![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার, ইউটিউব সহ গ্লোবাল জামানার তামাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে হিংসার চাষাবাদ। এ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশ। স্বয়ং ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গও নাকি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ইউজারদের ফেসবুক কার্যক্রম দেখে! সম্প্রতি জুকারবার্গ তার ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি ও স্ট্যাটাস কমেন্ট পাবলিক করে দিয়েছেন। এরপর থেকে মার্ক জুকারবার্গের প্রোফাইলটিতে এক হাস্যরসাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে তার স্ট্যাটাসে পুরো পৃথিবীর মানুষ যত কমেন্ট করেছে তার থেকে অন্তত কয়েকগুণ কমেন্ট বাংলাদেশী ব্যবহারকারীরা করছে। দেখা গেছে, জুকারবার্গের কোনো স্ট্যাটাসে যদি ৪ হাজার কমেন্টস পড়ে, তাহলে সেখানে ২ হাজারের বেশি কমেন্টসই বাংলাদেশের। সূত্র জানিয়েছে, কমেন্টগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করার পর স্বয়ং মার্ক জুকারবার্গ নাকি বাংলাদেশিদের কমেন্টের এমন পরিস্থিতি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন! কারণ এর মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ কমেন্টসই জুকারবার্গকে বিশ্রী রকমের হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এ কারণে দেশের অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীর উপর মনক্ষুন্নও হয়েছেন তিনি! মার্ক জুকারবার্গের পোস্টগুলোতে কমেন্টের ঝড় তুলতে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপও তৈরি করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ এমন একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে- ‘আমরা মার্ক জুকারবার্গের পোস্টে বাংলা কমেন্ট করি আর মজা লই’। বাংলায় কমেন্ট করা মার্ক জুকারবার্গের বিভিন্ন স্ট্যাটাসে কমেন্টগুলো ছিল এমন, ‘ভাজ্ঞিস, জুকার বাংলা কমেন্ট গুলান পড়তে পারতেছে না! যদি পারত, তাইলে বাংলাদেশে ফেসবুক সার্ভারই বন্ধ কইরা দিত! তহন হগলরে মুড়ির ঝুড়ি গলায় ঝুলায়া ঝাল মুড়ি বিক্রি করা লাগতো!’। আরেকজন লিখেছেন, ‘মামু জুকারবাঘ আপনার কাছে এই ভাইগনার আবদার আমার এই পেইজ এ লাইক দেইন।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘চলেন সবাই মিলে মার্কের একাউন্টরে রিপুর্ট মাইরা বন্ধ কইরা ফেলাই।’। একজন লিখেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে আপনি চুপ কেন?’ এমন ব্যাঙ্গাত্মক এবং অপ্রাসঙ্গিক অজস্র কমেন্ট এর বিপরীতে মার্ক জুকারবার্গ এর অফিসিয়াল কোনো বক্তব্য না পাওয়া গেলেও ‘বাংলাদেশ’ প্রসঙ্গে নেতিবাচক একটি চিত্র স্পষ্ট হয়েছে মার্ক জুকারবার্গ তথা ফেসবুক অথরিটির কাছে। এমনটাই বলছেন অনলাইন বিশ্লেষকরা। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুক’ সৃষ্টির লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকি এমন কিছুই ছিল? মোটেই তা নয়। ফেসবুক তৈরীর উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে জুকারবার্গ বলেন, ‘ ফেসবুক তৈরীর উদ্দেশ্য একটাই- মানুষের প্রয়োজনে এমন কিছু করা যা পুরো পৃথিবীটাকে বদলে দিতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি এটা ছিল অনেক কঠিন একটি কাজ, তারপরও আমি চেয়েছি বিশ্ববাসীর সামাজিক জীবনকে উন্নত করতে। বিশ্বকে মানুষের কাছে আরও বেশি উন্মুক্ত করা নিতান্তই এক রাতের বিষয় না, কমপক্ষে ১০-১৫ বছরের বিষয়। তখন থেকে এখনো আমি এবং আমার সহকর্মীদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিভাবে আমরা মানুষের জন্য একটি অবাধ তথ্য বিনিময়ের সাইট ডিজাইন করব।’ অথচ বর্তমান বাংলাদেশে ফেসবুক সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রতিমূহুর্তে বিষাক্ত হচ্ছে মানুষের ব্যাক্তিগত জীবন। রাজনিতী, রাজনিতীবিদ, সমাজ, ধর্ম এবং নাস্তিকতা বিষয়ে ক্রমশ বাড়ছে ব্যাক্তি-গোষ্ঠীর নানামাত্রিক হিংসাত্মক এবং ব্যাঙ্গাত্মক কার্যক্রম। বাংলাদেশে এর প্রথম উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। উত্তম বড়–য়া নামের একজনের ফেসবুক ওয়ালে প্রকাশ করা পবিত্র কোরআন শরীফ ও ইসলাম ধর্ম অবমাননাকর বেশ কয়েকটি ছবি প্রকাশের দায়ে। রামুতে সেদিন ঘটে যায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। বিশ্লেষকদের ধারণা মূলত এই ঘটনার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বুদ্ধিমত্তা আর বন্ধুত্তপূর্ণ পরিবেশকে ছাপিয়ে শুরু হয়েছে হিংসা এবং হয়রানির প্রতিযোগিতা। যে হিংসা থেকে বাদ পড়ছেনা রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যাক্তি থেকে পাশের বাড়ীর বন্ধুটিও। যার ফলে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ক্রমশ প্রকাশ পাচ্ছে দেশের শীর্ষ ব্যাক্তিদের মানহানি-আস্তিক-নাস্তিক-শ্লীলতাহানি-বেফাঁস অডিও-ভিডিও সহ নানা স্পর্ষকাতর বিষয় এবং মতবাদ। যে মতবাদের জালে আটকে বাংলাদেশের বিপুল সংখক মানুষ এখন গ্লোবাল ভিলেজে প্রতিক্ষনে জন্ম দিচ্ছে হিংসা এবং হত্যার মতো জিঘাংসা। গত ছয়মাসে মানবজমিনে প্রকাশিত ফেসবুক কেন্দ্রিক কয়েকটি সংবাদ শিরোনাম থেকেই স্পষ্ট হয়- শুধু ফেসবুক নিয়ে এখন এখানে চলছে কি? শিরোনামগুলো এমন- ‘ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যঙ্গাত্মক ছবি পোস্ট করায় শাহজাদপুর মেয়র পুত্রের বিরুদ্ধে মামলা’, ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি তরুণী গ্রেপ্তার’, ‘ফেসবুকে ছাত্রলীগ নিয়ে উস্কানিমূলক মন্তব্য: ছাত্রদলের কর্মীকে পেটাল ছাত্রলীগ’, ‘ফেসবুকে এমপিকে বেঈমান বলায় যুবক গ্রেপ্তার’, ‘ফেসবুকে মিছিলের ছবি থেকে শনাক্ত করে ছাত্রকে মারপিট ছাত্রলীগের’, ‘শ্লীলতাহানির ভিডিও ফেসবুকে দেয়ায় যুবকের কারাদন্ড’, ‘ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদ নরসিংদীতে যুবক অপহরণ’, ‘ফেসবুকে মহানবী (সা.) সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের প্রতিবাদে হবিগঞ্জে সমাবেশ’, ‘ফেসবুকে ‘আপত্তিকর’ অডিও ক্লিপ: এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরেক শিক্ষকের জিডি’, ‘ফেসবুকে রাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার হুমকি’, ‘ফেসবুক-এ ছবি পোস্ট করায় জীবন দিলো হাসি’ প্রভৃতি। অন্যদিকে বছর দুই আগে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সি একটি রাজনৈতিক স্ট্যাটাস দিয়েতো ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহননের চেষ্টাও করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে ‘স্বাধীনতা এবং আইন’ প্রসঙ্গে ‘সচেতন’ নয় বলেই সমাজে এমন ঘটনা বাড়ছে ক্রমশ। এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন সংবিদানের ৩৯ অনুচ্ছেদের কথা তুলে ধরে বলেন, গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে ‘নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হয়েছে।’ আপাত:দৃষ্টিতে মানুষের প্রতি সংবিধানের এই ‘স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান’ এর মধ্য দিয়ে উপরোক্ত বিষয়গুলোর দায়মুক্তি ঘটলেও বাস্তবতা কি তাই? সংবিধানে একই অনুচ্ছেদে এই স্বাধীনতার ব্যাখা হিসেবে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের এবং সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’ অর্থাৎ সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন কোনো স্বাধীন মতামত কিংবা কার্যক্রম চালানো যাবেনা যার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা, মানহানি কিংবা নৈতিকতার স্বার্থে কারো আঘাত লাগে।
এদিকে বাংলাদেশ যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলমান নেতিবাচক ঘটনাকে সামাল দিতে আরও কঠোর আইনের কথা ভাবছে সরকার, ঠিক তক্ষুনি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিলেন ভিন্ন কিছু। ভারতের তথ্য অধিকার আইনের ৬৬ (এ) ধারাকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ভারতের দণ্ডবিধি থেকে এ ধারাটি মুছে ফেলারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর ফলে তথ্য অধিকার আইন থেকে বাতিল হয়ে গেল এ ধারাটি। আদালতের মতে, এ ধারাটির অপব্যবহার করে পুলিশ যাকে খুশি তাকে আটক করে। এতে সংবিধান প্রতিটি মানুষকে সামাজিক ও রাজনৈতিক মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা দিয়েছে তা লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ রায় দিয়ে আদালত বলেছেন, আইনের এ ধারাটি একই সঙ্গে স্বাধীনতা ও অবাধ মত প্রকাশের যে মৌলিক অধিকার তাতে আঘাত করা হয়েছে। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তিই এ দুটি বিষয়। আদালতের এমন রায়ের পর এখন সামাজিক মিডিয়ায় মত প্রকাশের জন্য ভারতের আর কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।
শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেট আসরকে ঘিরে নানা রকম হিংসাত্মক মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে পার্শ্ববর্তী বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত-পাকিস্তান থেকেও। চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট পরাশক্তি ইংল্যান্ডকে হারানোর পর পাকিস্তানী ক্রিকেটার নাসির জামশেদ তার পর পর দুটি টুইটে লিখেন, ‘ইংল্যান্ড গেট ডেস্ট্রয়েড বাই রুবেল হোসাইন। হি অলসো হ্যাভ রেইপ কেস ওপেন ইন বাংলাদেশ। দিস বয় ইজ ফুল টাইম ক্রিমিনাল, পার্ট টাইম ক্রিকেটার।’ নাসিরের ২য় টুইটটি ছিল এমন, ‘বাংলাদেশ সেলেব্রেটিং লাইক দে উইন ১৯৭১ ওয়ার! এন্ড দিস টাইম দে ডু উইদাউট ইন্ডিয়া।’ হুট করে নাসির জামসেদের এমন অপ্রীতিকর মন্তব্য বাংলাদেশ-পাকিস্তানের পুরোনো আগুনে যেন আয়োজন করে ঘি ঢেলে দেয়ার মতো। দু’দিন বাদে একই আসরে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে আমপায়ারদের একাধিক ভুল সিদ্ধান্তে পুরো বাংলাদেশ যখন প্রতিবাদ মুখর, ঠিক তক্ষুনি কলকাতার জনপ্রিয় শিল্পী রূপম ইসলাম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার সম্প্রীতিতে রিতীমতো আগুন ধরিয়ে দেন। তিনি বাংলাদেশকে ‘নতুন পাকিস্তান’ ও বাংলাদেশীদের ‘ছোট লোক’ দাবি করে ফেসবুকে লিখেন, ‘অনেক ম্যাচ জিতেছি, তার চেয়ে অনেক অনেক ম্যাচ হেরেছি। ইন্ডিয়া পাকিস্তানের তথাকথিত বিদ্বেশের গল্প শুনেছি। কিন্তু আমার পরিবেশে তা কখনো ছায়া ফেলেনি। অত্যন্ত লজ্জার সঙ্গে গত কয়েকদিন ধরে এক নতুন পাকিস্তানের অভ্যুদয় সহ্য করছি। আমার অভিজ্ঞতায় যা বিরলতম। আর যই করি এইসব ছোটলোকদের আর কখনোই আমি মানুষের মর্যাদা দিবোনা। রেখেছো ছোটলোক করে মানুষ করোনি। স্যরি, এদেরকে যদি বাঙ্গালী বলি তাহলে আমি অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যাবো। হয় আমি বাঙ্গালী, বুকের পাটাওয়ালা- হেরে গিয়ে একে ওকে দোষ দিয়ে প্যানপ্যানিানি গাওয়া না। সৌরভ গাঙ্গুলির মতো শত অবিচার সহ্য করে নিয়ে মাঠে জবাব দেয়ার মতো বাঙ্গালী। এই ধরনের ছোটলোকামির কোনো প্রয়োজন ছিল কি?’ একই সময়ে একই বিষয়ে ফেসবুক স্ট্যটাসে ‘বাঘ’কে ‘বেড়াল’ আখ্যা দিয়ে একইরকম কান্ড ঘটিয়েছেন কলকাতার শীর্ষ নায়ক প্রসেনজিৎও। ভয়ংকর বিষয় হলো নাসির জামসেদের টুইট কিংবা রূপম ইসলাম ও প্রসেনজিৎ এর ফেসবুক স্ট্যটাস প্রকাশযোগ্য অথবা মুক্তমাঠে সমালোচনার যোগ্য। অথচ ফেসবুক এবং ব্লগ দুনিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক-রাজনৈতীক এবং ধর্মীয় মতবাদ নিয়ে পাল্টাপাল্টি আক্রমনের নামে যা চলছে সেটা এককথায় অপ্রকাশযোগ্য এবং ভয়ংকর। দেশে বিদেশে বাংলাদেশ কেন্দ্রিক এমন হিংসাত্মক অথবা স্পর্ষকাতর ঘটনা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে চক্রবৃদ্ধিহারে। দেশের শীর্ষ নেতা, তারকা কিংবা বিশেষ ব্যাক্তিদের ব্যাঙ্গাত্মক ‘ট্রল’ প্রকাশ করা ফেসবুক দুনিয়ায় এখন বিশেষ রিতীতে পরিণত হয়েছে। মজার অথবা বিব্রতকর এসব ট্রলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের। এর পরই আসে মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সাহারা খাতুন, শামীম ওসমান, বিরোধী নেতা বেগম খালেদা জিয়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, টিভি তারকা মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, এটিএম সামসুজ্জামান, চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল, শাকিব খান, ক্রিকেটার শাকিব আল হাসান, রুবেল হোসেন প্রমূখ। শুধু ‘ফেসবুক স্ট্যাটাস-ট্রল’, ‘ব্লগ’ কিংবা ‘টুইটে’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই হিংসা কিংবা ব্যাঙ্গাত্মক কার্যক্রম। এই ধারায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে ‘মতিকণ্ঠ’ নামের একটি স্যাটায়ার অনলাইন পোর্টাল এবং ‘কইয়া দিমু টেলিভিশন’ শীর্ষক একটি ভিডিও পোর্টাল। বাংলাদেশী ফেসবুক ইউজারদের কাছে এখন এই দু’টি মাধ্যম বেশ জনপ্রিয়। যে মাধ্যম দু’টিতে দেশের মূল ধারার পত্রিকা ও টিভিতে প্রকাশিত সংবাদ ও ছবি গুলোকে শতভাগ বদলে ব্যাঙ্গাত্মক এবং চরম আপত্তিকর ভাষায় তুলে ধরা হয়। তাইতো ফেসবুক-ইউটিউব ব্যাবহার করা সাধারন মানুষ মুখরোচক এসব বিষয় লুফে নেন এবং প্রচার করেন অন্য বন্ধুদের ওয়ালে কিংবা ইনবক্সে। সম্প্রতি একটি বেসরকারী জরিপে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের প্রায় ৭০ ভাগ একটিভ ইউজার (ভুয়া, ছন্দনামী এবং আসল একাউন্ট মিলিয়ে) নেতীবাচক কাজে ব্যাবহার করে নিজেদের ফেসবুক একাউন্ট। একই ভাবে নেতিবাচক কাজের প্রবনতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ব্লগ, টুইটার, ইউটিউব ইউজারদের মধ্যেও। এসব কর্মকান্ডে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় বার বার উঠে আসছে বাংলাদেশের নাম। সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যখন থেকে কম দামে ক্যামেরাযুক্ত এন্ড্রয়েড মোবাইলফোন এবং ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়েছে তখন থেকেই এ সংক্রান্ত অপরাধের সংখ্যা বেড়ে গেছে। অপরাধ সংগঠিত হবার পর সঠিক বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবে অপরাধীরা উৎসাহিত হচ্ছে। যার ফলে প্রতি বছর এ ধরনের অপরাধীর সংখ্যা দ্বিগুন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে যা বড় হুমকী হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জানা গেছে, এমন ভাবনা থেকে সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে সিআইডির ফরেনসিক শাখার সাইবার ক্রাইম ইউনিটে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট বিশেষ টিম গঠিত হচ্ছে। এ লক্ষ্যে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এসআই থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৩০ কর্মকর্তাকে ওই টিমে বদলির জন্য আগ্রহী কর্মকর্তাদের নামের তালিকা তৈরি করছে। শিগগিরই এ টিম যাত্রা শুরু করবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কর্মকর্তারা। এদিকে সাইবার অপরাধ দমনে সিআইডিতে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজ আগামী জুনে শেষ হচ্ছে বলেও জানা যায়। এদিকে সরকারের প্রশাশনিক এমন কার্যক্রম আখেরে খুব একটা কাজে আসবেনা, যদিনা মানুষের মধ্যে সেল্ফ সেন্সরশিপ কাজ না করে। এমনটাই মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. রুবাইয়াত ফেরদৌস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হিংসা, প্রতিহিংসা এবং হত্যার চাষাবাদ ক্রমশ বাড়ছে এমন বাস্তবতাকে স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, ব্লগ, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব অথবা এ যাতীয় যা আছে তার সবই আমাদের জন্য নতুন একটি মিডিয়া। যে মিডিয়া সবার জন্য স্বাধীন। মানুষ (বিশেষ করে আমরা) মূলত একা। একটা মানুষ যখন রাতে অথবা দিনে একান্তে তার মনিটরটি সামনে নিয়ে বসে তখন সে নিজের ভেতরের না বলা কথা, দু:খ, ক্ষোভ, বিশ্বাস, অবিশ্বাসসহ যা মনে আসে তাই প্রকাশ করে। কারণ হয়তো, এর বাইরে মত প্রকাশের তেমন কোনো সুযোগ নেই মানুষটির। এসব কারনেই বৌদ্ধ মন্দির থেকে অপরাজেয় বাংলা, ফেসবুক থেকে ব্লগ পর্যন্ত এখন যাচ্ছেতাই হচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে রুবাইয়াত ফেরদৌস আরও বলেন, আমি মনে করি ফ্রিডম ইজ নাথিং, উইদাউট রেসপন্সিবলিটি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানেই যা খুশি তাই নয়। এই শিক্ষাটা আমাদের মধ্যে এখনো গড়ে উঠেনি বলেই এমনটা ঘটছে প্রতিনিয়ত। তাহলে এর পরিনতিকি দাঙ্গা-হত্যা-জঙ্গীবাদের মধ্য দিয়েই এগুবে? এর সমাধানইবা কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আশাবাদী। এসব উগ্রবাদী আচরন কমে যাবে। তবে তার আগে আমাদের একে অপরকে এমন প্রশ্ন আরও করতে হবে। প্রতিনিয়ত আমাদের সবার আলোচনা করতে হবে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আসলে কি? জানি সময় লাগবে। তাই বলে চুপ থাকা যাবে না।
সম্প্রতি দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্রমশ ঈর্ষা বা হিংসার জন্ম নিচ্ছে। গবেষণার সঙ্গে জড়িত অধ্যাপক মার্গারেট ডাফি বলেন, যেভাবে ফেসবুক ব্যবহার করেন ব্যবহারকারীরা, তার ফলে এর প্রতি নিজেদের প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, যদি ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এর ভাল দিকগুলো বেছে নিয়ে নিজের পরিবার ও পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখেন এবং জীবনের মজার ও গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন, তাহলে ফেসবুক হতে পারে বেশ মজার ও স্বাস্থ্যকর কর্মকাণ্ডের জায়গা। তবে পরিচিত কেউ অর্থনৈতিকভাবে কতটা ভাল আছে বা পুরনো কোন বন্ধু তার সম্পর্ক নিয়ে কতটা সুখে আছে, এসব দেখার জন্য যারা ফেসবুক ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে ঈর্ষা বা হিংসার জন্ম নিতে পারে।
এদিকে পুলিশ সূত্র জানায়, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে সাইবার ক্রাইম। ব্লগ, ফেসবুক ও টুইটারের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অপব্যবহার করে অসাধু কিছু লোক অথবা সংঘবদ্ধ চক্র অনেকের ব্যক্তিজীবনে বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। অনেকের দাম্পত্য জীবনে অশান্তির কারণ হচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। এর ফলে ক্রমাগত সাজানো সংসার ভাঙছে। এ ছাড়া বাঁশের কেল্লা, নিউ বাঁশের কেল্লা, আনসারউল্লাহ বাংলাটিমসহ ফেসবুকে আরও বিভিন্ন নামে আইডি খুলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি চলমান অবরোধ-হরতালে কীভাবে পুলিশের ওপর হামলা করতে হবে, বোমা বানাতে হবে, পুলিশের সাঁজোয়া যানের ওপর হামলা করতে হবে, কে নাস্তিক, তাকে কেন কতল করা হবেনা সে ব্যাপারেও প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রশিক্ষিত সাইবার অপরাধীরা প্রক্সি ব্যবহার করে আইপি গোপন রেখে দেশ এবং বিদেশে বসে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্ত্রাসী হামলারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে, ঘটাচ্ছে নারীদের শ্লীলতা হানি। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, ই-মেইলের মাধ্যমে প্রতারণা, ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের মতো ঘটনাও ঘটানো হচ্ছে নিয়মিত।
০৪ ঠা মে, ২০১৫ বিকাল ৫:২১
আল মাহমুদ মানজুর বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ০৪ ঠা মে, ২০১৫ সকাল ৭:১০
মন ময়ূরী বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
০৪ ঠা মে, ২০১৫ বিকাল ৫:২২
আল মাহমুদ মানজুর বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ১০:০৪
অগ্নিঝরা আগন্তুক বলেছেন: ভালো লিখেছেন। ফেইসবুকের মাধ্যমে সহিংসতা ছড়াচ্ছে সবচেয়ে বেশি এর সাথে আমিও একমত। বি টি আর সি -র কর্তা বেক্তিরা একটু দায়িত্বশীল হলেই এই অবস্থা এড়ানো সম্ভব। আর বাঙালির কাজ নাই তো খই ভাজ টাইপ কিছু নিচুস্তরের ফেইসবুক আই.ডি থেকে গালিগালাজ করা একটা স্মার্টনেস এর পর্যায় পড়ে। যেটা তাদের কমেন্টে LIKE দেওয়ার সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায়। যদিও LIKE , COMMENT এখন ARTIFICIAL হয়ে গেছে। চাইলেই হাজার LIKE কে না পায় !! ফেইসবুক শুধুমাত্র দুরত্ব কমাতে পারছে কিন্তু সামাজিকতার বদলে অসামাজিকতাই বেশি ছড়াচ্ছে।