নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে বুঝতে পারছি না আমি কে বা কি ?

মাধুকরী মৃণ্ময়

কিংকর্তব্যবিমুড়

মাধুকরী মৃণ্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

শনিবার সন্ধ্যা (গোলাপ কিংবা কাটা )

১৫ ই জুন, ২০১৯ রাত ৮:১৫


প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
চতুর্থ পর্ব
পঞ্চম পর্ব

এটা একটি অমিথ্যা গল্প। জীবিত অথবা মৃত কারো সাথে মিলে গেলে লেখক স্বয়ং দায়ী। উপযুক্ত প্রমান দিয়ে ক্ষতি পূরন আদায় করতে পারেন !
জীবনান্দের কবিতার মতো সন্ধ্যা নামে ব্যাস্ত শহরে। ডানায় রোদ্রের গন্ধ যেভাবে চিল মুছে ফেলে তেমনি অফিস ফেরা মানুষেরা কর্মব্যাস্ত দিনের ক্লান্তি মুছে রাস্তা সরগরম করে। সারাদিনের কত কথা জমে আছে বুকের ভেতর ,সেই সব না বলা কথা গুলো প্রিয় মানুষের সাথে গল্পের মতো করে বলবে বলে মানুষ ঘরে ফেরে। কিন্তু কিছু মানুষের বোধহয় ঘরে ফেরা হয় না কোন কোন দিন। অতীত তাদের পিছু ধাওয়া করে নিয়ে যায় অন্যখানে, অন্য কোন ঘরে।

শহুরে নিয়ন আলোর সন্ধা নেমে এসেছে আতস খান লেনের গলিতে। গলির মাথায় দাঁড়িয়ে আছে একটা কালো মাইক্রোবাস। মাইক্রোবাসের ভেতর কারা এবং কতজন বসে আছে তা বাইরে থেকে অনুমান করা যাচ্ছে না। কিছুক্ষন পর একটা লম্বা যুবক মাইক্রোবাসের দরজা খুলে বাইরে আসলো। এই সন্ধাতেও তার চোখে কালো চশমা। সিগারেটে পোড়া কালো ঠোট। মাথায় অযত্নে বড় হওয়া এক ঝাক এলোমেলো চুল। মুখে বসন্তের গোটা গোটা দাগ। সে বারে বারে ঘড়ি দেখছে আর পাইচারী করছে। ড্রাইভারের সিট থেকে একটা ছোটখাট লোক বেরিয়ে আসলো । এসে লম্বা লোককে বললো, আর কতক্ষন ? আটটা বেজে গেছে। লম্বা লোক ঘড়ির দিকে আরেকবার তাকিয়ে বললো, আর একটু অপেক্ষা কর। এখুনি চলে আসবে। অফিস তো ছুটি হয়ে গেছে সেই ছয়টার দিকে। বনানী থেকে আসতে সর্বোচ্চ দুই ঘন্টা লাগবে যদি অন্য কারো সাথে ডেটিং না মারে। বেটে লোকটা শয়তানী হাসি হেসে বললো, এখনো মার্কেট ভ্যালু আছে , কি বলিস। লম্বা লোক বিরক্ত মিশিয়ে বললো , থাম তুই। একটা সিগারেট দে, সময় কাটায়।

অফিস থেক বেরোতে জোহরার আজ দেরি হয়ে গেছে। একেতো বৃহস্পতিবার, তার উপর জামাল সাহেবের চাকুরি চলে গেছে। অফিসে এই লোকটা ছিল ভালো। জোহরার সমস্ত প্রফেশনাল প্রবেলেমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত। কোম্পানি কোন পেমেন্ট ছাড়ায় এক দিনের নোটিসে তাকে বরখাস্ত করেছে। এই নিয়ে অফিসে নানা সমস্যা। এই সব অফিস পলিটিক্স হ্যান্ডেল করে যখন জোহরা বের হলো তখন সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেছে। নয়টার দিকে বাসায় গেলে মোটামুটি কেউ কিছু বলে না। নয়টা পার হলেই নানান কৈফিয়ত দেয়া লাগে । জীবনের এত কিছু পার হয়ে এসে আর কাউকে কোন কৈফিয়ত দিতে ভালো লাগে না। আজীমপুর বাস স্টান্ডে নেমে জোহরা রিকসা নেই না। হেটে হেটে বাসায় যায়। রাস্তায় পাশেই আজীমপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ। তাকালেই মন ভালো হয়ে । এক টুকরো শৈশব যেন ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। কত আনন্দের স্মৃতী এই স্কুলকে ঘিরে। জোহরা মন খারাপ হলে এই স্কুলের ভেতরে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে এখনো। সবাই চেনে তাকে। হঠাৎ কোন দিন দুপুরে সে যদি স্কুলের গেটে গিয়ে দাঁড়ায়। মোচওয়ালা দারোয়ান পরম মমতায় বলে , কি গো মা , মন খারাপ হয়ছে নাকি। যাও ওইখানটাই গিয়া বসো। জোহরা এই স্কুলের নাম পালটিয়ে রেখেছে, মন ভালো স্কুল।

মানুষের প্রস্রাবের বেগ চাপলে তা আটকে রাখার জন্য যেমন ছটফট করে , দ্রুত পায়চারী করে। লম্বা যুবক সিগারেটে ঘন ঘন টান দিচ্ছে আর ওরকম করছে। বেটে লোকটা কাছে এসে বললো, চল, চলে যায়। ও বোধহয় অন্য পথ দিয়ে গেছে। লম্বা যুবক সিগারেটে একটা জোরে টান দিয়ে , চোয়াল শক্ত করে বলল , ও যদি এখন না আসে তাহলে আমি সারা রাত এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো , সকালে যখন অফিসে যাবে তখন ওকে ধরবো। ও যাবে কোথায় ! বেটে লোকটা থপ করে থুথু ফেললো পাশের ঘুমন্ত কুকুরের উপর। তাই দেখে লম্বা যুবক বললো, তোর জীবনের কোন ডিরেকশন ঠিক নাই। প্রায় চেচিয়ে উঠে বেটে লোকটা বললো, মামা ডিরেকশন ঠিক আছে, ওই যে দেখো আইতাছে। লম্বা যুবক তড়িৎ বেগে মাইক্রোবাসের ভেতর চলে গেলো।
জোহরা মাইক্রোবাসের কাছাকাছি আসতেই সে বের হলো। জোহরা সামনে দাঁড়িয়ে বললো, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে, জরুরী। জোহরা মামুনকে দেখে চমকে গেছে। সেটা প্রকাশ না করে ঠান্ডা কন্ঠে বললো, বলো। মামুন বললো, গাড়িতে ওঠো। জোহরা ঠোটে ঠোটে চেপে বললো, গাড়িতে ওঠা লাগবে কেন, এখানেই বলো। বেটে লোকটা এতক্ষন আড়াল থেকে সব শুনছিলো। গাড়ির পেছন থেকে এসে সে এক ঝটকায় গেট খুলে ফেললো। মামুন জোহরাকে পাজাকোলা করে তুলে গাড়ির ভেতর ছুড়ে ফেলে বললো, টান দে। বেটে লোকটা ইদুরের মতো দৌড়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো।

হামাগুড়ি দিয়ে রাত গভীর হচ্ছে শহরের বুকে। আতসখান লেনের অসংখ্য মানুষের ভিড় থেকে একটা অফিস ফেরত মেয়ে নিমিষে উধাও হয়ে গেলো কেউ জানতেও পারলো না। মাইক্রোবাসের কালো কাচের ভেতর কি হচ্ছে তা বাইরে থেকে বোঝার উপাই নাই। ধাধার মতো অসংখ্য গলি পার হয়ে মাইক্রোবাস শান্তিবাগে এসে থামলো। অজস্র শব্দের শহরে হারিয়ে গেলো জোহরার চাপা কান্নার আওয়াজ।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৯ রাত ৮:২৯

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: নতুন নতুন লেখা পড়তে আমার খুবই ভালো লাগে। আপনার লেখাটা আমি কয়েকবার পাঠ করব। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। ভালো থাকুন সব সময় প্রতিটি মুহূর্ত।

১৬ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১০:০৮

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য। আপনার জন্যও শুভ কামনা।

২| ১৫ ই জুন, ২০১৯ রাত ৯:৩২

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: অন্য পর্বগুলি পড়া হয়নি। এটা পড়লাম, ভাল লাগলো।

১৬ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১০:০৭

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ। অন্য পর্ব গুলো পড়ার আমন্ত্রন।

৩| ১৫ ই জুন, ২০১৯ রাত ১০:১৯

মুক্তা নীল বলেছেন:
এই সিচুয়েশনে মামুনের হঠাৎ আগমনে উৎকণ্ঠা বেড়ে গেলো ।
জোহরা কি আদৌ সুখী জীবনের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে ?
সাথেই আছি। চলুক ...

১৬ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১০:০৬

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: কিছু মানুষের জন্য সুখ মরিচিকার নাম। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

৪| ১৬ ই জুন, ২০১৯ সকাল ৭:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লেখা।
আকর্ষন করার মতোন উপাদান আছে।

১৬ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১০:০৬

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৫| ১৬ ই জুন, ২০১৯ দুপুর ২:৫৪

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: বাহ টার্নিং টা ভালো ছিলো :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.