![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-------- আমি অভিমানী চির ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড় চিত চুম্বন-চোর কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম প্রকাশ কুমারীর! আমি গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল-ক’রে দেখা অনুখন, আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তা’র কাঁকন-চুড়ির কন-কন! -------- যবে উত্পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না - অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না - বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত। ---------- আমি চির-বিদ্রোহী বীর - বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির! [কাজী নজরুল ইসলাম]
1971 সালে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কেবল মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারাই নয়, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষই কোন না কোন ভাবে যুদ্ধ করেছে। বেতার কর্মীরাও তেমনি মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা বেতার কর্মীরা মুক্তিবাহিনী ও দেশবাসীর মনোবল দৃঢ় রাখতে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে গান, কথিকা, যুদ্ধের সংবাদ ইত্যাদি প্রচার করতেন। দেশবাসী রেডিও সেটের সামনে বসে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তা উপভোগ করতো। তখন রেডিও শুনতে হতো লুকিয়ে, যাতে রাজাকার বা পাকিস্থানী বাহিনী জানতে না পারে। রেডিও সহজলভ্য ছিলনা বলে বহুমানুষ একসাথে বসে একটি রেডিও শুনতে হতো।
1971 সালের 25 মার্চ মধ্যরাতে পাক বাহিনী ঢাকা দখল করে নিলে রেডিও পাকিস্থান সম্পূর্ণ তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সেসময় চট্টগ্রামে অবস্থানরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ইপিআরের (ইস্ট পাকিস্থান রেজিমেন্ট) বাঙালি সদস্যরা চট্টগ্রাম শহর ও কালুরঘাটে অবস্থিত রেডিও পাকিস্থানের আঞ্চলিক কেন্দ্রটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এর নাম দেয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। এই বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের পক্ষে তার প্রেরিত স্বাধীনতার ঘোষণাটি 26 ও 27 মার্চ বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান ও মেজর জিয়াউর রহমান কয়েক দফায় প্রচার করেন। 26 মার্চ থেকে 29 মার্চপর্যন্ত এই বেতার কেন্দ্রটির অনুষ্ঠান পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।
30 মার্চ পাক বাহিনীর বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বেতার কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। 31 মার্চ এর ট্রানসমিশন ভবন থেকে 1 কিলোওয়াট ট্রানসমিটার বিচ্ছিন্ন করে প্রথমে পটিয়ায় ও পরে আগরতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। 3 এপ্রিল পুনরায় এর কার্যক্রম শুরু হয়।
ইতিমধ্যে ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য আঞ্চলিক বেতার কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সীমান্ত অতিক্রম করে এই কেন্দ্র চালু করেন এবং এর নাম রাখা হয় 'স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র'। এর কার্য্যালয় স্থাপিত হয় কলকাতার থিয়েটার রোডের একটি স্বল্প পরিসর বাড়িতে। এটি 1971 সালের 25 মে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে।
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস এই বেতার কেন্দ্র থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রচারিত হয়েছে নানা উদ্দীপনা মূলক অনুষ্ঠান। যেমন- চরমপত্র, অগি্নশিখা, রক্তস্বাক্ষর, বজ্রকন্ঠ, দর্পণ, জাগরণী, ঐকতান, ইংরেজী ও বাংলা খবর। এর মধ্যে চরমপত্র ছিল অত্যধিক জনপ্রিয়। এতে রণাঙ্গণে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ সাফল্য ও বিজয়ের খবর আঞ্চলিক ভাষায় বিশেষ ভঙ্গিতে প্রচার করা হতো এবং পাক হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর ব্যঙ্গ রসাত্মকভাবে প্রচার করা হতো। চরমপত্রের ভাষা এবং উচ্চারণ ভঙ্গি একদিকে শ্রোতাদের অফুরন্ত আনন্দ দিতো এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে সুদৃঢ় মনোবল আরও শক্তিশালী করতো।
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অবদান অনস্বীকার্য। এই বেতার কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট শিল্পী, সাহিত্যিক, বেতারকর্মী ও প্রকৌশলী মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যে ভূমিকা পালন করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তা এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়রূপে বিবেচিত এবং স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রগঠনে তাদের অবদান অতুলনীয়।
©somewhere in net ltd.