নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমার মত। আমি অনন্য। পৃথিবীতে আমার মত কেউ ছিলনা, নেই আর কেউ আসবেও না। জন্মের আগেও আমি ছিলাম না। মৃত্যুর পরেও এই নশ্বর পৃথিবীতে আমার কোন অস্তিত্ব থাকবেনা। যা থাকবে তা আমার কৃতকর্ম।
উইলিয়াম জেমস মারাত্মক সমস্যা আক্রান্ত একজন মানুষ ছিলেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল ধনী আর প্রভাবশালী পরিবারে। জন্মের পর থেকেই তিনি নানারকম স্বাস্থ্য সমস্যায় জর্জরিত হতে থাকেন। ছোটবেলায় তাঁর চোখে সমস্যা ছিল, যা তাঁকে কিছুদিনের জন্য অন্ধ করে দেয়। পরে তা ঠিক হয়ে যায়। তাঁর পেটের পীড়ার জন্য সবসময় পেটে ব্যথা আর বমি হত। এজন্য তাঁকে খাবারের ব্যাপারে মারত্মক সতর্কতা অবলম্বন করতে হত। তাঁর কানে সমস্যা ছিল। মারাত্মক পিঠ ব্যথার জন্য বেশিরভাগ সময় তিনি বাড়িতেই বসে বা শুয়ে কাটাতেন।
শরীরের মারাত্মক সব সমস্যার জন্য জেমস বাড়ির বাইরে কমই যেতেন। তাঁর বন্ধুর সংখ্যাও ছিল কম। স্কুলে তিনি খুব একটা ভাল ছিলেন না। এজন্য তিনি তাঁর দিনগুলো বাড়িতে ছবি এঁকে কাটাতেন। এই একটি মাত্র বিষয়ে তিনি কিছুটা ভাল ছিলেন। অন্য কোন বিষয়ে একদমই না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ কেউ তাঁর কাজের মূল্যায়ন করতোনা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাঁর বাবা ছেলের অকর্মণ্যতা আর মেধাহীনতার জন্য ছেলেকে তিরস্কার করতেন।
তাঁর বড় ভাই হেনরি জেমস জগত বিখ্যাত উপন্যাসিক হয়ে গেলেন। তাঁর বড়বোন এলিস জেমসও লেখিকা হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করলেন। উইলিয়াম তখন পরিবারের কুলাংগার।
তাঁর বাবা ছেলের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য নিজের ব্যবসায়িক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে তাঁকে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলে ভর্তি করলেন। বাবা বলে দিলেন এটাই ছেলের শেষ সুযোগ। লেগে না থাকলে তাঁর জন্য কোন আশা থাকবেনা।
কিন্তু মেডিকেল স্কুল তাঁকে মোটেও আকৃষ্ট করতে পারলোনা। বেশিরভাগ সময় তাঁর নিজেকে মেকি এবং প্রতারক মনে হতো। তিনি ভাবতেন, যেহেতু নিজেই নিজের সমস্যার কোন কুল কিনারা করতে পারেন না, ডাক্তার হয়ে রোগীদের কিভাবে সাহায্য করবেন। সেই শক্তি তিনি কোত্থেকে পাবেন। একটি সাইকিয়াট্রিক ক্লিনিক পরিদর্শনের পর জেমস তাঁর নিজের সাথে ডক্টরদের চেয়ে রোগীদের সাথেই বেশি মিল খুঁজে পেলেন।
কয়েকবছর চলে গেল। জেমস মেডিকেল স্কুলে খারাপ করছিলেন। তারপর একসময় মেডিকেল স্কুল থেকে ঝড়ে পড়লেন। বাবা প্রচন্ড অসন্তুষ্ট হলেন। কিছুতেই ছেলের এহেন অবস্থা মেনে নিলেন না। জেমস বাবার কাছে যাওয়ার বদলে দূরে কোথাও চলে যাওয়ার কথা ভাবলেন। তিনি আমাজন রেইন ফরেস্টের একটি নৃতাত্ত্বিক অভিযানে সাইন আপ করলেন।
সেসময় ১৮৬০ সালের দিকে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে যাতায়াত ভীষণ কঠিন এবং ভয়ংকর ছিল। তারপরও জেমস আমাজনে গেলেন আর তখন থেকেই প্রকৃত এডভেঞ্চার শুরু হল। যেতে তাঁর ভংগুর শরীর ভাল হতে থাকল। শেষ পর্যন্ত তিনি অভিযানে পৌঁছে গেলেন। কিন্তু যাওয়ার পরই তাঁর গুটি বসন্ত হয়ে গেল। তিনি জংগলে মরতে বসলেন। তাঁর পিঠের ব্যাথা ফিরে এল। হাঁটা তাঁর জন্য অসম্ভব হয়ে গেল। গুটিবসন্তে ভূগে তিনি প্রায় মরতে বসলেন। হাঁটা তাঁর জন্য অসম্ভব হয়ে গেল। অভিযাত্রী দল তাঁকে দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে ফেলে রেখে চলে গেল।
তিনি কোনরকমভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেন। তিনি নিউ ইংল্যান্ডে ফিরে আসতে পারলেন। তাঁর বাবা তাঁকে হতাশার সংগে গ্রহণ করলেন। উইলিয়াম তখন আর সেইরকম তরুণ নেই। মধ্য তিরিশেও তিনি বেকার, একের পর এক তাঁর শরীর মন তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেই চলেছে। সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়া স্বত্বেও জীবন থেকে ছিটকে পড়লেন। তাঁর জীবনে শুধু দুঃখ আর দুর্দশাই অবশিষ্ট রয়ে গেলেন। জেমস গভীর ডিপ্রশনে পড়ে গেলেন এবং আত্মহত্যার কথা ভাবতে থাকলেন আর পরিকল্পনাও করে ফেললেন।
একদিন রাতে দার্শনিক চার্লস পিয়ার্সের লেকচার পড়তে পড়তে , জেমস জীবন নিয়ে আরেকবার এক্সপেরিমেন্ট করার কথা চিন্তা করলেন। তিনি তাঁর ডায়রিতে লিখলেন আগামী একবছর তিনি বিশ্বাস করবেন তাঁর জীবনে যাকিছু ঘটেছে তার জন্য তিনি নিজেই দায়ী, আর যাকিছুই ঘটুক তিনি তাঁর অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন যত ব্যর্থতাই আসুক না কেন। এই একবছরে যদি কিছুই পরিবর্তন না হয় তবে তিনি ধরে নিবেন যে তাঁর পক্ষে কিছুই সম্ভব না এবং তিনি আত্মহত্যা করবেন।
কিন্তু খাঁদের কিনারায় এসে কি ঘটল? উইলিয়াম জেমস আমেরিকান সাইকোলজির জনক হয়ে গেলেন। তাঁর কাজ শতাধিক ভাষায় অনুদিত হয়েছে এবং তিনি তাঁর প্রজন্মের সবচেয়ে প্রভাবশালী দার্শনিক/ মনোবিদ/বিদ্বান ব্যক্তি। তিনি হার্ভার্ডসহ আমেরিকা ইউরোপের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচার দিলেন। বিয়ে করে পাঁচ সন্তানের জনক হলেন। জেমস তাঁর ক্ষুদ্র এক্সপেরিমেন্টকে নিজের পুনর্জন্ম হিসেবে উল্লেখ করলেন এবং এটিকেই জীবনের সব পট পরিবর্তনের নিয়ামক হিসেবে উল্লেখ করলেন যেটি তাঁর পরবর্তী জীবনকে পূর্ণতা দিল।
তাঁর জীবনের উপলব্ধিতে সকল আত্মোন্নয়ন আর বিকাশের সহজ শর্ত লুকায়িত আছে। আর এটা হচ্ছে আমাদের জীবনে যা কিছু ঘটুক তার দায়িত্ব আমাদের নিজেদেরকেই নিতে হবে, বাইরে যা কিছু ঘটুক না কেন। আমরা সমসময় আমাদের প্রতি কি ঘটছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা। আমরা যা করতে পারি তা হচ্ছে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সঠিকভাবে প্রতিক্রিয়া করা।
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৩:০৭
প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: শুনে পৃত হলাম প্রিয় ব্লগার।
২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:০৬
সম্রা৩২১ বলেছেন: তথ্যবহুল লেখা। ধন্যবাদ
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৩:০৯
প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:২৬
রাজীব নুর বলেছেন: অজানা একটি বিষয় জানলাম।