![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কর্মে বিশ্বাসী,আবার আমি ভোগী ও। আমার ভেতর ভালো কাজ করার প্রবণতা জন্মগত,প্রবণতাটা কিছু পাবার অাশায় মুখাপেক্ষী নয়। আমার ভেতর ধ্বংসের বীজও লুকিয়ে অাছে,ধ্বংস অামি করিও,তবে বিবেকের নির্দেশে ন্যায়ের স্বার্থে ধ্বংস করি। মানুষ হয়ে জন্মেছি সেজন্য নিজেকে ভাগ্যবান বলে জানি,সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু ত্রুটিহীন,অাদর্শ মানুষ আমি কোনদিন ও হতে পারব না,কারও পক্ষেই হওয়া সম্ভব নয় আর সেজন্য অামার ক্ষোভ আর যন্ত্রণার শেষ নেই...
(পোস্টটি এড়িয়ে না যাওয়ার অনুরোধ করছি।)
.
রাত প্রায় সাড়ে আটটা বাজে তখন। এক বন্ধুর বাসা থেকে ফিরছিলাম। রাস্তায় কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশ দিয়ে আসার সময় একটা ছয়-সাত বছরের বাচ্চা কে দেখলাম মুখে পলিথিন দিয়ে জোরে জোরে মুখ দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে। কেউ না বলে দিলেও বুঝতে পারলাম ছেলেটা নেশা করছে। টলুইনের নেশা! সাত বছরের একটা বাচ্চা যার কি না মাত্র দাত পড়ার বয়স সে করছে নেশা! এই হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশের কিছু ওপেন সিক্রেট চিত্র। ছেলেটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম..
-ঐ এদিকে আয়। তোর নাম কি?
-খলিল।
আমি জানি না ফুটপাতে জন্ম নেয়া দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত এসকল বাচ্চাদের নামই কেন কুরাআন হাদীসের আলোকে রাখা হয়? এদের বাবা মা কি বিশ্বাস করে যে এরকম নাম রাখলে হয়তো উপরওয়ালা মুখ তুলে তাকাবেন?! আমি জানি না!
-কি খাস? পলিথিনে কি?
-কিছু না বাই! হুদাই!
-কোথা থেকে কিনিস এই টলুইন?
ছেলেটা বুঝতে পারলো যে আমি ব্যাপার টা জানি। বললো.
-হাজীর দোকানে পাওন যায়। উই রাস্তার মোড়ে।
-কি হয় এটা টানলে?
-খিদা লাগে না!! পেট ভইরা যায়!
হায়রে! ক্ষুদার আগুন নেভানোর কি অভিনব উপায় এদেশে! আবার এ দেশেই তো দেখি কত ঘরে ঘরে পোষা কুকুরের জন্য মাসে হাজার হাজার টাকা খরচ করা হয়,প্রতি বেলায় প্রচুর পরিমাণে খাবার ঠাই পায় ডাস্টবিনে!
-আমাকে একটু দে তো। দেখি কেমন লাগে!
-আমনে কি অরবেন? আমনে গো কি খাওনের অভাব আছে নি?
ছেলেটির এমন কথায় বুকের খুব ভেতরে গিয়ে প্রচন্ড আঘাত লাগলো! এই বয়সে কি ছেলেটির খাবারের চিন্তা করার কথা? আমি নিজের ছোটবেলার কথা একটু চিন্তা করে ছেলেটির জীবনের সাথে মেলানোর চেষ্টা করলাম। চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসতে চাইলো। কিন্তু অনেক কষ্টে চেপে রাখলাম পাছে ছেলেটি ভাবে এসব মিথ্যে অভিনয়! কারন ওদের আজ জীবন বোঝার ক্ষমতা হয়ে গেছে! চারপাশের উচু সমাজ আর তার মানুষগুলো সম্পর্কে ওদের ধারনা হয়ে গেছে। আর সে ধারণা খুব বাজে ধারনা।
কথায় কথায় জানতে পারলাম খলিলের বাবা নেই।এই সমস্যাটা ফুটপাতে জন্ম নেয়া শিশুদের জীবনে প্রকট! যেখানে নিজের মুখে অন্য তোলাই দায় সেখানে শিশুর মুখে অন্য তোলার ভার কে নেয়?! তাই শিশুর জন্মের পরেই বাবা-মা উধাও হয়ে যায়! কত কষ্টের জীবন! খলিল তার বাবা কোথায় গেছে জানা তো দূরের কথা কখনো দেখেও নি। খলিলের মা আছে,পান সিগারেট বিক্রি করে রেলস্টেশনের সামনে। মা, ছেলে রাস্তার পাশেই ছোট্ট কাঠের একটা চকি পেতে কোনরকম রাত কাটায়! খলিল প্রথমে কয়েকদিন একটা দোকানে কাজ করতো। পরে সেখানে নাকি বিস্কিট খাওয়ার অপরাধে মেরে বের করে দেয়া হয়েছে! প্রতিনিয়ত কত বিস্কিটের প্যাকেট ইদুরে খায়! আর সেখানে খলিলের মত কেউ খেলেই অপরাধী করে মেরে বের করে দেয়া হয়। এই হচ্ছে আমাদের মন মানসিকতা।
পকেটে টাকা বেশি ছিল না। তবুও যা ছিল তা দিয়ে খলিল কে এক প্যাকেট রুটি আর দুইটা কলা কিনে দিয়েছি। সামান্য রুটি আর কলা পেয়ে ওর মুখে যে হাসি আমি দেখেছি সেই নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ, মায়াময় হাসি আমি আগে কখনো দেখিনি। চলে আসার সময় খলিল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। ওর চোখে পানি চিকচিক করতে দেখলাম নাকি নিজের চোখের পানির কারনেই দৃষ্টি ঝাপসা দেখলাম জানি না।
আমাদের দেশে খলিলের মত এরকম লাখো শিশু রয়েছে যারা প্রতিদিন দুবেলা খাবারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে কিন্তু খাবার পায় না। ক্ষুধার তাড়নায় যখন অন্যায়ের পথে পা বাড়ায় তখন আমরা গলা উচু করে বলি "ফকিন্নির পোলারা সব খারাপ"। কাচ ঘেরা গাড়ির ভেতরে থাকায় আমরা এদের জীবনটা কে দেখি না! না চাইতেই প্রতি বেলায় খাবার হাজির হওয়ায় আমরা বুঝি না ক্ষধার যন্ত্রণা কি! একবার বেরিয়ে এসে দেখুন সবাই,তাকিয়ে দেখুন আপনার পাশেই পড়ে থাকা খলিলদের! একবার এদের সাথে নিজের জীবনটাকে তুলনা করুন,চোখে পানি ধরে রাখতে পারবেন না!!
আমি দেখেছি মানুষকে এসব পথশিশুদের অবহেলা করতে। দূর দূর করে ঠেলে তাড়িয়ে দিতে! বাবা-মা,জন্মপরিচয় নিয়ে গালি দিতে,কারণে অকারণে গায়ে হাত তুলতে!
কেন ভাই? কেন? আপনি তো প্রতিদিন কত টাকা খরচ করেন! গার্লফ্রেন্ড কিংবা ফ্রেন্ডদের সাথে পার্টি করে ঊড়িয়ে দেন। এর থেকে সামান্য কিছু টাকা কি এদের জন্য খরচ করা যায় না? সামান্য কিছু টাকা! অবহেলার বদলে কি এদের একটুখানি ভালোবাসা যায় না? আপনার একটু ভালোবাসাই হয়তো ওদের জীবন বদলে দিবে! আপনি কিছু খাওয়ার সময় যদি ওরা হা করে তাকিয়ে থাকে তাহলে দূরে ঠেলে না দিয়ে আপনি কি পারেন না ওর মুখে একটু খাবার তুলে দিতে! আমি,আপনি পারি বাট করি না! আমরা অনেকে ভাবি "নিজে বাচলে বাপের নাম" আবার অনেকে ভাবি "ফকিন্নির পোলা আমার ড্রেসটাই ময়লা করে দিল।"
ওদের জীবনে চিরসুখ নামক শব্দটা উপরওয়ালাই দেয়নি আমরা দিব কিভাবে। কিন্তু ভেবে দেখুন আমরা তো ওদের ক্ষণিকের কিছু সুখ দিতে পারি,ওদের মুখে হাসি ফোটাতে পারি।
অবশ্যই আমরা চাইলেই পারি!
আপনি একা এসব করবেন এটা আমি বলবো না। আপনার তো ফ্রেন্ডসার্কেল আছে,কাছের মানুষগুলো আছে।তাদের একটু বলুন না সচেতন হতে,এদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে। আপনি আপনার বন্ধুদের এবং কাছের মানুষদের নিয়ে আজকে এক জায়গায় কিছু পথ শিশুদের সাহায্য করুন,সপ্তাহে এক বেলায় মুখে অন্য তুলে দিন,মাসে-দুই মাসে একবার কিছু পপথশিশুদের পোশাক কিনে দিন, দেখবেন আপনার দেখাদেখি আরো অনেকে এরকম নন প্রফিটেবল ক্লাব বা অর্গাইনেজশন খুলবে। আপনার থেকে প্রেরণা নিয়ে আরো অনেকেই এগিয়ে আসবে। ধীরে ধীরে আপনার এলাকা থেকে শুরু করে একদিন দেখবেন সমগ্র দেশে তরুণ সমাজের মাঝে পৌছে যাবে এই অণুপ্রেরনা। দুঃখের দিন শেষ হবে এই পথশিশুদের।
আমি জানি একদিনে এটা সম্ভব না।সময় লাগবে। কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না।অন্যের আশায় ও বসে থাকা যাবে না। আপনি প্রথমে শুরু করুন না! দেখবেন ঠিক হবে। আমি বলছি, বিশ্বাস করুন। সত্যিই হবে,আমরা সত্যিই পারবো।
আমরা কিছু বন্ধুরা মিলে এরকম একটা ক্লাব খুলেছি। ইনশাল্লাহ দুই এক মাসের মাঝেই কাজ শুরু করতে পারবো। আপনারা ও আপনাদের বন্ধুমহল কে রাজি করান,নিজের এলাকায় ছোটখাটো ভাবেই প্রথমে শুরু করুন।সাফল্য অবশ্যই আসবে।
আমি বদলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি,আমি স্বপ্ন দেখি নতুন এক বাংলার। আমি "বদলে যাও বদলে দাও" স্লোগানে বিশ্বাসী!
দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে সুদূর প্রবাসে গিয়ে মাসে মাসে মোটা টাকা ইনকাম করেই সুখ পাওয়া যায় না কিংবা টাকার দেয়ালে ঘেরা এসি রুমে বসেও প্রকৃত জীবনের স্বাদ খুজে পাওয়া যায় না। বাইরের দুনিয়া টা দেখুন,নিজে উদ্বুব্ধ হোন অন্যকে অনুপ্রাণিত করুন। জয় আপনারই হবে।
আমরা তরুণ প্রজন্ম যদি আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজের পাশাপাশি একটু আমাদের চারপাশে খেয়াল করে বদলে যাওয়ার চেতনায় গা ভাসাই তাহলে একদিন আমরাই পারবো বদলে দিতে খলিলের জীবন,বদলে দিতে এই সমাজ,বদলে দিতে এই জাতি,বদলে দিতে বাংলাদেশ।
জাস্ট বিশ্বাস রাখুন নিজের উপর,ভালোবাসুন এই দেশটা কে,ভালোবাসুন দেশের অবহেলিত মানুষগুলোকে। হাল ছেড়ে দিয়েন না। প্রথমে ছোট থেকেই না হয় শুরু করুন। বড় হওয়া তো সময়ের ব্যাপার। আপনি বদলে যান প্রথমে এবং ধীরেধীরে বদলে দিন আপনার চারপাশ,বদলে দিন আপনার পাশে থাকা সকলের মনমানসিকতা,গড়ে তুলুন দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ, গড়ে তুলুন স্বপ্নের সোনার বাংলা!
# BE_CHANGED_AND_CHANGE
©somewhere in net ltd.