নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানুষ, এটাই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় ।

মাহমুদ পিয়াস

মানুষ হবার চেষ্টা করছি ! পারছি কই !

মাহমুদ পিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুগে যুগে ষোলই ডিসেম্বরের বিবর্তন

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৯

১৬ ই ডিসেম্বর ২০২৬ !

যে দলটা মুক্তিযুদ্ধের কলা সামনে ঝুলিয়ে রাষ্ট্রকে নিজের মতো করে ব্যবহার করতো, তাদের পতনের পরে আরেকদলের উত্থান ঘটেছে যারা জাতীয়তাবাদের নামে ওদের পথেই হাটছে !

লীগের জায়গায় দল, মুজিবের জায়গায় তাদের নেতাদের ছবি, জাস্ট এই দুটো জায়গার প্রতিস্থাপন ছাড়া আর কোনো পরিবর্তন সামনে আসে নি ! অন্তত জনগন দেখছে না !

আগে আপনি মুজিবের নামে, হাসিনার নামে নূন্যতম সমালোচনা করলেও ফুডপান্ডার গাড়ি দরজায় আসতো, এখন ক্ষমতাসীন নেতার নামে কিছু বললে উডলম্বা এসে দাঁড়িয়ে থাকে, লীগের ভাষ্যমতে ওদের বিপক্ষে বলা সবাই ছিল বিম্পি/জামাত, আর এখন এদের বিপক্ষে বলা মানেই সে আফসোসলীগ ! সিস্টেমটা সিস্টেমেই আছে জাস্ট চেহারাগুলা বদলে গেছে, এর বাইরে তেমন কিছু না !

লীগের আমলের আয়নাঘর ভেঙে দিয়ে বায়ুভবনকে রং করে সেটা চকচকে করা হয়েছে, এবার সেটাকে ব্যবহার করা হবে !

আর থাকলো সাদা ভ্রুর মুরুব্বীরা !
লীগ/দলের পোস্টারে সবার উপরে তিনজনের ছবি থাকে, এদের থাকে একজনের ! তিনজনের ছবি হারাম হলেও এই একজনের ছবি সাটানো হালাল ! চেহারা-সুরত ভুরুতে যেহেতু দরবেশী ভাব, সেহেতু আপনি ভাববেন, এই ছবিটাই একমাত্র সঠিক ছবি ! সাদা ভ্রুর ছবি দেখে আপনার মুখ দিয়ে বের হবে মাশাআল্লাহ, উনার কথা শুনে বলবেন, সুবহানাল্লাহ ! পরিশেষে কাজ দেখে বলবেন, ইন্না লিল্লাহ....!

বিশ্বজিৎ দাস কিংবা আবরারকে জয়বাঙলা বলে হত্যা করা এদের কাছে দোষের হলেও, নারায়ে ত্বাকবীর বলে রগের পোস্টমর্টেম এদের কাছে জায়েজ ! আর সেগুলো নিয়ে কথা বললেই আপনি নাস্তিক কিংবা ওই লীগের দোসর ! বিম্পি/জামাত ট্যাগ দিয়ে লীগ যতটা অপকর্ম করেছে, এরা নাস্তিক/আফসোসলীগ ট্যাগ দিয়ে তার চাইতে বেশী করবে, লিখে নেন !

ওয়াজের ময়দানে শুনবেন,
"ওয়াদীনা লিল্লাদীনা ইয়াক্বতালুন বিয়ান্নাহুম জুলিমুয়া ওয়া ইন্নাল্লাহা ইলা নাসরিহীম লা ক্বদীর".....সূরা আল হাজ্ব, আয়াত ৩৯ !

উপরের আয়াতের অনুবাদ হলো
"যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে, যারা আক্রান্ত হয়েছে। কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম"

কিন্তু মুরুব্বীর দল এই আয়াতের ব্যাখ্যা এমনভাবে করবে যে, যেহেতু লীগের আমলে তারা সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত ছিল, তাই লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অনুমতি আল্লাহ নিজে তাদেরকে দিয়ে দিয়েছেন (আস্তাগফিরুল্লাহ, আল্লাহ মাফ করুন আমাকে),
ওই ব্যাখ্যা নিজেদের দলে টেনে নিয়ে, ওরা যদি কাওকে শাহবাগের মোড়ে খুনও করে ফেলে, আপনি মনে করবেন, যেহেতু আল্লাহর নাম নিয়ে করেছে, সেহেতু বোধহয় ঠিকই করেছে ! আর খুনটা যদি শাপলা চত্বরে হয়, তাহলে তো কথাই নাই, ওদের পোস্টে দেখবেন যে, "মক্কা থেকে আল্লাহ যে মুহাজিরদেরকে সহায় সম্বলহীন অবস্থায় মদীনায় নিয়ে গিয়েছিলেন, একদিন তারাই মক্কায় ফিরেছিলো বীরের বেশে, আজকে শাপলা চত্বরে লীগের তমুককে শোয়ানোর মাধ্যমে সেটাই প্রমাণিত হলো"

আমরা ধর্মকে যতটুকু জেনেছি তা কেবল শুনে শুনেই, আমরা বিশ্বাস করতে শিখে গেছি, ফতোয়ার জন্যে জাস্ট একটা লেবাস দরকার! ধর্মীয় বক্তার নসীহত নিয়ে এই দেশে ডিজে পার্টির গান হয়, জিকির করতে করতে বাঁশের মাথায় উঠে পড়ি ! কেও ধর্মটা পড়ে দেখি না, চেষ্টাও করি নাই ! আপনি যা ছোটকাল থেকে শুনে বিশ্বাস করে এসেছেন, আপনার সেই ধর্মীয় বিশ্বাসের ভ্যালিডিটি না থাকলেও আপনি সেইটাকেই মানবেন, আপনার দৃষ্টিতে সেটাই ঠিক, আসলটা যাই হোক না কেনো !

লীগের আমলে আপনাকে জামাত/বিম্পির কর্মী হওয়ার দরকার ছিল না, জাস্ট সমর্থকও যদি হতেন, তবুও আপনার জন্যে বাইরের সুজলা সুফলা বাঙলাদেশ ছিল হারাম, আপনার স্থান হতো জেলখানা, কিছু ক্ষেত্রে গুম ! আপনি কোনো অপরাধ করেছেন কি না, দ্যাট ডাজেন্ট ম্যাটার, আপনি জামাত/বিম্পির সমর্থক সেটাই গুম/জেলে যাওয়ার জন্যে যথেষ্ট, আর এখন, জাস্ট আপনার জন্যেও জেল প্রস্তুত যদি কোনোভাবে বোঝা যায় আপনি লীগ করতেন !

আগে কাওরানবাজারে রোজ কোটি টাকার চান্দা তুলতো লীগের লোক সেটা আপনি শিওর ছিলেন, ২৪ এর ডিসেম্বরে কে তোলে সেটা জানেনই না ! কিন্তু তোলা হচ্ছে সেটাও আবার আপনি শতভাগ শিওর ! ২৭ সালের ডিসেম্বরেও আপনি শিওর জানবেন, কাওরানবাজারের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে গিয়েছে !

জাস্ট সেন্ডেলের তলায় পিষ্ট হওয়ার বদলে বুট জুতার তলায় পিষ্ট হচ্ছি ! তবুও শান্তি যে এট লিস্ট সেন্ডেলের তলায় তো হচ্ছি না, এটাও বলতে গিয়ে দেখেন, জুতাওয়ালা আপনাকে সেন্ডেলের তলায় পিষ্ট হওয়ার দিনের কথা স্বরণ করিয়ে দেবে, আপনি কিছুই বলতে পারবেন না !

যে রাষ্ট্রের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে সুবিধাবাদের চর্চা চলমান, সেখানে লীগ হটিয়ে ভ্রুহীন দল কিংবা সাদা ভ্রুর দল, সবাই ওই একটা সিস্টেমেরই অংশ ! তার রাজনৈতিক সমীকরন মেলাতে গেলে, আপনি জেনে নিয়েন, আমরা শুধু সেই রাজনীতির পাঠার বলি ! ১৩ সালে শাহবাগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে জাতীয়তাবাদের প্রোপাগান্ডা প্রজেক্ট নিয়েছিলো আওয়ামীলীগ, তখন সেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে অবস্থান নিয়ে আমরা সেটাকে সমর্থন দিয়ে লীগের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে প্রভাবক হিসাবে কাজ করেছিলাম, আবারো আমরা আগামী ২৫ কিংবা ২৬শে লীগ বিরোধীতা আর মডারেট রিলিজিয়ন প্রাকটিসারদের ক্ষমতায় থাকতে প্রভাবক হিসাবেই কাজ করবো, আপনি যেমন ১৩ তে সাকা/গোলামাজম/মুজাহিদদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন কারন ক্ষমতাসীনরা সেটাই চেয়েছিলো, ২৬ সালে এসেও আপনি বিশাল নামধারী ধার্মিক কিংবা বিশাল জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক বনে যাবেন কারন ক্ষমতাসীনরা সেটাই দেখতে চায় ! যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়ায় আপনার দোষ নাই, কিন্তু সেটা ক্ষমতাসীনদের কাছে ছিল ইনভেস্ট, আপনি ধার্মিক হবেন, তাতেও দোষ নাই, কিন্তু এটাও এদের কাছে ইনভেস্টের প্রজেক্ট ! যেখানে আপনাকে ধার্মিক হওয়ার চাইতে, ধার্মিক সাজানো হবে ! দেশপ্রেমিক হওয়ার চাইতে আপনি দেশপ্রেমিক সেটা শো করতে বেশী প্রোমোট করানো হবে, ক্ষমতাসীনরা সেটাই চায় ! এটা ওদের আরেকটা অসত্রো !

আপনি আমি সর্বদাই ওদের দাবার গুটি, মন্ত্রীকে খেয়ে দিয়ে সৈন্য ভাবে সে বিশাল কিছু, কিন্তু সে জানেই না, ব্রেনটা এসেছে অন্য কোথাও থেকে, সে শুধু জায়গা পরিবর্তনের হাতিয়ার বৈ অন্য কিছু নয় !

১৯৭৯ সালে জামায়াত নেতা গোলামাজমকে বায়তুল মোকাররমের সামনে সাধারন জনতা জুতার মালা পরিয়েছিলো, কালের বিবর্তনে আজকে জামায়াত এই দেশে সগর্বে রাজনীতি করছে সেই একই জনতার সমর্থন নিয়েই ! আজকে জামায়াতও এই দেশের বুদ্ধিজীবি দিবস কিংবা বিজয় দিবসে জাতিকে শ্রদ্ধা জানায়, তারা ষোলোই ডিসেম্বরে বিজয়োল্লাস করে, কাদের বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধ করেছিলো কিংবা কাদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হলো, কোথাও তার আলাপ নাই, জনতার মাঝে সেই নিয়ে কোনো প্রশ্নও নাই, কালের বিবর্তনের এটাই রাজনীতি !

২০৪০ সালে এসে আওয়ামী লীগও এই '৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান'কে স্বমহিমায় পালন করবে, জাতি তখনও তাদেরকে সমর্থন করবে ! অন্তত ইতিহাস সে কথাই বলে !

স্বৈরাচার এরশাদের পতনে কতোজনকে রক্ত দিতে দিতে হয়েছিলো তা কেও মনে রাখে নি, ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে সব দলকে বাইরে রেখে, ক্ষমতার চেয়ারে বসে হাসিনা স্টাইলের নির্বাচন করেছিলো খালেদা জিয়া, খালেদার সেই সংসদের মেয়াদ ছিল ১২ দিন, দুঃখ এটাই যে, সেই ডামি নির্বাচনে খালেদা ১৫ দিনও টিকলেন না, কিন্তু হাসিনা টিকে গিয়েছিলেন ১৫ বছর !
খালেদাকে চেয়ার থেকে নামাতে লীগের কতোজনকে কবরে যেতে হয়েছিলো, পরবর্তীতে লীগও সেটা মনে রাখে নি !

বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে অতীত ঘাটানোর প্রয়োজন নেই আমাদের ! আমরা বর্তমানকে অসম্ভব ভালোবাসি ! তাই তো বারবার সেই অতীতেরই পুনরাবৃত্তি ঘটে আমাদের এই রাষ্ট্রে !

২০২৬ কিংবা ২০৩০ এ এসে আবু সাইদ, মুগ্ধদের কেও মনে রাখবে না, সেটা ইতিহাসেরই ঐতিহাসিক শিক্ষা ! মাঝখান থেকে লসটা হলো মুগ্ধ/সাইদের বাবামায়ের, লাভবান হলো ফখরুল/শফিকেরা, এই প্যাচটুকু না বুঝতে পারলে ২০৪৪ সালে গিয়ে আপনার ছেলে/নাতি আবার বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দিয়ে ভাববে, সে বিশাল কিছু করে ফেললো ! সাইদ/মুগ্ধরা জীবন দিয়ে একজন স্বৈরাচার ক্ষমতাশালীকে গদি থেকে বিতাড়িত করেছিলো জাস্ট আরেকজনকে সেই গদিতে বসানোর জন্যে, আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করার জন্য নয় ! আমরা এতো সৌভাগ্যের কপাল নিয়ে জন্মাই নাই !

২৪ এর ষোলই ডিসেম্বরের আজকে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজয় দিবসের প্যারেড হলো না, সেটা দেখেও আপনি শিক্ষা নিতে পারেন, আপনার আগামীর বাঙলাদেশ কোন পথে যাচ্ছে !

এদেশে শুধু শাসকের পালাবদল হয়, জাতিকে নিজের মতো করে শাসন করার জন্য, তাদের ভাগ্য বদলানোর জন্যে না !

শুধু অপেক্ষা সময়ের !

১৬ই ডিসেম্বর ২০২৪ !

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৫৬

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এবার বলুনতো দেখি কি করা উচিৎ? জাতির এই ক্লান্তি কালে পথ দেখান।

২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: যাক না, দুই এক বছর এরকম।
তারপর একদিন নতুন সূর্য উঠবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.