নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে বুঝতে পারছি না আমি কে বা কি ?

মাধুকরী মৃণ্ময়

কিংকর্তব্যবিমুড়

মাধুকরী মৃণ্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইরাবতী

৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১:২৪



পুরান ঢাকার শীতের ভোর। আতস খান লেনের একট সরু গলিতে একটা দ্বীর্ঘ যুবক কিছুটা কুজো হয়ে হাটছে আর চোরের মতো এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। তার হাতে লাল রঙ্গের একগুচ্ছ কাগজে।পুরান ঢাকার এই এলাকাটা যুবক তার হাতের রেখার মতো চেনে। যদিও এখানকার বাসিন্দা না সে। আতস খান লেনের উত্তরে জগন্নাত সাহা লেন পুর্বে পুস্পরাজ সাহা লেন আর উত্তরে লালবাগ রো্ড। কিন্তু যুবকের টার্গেট শুধুমাত্র আতস খান লেন। সে হাটতে হাটতে থেমে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে দেখে । না , কেউ নেই। ডিসম্বরের তীব্র শীতেও সে ঘেমে যাচ্ছে। বাম হাত দিয়ে কপালের ঘাম মোছে। লম্বা এলোমেলো চুল পেছনের দিকে সরাই আংগুল ঢুকিয়ে। চোখে দিশাহার ভাব। যুবক পকেটে হাত ঢুকিয়ে আইকা বের করে। শেষ বারের মতো আশে পাশে দেখে নেই। যা করার দ্রুত করতে হবে। কাগজ গুলো রাস্তার উপর রেখে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আঠা মারে। তারপর একটার পর একটা দেয়ালে লাগাতে থাকে। ফিরে যাওয়ার আগে শেষ বারের মতো পেছনে তাকাই, দেখে একটা স্কুলগামী এক বালক টেনে টেনে লাল রঙের পোষ্টার পড়ছে, প্রি য় ই রা ব তী...

যুবকের নাম মৃন্ময়। কুষ্টিয়া শহরে বাড়ি। কয়েক মাস হলো ঢাকা এসেছে। বাল্যকালের বন্ধু হাসিবুলের ম্যাচে উঠেছে। হাসিবুল এই কয় মাস ধরে নানান ফন্দি ফিকির করে বের করতে চেষ্টা করেছে তার ঢাকা আসার কারন। জিজ্ঞাসা করলেই মৃন্ময় রহস্যময় হাসি দেই। সেই হাসির রহস্য হাসিবুলের বের করার সাধ্য নাই। সে শুধু খেয়াল করে প্রতিদিন খুব ভোরে উঠে মৃন্ময় চোখ মুছতে মুছতে বের হয়ে যায়। ফেরে দুপুরের দিকে। হাসিবুলের দুঃখ হয় এই ভেবে যে এইরকম ব্রিলিয়্যান্ট ছেলে অজানা কারনে আওলা হয়ে গেছে।।

হাসিবুল একদিন তাকে চেপে ধরে । হুমকি দেয়। বলে, আজ যদি সব কিছু না খুলে বলিস তাহলে আমি তোর বাড়িতে ফোন দিয়ে সব কথা বলবো আর তোরে এখান থেকে লাথি দিয়ে বিদায় করবো। কসম। মৃ্ন্ময় নিরুপায় হয়ে বলে , ইরাবতী নামের একটা মেয়ে আতস খান লেনের কোন একটা বাড়িতে থাকে । আমি জানিনা তার বাড়ির ঠিকানা। শুধু জানি সে রোজ সকালে চোখে কাজল দিয়ে অফিসে যায় । আমি তাকে দেখার জন্য প্রতিদিন ভোরে উঠে আতস খান লেনে যেয়ে বসে থাকি। কিন্তু তার দেখা নাই। হাসিবুল খেকিয়ে ওঠে। বলে ব্যাটা গাজাখুরি গল্প শুরু করেছিস । তুই থাকিস কুষ্টিয়াই আর বতী মানে ইরাবতী থাকে পুরান ঢাকাই। ক্যামনে দেখলি। ক্যামনে জানলি সে চোখে কাজল দেই । মৃন্ময় বলে, সে তো আমার কাছে আসতো। আমাদের বাড়ির সামনে সাপের মতো বাকা যে গড়াই নদী আছে। সেখানে তার সাথে আমার দেখা। সে আমাকে বলেছে, সে যখন লালবাগ দিয়ে হেটে যায়, তার পায়ের স্পর্ষে লালবাগের সমস্ত ধুলিকনা সোনা হয়ে যায়, চোখ মেললেই আতস খান লেনের নিয়ন আলো চুপসে যায়। তার কালো চুল বেয়ে নাকি ঢাকা শহরে রাত নামে। এসে দেখি সব ফক্কা। কিছুই মিলছে না। মৃন্ময় বোকার মতো হাসে।

হাসিবুলের সন্দেহ হয়। হাসিবুল মৃন্ময়ের কাধে হাত রেখে বলে , তুই চিন্তা করিস না। কালকে আমি আর তুই খুজতে যাবো। মৃন্ময় খুসিতে গদগদ হয়ে যায়। হাসিবুলকে বুকে টেনে নিয়ে বলে, তোর মনে আছে আমরা ছোট বেলায় নদীতে পানকৌড়ি পানকৌড়ি খেলতাম। হাসিবুল বলে , হ হ মনে আছে । এই বার ঘুমাতে যা। ভোরে উঠতে হবে। মৃন্ময় খুসি মনে ঘুমাতে যায়।
হাসিবুল ফোন নিয়ে ছাদে আসে। মৃন্ময়ের বাড়িতে ফোন দেই। মৃন্ময়ের মা ফোন ধরে । হাসিবুল বলে , চাচি মৃন্ময় কই। ওপাশ থেকে মৃন্ময়ের মা ফুপিয়ে ওঠে। বলে, বাপগো আমার ছেলেডার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। দুই তিন মাস ধরে কোন খোজ খবর নাই। হাসিবুলের ভ্রু কুঞ্চিত হয় । কি হয়েছে চাচী খুলে বলেন তো। মৃন্ময়ের মা বলে, তুমি তো ওর ছোট কালের বন্ধু , জানোই তো রাত বিরাতে নদীর ধারে ওর বসে থাকার নেশা। এতো নিষেধ করি শোনে নাই। আকাশে চাঁদ দেখলে আমার ছাওয়ালডার মাথা নষ্ট হয়ে যায়। সেদিন মাঘের পুর্নিমা। আকাশে কাসার থালার মতো চাঁদ উটিচলো। ও ঘর থেকে বাইর হয়ে গেলো। আমি কলাম ওরে যাইস নে যাইস নে। কিডা শোনে কার কতা। তারপর সকালে দেকি নদীর পারে পরে রয়িচে। কলো, ইরাবতী না কিডা আইচিল।তিন দিন ধরে ওকানে। ভাত নদীর পারেই আমি দিতাম। নদীর পারতে উটানোই যাচ্ছিলো না। তারপর মানুষজন জোর করে বাড়ি দিয়ে যায়। ডাক্তার কইছে , মিন্টাল পরব্লেম । একটা মাত্র সোনার টুকরো আমার। মৃন্ময়ের মায়ের চাপা কান্না এইবার আহজারিতে রুপ নেই । হাসিবুল বললো, চাচি মৃন্ময় আমার কাছে , নিয়ে যান।

পরের দিন সকালে মেন্টাল হসপিটালের গাড়ি এসে মৃন্ময় কে তুলে নিয়ে গেলো।
হাসিবুল অফিস শেষ করে আতস খান লেনে গেলো। যেয়ে দেখলো , সারা আতস খান লেন লাল পোষ্টার ঢেকে গেছে। সেই পোষ্টারে লেখা।।

প্রিয় ইরাবতী

তুমি কি কখনো দেখনি, একটা যুবক লাল কিংবা ধূসর রঙের টিশার্টা আর নীল রঙের জিন্স পড়ে আতস খান লেনের কোন একটা গলিতে বিষন্ন হয়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। ।
তুমি কি কখনোই দেখেনো ঝাকড়া চুলের এক যুবক আতস খান লেনের ধূলো অতি যত্নে বুক পকেটে রাখে।
তুমি কি কখনোই দেখনি একটা দ্বীর্ঘ যুবক কেমন করে মুখরিত করে , জগন্নাত সাহা লেন, লালবাগ রোড ?
তুমি কি কখনোই দেখোনি, একটা যুবক পৃথীবির সমস্ত গোলাপ বুকের মধ্যে নিয়ে কেমন করে মরে যায় ?
তুমি কি কখনোই দেখোনি, আমার বুকে তোমার জন্য আটলান্টিকের ঢেউ জাগে?
তুমি কি কখনোই দেখোনি আমাকে !?

হাসিবুল পোস্টারের দিকে তাকিয়ে দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে। মৃন্ময়ের জন্য না।ইরাবতীর জন্য। ঝাক বেধে সন্ধ্য নামে আতস খান লেনে। শহুরে বাতি একে একে জ্বলে ওঠে রাস্তাই। হাসিবুল ঘোরের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে। তার মনে হচ্ছে এক্ষুনি চোখে কাজল দেয়া একটা মেয়ে এসে বলবে, তুমি এখানে ! আমি সারা শহর তোমাকে খুজে বেড়াচ্ছি। সেই মেয়ের চোখের আলোই ঝাপসা হয়ে পৃথীবির সব আলো। হাসিবুল পায়ে পেরেক গেথে দাঁড়িয়ে থাকে । নড়তে পারে না ।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১:৩৯

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: পড়ে ভালই লাগল।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ২:০৫

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগলো।

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১:৫৬

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: পাগলামিও সংক্রামিত হয়। হা হা =p~

ইউনিক প্লট। উপস্থাপন ভালো লেগেছে। তবে 'দেই' এর স্থলে 'দেয়' হলে ভালো লাগবে।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ২:০৪

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: আপনি ধরতে পেরেছেন। ধন্যবাদ। আচ্ছা পরের লেখাই মনে থাকবে।

৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৭:৫৭

শরীফ বিন ঈসমাইল বলেছেন: যদিও আমি কখনো আতস খান লেনের দিকে যাই নি তাই দেখিনি তবে পড়তে পেরে ভাল লাগল

৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪১

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: যায়েন না , ভুতে ধরবে।

৪| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৯:০৩

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো লেগেছে ।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪১

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১:৩০

নীল আকাশ বলেছেন: লেখা ভালো লেগেছে। প্লটে নতুনত্ব আছে।
কিন্তু আপনি প্রচুর বানান ভুল করেছেন। বেশি বানান ভুল একটা লেখার মান নীচে নামিয়ে দেয়।
লেখাটা পোস্ট দেবার আগে আপনি সম্ভবত নিজেই ভালো করে পড়েন নি। একজায়গায় লিখেছেন আইকা আবার পরেই লিখেছেন আঠা। দীর্ঘ খুব সাধারন শব্দ, সেটার বানানো আপনি ভুল করেছেন।
আমি লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়েছি দেখেই ভুলগুলি ধরা পড়ল।
আশা করি ভবিষ্যতে সাবধান হবেন লেখা পোস্ট দেবার সময়।
শুভ কামনা রইল।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৭

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: আমি জানি আমার বানানে সমস্যা আছে। এ সমস্যার সমাধান নাই। ভুল বানানে অর্থ পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আমি কোন সমস্যা দেখি না। ধন্যবাদ। ঈদ বানান ইদ লিখতে কি রকম লাগে না ? কেনো লাগে? চোখের অভ্যস্ততা।

৬| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: হাসিবুলের জন্য মায়া লাগছে।
বেচারা। কোনো মেয়েকে এতটা ভালোবাসা ঠিক না।

৭| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর গল্প।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৮

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ। আমারও মায়া লাগে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.