নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমার মত। আমি অনন্য। পৃথিবীতে আমার মত কেউ ছিলনা, নেই আর কেউ আসবেও না। জন্মের আগেও আমি ছিলাম না। মৃত্যুর পরেও এই নশ্বর পৃথিবীতে আমার কোন অস্তিত্ব থাকবেনা। যা থাকবে তা আমার কৃতকর্ম।
পতিতা পল্লী থেকে বের হয়ে এসেছি ২ ঘন্টা হলো। এখন আমার প্রিয় ব্র্যান্ডের বেনসন খাচ্ছি। সিগারেট খাওয়ার সবচেয়ে মজার সময় হল শীতকালের সকাল এবং সন্ধ্যা! যতই মুরব্বি থাকুক আর যতই সিনিয়র বড় ভাই থাকুক সিগারেট হালকা সেভ দিয়ে খেলেই আর কোন ঝামেলা নেই। সিগারেটের ধোয়া আর কুয়াশা সব মিলে যাবে এক হয়ে। প্রেমিকার বাসায় আজ সন্ধ্যায় ডেকেছে। যাব কি যাব না এই নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দে ভুগছি। তাই তো প্রেমিকার এলাকায় এসে সিগারেট ধরিয়েছি আর মগ্ন হয়ে আছি চিন্তার জগৎ-এ।
.
প্রেমিকার বাসায় বসে রয়েছি। কিছুটা ভয়ও হচ্ছে। প্রেমিকার মুখেই শুনেছি ওর বাবা আর ভয়ংকর পিচাশের মাঝে নাকি কোন অমিল নেই। যাকে একবার অপছন্দ হয় তার ঘাড়েই চেপে বসে রক্ত খাওয়ার মত করে! লোকটি নাকি গণিতের শিক্ষক! অবশ্য আমি সবচেয়ে গণিতেই ভালছিলাম বেশি।আমার বিশ্বাস লোকটি গণিতের মারপ্যাচে ঠ্যাকাতে পারবে না!হঠাৎ প্রেমিকার বাবা আসলো।এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো! এতো আমার কলেজের জীবনের প্রিয় শিক্ষক! এতদিন পর এভাবে স্যারের সাথে দেখা হবে কখনো ভাবিনি। আর এই লোকটিই আমার প্রেমিকার বাবা! বাহ!
স্যার কলেজে আমাকে জীবনেও একটি অংকেও ঠেকাতে পারেন নি।কোনদিন স্যার প্রশ্ন করেছেন আমি উত্তর পারিনি তা হয়নি!
স্যার বিনা বাক্যে আমাকে বরণ করে রাতের খাবার খাইয়ে বিদায় দিলেন।
.
৬ মাস পর..
.
বর্তমানে আমি আর একা নই। নতুন বউ আর সংসার ভালই চলছে। এখন আর অফিস থেকে এসে সেই মেসের বুয়ার পচা খাবার খেতে হয় না! ময়লা শার্ট প্যান্ট একটানা কয়েকদিন পরতে হয় না! ব্যাচেলার চাকরিজীবী পুরুষরা মূলত বিয়ে করে থাকে এই সব সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে। আজ বাসায় যাওয়ার আগে একবার পতিতাপল্লী হয়ে যাবো! প্রতি সপ্তাহে একবার হলেও আসি এখানে! আগে এখানে আসতে তেমন ভয় করতো না,কিন্তু ইদানিং খুব ভয় করে।কেউ যদি বউকে বলে দেয়!
কিছুদিন আগে অফিসের পিয়ন আশরাফ আর আমার মুখোমুখি হয়ে যায় এই এলাকায়।
তারপর থেকে অফিসে আশরাফকে অনেক গুরুত্ব আর প্রশয় দিতে হয়। আগে কাজ ফাঁকি দিলেই ওকে বকতাম!! কিন্তু এখন চা আনতে পাঠালে দেরি করলেও ওকে হাসি মুখে সম্বোধন করতে হয়! অফিসের বাইরের টংয়ের দোকানে আশরাফ এখন আমার সামনেই সিগারেট ধরিয়ে খায়!..
.
পতিতা পল্লী থেকে বের হয়ে বাসায় পৌছাতেই দেখি বউ আমার রাগি মুড নিয়ে বসে আছে। কারণ জিগাসা করতেই তেরে এলো! বাসায় ৩ দিন হলো ডিশের লাইন নেই! ডিশের অফিসে কল দিয়ে লাভ হয়নি, তাই আজ অফিস থেকে আসার সময় ডিশের অফিসের লোককে সাথে করে আনতে বলেছিল। কিন্তু আমিতো ভুলে গিয়েছি। তাই রাতের খাবার বাইরে করতে বল্লো! আজ সে আমার জন্য রাঁধবে না! এই প্রেম করে বিয়ে করাটায় ভুল! প্রেম করে বিয়ে করলেও ঘরে যে নারীর এক নায়কতন্ত্র কায়েম থাকে!
.
পরেরদিন সকালে গিয়ে বউকে ডাবল সারপ্রাইজ দিলাম!ডিশের লাইন ঠিক করেছি আর সাথে বাসায় ২ এমবিপিএস স্পিডের ব্রডব্যান্ড লাগিয়ে দিয়েছি। ডিশের সমস্যা হলে নেট আর নেটে সমস্যা হলে টিভি!! বউয়ের সামাজ্যে এখন ডাবল ধামাকা!
এখন আর বউ বেশি টিভি দেখে না! সারাক্ষণ ইউটিউবে নাটক, মুভি দেখে। রাতে অফিসের কাজের জন্য ডেস্কটপে বসতে পারি না। তাই আলাদা একটা ল্যাপটপ কিনেছি। কিন্তু সে ল্যাপটপ নিয়ে গেছে আর আমাকে সেই ডেস্কটপ ধরিয়ে দিয়েছে!
.
আজ অফিস তাড়াতাড়ি ছুটি দিলেও পতিতাপল্লীতে যাব না আজ। শরীরটা জ্বর জ্বর লাগছে। বাসায় গিয়ে দেখি শ্বশুর এসেছে। একি বউ আমার কাপড় গুছিয়ে শ্বশুর বাড়ি চলে যাচ্ছে। শ্বশুর আমাকে দেখেই তার স্যান্ডেলটা খুলে গালের মধ্যে কয়েকটি বসালেন বারি! এক প্রকার ধস্তাধস্তিতে আমার শার্ট ছিড়ে গেল। তারা বাড়িওয়ালা থেকে শুরু সবাইকে এনে বলে গেল আমার পতিতাপল্লী যাওয়ার ঘটনা! বাড়িওয়ালা ১ সপ্তাহের মধ্যে বাড়ি ছাড়তে বল্লো। আসলে বাসায় নেট এনে দেওয়াটায় ভুল সিদ্ধ্যান্ত ছিল। পতিতাপল্লী নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি দেখে আমার বউ। সেখানে হিডেন ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করে খদ্দেরদের দেখানো হয়! কপালগুণে আমিও সেই হতভাগাদের মধ্যে একজন!
.
শ্বশুরের ধস্তাধস্তিতে আমার গাল কেটে গেছে বুঝিই নি। আজ বাসায় না ঢুকে সেই ছেড়া শার্ট নিয়েই বেরিয়ে পরলাম পতিতাপল্লীর উদ্দেশ্যে!
.
পতিতাপল্লীতে দাঁড়িয়ে আছি। একজন পতিতা অনেক্ষণ ধরে আমার ছেড়া শার্ট আর কাটা গালের দিকে তাকিয়ে আছে!! আর আমিও তার দিকে! সেই পতিতার চোখ দিয়ে পানি পরছে! হাজার হলেও মায়ের মন তো! আমার চোখ দিয়েও পানি পরছে। আমি কিছুক্ষণ পর চলে আসলাম। চোখ যে আজ খুব ভারি হয়ে আসছে পানিতে..
.
এই পতিতা পল্লীতে পতিতাদের ১২০০-১৫০০ এর মত জারজ সন্তান আছে! মেয়ে হলে তাদের সর্দারনীরা ধরে একি পেশায় দিয়ে দেয়!আর ছেলে হলে দক্তক বা সর্বোচ্চ ৭ বছর বয়স পর্যন্ত মায়েরা লালন করেন। যখন সন্তানের বুঝ হবে তখনই মায়েরা তাড়িয়ে দেন! মা খারাপ কাজ করে এটা কোন মহিলায় চাবে যে তার সন্তার জানুক! একটি এনজিওর বদলতে ক্লাস টেন পাশ করি। তারপর নিজেই নিজের ভার গ্রহণ করে আজ এ পর্যন্ত!! সবাই জানে আমি এতিম! কিন্তু আমিতো এতিম না!
বউকে সত্য বলে আর আনতে যাবো না..
.কোন সন্তান চায় যে তার মায়ের খারাপ কাজ প্রকাশ পাক! আমি জারজ..এটি আমার অভিশাপ! অভিশাপকে বুকেই পুষতে হবে! মাকে অনেক আনার চেষ্টা করেছি; কিন্তু আমার বুঝ হওয়ার পর আমার দিকে চোখ তুলে দাঁড়ানোর সাহসই তার হয়নি। কোন মা চাইবে তার সন্তান তাকে এই জগৎ থেকে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যাক! মা তো কোন পণ্য না! সে তো দেবী তার সন্তানদের কাছে!
.
হেঁটে চলেছি বাসার দিকে। বুকে একটি কষ্ট ছিলই আগে থেকে কিন্তু আজ নতুন কষ্ট যোগ হলো। এভাবেই কাটবে আমার এতিম সেজেই.. শুধু মাঝে মাঝে আসবো এই পতিতপল্লীতে যতদিন সেই মহিলা বেঁচে আছে তাকে শুধু এক নজরে দেখতে..
(ছায়াগল্প)
০৮ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৮
প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: ধন্যবাদ সজল। আমার ব্লগে স্বাগতম।
২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩০
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: সুন্দর।
০৮ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৯
প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: ধন্যবাদ সাজ্জাদ। শুভকামনা রইল অনিঃশ্বেষ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৯
সজল দাস বলেছেন: অনেক সুন্দার হয়েছে