নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালোবাসি ঘুরে বেড়াতে, গান শুনতে, বই পড়তে...

মাহাদী হাসান প্রেত

আমার সম্পর্কে আর কি বলবো! আমি তো আমিই!

মাহাদী হাসান প্রেত › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেলিফুল হাওয়া ( একটি ১৮+ ভৌতিক গল্প)

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১৩

মাঝ ফাগুনের অলস দুপুরের ঘুম বড়োই মজার ঘুম। ছুটির দিনের দুপুরগুলো ঘুমিয়েই পার করে সুমন। আজও দুপুরে ঘুমিয়েই ছিল। হঠাৎ লোডশেডিং, এ শহরের পুরোনো রোগ। মাথার ওপর ঘুরতে থাকা সিলিং ফ্যানটা বন্ধ হয়ে যেতেই সুমনের ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভেঙে গেলেও চোখ থেকে ঘুমের রেশ যায়নি। আঁধবোজা চোখে জানালায় তাকিয়ে আছে সুমন। হঠাৎ খোলা জানালা দিয়ে কোথা থেকে যেন একরাশি বরফশীতল বাতাস ঢুকলো ঘরে। ফাগুন মাসের বাতাস এতো শীতল হয় নাকি? এক নিমিষেই শরীরে হালকা শীত শীত ভাব চলে এসেছে। তারচেও বড় কথা সারা ঘর বেলিফুলের গন্ধে ভরে গেছে। ঘুমঘুম অবস্থাতেই সুমনের মনে হলো, বেলি তো বসন্তের ফুল না। আাজকাল অবশ্য সিজন ছাড়াও নানারকম ফুল-ফল পাওয়া যায়। কিন্তু ঢাকা শহরের এই দশতালা ফ্ল্যাটে বেলি ফুলের গন্ধ আসবে কীভাবে? অথচ বেলিফুলের গন্ধই আসছে।
কেমন মাতাল মাতাল লাগছে সুমনের! বেলি ফুলের কড়া গন্ধ ওর নিঃশ্বাসের সাথে শরীরের সমস্ত শিরা, উপশিরা, ধমনী বেয়ে রক্তের প্রতিটা কণায় কণায় মিশে যাচ্ছে। অচেতন হয়ে যাচ্ছে সুমন। বহুদূরে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে! সুমন হারিয়ে যাচ্ছে অনেক আগে হারিয়ে যাওয়া কৈশর আর যৌবনের মাঝামাঝি এমন এক ঝিম ধরা দুপুরে। শহুরে কোলাহলপূর্ণ দুপুর নয়, বহুকাল আগের ঝিমধরা গ্রামের নির্জন এক দুপুর।
সুমন মনে করতে চায় না কিছু। ‍কিন্তু সব মনে পড়তে থাকে সুমনের। সেই দুপুরের কথা, রূপন্তীর কথা। রূপন্তী, কেমন পুতুলের মতো ছিলো মেয়েটি! এতোগুলো দিন এই পুতুলটাকে কীভাবে ভুলে ছিল সুমন! আবারো মনে পড়ে সেই ঝিমধরা দুপুরের কথা। কি মনে করে সেদিন রূপন্তী এসেছিলো সেই ঝিমধরা নির্জন ফাগুনের দুপুরে। বাড়িতে ছিল না কেউ। সুমন তাকিয়ে আছে রূপন্তীর দিকে। হঠাৎ ঘরটা বেলিফুলের গন্ধে ভরে গেল। সুমনের নেশার মতো লাগতে থাকে ফুলের গন্ধে। ও এগিয়ে যায়। রূপন্তীকে জড়িয়ে ধরে ওর চুলে বেলিফুলের গন্ধ শুকতে থাকে। তারপর আরও নিচের দিকে। রূপন্তীর সারা শরীর থেকে বেলিফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। সুমন সে গন্ধের উৎস খুঁজতে থাকে পাগলের মতো। মাথার চুল পেরিয়ে কপাল, কপাল পেড়িয়ে ঠোট, ঠোট পেড়িয়ে গলা, আরো নিচের দিকে, রূপন্তীর বুকের বাদামী বৃন্তের মাঝে, পেটে, নাভিতে, বেলিফুলের গন্ধ শুকতে শুকতে আরো নিচে নামতে থাকে সুমন। আরো নিচে, আরো গভীরে। গভীর থেকে আরো গভীরে হারিয়ে যায় সুমন। রূপন্তী কাঁপতে থাকে, ঘামতে থাকে। তারপর হঠাৎ বেলিফুলের গন্ধ কর্পূরের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যায়, ওদের নেশা কেটে যায়। সুমন বুঝতে পারে না কি বলবে। কাপড়টুকু সামলে নিয়ে ঘর থেকে ছিটকে বেড়িয়ে গিয়েছিলো রূপন্তী।
তারপর, বেশ কয়েকদিন পরে একদিন রাতে এসেছিলো রূপন্তী, সুমনের কাছে। ওর হাতে ব্যাগ ছিল। সবকিছু সিনেমার পর্দার মতো ভাসতে থাকে সুমনের চোখে। রূপন্তী পালিয়ে যেতে চেয়েছিলো সুমনের সাথে, অনেক দূরে কোথাও। আরো বলেছিলো ওর পেটে সুমনের বাচ্চা। কিন্তু ওই এতো অল্প বয়সে কোথায়ই বা যাবার জায়গা ছিলো সুমনের?
সুমন রূপন্তীকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো, বাড়িতে ফিরে যেতে বলেছিলো। কিন্তু বাড়িতে ফিরে যায়নি রূপন্তী। পরদিন দুপুরে পাশের আমবাগনে আমগাছে ঝুলে ছিল রূপন্তীর নিথর দেহ। গলায় পেচানো গোলাপী ওড়নাটার সাথে ঝুলে ছিলো ওর গোলাপী শরীরটা।
বিছানা থেকে লাফ দিয়ে ওঠে সুমন। আর কিছু মনে করতে চায় না সে। কিন্তু সারা ঘর জুড়ে বেলিফুলের গন্ধ। সুমন দৌড়ে বেড়িয়ে যায়। একে একে সিঁড়ি ভেঙে নামতে থাকে। ঢাকা শহরের রাজপথ ধরে দৌড়াতে থাকে। দুই একজোড়া উৎসুক চোখ ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখছে সুমনকে। কিন্তু ওর কোনদিকে নজর নেই। পাগলের মতো ছুটে চলেছে। কিন্তু বেলিফুলের গন্ধ ওর পিছু ছাড়ছে না। সমস্ত ঢাকা শহর যেন বেলিফুলের কড়া গন্ধে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। সুমন একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়ে। রিকশাওয়ালাকে বলে শহরের বাইরে চলে যেতে। রিকশার প্যাডেল ঘুরছে, চাকা ঘুরছে, রিকশা এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বেলিফুলের গন্ধ পিছু ছাড়ছে না। সুমন রিকশাওলাকে তাড়া দেয় আরো জোড়ে চালাবার জন্য। রিকশাওয়ালা ঘাড় ঘুড়িয়ে সুমনকে দেখে। দুজনেই ঘামছে। মিরপুর বেড়িবাঁধ ধরে রিকশা এগিয়ে যায় রিকশা। এদকিটায় যনাবাহন, লোকজন কম। ক্রমেই নিরিবিলি হয়ে আসে রাস্তা। সুমন টের পায় ওর শরীর থেকেই বেলিফুলের গন্ধ আসছে।
বেলিফুলের গন্ধে অসহ্য লাগছে সুমনের, শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। সুমন আশুলিয়ার ধানক্ষেতেরে আইল ধরে দৌঁড়াতে থাকে দিকভ্রান্তের মতো। ইটভাঁটা পেরিয়ে, ধানক্ষেত পেড়িয়ে অনেক গভীরে চলে যায় সুমন। এখানে কোন মানুষ নেই। অনেক দূরে কয়েকটি ছোট ছোট ছেলে মেয়ে গরু ছাগল চড়া্চ্ছে। বেলিফুলের গন্ধ সুমনকে আরো আকড়ে ধরে, ওর নিঃশ্বাস ভাড়ী হয়ে আসে। সুমন টের পায় ওর শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতিটা শব্দ। একটা আমগাছের নিচে বসে থাকে সুমন। হঠাৎ আমগাছে দড়ি ঝুলে থাকতে দেখে। কোন রাখাল দোলনা পেতেছিলো হয়তো।
আমগাছের ডালে দড়িতে ঝুলতে থাকে সুমনের নিথর শরীর। ওর শরীর থেকে বেলিফুলের গন্ধ ছড়াতে থাকে ফাগুনের ঝিমধরা দুপুরের হাওয়ায়। (সব ঘটনা এবং চরিত্র কাল্পনিক।)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২২

বিজন রয় বলেছেন: চরম।!!

ব্লগে স্বাগতম।
শুভকামনা।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২৬

মাহাদী হাসান প্রেত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ দাদা।।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.