নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে বুঝতে পারছি না আমি কে বা কি ?

মাধুকরী মৃণ্ময়

কিংকর্তব্যবিমুড়

মাধুকরী মৃণ্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

শনিবার সন্ধ্যা (ঝলমলে এক রোদের জন্মদিন)

০৫ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:২৫


প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
চতুর্থ পর্ব
পঞ্চম পর্ব

এটা একটি অমিথ্যা গল্প। জীবিত অথবা মৃত কারো সাথে মিলে গেলে লেখক স্বয়ং দায়ী। উপযুক্ত প্রমান দিয়ে ক্ষতি পূরন আদায় করতে পারেন !

বিকাশ গাড়িকে এতো কিউট তা অর্ণব আগে কখনো খেয়াল করেনি। কি সুন্দর ঢেউ খেলানো হলুদ রঙ । মনে হয় রাস্তার মাঝখানে একটুকরো শর্সে ক্ষেত। অর্ণব কাক ঢাকা ভোরে আজিমপুর যেতে যেতে ভাবছিলো। সারা রাত তার ঘুম হয় নাই। জোহরার জ্বর এসেছে। রাতে জোহরা মেসেজ করেছিলো , আমার খুব জ্বর। শুধু এইটুকু। অর্ণব পাশের রুমের মুস্তফিজ সাহেব কে বললো, ভাই দেখেন তো আমার জ্বর এসেছে কিনা। মুস্তাফিজ সাহেব কপালে হাত দিয়ে বললো, না তো। জ্বর তো আসার কথা, আসে নাই ক্যান। অর্ণব চিন্তিত মখুএ বললো। যান জ্বর কে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসেন। এই বলে মুস্তাফিজ সাহেব দরজা বন্ধ করলো। অর্ণব সারা রাত জেগে থেকে ভোর বেলা আজিমপুরের দিকে রওনা দিলো। গাড়িতে উঠে খেয়াল করলো, রাতে যা পড়েছিলো সেটাই পড়ে চলে এসেছে। বিকাস গাড়ির কন্ডাক্টর যখন হাক ছেড়ে বললো, এই খিলক্ষেত, বনানী, সাইন্স ল্যাব, কলাবাগান, আজিমপুর। অর্ণব মনে হলো, এতো কিউট কন্ঠের কন্ডাক্টর সে জীবনে দেখে নাই।
আড়মোড়া ভাঙ্গা শহরের ভেতর দিয়ে অর্ণব যখন আজিমপুর পৌছালো তখন সকাল সাতটা । ধোয়া ওঠা চায়ের দোকান, অফিস গামি মানুষ, খবরের কাগজের ফেরীওয়ালা, সারি বাধা বাসের জটলা, পশ্চিমের মসজিদের মিনার, মেছওয়াক করতে থাকা মুসুল্লি, থপ করে থুথু ফেলা উদাসিন মানুষ, লালচোখা যুবক , বাচ্চার হাত ধরে থাকা স্বাস্থবান মহিলা, সব ভালো লাগছে অর্ণবের কাছে। আজিমপুর এতো কিউট ক্যান ! আবার ভাবলো অর্ণব । ভাবতে ভাবতে জোহরাকে ফোন দিলো অর্ণব।আমি আজিমপুর , তুমি একটু আসবা প্লিজ। কন্ঠে বিশ্ময়ের আকাশ নিয়ে জোহরা বললো, তুমি আজিমপুর ! এখন ! আসছি।
একটা সিগারেট খেতে পারলে ভালো হতো ।কিন্তু জোহরার কথা ভেবে ইচ্ছাটাকে দমন করলো অর্ণব। আরো অনেক ইচ্ছা দমন করে অর্ণব। তার ইচ্ছা করে, জোহরা কেমন করে বাসায় থাকে তা দেখতে, কেমন করে ঘুম থেক উঠে হাই তোলে, আড়মোড়া ভাংগে, কেমন করে পাচ তালার ফ্লাটে ওঠে, ওঠার পরে কি একটু হাপিয়ে যায়, কেমন করে বিষন্ন দুপুর কিংবা বৃষ্টির রাত কাটায়, সকালে দুপুরে রাতে কি খায় , কেমন করে খাই, খাওয়ার মধ্যে কি পানি খায় না শেষে। এই আজগুবি ইচ্ছার কথা কখনোই অর্ণব জোহরাকে বলতে পারে না। এমনিতেই জোহরা অর্ণবকে বলে , তুমি একটা পাগল। এই সব শুনলে বলবে, তুমি একটা রাম পাগল।
তুমি কই, আমি কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি। জোহরা ফোনে করে বললো। আমি রাস্তার এই পাশে যেই পাশে একটা মসজিদ আছে। অর্ণব চারিদিকে তাকাতে তাকাতে বললো। রাস্তা পার হও । জোহরা বললো। অর্নব দেখলো সদ্য ফোটা একটা গোলাপ কেমন করে যেন বাগান থেকে রাস্তাই চলে এসেছে। আমি চোখে কাজল না দিয়ে বাইরে বের হই না, আজকে কাজলও দিতে পারি নাই। জোহরা খানিকটা মুখ বাড়িয়ে দিয়ে অর্ণব কে দেখালো। অর্ণব দেখলো একটা গভীর চোখ, চোখের মধ্যে ঝিলিক মারা মনি আর তার মধ্যে তার ছবি। এমনভাবে দেখোনা , চোখে ঝিলমিল লেগে যাবে। জোহরা চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো। তোমার চোখ কি সূর্য যে ঝিলমিল লেগে যাবে। অর্ণব হেসে বললো। আর চন্দ্রবিন্দুর গানের লাইন বলতে হবে না। আমি জানি এই গান।জোহরা বললো। তাহলে এই গানও তোমার জানা উচিত, আমি তোমার সাথে বেধেছি আমার প্রান , প্রান সখি বন্ধু হে আমার। এই গান আমি জীবনে প্রথম শুনলাম। জোহরা বললো।
আচ্ছা বাদ দাও , চলো নাস্তা করি, ক্ষুধা লেগেছে। নাস্তা করতে করতে জোহরা বললো, তোমাকে আমি কালকে হোয়াটসএপ করেছিলাম। পেয়েছো ? নাতো, আমার নেট নাই। কি লিখেছিলো বলো। জোহরা যে কথা শোনালো তার জন্য অর্ণব মোটেই প্রস্তুত ছিলো না।

আমি দুই তিন দিন ধরে বাসায় কিছুই তেমন খাই না। যেখানে আমি টাকা দিতে পারছি না সেখানে আমি খাবো কেন ! আমার বাসায় এটা দেখার বিষয় না যে আমি বেতন পাচ্ছি কি পাচ্ছি না। বাবা আবার বিয়ের জন্য ছেলে দেখা শুরু করেছে। আমার বিয়ে করার একদম ইচ্ছা নাই এখন। মামুন এখনো নানা ভাবে চেষ্টা করছে আমার কাছে ফিরে আসার জন্য। আমি যে এই রকম পরিস্থিথির মধ্যে বেচে আছি সেটাই অনেক বড়। তোমার কাছে এত সব বলছি এক কারনে যে তুমি যাতে আমাকে বুঝতে পারো।
অর্ণব আসলে খুব একটা বুঝলো না। যদিন জোহরার বিয়ে হয়ে যেতো তাহলে তার বাবা মা কিভাবে চলতো। মেয়ের টাকার উপর এই যদি নির্ভরশীল হবে তাহলে মেয়েকে আবার বিয়ে দিতে চাইবে কেন! মামুন এখন ইচ্ছা করলেই আবার জোহরাকে বিয়ে করতে পারবে না। কারন তাদের একবার ডিভোর্স হয়ে গেছে। নানা প্রশ্ন আর শংসয় নিয়ে অর্ণব শুধু বললো, দেখো আমি ছেলে মানুষ। আমার বাড়িতে আমার কাছে তেমন কিছু ডিমান্ড নাই। আমার কাছে কখনো টাকা চাই না। এমন না যে আমার পরিবার খুব অবস্থাসম্পন্ন।কিন্তু তারা ভাবে ছেলের টাকা ছাড়াও তো আমাদের চলছে তাহলে ওর থেকে কেন টাকা নিতে হবে। আর তুমি তো মেয়ে। তোমার বাবা মায়ের তো খুসি হওয়ার কথা যে তাদের মেয়ে একটা চাকুরী করছে। তারা কিভাবে আশা করে যে তার মেয়ে তাদের টাকা দিবে।
জোহরা এক ঝটকায় চেয়ার থেকে উঠে বললো, আমি আশাও করি না যে তুমি আমারে বুঝবা।
অর্ণব আসলে অনেক কিছু বোঝে না। হয়তোবা সে এই পরিস্থিথি জীবনে পার করে নাই। তাই তার কাছে সব কিছু অচেনা , রহস্যময় লাগে। অর্ণব আর কিছু বুঝতেও চাই না। শুধু চাই জোহরার সমস্ত কিছুতে সব সময় থাকতে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য চলো আমরা হাটি। আজকে আমাদের হন্টন দিবস।
হাটতে হাটতে এফ রহমান হলের দিকে চলে এসছে তারা। অর্ণব বললো , জানো আমার মনে হয় তোমার জীবনে এতসব দুর্ঘটনা আল্লাহ ইচ্ছা করে ঘটাইছে। জোহরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অর্ণবের দিকে তাকালো। অর্ণব বললো , মনে করো, তোমার যদি নির্ঝরের সাথে ক্লিক করতো তাহলে সুখে শান্তিতে এক বাচ্চার মা হয়ে যেতে, আমার সাথে আর দেখা করতে না। আবার মনে করো, মামুনের সাথে তোমার যদি কোন ঝামেলা না হতো তাহলে আমার সাথে এইরকম সকাল বেলা হাটতে না। আল্লাহ তোমার সাথে এতসব অবিচার করেছে আমার সাথে সকাল বেলা হাটানোর জন্য। জোহরা কিছুক্ষন অর্ণবের দিকে চেয়ে থেকে বললো, তুমি একটা স্বার্থপর।

পরিস্থিতি আবার গম্ভীর হচ্ছে। অর্ণব প্রানপনে চেষ্টা করছে কিভাবে একটা লঘু পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যায়। জোহরা অনেক্ষন চুপ করে থেকে বললো। আমার মাথা ব্যাথা করছে । অর্ণব বললো , মাথা ব্যাথা কমানোর ঔষধ আমি জানি, হাত দাও। জোহরা নির্দিধাই হাত বাড়িয়ে দিলো। অর্ণব দুই আংগুলে মাঝখানে কিছুক্ষন চাপ দিয়ে ধরে থাকলো। বললো, কমেছে । না কমে না। ছাড়ো। জোহরা হাত ছাড়িয়ে নিলো।
টি এস সি , শহীদ মিনার , চাংখার পুল ঘুরতে ঘুরতে তারা মাথার উপর সূর্য আনলো।
কিন্তু তাদের বুকের ভেতর যে গভীর রাত সেখানে কি কখনো সূর্য উঠবে ? কেউ জানেনা।



মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: প্রচুর টাকা পয়সা জমিয়ে তার পর বিয়ে করা উচিত।

২| ০৫ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:৫০

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: রাজীব নুর ভাই, ঠিক ই বলেছেন। টাকার অভাব সবচেয়ে বড় অভাব। টাকার অভাব থাকলে ভালোবাসা ফিকে হতে সময় লাগে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.