নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শূন্য

অকল্পনীয় গতিতে কল্পনায় বিচরন

লুবান

শূণ্য

লুবান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাপী

১৩ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:২৯

আমি একজন শ্যামল। আমি আমার স্ত্রীর কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছি। কপালে হাত দিয়ে শুয়ে থাকার কারন আছে। আমার স্ত্রীর কপাল খারাপ। সে একজন পাপী মানুষ বিয়ে করেছে। স্ত্রীর কপাল খারাপ বোঝানোর জন্য মাথায় হাত। আমি ঠিক করেছি পুরোপুরি তওবা করার পর তার কপালে হাত দিয়ে ঘুমানো বন্ধ করবো। তওবা করা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমি গত দুই মাস যাবৎ নিয়মিত তওবা করছি। আমার তওবা কবুল হচ্ছেনা বলে আমার দৃঢ় ধারনা। পাপীর তওবা কবুল হয়না। আজকে সকালে ঘর থেকে বের হয়ে রিকশা নিলাম। মালিবাগ মোড়ে নেমে রিকশাআলাকে বললাম - "ভাই দাঁড়ান। আমি পাঁচ মিনিটে ভাড়া নিয়ে আসতেছি।" রিকশাআলাকে দাঁড়া করিয়ে রেখে শান্তিবাগের চিপা দিয়ে বের হয়ে রাজারবাগ মোড়ে চলে আসলাম। মাঝেমধ্যেই আমি এই কাজ করি। কি করবো পকেটে রিকশা ভাড়া নাই। আমি হাঁটাহাঁটি করি কম। আমার স্ত্রীর হাঁটাহাঁটি পছন্দ। গেলো মাসের কথা। ভাড়া না থাকায় সে দিব্যি মিরপুর থেকে হেঁটে হেঁটে বাসায় চলে এলো।বারোটার দিকে পকেটভর্তি গাঁজা নিয়ে আমি দিব্যি শিস বাজাতে বাজাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ঢুকে গেলাম। শিস বাজানোর কারনেই হয়তো গেটের পুলিশ আটকালো না। এরা আটকালে আবার অহেতুক হট্টগোল। অবশ্য রাজারবাগে আমার পরিচিত পুলিশ অফিসার আছেন। মাঝেমধ্যেই আমার তার কাছে গাঁজা সাপ্লাই দিতে হয়। ব্যবসা ভালোই। ফিফটি পার্সেন্ট লাভ থাকে। গাঁজা সাপ্লাই এর এই ব্যবসা আমার কাছে তেমন কোন পাপ না। আমার পাপের পরিমান আরও বিশাল।

বছর তিনেক আগে আমার স্ত্রীর সাথে আমার পরিচয় হয়। তখন রাজারবাগ টাজারবাগ এলাকায় আমার এত কদর ছিলো না। কাকরাইলের এক চিপা গলিতে আড্ডা টাড্ডা মারি। একদিন বিকেলে হুড়মুড় করে আমার স্ত্রী হাঁটতে হাঁটতে গলি দিয়ে ঢুকলো। আমি তখন গলির মাথায় দাঁড়িয়ে চা খাই। স্ত্রীর দিকে চোখ পড়তে চায়ের কাপ নামিয়ে সিগারেট ধরালাম।



আমি শ্যামল। আমি আমার স্ত্রীর কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছি। কপালে হাত রাখার কারন তার কপাল খারাপ। দুপুরে অফিসার স্যারের বাসায় ভাত খেয়ে বের হলাম। রাজারবাগ থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে কমলাপুর চলে গেলাম। বিকেলে গাঁজা গুজা খাওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গা হয়না। রেললাইনে বসে দুইটা স্টিক ফাটালাম। এক পোটলা গাঁজায় দুইটা স্টিকই হয়। এক পোটলার দাম পঞ্চাশ। আমার পকেটে আরও বিশ টাকা আছে। আমার স্ত্রী ডিম কিনে নিয়ে বাসায় যেতে বলেছে। আমি চাইলেই দুইটা ডিম কিনে ফেলতে পারি। ডিম কিনি কিনি করতে করতে আমি দশটা শেখ সিগারেট কিনে ফেললাম। এইটা আমার কাছে তেমন কোন পাপের কাজ না। আমার পাপের পরিমান আরও বিশাল।

সেদিন আমার স্ত্রীকে দেখার পরপরই সিগারেটে চার পাঁচটা টান দিয়ে তার পিছু নিলাম। সারা সন্ধ্যা তার পিছু পিছু হাঁটার পর রাত আটটার দিকে তার বাসার ঠিকানা পাওয়া গেলো। বাসার ঠিকানা ১০৫/১, খিলগাঁও। আমার স্ত্রী রূপবতী। আমি কাকরাইল আড্ডা দেয়া পুরোপুরি বন্ধ করে খিলগাঁও আড্ডা দেয়া শুরু করলাম। আমার কাজ নির্দিষ্ট। স্ত্রীকে চোখে চোখে রাখা। আমি ততদিনে অবশ্য তাকে তিনটা দীর্ঘ প্রেমপত্র লিখেছি। আমার ধারনা প্রেমপত্রের লেখা উচ্চমানের। আমার স্ত্রী একটা চিঠিরও উত্তর দেয়নি। বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে সাহস করে সরাসরি প্রস্তাব করে ফেললাম। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে গেলো। ধমক খেয়ে তার সামনে যাওয়া বন্ধ। দূর থেকে চোখে চোখে রাখি। শুক্র আর শনিবার আমার অফ ডে। এই দুই দিন আমার স্ত্রী ইউনিভার্সিটিতেও যায়না, টিউশনিও করতে যায় না। আমার স্ত্রীর ইউনিভার্সিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সে টিউশনি করে কাকরাইলে। ছাত্রী পড়ে ক্লাস নাইনে। তার নাম লাবনী। আমি পঞ্চম পদক্ষেপ হিসেবে আর কোন ভেজাল না করে সরাসরি তার বাসায় বিবাহের প্রস্তাব পাঠালাম। প্রস্তাব নিয়ে গেলেন আমার পূর্বপরিচিত বড় ভাই। আমার স্ত্রীর বাড়িতে জানানো হলো অভিভাবক আমার দুঃসম্পর্কের মামা। আসলে আমার কোন মামা নাই। আমার সাজানো মামা তারেক ভাই দুপুর বেলা আমার স্ত্রীর বাসা থেকে মোরগ পোলাও খেয়ে ফিরলেন। তার কাছ থেকে জানা গেলো আমার স্ত্রী বিবাহে রাজি না। তার বাবা নিজে তারেক ভাইকে আর কখনো যোগাযোগ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন। আমি হতাশ হয়ে পড়লেও সামলে নিলাম। পাপীদের কাছে হতাশা সাময়িক ব্যাপার।



আমি একজন শ্যামল। আমি মাঝরাতে স্ত্রীর কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছি। কিছুক্ষন আগে অবশ্য আমার হাত তার নগ্ন বুকে ছিলো। স্ত্রীর কপালে হাত দিয়ে শুয়ে থাকার কারন সে খারাপ মানুষ বিয়ে করেছে। আমি ঠিক করেছি পুরোপুরি তওবা করে তার কপালে হাত রেখে শোয়া বন্ধ করবো। প্রতিদিন স্ত্রীর কপালে হাত দিয়ে শুয়ে থাকা কাজ হিসেবে খুব একটা আনন্দের না। আজ মাগরিবের পর মসজিদে ঢুকলাম। মাগরিবের নামায আদায় করে এশার আগ পর্যন্ত তওবা পাঠ করলাম। তারপর এশার নামায আদায় করে মোনাজাত। আমি গত দুই মাস ধরে এই কাজ করছি। আমার দৃঢ় ধারনা তওবা কবুল হচ্ছে না। তবুও চেষ্টা। রাতে এশার নামায শেষ করে মালিবাগে বাসার গলিতে ফিরলাম। গলির সামনে এলাকার বন্ধু সাজেদের সাথে আড্ডা দেয়া আমার নিয়মিত কাজ। আজ হঠাৎ সাজেদের হুজুগে সিলভার বারে চলে গেলাম। রাত এগারোটার মধ্যে আমার তিন পেগ মদ গিলে ফেলা শেষ। ভাগের বাকি তিন পেগ মদ বোতলে নিয়ে বারোটার দিকে বাসায় ফিরলাম। আমার স্ত্রী বোতল দেখতে পায়নি। সে বিরক্তমুখে দোতালার ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে ডিম এনে ভাজি করলো। সে দোতালা যাবার ফাঁকে আমি মদের বোতল ড্রয়ারে লুকিয়ে ফেললাম। পাপ হিসেবে তেমন কিছু না। আমার পাপের পরিমান আরও বিশাল।

আমি তখন আমার স্ত্রীর রূপে অভিশপ্ত। বিভিন্ন খোঁজ খবরের পর এক বন্ধুর কাছ থেকে খাজাবাবা হাকিমপুরী নামে এক পীর সাহেবের খোঁজ পাওয়া গেলো। আমি সেদিন বিকেলেই পাঁচশো টাকা হাদিয়া দিয়ে পীর সাহেবের কাছ থেকে দুইটা মিষ্টি নিয়ে আসলাম। আমার স্ত্রীকে মিষ্টি খাওয়ানোর কাজটা নির্বিঘ্নে শেষ করলো তার ছাত্রী লাবনী। সে আমাকে জানালো আমার স্ত্রী দুইটা মিষ্টিই খেয়েছে। লাবনীর চোখে মুখে তখন আমার জন্য প্রচন্ড মায়া। তাকে জানানো হয়েছিলো আমি অনেক কষ্ট করে আমার স্ত্রীর জন্য টাঙ্গাইল থেকে খাঁটি পোড়াবাড়ির চমচম এনেছি। তার পোড়াবাড়ির চমচম পছন্দ।



আমি শ্যামল। রাত আরও বাড়ছে। আমি এখনো স্ত্রীর কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছি। কপালে হাত রাখার কারন তার কপাল খারাপ। সে একজন খারাপ মানুষ বিয়ে করেছে। আমি প্রতি রাতে পাঁচশো বার ওয়াস্তগফিরুল্লাহ পাঠ করে ঘুমাই। আজ আড়াইশো বার পড়ে আর পড়তে ইচ্ছা করছে না। তাড়াহুড়া করে পড়তে গিয়ে অনবরত ভুল করছি। বিগত দুই মাস যাবৎ আমি প্রতি রাতে তওবা পাঠ করছি। পাপী হওয়ায় আমার তওবা কবুল হচ্ছে না।

আমার স্ত্রীর সাথে আমার বিবাহ হয় দুই বছর আগে। আমার স্ত্রী সেই মিষ্টি খাবার পরদিনই তারেক ভাইয়ের মোবাইলে ফোন আসে। তাকে জানানো হয় আমার স্ত্রীর বাবা তার সাথে আমার বিয়ে দিতে রাজি। আমি তাকে বিয়ে করার জন্য যে কোন পাপের জন্য রাজি ছিলাম। কিন্তু আমি যে পাপ করেছি তা ভয়াবহ। জাদুটোনা করে মানুষ বশ করার পাপের শাস্তি তওবা করলে কবুল হয় নাকি জানিনা। আমার জ্ঞান সীমিত। বড় কোন মাওলানার কাছে আমার কি করা উচিত জানার ইচ্ছা। লজ্জার কারনে কোন মাওলানার কাছে যাওয়া হচ্ছেনা।



আমি একজন শ্যামল। আমি এখনো স্ত্রীর কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছি। কপালে হাত দেয়ার কারন সে জানে না। তাকে বিবাহের প্রথম দিন থেকে আমি আজ পর্যন্ত নিয়মিত এই কাজ করছি। আমার স্ত্রী প্রথম দিকে বিরক্ত হতো। আজকাল সে এই বিষয়ে কিছু বলে না। আমার ধারনা অতিরিক্ত বিরক্তর জন্য সে কিছু বলা বন্ধ করে দিয়েছে। আমার প্রচন্ড ইচ্ছা তার কপালে হাত দেয়া বন্ধ করে দেই। কিন্তু আমার পাপের জন্য পারছি না।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫

বেসিক আলী বলেছেন: অন্যরকম গল্পটা ভাল্লাগছে :)

২| ১৩ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অন্যরকম গল্প !

+++++++++

৩| ১৩ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭

বাংলার জমিদার রিফাত বলেছেন: হু ভাল লাগলো

৪| ১৪ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:০৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হেব্বি গল্প| অন্যরকম| ধরনটা খুব ভাল লেগেছে| আপনার এই ধরনে আমিও একটা গল্প লিখবো| আপনি আপত্তি করবেন না আশাকরি|করলে সারাজীবন ক্ষমা পাবেন না| হে হে

৫| ১৬ ই জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫৭

ইমরান নিলয় বলেছেন: চলু্ক গল্প

৬| ১৭ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৪২

তাসজিদ বলেছেন: জীবন যেখানে যে রকম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.