নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে বুঝতে পারছি না আমি কে বা কি ?

মাধুকরী মৃণ্ময়

কিংকর্তব্যবিমুড়

মাধুকরী মৃণ্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

লক ডাউনঃ ০৩

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:২৮





একটা তীব্র গন্ধ ফাতেমা খালার শরীর থেকে বের হচ্ছে। আমি মনে করার চেষ্টা করছি , কিসের গন্ধ। মানুষ মারা যাওয়ার পর যেরকম গন্ধ , সেরকম? না, আমি তো কোনদিন পচা মানুষ শুকে দেখি নাই। জানবো কি করে ?তাহলে কিসের? পরিক্ষার সময় অংকের সুত্র ভুলে গেলে যেমন আতিপাতি করে খুজি তেমন ভাবে গন্ধের নাম আমি খুজতেছি। পরিচিত গন্ধ। কিন্তু নাম মনে করতে পারছি না।
আমার দিশাহারা লাগে। গন্ধটা আমার নাকের ভেতর থেকে পাকস্থলিতে যায় তারপর নিভে যাওয়া মোমের ধোয়ার মতো ঘুরে ঘুরে চলে যায় মাথায়। মাথার ভেতর পরিচিত ঝিঝি পোকারা কোরাস গাইতে শুরু করে। একটানা। ঝি ঝি ঝি। না, আমি জেগে থাকবো। আমি ফাতেমা খালার চোখের দিকে তাকিয়ে বলবো, আপনি আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন । অথচ আমি আপনাকে প্রতিমাসে বেতনের টাকার সাথে বাড়তি টাকা দিই। কোনদিন বলি নাই, তরকারিতে লবন কম হইছে। কোনদিন ছুটি চেয়ে পান নাই, এমন হয় নাই। অথচ আপনি আমার সাথে এমন করছেন !
ফাতেমা খালা ধির পায়ে আমার বিছানার কাছে আসলো। আমার কপালে হাত রাখলো। জীবন্ত হাত। আমি চোখ বন্ধ করলাম অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার জন্য। হলাম না। ফাতেমা খালা বললো, কামের কাম করছেন, জ্বর বাধাইছেন। আমি না আসলে তো মরে পড়ে থাকতেন। লাশ পচে গন্ধ বেরোতে, কেউ দেখতে আসতো না।
আবার আমি গন্ধটা পেলাম। গন্ধের নাম মনে পড়েছে , হলুদের গন্ধ। ফাতেমা খালার গা থেকে ভকভক করে বেরোচ্ছে।
আমি যান্ত্রিক কন্ঠে প্রশ্ন করলাম, আপনি মরেন নাই !?
ফাতেমা খালা বললো, নাগো মামা, গরীবের কপালে সুখও নাই, মরণও নাই। যায়, বালতিতে করে পানি নিয়ে আসি। আপনের শরীর থেকে আগুন বের হচ্ছে।
ফাতেমা খালা আমার মাথায় পানি দিয়ে দিচ্ছে। চুলের ভেতর হাত দিয়ে বলছে, আপনি কি চুল না কাটার মানত করেছেন? মাইয়া লোকের মতো বড় চুল হইছে। আমি বললাম, ফ্লাটে ঢুকছেন ক্যামনে! থাকেন কই! আমারে ভয় দেখান ক্যান!
ফাতেমা খালার দ্বির্ঘশ্বাস আমার কপাল স্পর্শ করলো। উনি বললেন, আমার স্বামী হারামী আমাকে মেরেই ফেলতে চাইছিলো। কয়ডা টাকার জন্য যে সে আমারে বটি দিয়া কোপাবে , আমি স্বপ্নেও ভাবি নাই। আমি সারা বাড়ি রান্না করে , ঝুটা কাজ করে যে টাকা কামাই করি তা তার কাছে দিয়ে দিই। আমি জানি , সে নেশা করে, জুয়া খেলে আর আমারে সময় করে মারে। আমি কিছু বলি না। স্বামী তো, পরম ধন। সেদিন বাড়িতে যাওয়ার পর বললো, আমারে পচিশ হাজার টাকা দে। সব কিছু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, পরে আর কিছু কিনতে পারবো না। না কিনলে নেশা করুম কি দিয়া? আমি একদিন কথায় কথায় কইছিলাম , আমার কাছে পচিশ হাজারের মতো টাকা আছে। অর্ণব মামার কাছে রাইখ্যা দিছি। উনার কাছে রাখা আর ব্যাংকে রাখা সমান কথা। সেই টাকার জন্য তার মাথা খারাপ হয়ে গেছে এখন।
আমারও জেদ চেপে গেলো। বললাম ,আমি মরে যামু তবু টাকা তুমি পাবা না। কি খামু , তার ঠিক নেই , তুমি আছো তোমার নেশা নিয়া। এক কথা দুই কথা কইতে কইতে গায়ে হাত দিলো। তা দিক। আমার মাইর খাওয়ার অভ্যাস আছে। তারপর রান্নাঘর থেকে বটি আইন্যা বললো, টাকা না এনে দিলে তোরে আমি খুন করমু। তারপর বলবো, তোর করোনা হয়ছিলো। লাশ সরকার দাফন করেছে। কেউ আমারে কিছু কইতে পারবো না। আমারও জেদ চেপে গেলো , মারো আমারে , একবারে মাইর‍্যা ফেলাও। সে এলোপাতাড়ি কোপ মারা শুরু করলো। আমি মাটিতে পড়ে গেলাম । নিশুতি রাত। বস্তির সবাই যার যার মতো ঘুমাইছে। সে আমাকে টানতে টানতে বস্তির পেছনে ডোবার ধারে নিয়ে আসলো। বললো, তোর শরীর সিমেন্টের বস্তা বাইন্ধা ডুবায়া দিমু। হয়তো সে বস্তা খুজতে গেলো। আমি কোনরকমে উইঠা এইখানে আইছি। মুস্তাফিজ মামা চাবি দিয়া গেছিলো রুম পরিস্কার করার জন্য । সেই চাবি দিয়া ঢুকছি। আপনার রান্নাঘর থেকে এক বোয়াম হলুদ নিয়া কাটা জায়্গায় লাগাইছি।

আমি এতোক্ষনে বুঝলাম , হলুদের গন্ধ কেনো পাচ্ছি। মাথায় পানি দেয়া হয়ে গেছে। টাওয়াল এনে বললো, নেন, মাথাটা মুছে নেন। আমি মাথা মুছতে মুছতে জিজ্ঞাসা করলাম, রান্না করেন ক্যান ? আর আমাকে তো এইসব বলতে পারতেন। উনি বললেন, আপনার খাওয়া দাওয়ার কষ্ট দেইখ্যা রান্না করতেছিলাম। ভাবলাম , রান্না করার পর বলবো। কিন্তু আপনি এমন ভাবে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন সেদিন রাতে। বলার সুযোগ পেলাম না । সারাদিন উপুড় হয়ে ঘুমালেন। আমি এই ফাকে রান্না করলাম হলুদ ছাড়া রুই মাছ। সেইটা দেখে আপনি আবার ভয়ে মরেন । বলবো কখন, আপনি কন?
আমি হেসে ফেললাম, বললাম, আপনি থাকেন কই এখানে?
মুস্তাফিজ মামার রুমে। ফাতেমা খালা অপরাধির ভংগিতে মুখ নিচু করলো।
আমি বললাম , এখন কি করবেন ? ফাতেমা খালার চোখ মুখ , শক্ত হয়ে উঠলো, বললো, আমি বিচার চাই গো মামা, বিচার চাই। আমারে বিচার দ্যান। এমন সময় , কলিং বেল বাজলো। খালা দৌড়ে গিয়ে আই হোল দিয়ে দেখলো। তারপর আমার কাছে এসে বললো, আইছে, আপনার থেকে সেই টাকা নিতে। আমি বললাম, আপনি পাশের রুমে যান।
আমি উত্তরা থানাতে ফোন করছি। পাশের বাসা থেকে ভেসে আসছে সূরা আল ইমরানের অলৌকিক সুর মূর্ছনা।"কুল্লু নাফসিন যাইক্বাতুল মাউত”,। এই পাঁচ কোটি বছরের পুরোনো পৃথিবী আজ স্তব্ধ। মানুষ তার অবধারিত গন্তব্যকে দীর্ঘ করতে আশ্রয় খুজতেছে আকাশে এবং ঘরে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:২৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
যাকে বলে 'মধুরেণ সমাপয়েৎ
দুঃখ একটাই এর পরে আর কোন
পর্ব আসবেনা!!

তবে আপনার পরবর্তী কোন এক
গল্পে আবার হাজির হবো যদি
এই মহামারীতে অক্কা না পাই।
ভালো থাকবেন।

২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:২৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এই করোনার কারণে অনেক হ্রদয় ভাঙ্গা ঘটনা দেখতে হচ্ছে।

৩| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: অদ্ভুত।

৪| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:২২

গন্ধহীন বেলী ফুল বলেছেন: মনে হচ্ছিলো আমার চোখের সামনে ঘটছে......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.