![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখির মাধ্যমে আমি নতুন ভাবনা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীল প্রকাশ খুঁজে পাই। আমার লেখার লক্ষ্য পাঠকদের ভাবতে উদ্বুদ্ধ করা এবং একটি অর্থবহ আলোচনা তৈরি করা।
আমাদের জীবনে কিছু মানুষ থাকে, যাদের হারিয়ে ফেললেও ভুলে যাওয়া যায় না। সময়, সমাজ, দায়িত্ব—সবকিছুর আড়ালে চাপা পড়ে যায় সেই সম্পর্কগুলো। কিন্তু কখনো কখনো ভাগ্য আবার সেই মানুষদের ফিরিয়ে আনে, অচেনা মোড়ে, অচেনা সময়ে। এই গল্পটি তেমনই এক পুনর্মিলনের—যেখানে শেষ ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে মিলেমিশে যায় অতীতের ব্যথা আর নতুন সম্ভাবনার শুরু।
উত্তরা রেলস্টেশন। রাত গভীর।
প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে থাকা হলুদ আলোয় ছায়া লম্বা হয়ে গেছে। বাতাসে মিশে থাকা ট্রেনের আসন্ন কাঁপুনির গন্ধ।
অরিত্র ব্যাগ কাঁধে দাঁড়িয়ে, চোখ মেলে অপেক্ষা করছে। সিগনাল লাইটের লাল ঝিলিক তার মুখের অর্ধেক ঢেকে দিয়েছে।
হঠাৎ পাশ থেকে ভেসে এলো এক ভেজা কণ্ঠ,
— “কেমন আছো, অরিত্র?”
সে ঘুরে দাঁড়ায়। রুবাইয়া।
আট বছর আগের সেই মেয়েটা নয়—আজকের রুবাইয়ার চোখে ক্লান্তির রেখা, তবুও পুরনো উষ্ণতা টিকে আছে।
হাতে একটা ছোট ব্যাগ, পরনে ম্লান নীল শাড়ি, আর কাঁধে ধরা সারাদিনের ক্লান্তি।
প্রথমে দু'জনের মধ্যে অস্বস্তিকর নীরবতা। তারপর সময়ের পর্দা ভেদ করে কথাগুলো ফোঁটা ফোঁটা করে বেরিয়ে আসে।
— “আজ আমার শেষ শিফট ছিল,” হালকা হাসে রুবাইয়া। “ক্লিনিকে... যেখানে চাকরি করতাম।”
— “তুমি তো ডাক্তার হলে?” অরিত্র জিজ্ঞেস করে।
— “হতেই চেয়েছিলাম,” রুবাইয়া বলে। “কিন্তু জীবনে যা চাওয়া হয়, তা সবসময় পাওয়া যায় না। আজকাল শুধু বেঁচে থাকার চেষ্টা করি।”
তার গলা হালকা কেঁপে ওঠে।
— “আট বছর ধরে শুধু বেঁচে ছিলাম, বেঁচে থাকার জন্য।”
অরিত্র চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ। বুকের গভীরে চাপা স্মৃতি মাথা তোলে।
ফ্ল্যাশব্যাক—
বাবা-মায়ের তীব্র তর্ক, “তুমি যদি ওকে বিয়ে করো, তবে আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ।”
অরিত্র চুপচাপ মাথা নিচু করে ফেলেছিল। ভাবত, সময় সব মুছে দেবে।
ভুল ভেবেছিল।
প্ল্যাটফর্মের চারপাশে কিছু যাত্রী তাকিয়ে আছে। অদৃশ্য সমাজদৃষ্টি যেন ওদের ওজন করছে।
রুবাইয়া আস্তে বলে,
— “তোমাকে দেখলেই মনে হয়, যেন সময় থেমে আছে।”
তার ঠোঁটে ক্ষীণ হাসি, চোখের কোণে এক ফোঁটা জল।
দূরে ট্রেনের হুইসেল শোনা যায়। রেললাইন কাঁপে, বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
ট্রেনের হেডলাইট ছায়াগুলো দীর্ঘতর করে দেয়—ঠিক যেমন তাদের জীবনও দীর্ঘ হয়ে গেছে, অপেক্ষায় আর অসমাপ্ততায়।
অরিত্র ব্যাগটা শক্ত করে ধরে। তার ট্রেন এসে পড়ছে। সে চাইলে চলে যেতে পারে। আবারও অসম্পূর্ণ রেখেই গল্পটাকে ফেলে রেখে।
কিন্তু রুবাইয়ার চোখের অনুচ্চারিত আহ্বান তাকে থামিয়ে দেয়।
রুবাইয়া এগিয়ে আসে। তার হাতটা এগিয়ে থাকে, খুব ক্ষীণভাবে কাঁপছে।
অরিত্র ধীরে ধীরে ব্যাগটা মাটিতে নামিয়ে রাখে।
তাদের মাঝখানে তখন আর কোনো দূরত্ব নেই, শুধু দুটি শ্বাসের ব্যবধান।
ট্রেনের হুইসেল বাজে শেষবারের মতো।
তারা তাকায় একে অপরের দিকে—
কোনো প্রতিশ্রুতি নেই, শুধু এক টুকরো সাহস আর পুরনো ভালোবাসার উষ্ণতা।
রাতের শেষ ট্রেন দূরে মিলিয়ে যায়।
স্টেশনে রয়ে যায় শুধু দু’জন মানুষ, দু’টি অসম্পূর্ণ জীবন, আর এক নতুন সম্ভাবনার শুরু।
প্রেম কখনো শেষ হয়ে যায় না—সময় তাকে বদলায়, গভীর করে তোলে, কখনো আবার নতুন রূপে ফিরিয়ে আনে। শেষ ট্রেন হয়তো মিস হয়ে গেল, কিন্তু হয়তো এটাই তাদের জীবনের প্রথম সত্যিকারের যাত্রার শুরু।
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৮
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: মোহ এবং মায়া নিয়েই আমাদের জীবন।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
২| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:৪৬
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
লেখা ভালো লাগলো
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
৩| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০১
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর গল্প।
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৩
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
৪| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো থাকুন।
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২৬
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার জন্য শুভকামনা রইলো
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৭
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সবই মোহ মায়া
।