![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কর্মে বিশ্বাসী,আবার আমি ভোগী ও। আমার ভেতর ভালো কাজ করার প্রবণতা জন্মগত,প্রবণতাটা কিছু পাবার অাশায় মুখাপেক্ষী নয়। আমার ভেতর ধ্বংসের বীজও লুকিয়ে অাছে,ধ্বংস অামি করিও,তবে বিবেকের নির্দেশে ন্যায়ের স্বার্থে ধ্বংস করি। মানুষ হয়ে জন্মেছি সেজন্য নিজেকে ভাগ্যবান বলে জানি,সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু ত্রুটিহীন,অাদর্শ মানুষ আমি কোনদিন ও হতে পারব না,কারও পক্ষেই হওয়া সম্ভব নয় আর সেজন্য অামার ক্ষোভ আর যন্ত্রণার শেষ নেই...
আসুন আপনাদের একটা বাস্তব মজার গল্প শোনাই।
ঢাকা শহরের অন্তর্গত গুলশান-১ একটি অভিজাত এলাকা। শহরের নামকরা বড় বড় ব্যবসায়ি,বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির হর্তাকর্তা আর শিল্পপতিদের বসবাস এই এলাকায়। এই এলাকারই প্রতিটি ফ্ল্যাটে জীবিকানির্বাহের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে এ শহরেরই নিম্নশ্রেণীর এক দল লোক। যাদের আমরা কেউ বলি কাজের বুয়া আবার কেউ বলি মেইড সার্ভেন্ট। আমার আজকের এই গল্প এরকমই এক মেইড সার্ভেন্ট কে নিয়ে নাম আমেনা।
ছোটকালে বাবা মা হয়তো শখ করেই নামটি রেখেছিল। হয়তো ভেবেছিল ইসলামিক তাৎপর্যপূর্ন নামটি হয়তো দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত মেয়েটির ভাগ্য পরিবর্তন করবে। কিন্তু তারা জানে না যে তাদের এই ভাগ্য পরিবর্তন হওয়ার নয়। গরীবের কোন বন্ধু হয় না,তাদের ভাগ্য কখনো পরিবর্তন হয় না। তাই যে বয়সে মেয়েটির চুলে দুই বেনি করে কাধে স্কুলের ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল,বান্ধবিদের সাথে দড়িলাফ খেলার কিংবা পাথর দিয়ে বসে এক্কা দোক্কা খেলার কথা ছিল সেই বয়সে মেয়েটিকে ময়লা কাপড়-চোপড়,বাসন-কোসন ধোয়ার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল।
ছোট্ট একটা মেয়ে যে জন্ম হতেই চারদিকে দেখেছে শুধু দুঃখ,কষ্ট,ক্ষুদার আগুন তার জীবনে সুখ নামক বস্তুটা খুজতে যাওয়ার মত বোকামি পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। আমি আজ সেই আমেনার গল্পই বলছি।
বছর দুয়েক আগে আমেনা আর তার মা আমাদের বাসায় কাজ করেছিল মাসখানেকের জন্য। তখন আমেনার বয়স কত? ষোল বছর হবে। আমাদের বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর আর তেমন একটা যোগাযোগ ছিল না বললেই চলে। বছরখানেক আগে একদিন আমেনার মা এসে বললো সে নাকি বিদেশ চলে যাচ্ছে কাজের জন্য। আমেনা গুলশান-১ এর এক প্রভাবশালী শিল্পপতিদের বাসায়ই থাকবে কাজের মেয়ে হিসেবে।
যাই হোক তারপর কেটে গেছে আরো একটা বছর। স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেছে আমেনা আর আমেনার মায়ের কথা। দুদিন আগে হঠাৎ আবার আমেনার মা আমাদের বাসায় আসলো। মহিলা কে দেখে কিছুটা অবাকই হলাম। দেখে মনে হলো যেন কতদিন ঘুমায় না। চোখের নিচে কালি জমেছে।প্রচুর কান্না করলে যেরকম হয় ঠিক সেরকমভাবে চোখ দুটো বেঢপভাবে ফুলে আছে। মহিলার ভাঙা ভাঙা অসংলগ্ন কথার মর্ম যা দাড়ালো তা হলো, তিনি পনের-ষোল দিন আগে দেশে ফিরেছে। দেশে ফিরে যখন নিজের মেয়ের সাথে দেখা করতে যায় তখন প্রথমে তাকে বলা হয় তার মেয়ে বাসা থেকে চলে গেছে। পরবর্তিতে আবার বলা হয় তার মেয়ে নাকি তিন মাসের প্রেগন্যান্ট ছিল। পাপের ফসল মুছে ফেলতে নাকি ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্নহত্যা করেছে। পুলিশের কাছে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট চাইলে বলে বাড়ির মালিকের কাছে যেতে আর বাড়ির মালিকের কাছে চাইলে বলে পুলিশের কাছে যেতে। মেয়ের জন্য মায়ের আর্তচিৎকার যেন মিরাক্কেলের কোন মজার জোকস্। কাহিনী টা এখানেই শেষ। এক গরীব মা পায়নি তার মেয়ের মৃত্যুর খবর,পায়নি মৃত মেয়ের লাশ এমনকি জানে ও না কোথায় কবর দেয়া হয়েছে।
জোকস এপার্ট মেয়েটা যদি সত্যিই পাপের ফসল মুছে ফেলতে চাইতো তাহলে তো এবোরশন করে ফেললেই হতো। আত্নহত্যার কি প্রয়োজন ছিল? মেয়েটা তো আর এরকম বিখ্যাত কেউ ছিল না যে তার প্রেগন্যান্সির খবরে মিডিয়া তোলপাড় করে ফেলবে কিংবা তার বাইরে মুখ দেখানো টা অসম্ভব হয়ে পড়বে সেজন্য সে আত্নহত্যার পথ বেছে নিল। আর যদি আত্নহত্যা করেই থাকে তাহলে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট নিয়ে এত পানি ঘোলা করার কি মানে?
বাদ দেন ভাই এসব আত্নহত্যার বানানো নাটক। আসল গল্পটা আমি আপনাকে বলি। আঠারো বছরের উঠতি বয়সী আমেনার যৌবন দেখে নিজেকে সামলাতে পারেনি তারই মনিব নামের ঘৃণ্য পশু। মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে বারবার আমেনার যৌবনসুধা পান করে নিজের কামক্ষুধা নিবৃত্ত করেছে পশুতুল্য ঐ ব্যক্তি। পরে যখন দেখলো মেয়েটি প্রেগন্যান্ট তখন নিজের প্রেস্টিজ বাচাতে বাসার ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে সুন্দর মর্মান্তিক আত্নহত্যার ঘটনা বলে চালিয়ে দিল! আহ্ কত সহজ একটা মানুষের জীবন নেয়া।
আমেনার মত আরো অনেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অভিনব উপায়ে তাদের মনিবদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে এবং একসময় করুণ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিচ্ছে। মানুষরূপী যেসব পিশাচ এদের মৃত্যুর জন্য দায়ী তারা সবসময় থেকে যাচ্ছে ধরাছোয়ার বাইরে।কারণ ইনারই সমাজের হর্তাকর্তা, উচু শ্রেণির মানুষ,আইন-বিচার ব্যবস্থা এদের পকেটে। এদের হাত অনেক লম্বা।তাই আমেনার মত ভুক্তভোগীদের অমানবিক নির্যাতনের কোন বিচার হচ্ছে না আর হবে বলেও মনে হয় না।
এই যে আমেনার করুণ মৃত্যু এটা কি আশেপাশের আর কয়েকটা বিল্ডিং এর মানুষ দেখেনি? অবশ্যই দেখেছে। কিন্তু সবাই মুখে কুলুপ এটে রেখেছে।কেন জানেন? কারণ আমরা বাঙালি। আমরা ভাবি ধূর! আমরা ভালো আছি ভালো থাকি।কে কি করলো সেটা নিয়ে মাথাব্যথা করার কি দরকার? শুধু শুধু এসবের মধ্যে না জড়িয়ে ঘরের মধ্যে হাতে চুরি পড়ে বসে থাকি। একটা গরীবের মেয়ে মারা গেছে তাতে কি আসে যায়।
ফিলিস্তিনে অমানবিক নির্যাতন চলাকালীন আমরা জোর গলায় বলি এসব বন্ধ করা উচিত।ঈজরাইলি পণ্য বন্ধ করার জন্য উঠে পড়ে লাগি। যেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব না সেটা নিয়ে আমরা লাফালাফি করি। আর নিজের দেশের ভেতর যে প্রতিনিয়ত আমেনার মত কত মেয়ে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কই সেটা নিয়ে তো কারো মাথাব্যথা দেখি না। এখানে কবি নির্বাক কেন?
আমি জানি এসব নিয়ে বলে কোন লাভ নেই। কিচ্ছু পরিবর্তন হবে না। আমেনার মত মেয়েদের ভাগ্যে যে পরিবর্তন বলে শব্দটাই নেই। আমরা আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া এসব অন্যায় দেখব,দেখে চোখ বন্ধ করে রাখবো,কানে হেডফোন ব্যবহার করবো। হয়তো আবার আমার মত মাঝেমাঝে কেউ মূল্যবান সময় নষ্ট করে কয়েক লাইন লিখবে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন সামাজিক মাধ্যমে।তারপর? তারপর আর কিচ্ছু হবে না। যেটা যেমন ছিল ঠিক সেরকমভাবেই চলতে থাকবে। আর এই সমাজব্যবস্থা ঠিক ততদিন পর্যন্তই চলবে যতদিন পর্যন্ত আমরা নিজেরা চেঞ্জ না হবো। যতদিন পর্যন্ত আমরা অন্যায়ের বিপক্ষে রুখে না দাড়াবো,যতদিন পর্যন্ত আমরা শুধু নিজের সুখের কথাই চিন্তা করবো।
সাবাশ বাংলাদেশ, জয় তরুণ প্রজন্মের। আমরা ঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছি। হিপহপের তালেতালে আমরা আজ কোথায় এগিয়ে যাচ্ছি নিজেরাই জানি না।
আসুন না নিজেরা আধুনিকতা আর ডিজিটালের স্রোতে ভেসে যাওয়ার আগে অন্তত একটা বার নিজেদের চারপাশে তাকাই। অন্তত একটাবার তরুণ প্রজন্ম একজোট হই,অন্তত একটাবার মাতৃভূমিকে ভালোবেসে, এর মানুষগুলোকে ভালোবেসে প্রতিটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। সফল না হই অন্তত চেষ্টা তো করি। বিলিভ মি আমরা পারবো। আমরা কিন্তু চেষ্টা করলেই পারবো। শুধু এই বিশ্বাসটা মনে লালন করুন আপনি অবশ্যই পারবেন।
আসুন প্রথমে নিজেরা বদলে যাই আর ধীরেধীরে বদলে দেই আমাদের চারপাশ,বদলে দেই সমাজ,বদলে দেই বাংলাদেশ।।
©somewhere in net ltd.