নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে বুঝতে পারছি না আমি কে বা কি ?

মাধুকরী মৃণ্ময়

কিংকর্তব্যবিমুড়

মাধুকরী মৃণ্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

শনিবার সন্ধ্যা (হারায় হারায়, সদা হয় ভয়)

২৫ শে জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২০



প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
চতুর্থ পর্ব
পঞ্চম পর্ব

এটা একটি অমিথ্যা গল্প। জীবিত অথবা মৃত কারো সাথে মিলে গেলে লেখক স্বয়ং দায়ী। উপযুক্ত প্রমান দিয়ে ক্ষতি পূরন আদায় করতে পারেন !

ঘুমের ঔষধ যে কি বস্তু তা অর্ণব না খেলেও ভালোভাবে জানে। তার ছোট বেলার বন্ধু ছিল সাইফ। প্রেমিকা তাকে বলেছিলো, তোর সাথে কোন সম্পর্ক নাই কারন তুই খাস গাঞ্ছা। কেবল যৌবনে পা রাখা সাইফ সেটা মেনে নিতে পারলো না। সাইফ সেই সন্ধায় খেয়ে ফেললো ছয়চল্লিশটা সিডাক্সিন। সিডাক্সিন খাওয়ার পর সে অর্ণবের কাছে এসেছিলো, সিগারেট খাওয়ার জন্য। অর্ণব অর্ধেক খাওয়া সিটারেটে আরেকটা লম্বা টান দিয়ে সাইফকে পাস করেছিলো। ঢুলু ঢুলু চোখে সাইফ বলেছিলো, এ জীবন রাখার আর কোন মানে হয় নারে, জীবনেও একটা স্টিক না খেয়ে সেই অপবাদ আমার নিতে হচ্ছে। কার জন্য আমি মরি! সে আমারে কোন দিনই বুঝলো না। অর্ণব সেই সব ঘুম ঘুম কথা শুনছিলো আর সিগারেটের দিকে তাকাচ্ছিলো। শেষ টান টা দিতে হবে। সাইফ বলেছিলো , মরে গেলে ওকে বলিস, আমি কোনদিন গাঞ্জা খাই নাই। ও বললে সিগারেট , ভাত, আম , কাঠাল সব খাওয়া আমি ছেড়ে দিবো। অর্ণব সিগারেটের শেষ অংশ ছো মেরে নিয়ে বলল, মরবি কখন। সাইফ কাটা কলাগাছের মতো পান্নুর দোকানের সামনে পড়ে গেলো। অর্ণব একটা স্বাস্থবান মানুষকে ঘাড়ে করে সদর হসপিটালে নিয়ে গেলো। ডাক্তার দেখে বললো, ঘুমের ঔষধ খাইছে কেনো ! অর্ণব বললো, সে যে গাঞ্জা খাই না এইটা প্রমান করার জন্য ঘুমের ঔষধ খাইছে।


অর্ণব ঘুমের ঔষধের একটা নাম ই জানে , সিডাক্সিন। দোকানে গিয়ে বলল, সিডাক্সিন দেন , খুব দরকার। বৃদ্ধ দোকানি বাকা চোখে তাকিয়ে বলল, ভাই এই ঔষধ পনেরো বছর আগে মানুষ কিনতে এসে বলতো খুব দরকার । এখন তো মার্কেট আউট। আর কি আছে, অর্ণব বললো। যা আছে প্রেসক্রিপশন ছাড়া দেয়া যাবে না । দোকান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় একটা লোক প্রায় কানের কাছে এসে ফিস ফিস করে বললো, টাকা দিলে এদেশে সব হয়! অর্ণব মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাকার একটা নোট বের করে দিলো।

ঘুমিয়ে পড়ার আগে সে দেখলো ধোয়ার কুন্ডলি পাকানো একটা নারী অবয়ব তার দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসছে। এগিয়ে আসতে আসতে ক্রমশ চোখের সামনে চলে এলো। অর্ণব প্রথমে জোরে ফু দিলো ধোয়াকে দিকভ্রান্ত করার জন্য। নারী অবয়ব স্থির। তারপর হাত দিয়ে জোরে বাতাস দিলো । ধোয়া কিছুক্ষনের জন্য এদিক সেদিক সরে গিয়ে আবার আগের জায়গায় ফিরে এলো। ধোয়ার অবয়বটা ক্রমশ অর্ণবের সারা শরীর ঘিরে ধরছে। অর্ণব প্রচন্ড জোরে শরীর ঝাকাচ্ছে। কোন কাজ হচ্ছে না। অর্ণব খেয়াল করলো ধোয়ার শরীরের সমস্ত অংশ সাদা শুধু মাথার চুল লালচে। অর্ণব অস্ফুট ভাবে উচ্চারন করলো , জোহরা ! ধোয়ার কুন্ডুলী মুহুর্তে হারিয়ে গেলো আর অর্ণব তলিয়ে গেলো গভীর ঘুমে।

জোহরার ফোন বন্ধ পাচ্ছিল বৃহস্পতিবার সন্ধা থেকে। ক্রমাগত ফোন ডায়াল করতে করতে অর্ণবের মনে হলো, এই জীবনের জন্য বোধহয় জোহরাকে আবার হারালাম। এই হারানোর বেদনা অর্ণব সহ্য করতে পারছিলো না। নিজেকে খুব অপমানিত লাগছিল। এতো বছরের প্রতিক্ষা এই রকম করে চোখের নিমিষে শেষ হয়ে যাবে তা সে মানতে পারছিল না। সে ভাবছিল, সে কি এতই নগন্য এতই হীন যে এত কিছু করার পরও একটা মেয়ে তাকে এমন ভাবে অবহেলা করবে, এমন ভাবে বার বার হারিয়ে যাবে ! নিজের এই পরাজয় সে আর মেনে নিতে পারছিলো না। তার মনে হচ্ছেলো, এতো গুলো বছর শুধুমাত্র জোহরার জন্য ই বেচে ছিল। আজ যদি জোহরা না থাকে তাহলে তার বেচে থাকার কোন অর্থ আর থাকে না, বেচে থাকার আর কোন অবলম্বন থাকে না। সাইফের কথা মনে পড়লো তখন অর্নবের। সাইফ শেষ পর্যন্ত বেচেছিল। কারন তার আশে পাশে অসংখ্য বন্ধু বান্ধব ছিল, তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
অর্ণবের এই ঢাকা শহরে কেঊ নাই। মরে দুই দিন ঘরের ভেতর পড়ে থাকলেও কেউ দরজা নক করবে না। অর্ণব ফার্মেসীর দিকে হাটা শুরু করলো।

মামা, মামা , মামা। অর্ণব কানের কাছে তীব্র চিৎকার শুনতে পেলো। কোন রকম চোখ মেলে দেখলো রান্না করার খালা ডাকছে। ঘরে ঢুকছেন ক্যামনে। অর্ণব প্রশ্ন করলো। ঘর খোলা রাইখছেন, আবার কইছেন ঢুকছেন ক্যামনে। ঝাড়ু দিতে দিতে সে বলল। মানুষ এতো সিগারেট খাই ক্যামনে ! খালার কন্ঠে একরাশ বিরক্তি। অর্ণব সম্বিত ফিরে পাচ্ছে আস্তে আস্তে। দিব্যি সব দেখতে পাচ্ছে, খালা, ঝাড়ু, সিগারেটের অসংখ্য টুকরা, মানিপ্লান্ট , মাথার কাছে বিস্তর বই, হাতের আংগুল। সব দেখতে পাচ্ছে। তার মানে বেচে আছে সে । এইটা বোঝার পর যেমন মুখ করে অর্ণব বাথরুমের দিকে এগুলো তাতে মনে হলো , এই বেচে থাকাতে সে কিঞ্চিত বিরক্ত।
শনিবার দুপুরে পেরিয়ে বিকেল আসি আসি করছে। প্রচন্ড ক্ষুদা লেগেছে অর্ণবের। কিন্তু রান্না ঘরে যেয়ে খাবার নিয়ে খাওয়া শক্তি এবং ইচ্ছা কোনটাই নেই তার । তবুও কোনরকম এক প্লেট খিচুরী নিয়ে খেতে বসলো। আজকে কি বৃষ্টি হয়েছিল। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো সে । বিকেলের চলে যাওয়া আলো ভেজা পাতার উপর পড়ে চিক চিক করছে। বৃষ্টি হলে খালা জানে কি রাধতে হবে । বলা লাগে না কিছুই। এক লোকমা মুখের ভেতর ভাত দিতে না দিতেই হড়হড় করে অর্ণব বমি করে দিলো। বমির সাথে কিছু স্লিপিং পিল বেরিয়ে আসলো। এতো শক্তিসালি পাকস্থলি কেন স্লিপিং পিল হজম করতে পারলো না। সেটা বিশ্ময়।

বৃষ্টির পর পৃথীবি কেমন যেন নরম নরম হয়ে যায়। অর্নবের দেখতে ভালো লাগে। সে ছাদে চলে গেলো। সব বিল্ডিং একই উচ্চতার হওয়ার কারনে ছাদ থকে অনেক দূর দেখা যায়। পশ্চিমে লাল লাল মেঘ,মেঘের পেছনে সুর্য ডুবি ডুবি করছে। মাথার উপর দিয়ে একটা প্রমান সাইজের প্লেন এয়ারপোর্টের দিকে উড়ে গেলো , পুর্বের নিম গাছের পাতা এখনো ভেজা ভেজা মনে হচ্ছে বাচ্চা ছেলের গোসল করানো হয়েছে কিন্তু মা এখনো গা মোছাইনি। একটা চড়ুই উড়ে এসে ছাদের রেলিং এর উপর বসলো। মাথার উপরে একঝাক পাখি ভি চিহ্ন বানিয়ে উড়ে চলে গেলো। কেয়ার টেকার কাশেম ভাই এর বিছানার চাদর বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। ছাদের একপাশে ক্যাক্টাস গাছের ডালে এক সারি কাটা। ছাদের একপাশে গ্রামীন ফোনের টাওয়ার। অর্ণবের সব ভালো লাগছে। তার বাচতে ভালো লাগছে।








মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুন, ২০১৯ রাত ৮:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: জীবন যাপনের গল্প। জোহরা আর অর্নব এর গল্প।

২৫ শে জুন, ২০১৯ রাত ৮:৪১

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: আপনি যে আমার লেখা এতদুর পর্যন্ত পড়েছেন। তার জন্য ধন্যবাদ।

২| ২৫ শে জুন, ২০১৯ রাত ৮:০৯

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: পর্বটি ভাল লেগেছে। গতাগতিক থেকে একটু ভিন্নতায় লিখার স্বাধ বড় আকড়ে ধরছে। পরের পর্বের অপেক্ষায়।

২৫ শে জুন, ২০১৯ রাত ৮:৪২

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: আমি কোথায় বসে লিখছি তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। আজকে অফিসের এসি নষ্ট ছিল। গরমের ভেতর লিখছিলাম । গরম থেকে যদি ভালো কিছু হয় তাহলে গরম ই ভালো !

৩| ২৫ শে জুন, ২০১৯ রাত ৮:২৪

শায়মা বলেছেন: বেঁচে থাকা দারুন ব্যপার। সাঁজি আপু বলেছিলো!

গল্পটাও দারুন হয়েছে ভাইয়া! :)

২৫ শে জুন, ২০১৯ রাত ৮:৪৩

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। সাজি আপু ঠিক ই বলেছে, বেচে থাকাটা সত্যি ভালো ব্যাপার।

৪| ২৫ শে জুন, ২০১৯ রাত ৯:৫০

মুক্তা নীল বলেছেন:
সুন্দর পর্ব যাকে বলে বেঁচে থাকার আহ্বান।
এত বছর জহুরার জন্য প্রতীক্ষা করে , দুদিন ফোন বন্ধ পেয়ে সুইসাইডের ভুত মাথায় চাপলো , তার মানে অর্ণব ভীষণ
আবেগি ।

২৫ শে জুন, ২০১৯ রাত ১০:১০

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য। অর্ণব ভেবেছিলো, এই বার বোধহয় আবার হারালো !

৫| ২৬ শে জুন, ২০১৯ বিকাল ৪:৩০

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: বেশ।

২৬ শে জুন, ২০১৯ বিকাল ৫:১০

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.