নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমার মত। আমি অনন্য। পৃথিবীতে আমার মত কেউ ছিলনা, নেই আর কেউ আসবেও না। জন্মের আগেও আমি ছিলাম না। মৃত্যুর পরেও এই নশ্বর পৃথিবীতে আমার কোন অস্তিত্ব থাকবেনা। যা থাকবে তা আমার কৃতকর্ম।
কয়েকদিন ধরে হাসিবের মনটা ভীষণ খারাপ যাচ্ছে। মন খারাপের জন্য শরীরেও শক্তি পাচ্ছেনা। সে ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ হয়ে গিয়েছে। সারা চলে যাওয়ার পরও এমনটি ঘটেছিল। কিন্তু এবার তার চেয়ে অনেক বেশি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। সে যদিও সমাজতন্ত্র এবং মানুষের সম-অধিকারে বিশ্বাসী তবুও সে বিষয়টি কোনভাবে মেনে নিতে পারছেনা। সে ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র হয়েও ভাবছে- তার যোগ্যতা কি একজন ইন্টার ফেল দিনমজুরের চেয়েও কম। কি নেই তার? পারিবারিক- সামাজিক অবস্থান, ছাত্র হিসেবেও খারাপ না। আবার চেহারার দিক দিয়েও মেয়ে পটানোর মতোই।
সমস্যাটা হয়েছে অন্য যায়গায়। সারা চলে যাওয়ার আগে তার কোন দোষ দিয়ে যায়নি। শুধু বলেছে তার পরিবার হাসিবকে মেনে নেবেনা। কিন্তু কেন মেনে নেবেনা সেটা হাসিবের কাছে এক বিমূর্ত বিস্ময়। সে সারাকে অনেকভাবেই বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত সারা বলেছে হাসিব যদি তাকে বিন্দুমাত্র ভালবেসে থাকে তাহলে যেন তাকে ভূলে যায়। হাসিব শিশুর মত হাউমাউ করে কেঁদেছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
হাসিব সারাকে প্রায় ভূলেই গিয়েছিল। হঠাতই হাসিবের কাছে খবর এল সারা সিঙ্গাপুর প্রবাসী এক বাংগালীর সাথে প্রেম করছে। এটা যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। অনেকদিন পর হাসিবের মনে সাইক্লোন তৈরী হল। হাসিব সারাকে ফোন করে অনেক বুঝালো। কিন্তু সে ব্যর্থ হল। সে বুঝাতে চেষ্টা করল যে ছেলেটা তার সাথে প্রতারণা করছে। ও যে সাবজেক্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার কথা বলেছে প্রকৃতপক্ষে ঐ নামে কোন সাবজেক্টই নেই। আর হাসিবদের ব্যাচমেটদের সবাই ততদিনে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ফেলেছে। কোন কিছুতেই কাজ হলোনা। আসলে এটা একটা মাদকের মত। মানুষ যেমন জেনে বুঝে মাদকের কাছে ছুটে যায় ঠিক তেমনি সারা ছেলেটির দিকে ছুটে যায়। হাসিব দিব্যজ্ঞানে বুঝতে পারে একদিন সারা ঠিকই বুঝতে পারবে কিন্তু তখন করার কিছুই থাকবেনা।
হাসিব সব ভূলে আবার নতুন করে জীবন শুরু করল। কিন্তু হঠাতই অপদেবতার আগ্রাসনে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। এ যেন হোমারের ইলিয়ডের অপদেবতাদের মত, যারা মানব সমাজ নিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমত খেলা করে ধর্মের আর ভাগ্যের নাম করে। সারা ছেলেটিকে বিয়ে করলেও হাসিব প্রতিক্রিয়াবিহীন হয়ে থাকে। কারন যে যায় তাকে ফেরানো যায়না।
হাসিব জানতে পারে বিয়ের কিছুদিন পর সারা জানতে পারে ছেলেটি ইঞ্জিনিয়ার তো নয়ই সে ইন্টারও পাশ করেনি। উপরন্তু সে সিংগাপুরের দিন মজুর। তখনই হাসিবের সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়। হাসিব সম্পর্কের পুরোটা সময় জুড়েই সৎ ছিল। অন্য নারীর স্পর্শ তো দূরে থাক, অন্য নারীর চিন্তাও মাথায় আনেনি। সারা চলে যাওয়ার এতদিন পরেও সে অন্য কোন নারীর কামনার দ্বারস্ত হয়নি।
হাসিব চিন্তা করে তার জীবনে আর হারানোর কিছু নেই। সে চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কোন কিছু না ভেবে নিষ্পাপ হাসিব পতিতালয়ে ছুটে যায়। সেটা কামের মোহে নয় নারীর প্রতি তীব্র ঘৃণা থেকে। দালালের মাধ্যমে অনেক খুঁজে সে একটি সুন্দর ছিমছাম পঁচিশ উর্ধ একটি মেয়েকে বাছাই করে। সাধারণত পঁচিশ পার হয়ে গেলে পতিতাদের চাহিদা কমে যায়।
হাসিব মেয়েটির রুমে প্রবেশ করে। রুম বেশ সুসজ্জিত আর আলোকোজ্জ্বল। সুগন্ধিও ছেটানো আছে। মেয়েটি শুরুতেই কাপড় খুলতে বলে। হাসিব কখনো আসেনি বলে মেয়েটির কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে যায়। তখন সে মেয়েটিকে দ্বিগুন টাকা দিবে বলে সময় বাড়িয়ে নেয়। সে মেয়েটিকে পতিতাপল্লীতে আসার কাহিনী জিজ্ঞেস করে। মেয়েটি কোন আগ্রহ দেখায় না। মেয়েটি শুরুর কথাটি পুনরায় বলে।
হাসিবের অধীর আগ্রহ দেখে মেয়েটি বলে “পুড়েই যখন গিয়েছি তখন ছাই উড়িয়ে কি লাভ?” কথাটা হাসিবের কাছে দার্শনিক উক্তির মত মনে হয়। মেয়েটিকে কিছু না করে তার নষ্ট জীবনে আসার গল্প শুনে যায়। মেয়েটি বয়সে বড় বলে সে তাকে দিদি বলে সম্ভোধন করে। তারপর একে একে দিদির নষ্ট জীবনে আসার কাহিনী শুনে যায়। দিদি বলে সে অনেকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পেরে উঠেনি। শেষবার গলায় উড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। মেয়েটি বলে পুড়া কপাল তাই আত্মহত্যাও করতে পারেনা। হাসিব মেয়েটির কষ্ট দেখে মনে মনে ভাবে সে কতই না সুখী। গার্ল ফ্রেন্ড চলে গেছে বলে তো তার সব শেষ হয়ে যায়নি। জীবনে একরকম হতেই পারে। সে মেয়েটির গল্প শুনে মোহাবিষ্ট হয়ে যায়। তারপর কিছুই না করে দ্বিগুন টাকা দিয়ে চলে আসে। আসার সময় সে মেয়েটিকে এই জীবন থেকে মুক্ত করার কথা বলে। মেয়েটি হেসে উড়িয়ে দিয়ে সেই দার্শনিক উক্তির পুনরাবৃত্তি করে।
হাসিবের শুধু পতিতালয়ের দিদির কথায় মনে পড়তে থাকে। সে মাঝে মধ্যে দিদির কাছে যায়। দিদি খদ্দের বাদ দিয়ে হাসিবের সাথে তার পুড়া জীবনের গল্প করে। হাসিবও তার জীবনের গল্প করে। একেবারে সবকিছুর আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত গল্প করে দিদির সাথে। মাঝে মাঝে সে তার মনের প্রতিজ্ঞার কথা বর্ণনা করে, কিভাবে সে দিদিকে নষ্ট জীবন থেকে মুক্ত করবে। সে দিদির জন্য শহরের গার্মেন্টসে কাজও খুঁজ করে রাখে। মাঝে মধ্যে সে পতিতালয়ে মদ্যপ পান করে। এজন্য দিদি তাকে অনেক বকাবকিও করে।
এভাবেই ফাইনাল ইয়ারের পড়া আর দিদিকে নিয়ে তার দিন কাটতে থাকে। ফাইনাল পরীক্ষার জন্য সে অনেকদিন দিদির খুঁজ নিতে পারেনি। পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর দিদির সাথে দেখা করার জন্য তার মন উতলা হয়ে উঠে। সে দিদিকে মুক্ত করার জন্য টাকা জোগাড় করে। আইনজীবী আর পুলিশের পরামর্শও গ্রহণ করে। আগেভাগেই চাকুরীর ব্যবস্থা করে রাখে। সব ঠিকঠাক করে দিদিকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করার একবুক আনন্দ আর একগুচ্ছ ফুল নিয়ে পতিতালয়ের সেই ঘরের কাছে হাজির হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে সে অন্য মেয়েকে দেখতে পায়। তার মনের মধ্যে অজানা আশংকা ভর করে। সে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে সপ্তাহ খানেক আগে তার দিদি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সে চিৎকার করে উঠে। তারপর সে জানতে চায় যে তার দিদির কোথায় দাহ করা হয়েছে। কিন্তু সে আশ্চর্য হয়ে শুনে পতিতাদের কবর বা দাহ কিছুই হয়না। তাদেরকে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। তারপর হাসিব যে লোকের কাছে মদ খেত সেই লোককে নিয়ে দেখতে যায় কোথায় তার দিদিকে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে নদীর ঐ যায়গাটায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নীরবে অশ্রুবর্ষণ করে। ফুলগুলোকে পানিতে নিক্ষেপ করে। তার মনের মধ্যে দিদির একটা কথায় আসতে থাকে আর কানে বারবার প্রতিধ্বনিত হতে থাকে, “পুড়েই যখন গেছি তখন ছাই উড়িয়ে কি লাভ?”
©somewhere in net ltd.