নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আল মাহমুদ মানজুর

আমি একজন প্রচার বিমুখ প্রগতিশীল মানব

আল মাহমুদ মানজুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভোটের হাল-চাল

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৪





‘না স্যার সাংবাদিদের সঙ্গে কোন কথা বলছি না’

গুলশান মডেল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। নগরীর অভিজাত গুলশান অঞ্চলের অন্যতম ভোট কেন্দ্র এটি। সকাল ঠিক সাড়ে ৮টা। কেন্দ্রের বাইরে ৩টি প্যান্ডেল। দু’টি আওয়ামী লীগ সমর্থিত। ১টি বিএনপি সমর্থিত। যেখানে ভোটারদের তালিকা আর ছোট ছোট ভোটার স্লিপ নিয়ে বসে আছেন মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনীত কর্মীরা। কেন্দ্রে ঢোকার আগে প্রায় সব ভোটারই নিজেদের ভোটার স্লিপ সংগ্রহ করছেন অতি উৎসাহ নিয়ে। অবশ্য এর মধ্যেই অনেককেই হতাশ হয়ে বলতে শোনা গেছে, ভোটার তালিকায় নিজের নাম খুঁজে না পেয়ে। ভোট গ্রহনের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রের বাইরের পরিবেশ বেশ উৎসব মুখর। অবশ্য বাইরের এই স্বাভাবিক চিত্র প্রায় পুরোটাই বদলে যায় কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকতেই। কেন্দ্রের মূল ফটক পেরুতেই কথা হয় স্ব-স্ত্রীক সাবেক বিদ্যুৎ সচিব ড. ফজলুল কবিরের সঙ্গে। ভোট দিয়ে ফেলেছেন? এমন প্রশ্ন করতেই তিনি আঙ্গুলের অমোচনীয় কলি এগিয়ে দিয়ে মুচকি হাঁসলেন। সেই সাথে নিজ মুঠোফোনে কালিযুক্ত আঙ্গুলের একটা ছবিও তুলে নিলেন। ফের প্রশ্ন ছিল, ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ কেমন দেখলেন? কেমন প্রত্যাশা করছেন? জবাবে ড. ফজলুল কবির বললেন, সাংবাদিক মানুষ। নিজেরাই পরখ করে আসুন। আর প্রত্যাশাতো করে লাভ নেই। এখানে এখন স্বাভাবিক। হয়তো অন্য কোথাও চলছে অস্বাভাবিক ঘটনা। তাই এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা বোকামি। সাবেক এই বিদ্যুৎ সচিবকে পেরুতেই এই কেন্দ্রের অসংগতি চিত্র ক্রমশ স্পষ্ট হতে থাকে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তবে অবস্থান স্কুল আঙ্গীনায় চেয়ারে বসে খোশ গল্প। অন্যদিকে গলায় টেবিল ঘড়ি-টিফিন ক্যারিয়ার-মোড়া প্রতীকের ৩টি আইডি কার্ড স্বরূপ ঝুলিয়ে বেশ তৎপর দেখা গেছে জনা পঁচিশেক কর্মীকে। এর মধ্যে ১০ সদস্যের একটি দল কেন্দ্রের ফটকে সার বেঁধে অবস্থান করছেন। যারা কেন্দ্রে আগত প্রত্যেক ভোটারকে থামাচ্ছেন। জড়ো হয়ে ভোটারদের বলছেন, দয়া করে ভোটটা দিবেন ঘড়ি-টিফিন ক্যারিয়ার-মোড়া মার্কায়। বলেনতো কই দিবেন ভোট? বলেন ভোট দিবো ঘড়ি-টিফিন ক্যারিয়ার-মোড়া মার্কায়। এভাবে প্রতি ভোটারকে ঐ সারি বদ্ধ কর্মীরা প্রত্যেক ভোটারকে একরকম মুখস্থ করাচ্ছিলেন ‘ঘড়ি-টিফিন ক্যারিয়ার-মোড়া’ শীর্ষক প্রতীক তিনটিকে। প্রতীক মুখস্থ করার এই অভিনব এবং নির্বাচনী আচরন বহির্ভুত কার্যক্রমের বিপরীতে পুরো কেন্দ্রের কোথাও পাওয়া যায়নি বিএনপি সমর্থিত কিংবা অন্য মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীর ভলান্টিয়ার। কেন্দ্রে আগত সাধারন ভোটার এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চেয়ে এসময় ‘ঘড়ি-টিফিন ক্যারিয়ার-মোড়া’ প্রতীক প্যানেলের কর্মীর সংখ্যাই বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে কেন্দ্রের ভেতরের এমন পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা খালিদ বলেন, পরিবেশ খুব শান্ত। ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোট দিতে আসছেন। তাছাড়া ভোটাররা কোনো সমস্যায় পড়ে যদি আমাদের কাছে না জানায় তাহলেতো আমি গায়ে পড়ে কোনো কিছু করতে পারি না। কেন্দ্রে উপস্থিত তিন সাংবাদিকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ঐ পুলিশ কর্মকর্তা এমন কথা বলার ফাঁকেই ফোন আসে তার মুঠোফোনে। ফোন ধরে ঐ পুলিশ কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, ‘না স্যার। সাংবাদিদের সঙ্গে কোনো কথা বলছি না স্যার। ওকে স্যার। জ্বি স্যার।’ মুঠোফোনে এমন কথা বলতে বলতে অন্যত্র চলে যান পুরিশ কর্মকর্তা খালিদ। এদিকে সকাল ১০টার দিকে কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পায়। এসময় নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে কেন্দ্র পরিদর্শন করতে আসেন জার্মান এম্বাসির একজন কর্মকর্তা। পর্যবেক্ষন শেষে তার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি জানান, রাতে দাপ্তরিক ভাবে তাদের পর্যবেক্ষন জানানো হবে। এখন নো কমেন্টস।



‘সোজা বরিশালতে আইছি মুই, যত নকশা করো ভোট দিমুই’

রাতের লঞ্চে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসেছেন সত্তর ছুঁই বৃদ্ধ ইয়াসিন চৌকিদার। একা হাঁটতে পারেন না। এক হাতে পলিথিনে কিছু জামা-কাপড়, অন্য হাত ভর করে আছেন নাতীর হাতে। পরনে মলিন লুঙ্গি-পাঞ্জাবী। সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নেমে রিক্সায় সোজা এসেছেন গুলশানস্থ মানারত কলেজ কেন্দ্রে। সময় সকাল সোয়া দশটা। কলেজ কেন্দ্রের দোতলায় উঠতে ইয়াসিন চৌকিদারের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। বিষয়টি অনুমান করতে পেরে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা মজিবর বেশ আন্তরিকতা নিয়েই দায়িত্মরতদের নির্দেশ দেন- সিরিয়াল ছাড়াই যেন বয়বৃদ্ধ মানুষটিকে ভোট দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। ভোট গ্রহনের রুমে ইয়াসিন চৌকিদার প্রবেশ করতেই তার ভোটার তালিকা চেক করেন পোলিং এজেন্ট। জিজ্ঞেস করা হয় বাবার নাম, মায়ের নাম, ন্যাশনাল আইডি নম্বর ইত্যাদি। এসব প্রশ্নের বিপরীতে ইয়াসিন চৌকিদার খানিক উত্তেজিত হয়ে পোালিং এজেন্টকে বলেন, সোজা বরিশালতে আইছি মুই। যত নকশা করো ভোট দিমুই। এই বলে কোমরে গোজা পলিথিনের পোটলা বের করলেন। যেখানে ইয়াসিন চৌকীদার যতনে রেখেছেন নিজের জাতীয় পরিচয় পত্র, নাগরিক সনদসহ বেশ কিছু কাগজ পত্র। শেষ পর্যন্ত নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে কেন্দ্র থেকে বেরুলেন ইয়াসিন চৌকীদার। ভোট দিয়েছেন? এমন প্রশ্ন করতেই বিশ্বজয়ের হাসি আর প্রশান্তি নিয়ে বলেন, হ- দিতে পারছি। শান্তি পাইছি। এই বয়বৃদ্ধ সূদূর বরিশাল থেকে এসে শেষতক নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেও বেলা ১২টা নাগাদ এই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেনি বিএনপি সমর্থিত কিংবা অন্য মেয়র প্রার্থীদের কোনো পোলিং এজেন্ট। বিস্ময়কর চিত্র হলো এই কেন্দ্রের প্রবেশ মুখে অবস্থান নেয়া আনিসুল হক তথা আওয়ামী লীগ সমর্থিত গোটা পঞ্চাশেক কর্মীর পক্ষ থেকে নানা প্রকার বাধার সম্মুখিন হতে হয়েছে মিডিয়া কর্মীদেরকেও। এসব বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কর্তব্যরত প্রিজাইডিং অফিসার একরকম অসহায় ভঙ্গিতে বলেন, দেখুন আমার নিয়ন্ত্রন কেন্দ্রের ভেতরে। ভেতরে কোনো অনিয়ম হলে আমাকে বলতে পারেন। কেন্দ্রের ফটকের বাইরে কে কি করলো সেটা আমার ধেকার বিষয় নয়। আর কেন্দ্রের ভেতরে কম বেশি সব প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট আছে বলে আমি জানি।



‘বিএনপি আউট, দম খিচ্ছা সিল মারো ঘড়ি মার্কায়’

বেলা পৌনে একটা। বনানী ও করাইল বস্তি এলাকার অন্যতম ভোট কেন্দ্র টিএন্ড টি আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। কেন্দ্রের পুরো চত্তরে গিজ গিজ করছে ভোটার। একটু পরে অবশ্য জানা গেল, উপস্থিত সবাই ভোটার নন। বেশিরভাগই স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নাছির গ্রুপের কর্মী। যিনি ঢাকা উত্তর ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ঐ সময় কেন্দ্রে দলবল নিয়ে হঠাৎ করেই হাজির হন নাছির ও তার কর্মী বাহিনী। কারণ তিনি একটু আগে খবর পেয়েছেন তারই শক্ত প্রতিদ্বন্দী আওয়ামী লীগ সমর্থিত মিষ্টি কোমড়া প্রতীক নিয়ে মো: আসলাম জাল ভোট দেয়ার জন্য হানা দিয়েছে এই কেন্দ্রে। আসলামের জালভোট প্রতিহত করতেই কেন্দ্রে ঝটিকা সফরে আসেন নাছির। এসময় গলায় ঝোলানো বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রতীক কার্ড ঝোলানো একজন পোলিং এজেন্ট সাংবাদিকদের কাছে এসে অসহায়ের সুরে বলেন, আধা ঘন্টা হলো আমাদের সব এজেন্ট কেন্দ্র থেকে বের করে দিছে আওয়ামী লীগের পোলাপাইন। বিষয়টি কেন্দ্রে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাদের জানাতে বললে ঐ পোলিং এজেন্ট বলেন, যারা আমাগোরে বাইর কইরা দিলো, সবগুলাতো ঐ পুলিশের লগে এখন আড্ডা মারতাছে। ঐ যে দেখেন। বিচার দিলে উল্টা মাইর খাইতে হইবো। এই কেন্দ্রে একই সময়ে চলেছে বিএনপি সমর্থিত পোলিং এজেন্টদের অসহায়ত্ব এবং আওয়ামী লীগ দুই প্রার্থীর কেন্দ্র দখলের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। স্থানীয় এক ভোটার জানান, এলাকায় জনপ্রিয় নেতা হলেন নাছির। অথচ টাকা আর দলবাজির জোরে সমর্থন পেয়েছে আসলাম। যার ফলে ভোট যুদ্ধ এবং কেন্দ্র দখল দুটোই চলছে এই দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে। এদিকে বেলা সোয়া একটার দিকে এই কেন্দ্রে চাউর হয় নতুন একটি শ্লোগান। ভোট প্রদানের জন্য দাঁড়ানো ভোটারদের কাছে গিয়ে বেশ কয়েকজন ভলান্টিয়ার বেশ উচ্ছাসের সঙ্গে বলতে শোনা গেছে ‘বিএনপি আউট, দম খিচ্ছা সিল মারো ঘড়ি মার্কায়’ শীর্ষক শ্লোগান। আনিসুল হকের ছবি-প্রতীক যুক্ত পরিচয় পত্র গলায় দেয়া এক ভলান্টিয়ারের কাছে এমন শ্লোগানের অর্থ জানতে চাইলে তিনি একইসাথে বিজয় এবং বিস্ময়ের হাসি দিয়ে বলেন, ‘কি বলেন? সাংবাদিক মানুষ এইটা জানেন না! বিএনপি নির্বাচন থেকে সইরা গেছে। ভোট পঁচাইয়া লাভ কি? তাই দম খিচ্ছা আনিস ভাইরে ভোট দিতে কইতাছি। এটা জন সচেতনতা ছোলগান (শ্লোগান)। আমরা আমরাইতো!’



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.