নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমার মত। আমি অনন্য। পৃথিবীতে আমার মত কেউ ছিলনা, নেই আর কেউ আসবেও না। জন্মের আগেও আমি ছিলাম না। মৃত্যুর পরেও এই নশ্বর পৃথিবীতে আমার কোন অস্তিত্ব থাকবেনা। যা থাকবে তা আমার কৃতকর্ম।
১।
সময়টা ছিল ১৯৯৬। একদিকে বিএনপির একপাক্ষিক নির্বাচন আর অন্যদিকে আওয়ামীলীগের কঠোর আন্দোলন। আবির তখন পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র। তার বয়স ছিল ক্লাসের সবার চেয়ে কম। ছোটবেলায় আবিরকে নিয়ে তার মা সিনেমা দেখতে যায়। সেটা ১৯৮৯ সালের কথা। আবিরের বয়স তখন মাত্র ২ বছর। মায়ের মুখ থেকে আবিরের গল্প শোনা।
তখন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরাও হলে সিনেমা দেখতে যেত। আবিরের মায়ের পাশে বসা মহিলাটা গল্প করছিল তার ছেলে মাত্র ১৫ বছর বয়সে এসএসসি পাশ করেছে। আবিরের মায়ের অবচেতন মনে বাসা বেঁধে যায় তার একমাত্র ছেলেকে ১৫ বছরের পূর্বেই এসএসসি পাশ করাবে। সেই ভাবনা থেকেই আবিরকে চার বছরের আগেই প্রি-প্রাইমারি ক্লাস এবং ৫ বছরের আগেই ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করে দেয়। ছাত্র ভাল হওয়ায় আবিরের মাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।
২।
৯ বছরের পূর্বেই আবির ক্লাস ফাইভে উঠে যায়। আবিরের বৈষয়িক বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ খুব বেশি না হলেও পড়াশুনা এবং দেশ বিদেশের চলমান অবস্থার খবর সম্পর্কে ছিল অবাধ জ্ঞান। সেই বয়সেই আবির গণতন্ত্র- স্বৈরতন্ত্র বুঝতো। আবিরের পরিবার ছিল দুই রাজনৈতিক তাঁবুতে বিভক্ত। বাপ-চাচা ভাইবোন এমনকি বাবা-মাও রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। আবির ছিল গণতান্ত্রিক দর্শনে বিশ্বাসী। স্বৈরতন্ত্র সে মোটেও পছন্দ করতোনা। সে মা-বাবা কারো পক্ষেই ছিলোনা। অল্প বয়সেই স্বাধীনভাবে ভাবতে পারতো। সে পরিবারের সবার তর্ক-বিতর্ক শুনত। কখনোবা নিজেও মতামত উপস্থাপন করত। দেশ ছিল আগ্নেয়গিরির মত উত্তপ্ত আর দুই দলের সম্পর্ক ছিল বরফ শীতল। সে তার বাবার সাথে সিক্স-ব্যান্ড রেড়িওতে বিবিসি বাংলা আর ডয়েস-এভেলে শুনতো। এত অল্প বয়সে বেশি রাজনৈতিক সচেতনতার জন্যে তাকে বকাও শুনতে হতো।
৩।
এরই মধ্যে ক্লাস ফাইভের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে চিঠির আদান-প্রদানের খবর তাকে কৌতুহলী করে তুলত। স্যারেরা রোজই চিঠির বিচার করতেন। শাস্তি হিসেবে ছিল তাচ্ছিল্য আর বেত্রাঘাত। বরাবরের ফার্স্ট বয় আবিরের ভদ্র হিসেবে খুব খ্যাতি ছিল। সে অবশ্য চিঠি লেখার কথা ভাবতেও পারতনা। বড় বড় সাইজের ছেলেরা চিঠি লিখত। তখনকার প্রেম শুধু চিঠি লেখা আর একটু তাকানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। প্রেমটা ছিল একটা প্লেটোনিক ব্যাপার। কয়েকটি মেয়ে বয়োঃসন্ধির কাছাকাছি পৌঁছালেও ছেলেরা তখন একদমই বয়োঃসন্ধির কাছাকাছি পৌঁছায়নি। অপরদিকে আবিরতো সবার চেয়ে ছোট। বয়সে সবচেয়ে বড় ছেলেটিও বয়োঃসন্ধির কাছাকাছি পৌঁছায়নি। এরই মধ্যে আবিরের মধ্যে প্রেম প্রেম একটা ভাব জন্ম নিল।
৪।
মেয়েটির নাম ছিল সঞ্চিতা। মেয়েটির একটু ভিন্ন ধরণের নাম প্রথমে আবিরকে মুগ্ধ করল। তারপর মুগ্ধ করল মেয়েটির কথা আর সৌন্দর্য্য। মেয়েটিও সবার মত আবিরের চেয়ে বয়সে বড় ছিল। আবির মনে মনে ভাবত একদিন মেয়েটিকে চিঠি দিয়ে তার ভাললাগার কথা জানাবে। কিন্তু আবিরের মনে সে সাহস নেই। তাই সে দুই বছর পরের জন্য চিঠি লেখা ফেলে রাখল।
৫।
আবির মেয়েটির সাথে স্কুলের মাঠে খেলত। ক্লাসে পাশপাশি বসত। এর বাইরে গিয়ে চিঠি লেখা মোটেও সম্ভব ছিলনা। আবির ভাবত মেয়েটিকে সে চিঠি দিয়েছে। দুজন একসাথে হাটছে আর পাশাপাশি বসে গল্প করছে। কিন্তু এ স্বপ্ন আবিরের কাছে মাউন্ট এভারেস্টে আরোহন করার চেয়েও কঠিন ছিল। তারপরও আবিরের স্বপ্ন জলে স্থলে বিচরণ করতে থাকল। একদিকে ছিল রাজনীতি আর দেশের ভবিস্যতের মাঠে উত্তেজনা আরেকদিকে ছিল আবিরের মনে উত্তেজনা। আবির ভাবত একদিন দুটোই একটি সুস্থ পরিনতির দিকে যাবে।
৬।
এভাবেই জানা-অজানার ভিড়ে আবির স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে। কঠিন পরিস্থিতি পারি দিয়ে দেশে নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। দেশসচেতন মানুষের মত আবিরের মনেও স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু ভাললাগার স্বপ্নের দেশে কোন স্বস্তি ফিরে আসেনা।
২৭ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৭
প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: ধন্যবাদ অনি:শ্বেষ আমার ব্লগ পড়ার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ২:২৪
ইশরাতজাহান বলেছেন: ভালো লাগলো।