![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটি পৌরসভায় প্রায় ৪ বছর ধরে চাকরী করছি। আরবান প্রকল্পের চাকরীটা চলে যাওয়ার পর বর্তমান মেয়র অনুগ্রহে পৌরসভায় অস্থায়ী ভিত্তিতে এই চাকরীটা পাই। সৌভাগ্যক্রমে একটা নিয়োগ সার্কুলারও কপালে জোটে যায়। যথেষ্ট অসম্মান জনক এই অস্থায়ী চাকরী। যাদের জীবনে এই ধরনের চাকরী করার অভিজ্ঞতা আছে তারা এই যন্ত্রনার কথা উপলব্দি করতে পারবেন। প্রথমে কাজ করি স্বাস্থ্য শাখায়। অফিসে যাওয়ার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা কি বলব একটি মানুষ ছিল না যিনি একটু সম্মান দিয়ে বসতে বলবেন। পরিত্যক্ত একটা রুমের দরজায় সবসময় তালা লাগানো দেখতাম, একদিন কি কারনে জানি রুমটা খোলা দেখে ভেতরে ঢুকলাম একটা চেয়ারে বসেছি না বুঝে। এর জন্য অনেক কে সরি বলতে হয়েছিল। আস্তে আস্তে কম্পিউটারে টুকটাক কাজ করার আদেশ পেলাম। কিছুদিন পর দেয়া হল পানি শাখায়। ভাল ব্যস্ততার মাঝে কেটে যাচ্ছিল দিন গুলি। চেয়ারও পেলাম বসার। লেজারে বিল পোষ্টিং দিতে থাকলাম। হঠাৎ মেয়র স্যার ঢেকে বললেন টাউন প্ল্যানার ম্যাডামের সাথে কাজ কর। শুরু হল প্রকৌশল শাখায় কাজ। পরিবেশটা ভালই ছিল তবে সারাদিন কাজ আর জ্বি ম্যাডাম, জ্বি ম্যাডাম করতে করতে দাঁত গুলো বোধ হয় নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছিল। তবুও খারাপ ছিলাম না। ভাল আচরন আর বিশ্বস্ততায় আশ্বস্থ হয়ে ম্যাডাম আলাদা একটা রুম দিলেন। তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা হিসেবে চেয়ার টেবিল পেলাম। কাজের চাপও কম। হঠাৎ খুব অসুস্থতার দরুন ছুটি নিতে হল আমাকে। মেয়র স্যার খুব অসুস্থ ছিলেন। উনি ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বাধ্য হয়ে বর্তমান সচিব স্যারের কাছ থেকে ছুটি নেয়ার জন্য যাই। সার জিঙ্গেস করলেন কতদিনের ছুটি, আমি বললাম ২০-২২ দিনের জন্য। স্যার বললেন এতদিনের ছুটি তো আমি দিতে পারব না। তুমি আস আমার সাথে। মিটিং রুমে প্যানেল মেয়র স্যারের কাছে নিয়ে গেলেন। প্রায় ৩০ মিনিট দাড়িয়ে থাকলাম উনাদের সামনে। ওখানে আরো বেশ কজন কাউন্সিলার উপস্থিত ছিলেন। সবাই আলোচনা করে আমাকে ছুটি দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়(অস্থায়ী ভিত্তিতে যারা কাজ করে তারা যেদিন অনুপস্থিত থাকে সেদিন বেতন পায়না) । আর এটাও বলা হয় যে, যেদিন শরীর ভাল লাগবে সেদিন এসে যেন সাইন করে যাই। আর কিছুটা সময় অফিসে কাটিয়ে যাই। ছুটি পাওয়ার পরও বেশ কদিন অফিস করি। হঠাৎ মাষ্টার্স পরীক্ষার রুটিন হল। অসুস্থতার পাশাপাশি একটু পড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। ফাঁকে ফাঁকে অফিসে যাওয়া আর হল না। শেষ পরীক্ষার দিন টি পি ম্যাডাম অন্য একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে আমাকে কল দেয়ালেন। উনি আমাকে সরাসরি ফোন না দিয়ে মিসকল দিলেন । ২ বার মিসকল পেয়ে আমি কল ব্যাক করলাম। ম্যাডাম ফোন ধরলেন, খুব শাসালেন। জানালেন আমার বেতন বন্ধ থাকবে। পরদিন অফিসে এসে দেখি আমার চাকরী নেই।
সবার কাছে বার বার গেলাম। সচিব স্যার সরাসরি অস্বীকার করল যে আমাকে উনি ছুটি দেন নি। যার পর নাই আশ্চর্যান্বিত হলাম। কদিনের ভিতর খবর পেলাম যে নিয়োগ পরীক্ষা হবে। এর আগেও বেশ কবার এই পরীক্ষা স্থগিত হয়েছিল। আমার সাথে আমার বয়সী ৫-৬ টা ছেলে মেয়ে ছিল যারা অস্থায়ী চাকরীতে নিয়োজিত ছিল। সবার সাথেই আমার বেশ ভাল একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ৪ বছরে মেয়র স্যারের বাসায় কতবার যে গিয়েছি স্থায়ী চাকরীটার জন্য তা কি আর বলব। সচিব স্যার, ম্যাডাম সবাইকে অনুরোধ করেছি। আল্লাহর কাছেও কম চাইনি। চাকরীর বয়স চলে গিয়েছিল আরো দেড় বছর আগেই।
অফিসের যারা আমার সাথে পরীক্ষা দিয়েছিল তাদের চেয়ে কোন অংশে খারাপ হয়নি রিটেন ও ভাইভাও। সবার চাকরী হল আমারটা ছাড়া। যাদের চাকরী হয়েছে তাদের মধ্যে একজন নাকি সম্পূর্ন খালি খাতা জমা দিয়েছেন লিখিত পরীক্ষার দিন!
বিপদ গেলে বুদ্ধি বাড়ে কথাটা বোধ হয় সত্যি হল আমার ক্ষেত্রেও । চাকরীর জন্য আমি কাউকে টাকা দেইনি এই কথা শুনে চোখ বড় বড় করল এক সহকর্মী। খুব বিশ্বাস ছিল নিজের উপর আর মেয়র স্যারের উপর। বেশ কজন আমাকে বলেছে মেয়র স্যার টাকা ঘুষ নেন। আমি বিশ্বাস করিনি। উনি তো আমাকে বলেছেন টাকা দিয়ে কি চাকরী হবে যদি আমি না দিই। কিভাবে অবিশ্বাস করি বাবার মত, দীর্ঘদিন যাবৎ কর্ম সূত্রে আমার শ্বশুর, চাচা শ্বশুড়দের সাথে জড়িত শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তিটিকে! যাদের চাকরী দেয়া হল তাদের আগে থেকেই সেট করা হয়ে গিয়েছিল। একজন আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন আমাকে কি ইয়েস বলা হয়েছে কি না। আমি কথার অর্থ বুঝতে পারিনি তখন। এখন বুঝেছি। বড় দেরী হয়ে গেল। আজ খুব ছোট মনে হচ্ছে নিজেকে।
পরীক্ষাটা ছিল ভৌতিক! এত বড় একটা নিয়োগ পরীক্ষা অথচ বাইরে থেকে শুধু একজন ম্যাজিষ্ট্রেট আসলেন। ছবি বিহীন প্রবেশ পত্র।সময়ের একঘন্টা পর লিখিত পরীক্ষা শুরু। তারিখ বিহীন প্রবেশ পত্র। যাদের চাকরী হল তারা প্রতিটা বিষয়ে যা যা বলেছেন তাই তাই হল। আমার চোখের সামনে বাইরে থেকে ২-১ জন পরীক্ষার্থীকে ভাইভা দিতে দেখলাম, জানেনা এমন কোন কিছু এদের কাছে বোধ হয় নেই। ১০০ থেকে ১০০ পাওয়ার মত ছাত্র। তবুও তাদের চাকরী হল না। যারা ৪০ পাওয়ার মত ছাত্র তাদেরটা হল।
ভাবছি আর কিছু করবনা মাস্টার্স পর্যন্ত পড়েছি তো কি হয়েছে? এভাবে চলতে থাকলে আমার মত শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীর আত্মহত্যা ছাড়া কোন গতি থাকবে না। না হয় কি করব আমরা? ভিক্ষা? কেউ দেবে মাষ্টার্স পাশদের ভিক্ষা?
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০২
মাহমুদা আক্তার সুমা বলেছেন: আশা নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকে। যদি বেঁচে থাকি তো আশা নিয়েই বাঁচতে হবে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৮
কলমি কাপ্তেন বলেছেন: আশাহত হবেন না।