবন ফিরে আসে।
রাফি স্তব্ধ। তার ভেতরে প্রশ্ন জাগে—এই ক্ষমতা এল কোথা থেকে?
তাকে নিয়ে গুজব ছড়ায়। কেউ বলে, সে কোরআনের হাফেজ, কেউ বলে কোনো হিন্দু তান্ত্রিকের আশীর্বাদে এই শক্তি। একদিন লাইব্রেরির পুরনো বইয়ের স্তূপে সে খুঁজে পায় গ্রিক চিকিৎসক আসক্লেপিয়াসের গল্প, যিনি মৃত্যুকে ঠকিয়ে মানুষ বাঁচাতে পারতেন। দেবতা জিউস তাকে হত্যা করেন এই ক্ষমতার জন্য।
রাফি ভাবতে থাকে—তার ওপরও কি সেই পুরনো অভিশাপ কাজ করছে?
৪। তৃতীয় ঘটনা ঘটে এক বৃদ্ধ কুষ্ঠ রোগীর ক্ষেত্রে। রাফির হাতের ছোঁয়ায় তার ক্ষত শুকাতে থাকে। বৃদ্ধ কেঁদে বলে, "তুই কি ফেরেশতা, বাবা?"
কিন্তু অলৌকিকতার আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
প্রথম সেই ছেলেটি—আলো ফিরে পাওয়া জন্মান্ধ—ব্রহ্মপুত্র ব্রিজ থেকে লাফ দেয়। সুইসাইড নোটে লেখে: "এই পৃথিবী কুৎসিত। অন্ধ থাকা ভালো ছিল। চোখে যা দেখলাম, তা বাঁচার মতো নয়।"
রাফির মাথায় বজ্রাঘাত হয়। হাসপাতালে আলোচনা—ছেলেটি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিল। কিন্তু রাফি জানে, সে তাকে ফিরিয়ে এনেছিল অন্ধকার থেকে। এখন ছেলেটি সেই আলোতেই পুড়ে গেছে।
৫। এরপর ICU-র রোগী গলায় দড়ি দেয়। কুষ্ঠ রোগী নিজেকে পুড়িয়ে মারে হাসপাতালের পেছনের বাঁশবাগানে। তিনজন, তিনটি মৃত্যুর কাহিনি, কিন্তু একই কথা রেখে গেছে: _"এই জীবন আমি চাইনি। ফিরে এসে কেবল যন্ত্রণা পেয়েছি।"
রাফি রাতের পর রাত ঘুমাতে পারে না। সে দেখতে পায়, তার হাত থেকে আগুন বেরোচ্ছে স্বপ্নে। ময়মনসিংহের অলিগলি তাকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। কেউ বলে, সে অভিশপ্ত। কেউ বলে, রক্ষাকর্তা।
৬। ডা. তাহমিনা, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, রাফির প্রতি বিশেষ নজর রাখেন। একরাতে তিনি রাফিকে ডেকে বলেন: “তুমি যদি অলৌকিক হও, তোমাকে বোঝা নিতে হবে মানবিক দায়িত্বও। তাদের যারা ফিরেছে, তারা কেন বাঁচতে চায়নি? তুমি কি কেবল শরীর বাঁচাও, না আত্মা? তুমি ঈশ্বর না হয়েও ঈশ্বরের খেলায় নেমেছ।”
রাফি ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। কিছু বলতে পারে না।
৭। শেষ পরীক্ষা আসে তুলিকা নামে এক তরুণীর মাধ্যমে। সে ফুসফুস ক্যানসারের শেষ ধাপে। তীব্র কাশি, শ্বাসকষ্ট, চোখে চরম অবসাদ। তবুও একরকম শান্ত। সে বলে, “তুমি কি সেই ডাক্তার? যে ছুঁয়ে দিলে মানুষ বেঁচে ওঠে?”
রাফি মাথা নাড়ে। তুলিকা বলে, “তুমি আমাকে বাঁচিয়ো না। আমি মরতে চাই, শান্তিতে। এই সমাজে আমার জন্য কিছু নেই। জীবন যদি যন্ত্রণা হয়, তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার মানে নেই।”
রাফি চুপ করে থাকে। পাশে বসে কেবল হাতটা ধরে রাখে—স্পর্শ ছাড়াই। তারপর চলে যায়। পরদিন সকালেই তুলিকা মারা যায়, চোখে প্রশান্তি।
৮। রাফি সেই রাতেই ব্রহ্মপুত্র নদে হাঁটতে যায়। কুয়াশার ভিতর সে দেখতে পায় তার প্রতিচ্ছবি—চোখে আগুনের ছাপ, হাতে ধোঁয়ার রেখা। তার শরীর যেন হালকা হয়ে যাচ্ছে। চোখে জল আসে।
সেই রাতে সে হাসপাতালের রুমে চিঠি রেখে যায়:
“আমি আর কাউকে ফিরিয়ে আনতে চাই না। যাদের ফিরিয়েছি, তারা কেউ বাঁচতে চায়নি। আমার স্পর্শে যদি জীবনের চেয়ে বড় অভিশাপ আসে, তবে সে শক্তি আমার না থাকাই ভালো। আমি ঈশ্বর নই, আমি হয়তো তার কোনো ভুল ছায়া।”
পরদিন তার নিথর দেহ মেলে ছিল নদীর পাড়ে, ব্রহ্মপুত্রের কাদামাটিতে।
ডা. তাহমিনা চিঠিটা হাতে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ চুপ করে ছিলেন। তারপর নিচু স্বরে বলেছিলেন: “সে কোনো ঈশ্বর ছিল না। সে কেবল একজন মানুষ ছিল, যে জীবনকে ভালোবাসতে গিয়েছিল। খুব বেশি।”
শেষ কথা:
এই গল্প শুধু অলৌকিকতা নয়, মানবিকতারও। জীবন ফিরিয়ে আনা যদি সহজ হয়, তবে সেই জীবনের মানে বোঝার দায়ও তার উপর পড়ে। ঈশ্বরের ভুল ছায়া—রাফি, এক মানবিক বিভ্রমের প্রতীক হয়ে রইল।
১৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:০৬
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার এমন আন্তরিক মন্তব্য আমার জন্য এক গভীর প্রেরণা। 'গুছানো লিখন শৈলী'—এই প্রশংসাটুকু সত্যিই লেখার প্রতি আমার দায়িত্ববোধকে আরও দৃঢ় করে তোলে। পাশে থাকুন, সামনে আরও কিছু গল্প অপেক্ষায় আছে, হয়তো সেগুলোও আপনার হৃদয়ে দাগ কাটবে।
২| ১৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:২৬
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: লেখা পছন্দ হয়েছে।
১৬ ই মে, ২০২৫ রাত ২:১৯
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার পছন্দ হয়েছে জেনে মন ভরে গেল। পাঠকের ভালোলাগাই একজন লেখকের সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি। পাশে থাকুন, এমন আরও গল্প নিয়ে ফিরব খুব শিগগিরই।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:৫১
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: সুন্দর। অনেক গুছানো লিখন শৈলী।