নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আল মাহমুদ মানজুর

আমি একজন প্রচার বিমুখ প্রগতিশীল মানব

আল মাহমুদ মানজুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

কষ্ট প্রকাশের ভাষাতো আমাদের বাপ-বেটার জানাই নেই

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:২২

গত বছর ৭ এপ্রিল ঠিক রাত ৩টা ৪০ মিনিট থেকে আমার জীবনের যত অনিশ্চয়তা আর অস্থিরতার সূত্রপাত। গেল এক বছরে অনিশ্চয়তা কেটেছে খানিক তবে অস্থিরতা পিছু ছাড়েনি এখনো। পেছন ফিরে তাকালে, সেদিন এই রাতে বাবার হঠাৎ প্রস্থানে খুব বেশি বিচলিত হইনি। ঠান্ডা মাথায় মেনে নিয়েছি প্রকৃতির এই অমোঘ বিধান। যতটুকু পেরেছি বোনজামাইকে সঙ্গে নিয়ে নিজেকে সামলেছি, সঙ্গে বাবার রক্তাক্ত মুখ- সফেদ কাপড়ে মোড়া কাঠের কফিন। এটা বাবা'র কাছ থেকে পাওয়া অসাধারন জিন-স্বভাব। সে হিসেবে আমি সৌভাগ্যবান। যদিও অতীতে অবাক হতাম, বাবা কি করে এতটা অশ্রুহীন স্থির-স্বাভাবিক থাকেন তার ভাই কিংবা মায়ের নিথর দেহ আর দাফন কার্য দেখে!
সেদিন (৮ এপ্রিল ২০১৪ বিকেল সাড়ে ৪টা) বাবাকে নিচে নামিয়ে আমি যখন উপরে দাঁড়িয়ে- তখন হুট করে মনে পড়লো অবিচল বাবার পুরোনো মুখ আর আমার অবাক ভাবনা। তখনই স্পষ্ট হলাম- বাবা তার এই অধম পুত্রের ভেতরে নিজেকে সঁপে দিয়ে গেছেন কবে কোন ফাঁকে কে জানে। যার দৌলতে গেল এক বছরে শত চড়াই উতরাই পেরিয়েছি খুব নীরবে। যেমন চড়াই উতরাই গত ৩৩ বছরেও পেরুনোর সুযোগ হয়নি আমার। আফসোস, জীবদ্দসায় বাবাকে সে অর্থে পাওয়া হয়নি আমার। শান্তনা, চলে গিয়ে তিনি আমাকে শেখাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
বাবার প্রস্থানে মা এখনো সমান বিলাপী। বোন সম্ভবত ততোধিক। ছোট ভাইটি হয়তো বাবার সূত্রে আমার মতোই- বুকের যন্ত্রনা বুকেই চাপা, চোখ পর্যন্ত নয়। কিন্তু মা-বোনকে সামলাই কি করে? কি করে বলি- তোমরাতো কেঁদে-কেটে ঠিকই হালকা হচ্ছো প্রতিনিয়ত; ওপারে বাবা এপারে আমাদের (দুই ভাই) কি উপায়?? আমরাতো কাঁদতে পারি না। কি সুখে কি দুখে চাপড়াতে পারিনা বুক।
বাবা'র প্রস্থানের মুহুর্ত থেকে এখনো- কত কথা, কত ঘটনা, কত দু:খবোধ, কত সুখ স্মৃতি থরে থরে জমিয়ে রেখেছি মস্তকে-মুঠোফোনে-কাগজে-ড্রয়ারে। ‌‌
'বাবাকে নিয়ে বাইক ভ্রমন', ‌‌'হাসপাতালের করিডোর', 'ডাক্তারের চোখ এড়িয়ে ফুটপাথে চা-সিগারেট-সুপারি', ‌'লুঙ্গি, বাটা স্যান্ডেল, সেন্টু গেঞ্জি আর আন্ডারওয়্যার', ‌'একটা সাদা রাজ হাস', 'শেষ সময়ের ছেলেমানুষী', 'শরীর ছোঁয়া মানিব্যাগের ভাঁজে মলিন ১০০ টাকার নোট', 'শেকল পরা অপারেশনের রাত', ‌'বিদায় ২০ বছরের ট্রান্সপোর্ট', ‌'কাঁদছে টমা আর মিনা', 'বাবাকে পাওয়া না পাওয়া', 'যুদ্ধময় একটা জীবন', 'মায়ের আমৃত্যু অসহায়ত্ত্ব' এমন আরও কত্ত-কি। ভেবেছি এক এক করে সব লিখবো। লিখে রাখবো। কেউ না পড়ুক-না জানুক, শেষকালে সেসব না হয় নিজেই পড়ে পড়ে পুড়ে যাবো। কিছুই লেখা হলো না আমার।
আব্বা আপনি যেখানেই থাকুন- আমি নিশ্চিত আপনি ভালো আছেন। এখনো অবিচল আছেন। ফিরে আসুন- সেই প্রত্যাশা অবশ্যই করি না। যদিও দশ মাস বয়সী আপনার নাতনী মেঘা কি জানি কি ভুলে ইদানিং পাগলীর মতো অস্ফুট স্বরে 'দাদা' 'দাদা' বলে ডাকে! হতে পারে এটা আমার মনের অথবা কানের ভুল। তবে স্বান্তনা এটুকু যাবার আগে নাতনীকে না দেখে গেলেও তার কথা অনেক শুনেছেন। তার প্রতি আপনার দোয়া-ভালোবাসা অবশ্যই আছে। তবে আমার জন্য আপনার অযোগ্য সন্তান হিসেবে অন্তত এটুকু দোয়া করবেন, যেন মা-ভাই-বৌ-বোন-সন্তানকে নিয়ে যৌথ পরিবার হয়ে থাকতে পারি। আব্বা, প্লিজ।
কারণ, এপারে অনেক দিয়েছি। ওপারে আটকে রেখে আপনাকে আর কষ্ট দিতে চাই না। তাছাড়া কষ্ট প্রকাশের ভাষাতো আমাদের বাপ-বেটার জানাই নেই। খামোখা কষ্ট পাবো কেন???

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.