নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমালোচনা শুনতে প্রস্তুত

মাহবুবা আক্তার

শালীন কন্ঠে সাহসী উচ্চারণ

মাহবুবা আক্তার › বিস্তারিত পোস্টঃ

শবে কদর কোন দেশে কেমন?

২৩ শে জুন, ২০১৭ রাত ৯:৪৬

প্রতিবছর রমজানের 26 তারিখ দিবাগত রাতে পৃথিবীর বহু দেশে পালিত হয় পবিত্র শবে কদর। ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য এবং এবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় পবিত্র শবে কদর। মুসলমানদের কাছে কদরের রাতের গুরুত্ব অপরিসীম এবং এই রাত অত্যন্ত পূণ্যময় হিসেবে বিবেচিত।
কোরআনের সুরা কদরে উল্লেখ বলা হয়েছে, ‘হাজার মাস (83 বছর 4 মাস) ইবাদতে যে পূন্য হয়, কদরের এক রাতের ইবাদতে তার চেয়ে উত্তম বিনিময় পাওয়া যায়।’ এই রাতে মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে মাগফিরাত, নাজাত ও ক্ষমা পাওয়ার পরম সুযোগ লাভ করে। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে মহানবী সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি এ রাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তাঁর পূর্বর সব গুনাহখাতা মাফ করে দেবেন।’ (বুখারি)
শবে কদর উদযাপন উপলক্ষে আমাদের বাংলাদেশে যেমন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ওয়াজ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের কর্মসূচি নেওয়া হয়, পরের দিন সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়, তেমনি পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে মহা আড়ম্বরতার সঙ্গে পালন করা হয় এই রাত।
মরোক্কো :
মরোক্কোতে এই রাতে বাচ্চারাই সবচেয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। অভিবাবকরা এই রাতে বাচ্চাদেরকে জীবনের প্রথম রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন। তারা তাদের জন্য নতুন পোশাক কিনে দেন। মেহেদি দ্বারা তাদের হাত সজ্জিত করে দেন। স্টুডিওতে গিয়ে তাদের ছবি তোলে আনেন।
রোজা রাখে না বলে বাচ্চাদেরকে পুরো রমজান পুরো একটি ডিম খেতে দেওয়া হয় না। এই রাতে সর্বপ্র্রথম তাদেরকে পুরো একটি ডিম খেতে দেওয়া হয়। তারা রোজা রেখেছে বলে এটি তাদের প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন। তাছাড়া বাচ্চাদের প্রথম রোজা রাখার কারণে ‘কুসকুস’ নামে এক ধরনের খাবার তারা রান্না করে মসজিদের গেটে গরিব মিসকিনদের খাইয়ে দেয়। কুসকুস হচ্ছে হচ্ছে উত্তর আফ্রিকার জনপ্রিয় খাবার। সুজির ছোট ছোট সিদ্ধ বল দিয়ে তৈরী করা হয় এই খাবার। সাধারণত তরকারীর উপরে এটা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সমগ্র উত্তর আফ্রিকার রন্ধশৈলীতে কুসকুস উল্লেখযোগ্য আসন দখল করে আছে। মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মৌরিতানিয়া ও লিবিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের একটা ক্ষুদ্র অংশ এবং সিসিলির তরাপানিতে কুসকুস খুবই জনপ্রিয়।
এই রাতে ধূপ, পারফিউম, আতর ও পোশাক আশাক ব্যবসা বেশ জমজমাট হয়। মরোক্বোবাসী এই রাতে তাদের মৃত আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করতে দলবেধে গোরস্থানে যায়। আত্মীয়দের নামে দান সদকা করা হয়।

আলজেরিয়া :
আলজেরিয়াতেও এই রাতকে বাচ্চাদের প্রথম রোজা মনে করা হয়। এই রাতে প্রতি ঘরে ঘরে বিশেষ ধরনের শরবত বানানো হয়। যেসব বাচ্চা নতুন রোজা রেখেছে তাদেরকে তা খাওয়ানো হয়। পানি, মিষ্টি ও ফুলের পানি দ্বারা তৈরী এই বিশেষ শরবতের পাত্রে রেখে দেওয়া হয় একখানা স্বর্ণ বা রূপার রিং। খাবারের বেলায় একেক অঞ্চেলে একেক ধরনের অভ্যাস।
এই রাতে আলজেরিয়াতে আরেকটি কাজ খুব গুরুত্বের সঙ্গে হয়ে থাকে। বিভিন্ন কল্যাণ সমিতি বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যুবক যুবতীদের যৌতুক বিহীন গণ বিয়ের আয়োজন করা হয়। দরিদ্রতার কারণে যেসব যুবক যুবতীর বিয়ের সুযোগ হয় না তাদেরকে গণ বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। বিয়েতে প্রতি বর ও কনের পরিবারের মেহমানসহ উপস্থিত অতিথিতিদের আপ্যায়ন হয়। খাবারের ম্যেনুতে থাকে হরেক রকমের মূল্যবান ও লোভনীয় খাবার ও কোমল পানীয়। সর্বশেষ পরিবেশন করা হয় মিষ্টি।
বিয়ে শেষে নব দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হয় নানা উপহার সামগ্রী । এছাড়া তাদের পূনর্বাসনের জন্য দেওয়া হয় মূল্যবান বিভিন্ন সামগ্রী। যা দ্বারা পরবর্তী দাম্পত্য জীবনে কিছু করে খেতে পারে তারা।
সাথে সাথে যেসব বাচ্চা এ বছর নতুন রোজা রেখেছে তাদেরকে দেওয়া হয় নতুন পোশাক ও মূল্যবান উপহার সামগ্রী।

তিউনিশিয়া :
তিউনিশিয়াতেও এই রাতে অনেকে বিয়ে করেন। বিয়ের প্রস্তাবকারী পুরুষ ও নারী এই রাতে এক সঙ্গে বের হন। মার্কেট করেন। স্বর্ণগহনা কিনে তারা বিয়ের জন্য প্রস্তুত হন।
তিউনিশিয়ায় এই রাতে বাচ্ছাদেরকে খতনা করানো হয় এবং বড় করে অনুষ্ঠান করে সবাইকে দাওয়াত খাওয়ানো হয়। বাচ্ছাদেরকে নুতন পোশাক কিনে দিয়ে তার পকেটে টাকা-পয়সা রেখে দেওয়া হয়। যাতে তারা তা পেয়ে খুশি হয়।
তিউনিশিয়ানরা এই রাতে তাদের মৃত আত্মীয় স্বজনদের কবর জিয়ারত করে থাকেন। তাদের জন্য ইসালে সাওয়াব করে থাকেন।

লিবিয়া :
লিবিয়াতে এই রাতে ইবাদতের চেয়ে খাবারের বাহারটাই বেশি। গ্রামের মহিলারা এই রাত উপলক্ষ্যে তৈরি করেন “বাজিন” নামক এক বিশেষ খাবার। যা তাদের কাছে খুবেই জনপ্রিয় স্বাস্থ্যসম্মত বলে পরিচিত। আর শহরের মহিলারা রান্না করেন কুসকুস। এটিও তাদের কাছে খুব প্রিয় খাবার।

মৌরতানিয়া :
মৌরতানিয়াবাসী এই রাতে বিভিন্ন রকম ধূপ জালায়। তাদের ঘরগুলোকে আতর দিয়ে সুবাসিত করে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, তারা এই রাতে সুই গরম করে বাচ্চাদেরকে হালকা ছেকা দেয়, যাতে বাচ্চাদেরকে (তাদের ধারণা অনুযায়ী)শয়তান ধরতে না পারে।
- আল আরাবি আল জাদিদ অবলম্বনে

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.