![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'কিরে, গরুর ডাক্তার'!! অথবা 'পশু ডাক্তার'!! বাসায়, বন্ধুদের আড্ডায় অথবা পরিচিতজনের সঙ্গে কথা বলাকালীন বেশিরভাগ সময় আমাকে এখন এইভাবেই সম্বোধন করা হয়।
কেউ কেউ তো এক ধাপ এগিয়ে একটু স্মার্টভাবে সংক্ষেপে 'গরু/পশু' ই ডেকে বসেন।
ভেটেরিনারি মেডিসিন বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পরবর্তি সময়ে নবীন সকল শিক্ষার্থীকে এই মধুর সমস্যায় পড়তে হয়। প্রায় সকল বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন ওই শিক্ষার্থীর নামটি প্রায় ভুলতে বসেন। আকীকা করা নামের জায়গা দখল করে 'গরুর ডাক্তার'/'পশু ডাক্তার' নামক শব্দগুচ্ছ।
আসলে এই শব্দগুচ্ছ ব্যবহারের উদ্দেশ্য তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা। স্নাতক জীবনের শুরুতে কেউ এই শব্দে কেউ ডাকলে আমার মন এবং মেজাজ দুটোই খারাপ হয়ে যেত। হওয়ারই কথা। এত এত পড়াশুনা, ভর্তিযুদ্ধ পাড়ি দিয়ে এই পর্যায়ে যে কারণেই আসি না কেন, সেটা অবশ্যই কারো তাচ্ছিল্যের পাত্র হওয়ার জন্য নয়।
আমার অনেক বন্ধুই তখন প্রতিবাদস্বরুপ বলত শুধু গরু না আমি বাঘ, সাপ, সিংহ, হাতি এই সবকিছুর ডাক্তার। কেননা ভেটেরিনারি মেডিসিনের সংজ্ঞা অনুযায়ী মানুষ ব্যতীত অন্য যে কোন প্রাণির চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা এ বিষয়ের অর্ন্তভূক্ত। তবে এতে তাচ্ছিল্যের মাত্রা বাড়ত বই কমত না।
মানুষকে যখন বলি আমার পড়ার বিষয় প্রাণিচিকিৎসাবিদ্যা, তখন তারা গ্রামের একজন বিনা/অতি অল্প প্রশিক্ষিত প্রাণিচিকিৎসকের ছবি তাদের মনের মধ্যে ফুটিয়ে তুলেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাঙ্গা সাইকেলের পিছনে ছোট একটি ব্যাগ যার পরিচয় বহন করে। তাই এই তাচ্ছিল্য।
তবে স্নাতকজীবনের বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিষয়টিকে যত গভীরভাবে জানতে শুরু করি, এই সম্বোধনে আমার খারাপ লাগার মাত্রাও তত কমতে থাকে। এবং একটা সময় দেখা গেল খারাপ লাগার বদলে বেশ ভালই লাগতে শুরু করল। কেননা তখন জানতে থাকলাম বিষয়টিকে মানুষজন যত সহজভাবে গ্রহণ করে তুচ্ছার্থক শব্দগুলো ব্যবহার করত, বিষয়টি আদতে তার চেয়ে অনেকগুন বেশি কঠিন।
একজন মানুষের ডাক্তারের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায় যখন তার রোগী সমস্যার কথা সরাসরি চিকিৎসকের কাছে বলেন এবং চিকিৎসক অনেক আধুনিক রোগ নির্ণয় পদ্ধতি ব্যবহার করেন।
কিন্তু আমাদের বেলায় রোগ নির্ণয়ের জন্য সমস্যাগুলো খুঁজে বের করতে হয়। কারন প্রাণিরা কথা বলতে পারেন না। তাদের সমস্যা নির্ধারন করার একজন ভেটেরিনারিয়ানকে ওই প্রাণির মধ্যে ঢুকে যেতে হয়, নিজেকে দিয়ে তার কষ্টটা উপলব্ধি করতে হয়।
আর একটি বড় সমস্যা হলো দেশের খামারিরা ততটা স্বচ্ছল নন এবং তেমন খরচও করতে চান না। আবার দেশে প্রাণী রোগ নির্ণয়ে উন্নত সরঞ্জামাদির অপ্রতুলতা থাকার কারণে অনেক সময় ইচ্ছা স্বত্ত্বেও ব্যব্হার করা হয়ে উঠে না। তাই রোগ নির্ণয় করে কম খরচে গ্রাহককে কাঙ্খিত সেবা প্রদান করা একটি জটিল কাজ। তবে সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে। খামারিরা সচেতন হচ্ছেন। এক্ষেত্রে সৌখিন প্রাণী/পাখি পালকদের সচেতনতা অগ্রগন্য ভূমিকার দাবিদার। তারা পোষা প্রাণী/পাখির উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সোচ্চার। যা আমাদের কাজ সহজ করার জন্য বেশভালো ভূমিকা পালন করছে।
পড়াশুনার বয়স যতই বাড়ছে ততই উপলদ্ধি করছি বিষয়টি মামুলি কিছু নয়। একাগ্রতা, মনযোগ এবং ধৈয্য না থাকলে একটি বোবা প্রাণির কষ্ট বুঝে তাকে সাড়িয়ে তোলা সম্ভব নয়।
তাই এখন আর 'গরুর ডাক্তার' সম্বোধনে লজ্জা বা রাগ লাগে না, গর্ববোধ হয়। আর অনেক প্রাণির মধ্যে গরুও একটি। কারো যদি 'গরুর ডাক্তার' ডেকে ভালো লাগে তাহলে ডাকুক না। আমি তো জানি আমি কী। আমি সকল প্রাণির চিকিৎসক।
'প্রাণী ডাক্তার'
২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:৩৯
প্রাণী ডাক্তার বলেছেন: আপনার মত শুভাকাঙ্খীরা আছেন বলেই আমরা মাঠে টিকে আছি। আপনার আন্তরিকতা অব্যাহত থাকবে আশা করি। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:১৭
ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: আমার প্রাণী ডাক্তারের প্রতি রয়েছে অনেক আন্তরিকতা। যা লিখেছেন ভালো রিখেছেন। আপনার প্রতি রইল অনেক শুভ কামনা। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।