![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইতিহাসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মানচিত্রে প্রোথিত তারকাঁটার হিসাব ভুলে গেলে বাংলা তো একটাই। বাস্তবতা যাই হোক, দুই বাংলার অধিকাংশ আমজনতা সেটাই বিশ্বাস করেন মনেপ্রাণে বরাবরই। দুই বাংলার যে কোন মিলনমেলায় সেটাই অন্তত পরিষ্কার হয় বারবার। নাড়ির টান বলে একটা কথা আছে না! তা না হলে তো সদ্য কলেজে ওঠা কলকাতা পার্ক স্ট্রিটের চড়ুই দত্ত শীতের ছুটি পেয়ে একাই ছুটে আসতো না প্রিয় ঠাম্মার (ঠাকুর মা) সঙ্গে চাঁদের বুড়ির গল্প করতে। সেই কলকাতা থেকে টানা দু’দিন এক রাতে ৫০০ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে কলকাতার চড়ুই পৌঁছাতো না বেনাপোল-ঢাকা-চট্টগ্রাম পেরিয়ে পাহাড় ঘেরা বাংলাদেশের বনগাঁও হিমছড়িতে। তা না হলে তো কলকাতার হোটেলে বসে ঝিরঝিরে টিভিপর্দায় দেখা হতো না কোন বাংলাদেশীর এটিএন বাংলা কিংবা চ্যানেল আইকে। কলকাতার প্রায় শ’পাঁচেক টিভি চ্যানেল ঘেঁটে নিজ দেশের দুটি টিভি স্টেশনের মুমূর্ষু চেহারা দেখতে পাওয়া একজন বাংলাদেশী হিসেবে কতটা উচ্ছ্বাসের, সেটা ভাষায় অপ্রকাশযোগ্য! গেল ৪১ বছরেও আমাদের টিভি চ্যানেল ঢুকতে পারেনি প্রিয় কলকাতায়, সেখানে এখন দুটি চ্যানেলের দেখা পাওয়া আর নায়াগ্রার জলপ্রপাতে বসে টিপে টিপে বাদাম খাওয়া সমান কথা। অনলাইন দুনিয়ায় পুরো বিশ্ব যখন মানব সভ্যতার পকেটে, যখন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আবেগাপ্লুত হয়ে হোটেল ওবেরয়ের বলরুমে ভরা মজলিসে ঠোঁট কাটার মতো বলে ফেলেন, ‘বাংলাদেশ আমাকে যেটুকু দিয়েছে এই কলকাতা তার কানাকড়িও দিতে শিখেনি’...। তখন আসলে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান দুই বাংলার চড়ুই দত্ত কিংবা তড়ুই ইসলামরা (বাংলাদেশের কোন এক তরুণীর প্রতীকী নাম)। তখনই মনের অলিন্দে জেগে ওঠে নানা হিসাব-নিকাশ। কোথায় যেন তেল আর জলের গল্প ফিরে ফিরে আসে এই এক ভাষায় গাঁথা দুই বাংলার ধারাবাহিক কিছু কর্যক্রমে। পুরনো ফিরিস্তি বাদ দিন। চলতি সপ্তাহের ১০-১১ তারিখে আসুন। ১০ই জানুয়ারি সন্ধ্যায় কলকাতার গ্র্যান্ড ওবেরয় হোটেলের বলরুমে আয়োজন করা হলো সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসের আজীবন সম্মাননার আসর। সেখানে ১০ তারিখ সকাল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ ঢাকা থেকে কলকাতার মাটিতে স্থল আর বিমান পথে পা রেখেছেন ঢাকার অন্তত এক ডজন তারকা শিল্পী-মিডিয়া ব্যক্তিত্ব-আয়োজক এবং দুই ডজন সাংবাদিক। ১০ তারিখে কলকাতার কোন কাগজে, কোন চ্যানেলে কোন ফাঁকেও এ খবরটি প্রকাশ পেল না। সন্ধ্যায় ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিলো না একটি ভারতীয়ও মিডিয়াও। যোগ দেয়নি বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিনিধিরাও। উপমহাদেশের অন্যতম দুই কিংবদন্তি সংগীত তারকা সন্ধ্যা মুখার্জি এবং রুনা লায়লাকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করার পরেও পরদিন সকালে কলকাতার খবরের কাগজ এবং টিভি চ্যানেলগুলো ছিল নির্বিকার। হয়তোবা তাই ১১ তারিখ দিনভর কলকাতার পার্ক স্ট্রিট হয়ে নিউমার্কেটের অলিতে-গলিতে অগুনতি মানুষের স্রোত ঠেলে নির্বাক পদচারণা ছিল চিত্রনায়ক আলমগীর, কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, ফাতেমা-তুজ জোহরা, সুবীর নন্দী, কুমার বিশ্বজিৎ, শফিক তুহিন, দিনাত জাহান মুন্নী, কণা, গীতিকবি কবির বকুল, চিত্রনায়িকা চম্পাদের মতো বাংলাদেশী জ্বলজ্বলে বড়-ছোট তারকাদের। অথচ একই দিন (১১ই জানুয়ারি) ঢাকা শহরে বয়ে যাওয়া কনকনে শীতের মধ্যেও কলকাতার নায়ক প্রসেনজিৎ, জিৎ ও পরিচালক গৌতম ঘোষকে ঘিরে দিনব্যাপী বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বয়ে গেছে তীব্র বেগে গরম হাওয়া; সে সময়ে কলকাতা সিনেপ্লেক্সে লাইন ধরে টিকিট কাটছেন কুমার বিশ্বজিৎ, কবির বকুল, দিনাত জাহান মুন্নী, শফিক তুহিনরা; কলকাতার নিউমার্কেটে কাশ্মীরী সাল উল্টেপাল্টে দেখছেন বাংলাদেশের শীর্ষ নজরুল সংগীতশিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা, আর আধুনিক বাংলা গানের অন্যতম দুই দিকপাল সুবীর নন্দী ও সৈয়দ আবদুল হাদী পার্ক স্ট্রিট মোড়ে মাটির পেয়ালায় চুমুক বসিয়েছেন। আর সাবিনা ইয়াসমিন প্যান্ট-শার্ট পরে কিশোরী বালিকার মতো উচ্ছল ভঙ্গিমায় চেপে বসেছেন কলকাতার ঐতিহাসিক (অমানবিকও বটে!) টানা রিকশায়। ঠিক সেই সময়ে ঢাকায় ন্যূনতম ২০টি টিভি ক্যামেরা, ২৪টি স্টিল ক্যামেরা আর অর্ধশতাধিক সাংবাদিক বিরামহীন দৌড়াচ্ছে এয়ারপোর্ট থেকে আবাসিক হোটেল হয়ে বিএফডিসি চত্বরে- কলকাতা থেকে আগত প্রসেনজিৎ, জিৎ আর গৌতম ঘোষের পেছনে। দিনভর খাতা-কলম আর ক্যামেরা নিয়ে মিডিয়া কর্মীদের কেউ ইন্টারভিউ করেছেন, কেউ ছবি তুলেছেন, কেউ মন্ত্রমুগ্ধের মতো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন আর কেউবা (স্বদেশী আয়োজক) ব্যাগ্র দৃষ্টিতে চারপাশ নজরবন্দি রেখেছেন কলকাতা থেকে আগত তারকা দাদাদের কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা! তারকা আর মিডিয়া কেন্দ্রিক এই তেল আর জলের গল্প আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে, যখন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মিডিয়া কর্মীরা ইন্টারভিউ করতে হামলে পড়ে কলকাতার অখ্যাত শিল্পীদের ওপর। যখন বাংলাদেশের তারকা শিল্পীরা দিনভর নিউমার্কেটে হেঁটে রাতে চুপি চুপি নেমন্তন্য করে হোটেলে নিয়ে আসেন কলকাতার বেকার তারকাদের। যখন ‘সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস’-এর নিমন্ত্রণে গিয়ে কলকাতা থেকে সিরিজ আকারে বিভিন্ন খুচরো তারকার বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রকাশ পায় দেশের প্রধান প্রধান দৈনিকে। তাই তো একই বাংলায়, এই তেল আর জলের গল্প বার বার প্রাণ পায় নতুন অবয়বে। আর ক্ষণে ক্ষণে প্রাণ হারায় জলরঙে আঁকা রবি ঠাকুর-নজরুল অথবা চড়ুই দত্ত কিংবা তড়ুই ইসলামের সোনার বাংলা।
©somewhere in net ltd.