নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে বুঝতে পারছি না আমি কে বা কি ?

মাধুকরী মৃণ্ময়

কিংকর্তব্যবিমুড়

মাধুকরী মৃণ্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাত্র দেখা !

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:৩৫



মা আমার বিয়ার জন্য উতলা হয়ে গেছে। তার অবশ্য কারনও আছে। বয়স তিরিশ অতিক্রম হয়ে গেছে, চাকুরী বাকুরীতে থিতু হয়েছি, বংশের একমাত্র প্রদীপ, মায়ের মাজায় ব্যাথা। তিনি আমাকে বিয়া দেয়ার জন্য নানান ফন্দি ফকির করে । কোন কিছুতেই আমার মন ঘুরাতে না পারে উনি ফকিরের আশ্রয় নিয়েছেন। আর সেই ফকিরে আশ্রয় নিয়েছে আবার জ্বীন! জ্বীনের বাদশাও হতে পারে। তো সেই জ্বীন অথবা জ্বীনের বাদশা ফকিরের মাধ্যমে মাকে বলেছেন যে ছেলে পাত্রি দেখে রেখেছে, পাত্রি চাকরী করে, সামনে বিসিএস দেবে। বিসিএস এ চান্স পেয়ে গেলেই ছেলে বিয়েতে মত দিবে।
মা আমাকে ফোন দিয়ে বলল, ঘটনা সত্য কিনা বল! কন্ঠে আদ্রতা। আমি পরিস্থিতে ঘোলাটে বানানোর জন্য রহস্যময় হাসি দিলাম। মার কন্ঠ আরো আদ্র হলো। আমি আদ্রতাকে পাত্তা না দিয়ে বললাম, ধরেন ঘটনা সত্য, তাইলে কি করবেন ? মা বলল, মসজিদে সিন্নি দিবো।
আমি বললাম , যান সিন্নি দেন । মা বলল , তাইলে কবে বিয়া করবি। আমি বললাম , জ্বীন তো বলেছে, বিসিএস এর পর। অপেক্ষা করেন।
ফোন রেখে কল্পনার সেই মেয়েকে ভাবতে বসলাম। সত্যি যদি এমন হতো। একটা মেয়ে মোটামুটি চাকুরী করে, রোজ সকালে ভ্যানিটি ব্যাগ কাধে করে রিকসাই দুলে দুলে অথবা বাসে ঝুলে ঝুলে অফিসে যায়। সারাদিন অফিস করে বাসায় আসে। রাজ্যের ক্লান্তি উপক্ষা করে বই নিয়ে বসে। পাশে ধোয়া উঠা চায়ের কাপ। চোখে জেগে উঠা স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের কোন এক জায়গায় আমি গুটিশুটি হয়ে বসে থাকি তার বিসিএস এর অপেক্ষায়।
যথারীতি কিছু মাস গেলো । মা চারিদিকে খোজখবর নিয়ে অবগত হলো যে বিসিএস শেষ হয়েছে। এবার আমাকে ছাই দিয়ে ধরে বলল বিয়ে কর। আমি বিরস বদনে বললাম , জ্বীনের ভবিষ্যত বানী ভুয়া। এরকম কোন মেয়ের অস্তিত্ব আমার জীবনে নাই।মা বলল, তুই বিয়া না করলে আমার জীবনের মানে কি। চোখে ঝর ঝর ঝর। আমি বললাম , ঠিক আছে পাত্রি দেখেন।
মা দশ দিনের মাথায় পাত্রি দেখে আমাকে ফোন দিলো।বলল, পাত্রি আমি দেখেছি। অতি উত্তম কন্যা । এবার তুই যেয়ে দেখে আয়।
আমার তখন কূল নাই কিনার নাই দশা।উপায়ন্ত না পেয়ে ফন্দি আটলাম। বললাম, দেখেন মা , বিয়েতো আমি একা করবো না। সেই মেয়েও তো আমাকে বিয়ে করবে। তাইলে আমি কেন পাত্রি দেখতে যাবো। সেই মেয়েকে বলেন আমাকে দেখতে আসতে। আমি মুখে রুমাল দিয়ে বসে থাকবো আর এঙ্গেলে মেয়ের দিকে তাকাবো। মা বলল ,ফাজলামী রাখ, এইটা হয় না। এই দেশে পাত্রি কখনো পাত্র দেখতে আসে না। আমি বললাম , এইটা আমি মানি না। পাত্রীকে বলেন আমাকে দেখতে আসতে ।তা নাহলে বাদ দেন।
মা গাইগুই করে পাত্রী পক্ষের কাছে বলে ফেলল যে আপনারা মেয়েকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসেন। ছেলেকে দেখেন। ছেলের বিরাট কাজের চাপ । কোনমতে কয়েক ঘন্টার ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসছে। মেয়ে পক্ষ বলল ঠিক আছে আমরা চিন্তা ভাবনা করে দেখি। তারপর আর খোজ নাই। আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম।
কিন্তু এই বাচাই শেষ বাচা না। কিছুদিন পর মা ফোন করে বলল, মেয়ে পক্ষ রাজী হয়েছে , আমাদের বাড়িতে আসছে তোকে দেখতে। মনটা খারাপ হলো। আমার সুখের জীবন শেষ হয়ে যাবে এই ভেবে মন খারাপ হয় নি, মন খারাপ হয়েছে এই ভেবে যে , একটা মেয়ের বিয়ে কতো জরুরি হলে তার অভিভাবক এই রকম প্রস্তাবে রাজী হয়।
বাড়িতে গিয়ে আয়নার সামনে মুখে রুমাল দিয়ে কয়েকবার ট্রায়াল দিলাম। ছোটবোনকে বললাম কেমন হয়েছে আমার ট্রায়াল। সে বলল, ভাইয়া তুমি কবে বড় হবা। আমি মুখ থেকে রুমাল সরিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললাম , বিয়ের পর।
যথা সময়ে পাত্রি আসলো। আমি একটা ডোরাকাটা পাঞ্জাবী পড়ে সোফার একপাশে বসে থাকলাম । ছোটবোনের হাজব্যান্ড বলল, ভাইয়া ভয় নাই , আমি আছি। আমি এই কথার উলটা অর্থ বের করার জন্য মুখ খুলেছি সেই সময় পাত্রি ঢুকলো।
কন্যা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ,পলিট্যাকনিকাল কলেজের শিক্ষিকা।
আমি তাকে সহজ করার জন্য বললাম , আপনার যদি কিছু জিজ্ঞাসা করার থাকে তাহলে বলেন।
সে মাথা নিচু করে থাকলো। আমি গলা খাকাড়ি দিয়ে বললাম, দেখেন আমি আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার তুলনাই নিতান্তই তুচ্ছ। আপনি আমার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন।
সে মাথা নিচু করে বলল, আমার কিছুই বলার নাই। বাড়ি থেকে যেখানে বিয়ে দিবে আমি সেখানেই করবো।
আমি বললাম , আমি ঢাকাতে চাকরী করি , আপনি অন্য জেলাই , যদি আমি চাকরী ছেড়ে দিতে বলি তখন আপনি কি করবেন।
সে বলল, আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো।
পাশে বসে থাকা মার চোখে এই কথা শুনে আনন্দে পানি চলে আসলো।
আমি বললাম, আমার অনেক শখ বই পড়া , ঘুরে বেড়ানো। আপনার শখ কি ?
সে বলল, আমার তেমন কোন শখ নাই, আপনি যা বলবেন তাই করবো।
আমি বললাম, আপনি তো একটা শিক্ষিতা মেয়ে , আপনার ক্যারিয়ার প্লান কি?
সে বলল, আপনি যদি বলেন আমি চাকুরি কন্টিনিও করবো।
আমি বললাম, আর আমি যদি না বলি। সে একবার মাথা উচু করে আমার দিকে তাকালো তারপর বলল, না বললে নাই।
ছোটবোন বলল্, আপনি কি কি রান্না করতে পারেন।
মেয়েটা ফিরিস্তি দিয়া শুরু করলো। আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম ঘন ডাল, আলুভর্তা আর ডিম ভাঝি এই গুলা আমিও রান্না করতে পারি।

মেয়ে পক্ষ চলে যাওয়ার পর মা বলল দেখেছিস আমি কত ভালো মেয়ে দেখেছি। আমি বললাম, আপনি মেয়ে দেখেন নাই, দেখেছেন ভালো রোবট।
এত দিন পর এইসব কথা লিখছি কারন সেই রোবটের বড় ডাগর ডাগর চোখ ছিল। যা আজকাল মাঝে মাঝে আমাকে পীড়া দেই। আমি অপরাধ বোধে ভুগতে থাকি। এই দেশে অধিকাংশ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েই বিয়ে করার জন্য বড় হয়ে উঠে । তার লেখা পড়া, চাকুরি, শিক্ষা সব জলাঞ্জলি যায় যদি একটা ভালো বিয়ে না হয়। তার তো কোন দোষ নাই। তার সমাজ , তার পরিবার এইটা বলে বলে বড় করেছে যে তুমি জীবনে যত বড়ই হও না কেন বিয়া না হলে তোমার সব অর্জন তুচ্ছ। তাই সে নিজের অজান্তে অথবা জানতে বিয়া করার জন্য অথবা বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য জীবনের সব কিছু বিসর্জন দেই। তার ইচ্ছা, স্বপ্ন , ব্যাক্তিত্ব সমস্ত কিছু অন্য এক পুরুষ উত্তম অথবা অধমের কাছে হস্তান্তরিত করে । এই নষ্ট ,পচে যাওয়া সমাজ তাকে সারাজীবন অবলা মেয়ে করে রাখে মানুষ হতে দেই না।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:০৮

আরোগ্য বলেছেন: সারমর্ম ইহা ই মায়ের কাছে ভালো মেয়ে মানে কাঠের পুতুল।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৩

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ। ঠিক ধরেছেন।

২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:২৪

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: মূল কথা এটাই,
এই দেশে অধিকাংশ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েই বিয়ে করার জন্য বড় হয়ে উঠে । তার লেখা পড়া, চাকুরি, শিক্ষা সব জলাঞ্জলি যায় যদি একটা ভালো বিয়ে না হয়। তার তো কোন দোষ নাই। তার সমাজ , তার পরিবার এইটা বলে বলে বড় করেছে যে তুমি জীবনে যত বড়ই হও না কেন বিয়া না হলে তোমার সব অর্জন তুচ্ছ। তাই সে নিজের অজান্তে অথবা জানতে বিয়া করার জন্য অথবা বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য জীবনের সব কিছু বিসর্জন দেই। তার ইচ্ছা, স্বপ্ন , ব্যাক্তিত্ব সমস্ত কিছু অন্য এক পুরুষ উত্তম অথবা অধমের কাছে হস্তান্তরিত করে । এই নষ্ট ,পচে যাওয়া সমাজ তাকে সারাজীবন অবলা মেয়ে করে রাখে মানুষ হতে দেই না।

আপনার এই ব্যতিক্রমী চিন্তা আমার কাছে ভাল লেগেছে! আচ্ছা, এখন কার সাথে ঘর করছেন? স্বপ্নের স্বপ্নার সাথে নাকি নতুন/পুরাতন কোন রোবটের সাথে! আর উনি ভাল আছেন তো?

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৪

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। এখন স্বপ্নাও নেই রোবট ও নেই।

৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:৪৯

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সমস্যা বা দোষটা কোথায়? কেউ যদি ঘর সংসার করে তৃপ্তি পায় তাহলে সমাজের এত মাথা ব্যথা কেন?

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৫

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ। ঘর সংসার করলে সমাজের মাথা ব্যাথা হওয়ার কারন নেই। কিন্তু ঘর সংসার ছাড়াও যদি কিছু করতে চাই তাহলে কারণ আছে।

৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ ভোর ৪:৪৩

পাকাচুল বলেছেন: "আপনি যাই বলবেন, আমি করতে রাজী আছি", এটা কোন কথা হলো?

এমনটা কেন হবে এই সমাজে? মানুষ হিসাবে একজন বিয়ের কন্যা কি এতই ফেলনা?

বিয়ের পর মেয়েকে চাকুরী ছেড়ে দিতে হবে কেন?

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৮

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: মানুষ হিসাবে বিয়ের কন্যা ফেলনা না। এটাই আমি বোঝাতে চেয়েছি। এই সমাজে এটাই হয়।
চাকুরী আসলে ছেড়ে দিতে বলি নাই। চাকুরী ছেড়ে দেয়ার কথা বলে তার ইচ্ছা শক্তি মাত্রা বোজার চেষ্টা করেছিলাম।

৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: এটা কি গল্প না বাস্তব?

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৮

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: ভাই , ঘটনা সত্য।

৬| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:৪৪

হাবিব বলেছেন:
এটা গল্প নাকি বাস্তব জানি না। তবে এমনটা ঘটে। অস্বাভাবিক কিছু নয়।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৯

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: ঘটনা সত্য। আমিই সেই পাত্র !

৭| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:২১

টিয়া রহমান বলেছেন: এটা কি অনেক আগের ঘটনা! আমি শুনেছি অনেক আগে এমন হত, তবে এখন ও কিছু কিছু পরিবারে এমনটা দেখা যায়।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪০

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: একবছর আগের ঘটনা।

৮| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:২৭

নীল আকাশ বলেছেন: আপনার লেখা আজ প্রথম পড়লাম আর পড়েই সাথে সাথেই মুগ্ধ হলাম। অসম্ভব সুন্দর একটা বাস্তব জীবনের চিত্র আপনি তুলে ধরে এনেছেন। আমাদের সমাজে মেয়েদের এই পরিনতির জন্য আমরা সবাই দায়ী। তবে মেয়েদের নিজের ভিতরে মনস্তাত্বিক পরিবর্তন না আসলে এই বিষয় থেকে বের হয়ে আসা সত্যি কঠিন!
আরো আপনার কাছ থেকে দুর্দান্ত সব লেখার পড়ার প্রত্যাশায়,
শুভ কামনা রইল!

০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৭

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: কেউ যখন আমার লেখা সম্পর্কে এতো উচ্চমার্গীয় নাকি বর্গীয় মন্তব্য করে তখন আমার লইজ্জা লাগে । ধন্যবাদ লইজ্জা দেয়ার জন্য।

৯| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৫৫

নীল আকাশ বলেছেন: আপনার লেখা আমার ভালো লেগেছে। সে জন্যই বলেছি। আমি যথেষ্ঠ কাঠখোট্টা টাইপের ব্লগার। আপনি মনে হয় জানেন না। আমি যেই ধরনের লেখা লিখি / সামাজিক সমস্যা নিয়ে কথা বলি আপনার লেখা অনেকটা সেই ধরনের। সেই জন্যই ভালো লেগেছে......
আশা করি আরো ভালো ভালো লেখা পাবো.........। ভালো থাকবেন........

১০| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: ভাই , ঘটনা সত্য।


ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.