নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই

মায়মুনা আহমেদ

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই...

মায়মুনা আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডায়েরি থেকে... (৭)

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৭



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

।০৮ ডিসেম্বর ২০১৮।

তাহাজ্জুদ -ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদের মূল অংশ থেকে যখন এক্সটেনশনে বের হলাম তখন চারিদিকে হালকা আলো ফুটেছে। আকাশে শুকতারা জ্বলজ্বল করছে। মক্কার হেরেম ঘিরে এতো হোটেল এবং ঘনবসতি যে সকাল-সন্ধ্যায় আকাশের রং-রুপ বদলানো দেখা তেমনভাবে সম্ভব হতো না। মদিনা একদম ভিন্ন!

আজকে আমাদের মদিনায় জিয়ারাহ। যেহেতু প্ল্যানিং আমার, সেহেতু সব বিষয় নিয়ে চিন্তাও আমার বেশি। যতোই ঝেড়ে ফেলি, তবু নিশ্চিন্তে থাকা যায় না। ঢাকার এজেন্সি থেকে বলেই দিয়েছিল মদিনার জিয়ারাহতে চারটি মসজিদে নিয়ে যাবে - মসজিদ কুবা, মসজিদ কিবলাতাইন, মসজিদ ফাতাহ(খন্দক), ওহুদ পাহাড় ও মসজিদ। মাত্র চারটি মসজিদ! মদিনায় দেখার এতো জায়গা আছে, না দেখেই চলে আসবো! এজেন্সি থেকে বলেই দিয়েছিল তাদের দায়িত্ব চারটি মসজিদ দেখানোর। ড্রাইভারকে কনভেন্স করে যদি আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো যায়, তাতে তাদের কোনো আপত্তি /দায় /সমস্যা নেই।

শুক্রবার রাতে মোয়াল্লেম ফোন করে জিয়ারাহর দিকনির্দেশনা দিয়ে দিলেন। জিয়ারাহতে মোয়াল্লেম থাকবেন না, এজেন্সি থেকে বাঙালি ড্রাইভার দিলো। মদিনায় অনেক স্পট আছে। দেখতে পাবো কি পাবো না - তা নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলাম। হোটেলের সামনে থেকে গাড়িতে উঠলাম, সকাল ৮টা থেকে শুরু হলো জিয়ারাহ। প্রথমেই গেলাম ওহুদ পাহাড় দেখতে। যাওয়ার সময় গাড়ি থেকেই মসজিদে সিজদাহ, মসজিদে ইজতিবাহ, দূরে মিকাত মসজিদ দেখলাম। ওহুদ যুদ্ধে শহীদানদের কবর জিয়ারা করে মসজিদে কিবলাতাইনে গেলাম। এরপর জাবালে ইস্তিকবালের উপর দিয়ে তৈরি রাস্তা দিয়ে ড্রাইভ করে মসজিদে কুবায় নিয়ে গেল। মসজিদে কুবার খুব কাছেই নবীজী সাঃ এর মোযেজার বিখ্যাত আজওয়া খেজুর বাগান ও মসজিদে জুমআ'। ড্রাইভার বাংলাদেশি হওয়াতে স্বাভাবিকভাবেই কথা-বার্তা, গল্প বেশি হয়েছে। এমনকি আমাদেরকে ওয়েলকাম ট্রিট দিয়েছে! ওয়াদিয়ে জ্বীনে যাবো কিনা ড্রাইভার জানতে চাইলো। নিজের বাড়তি খরচ হলেও আমরা যেতে চাইলাম। শর্ত একটাই, যোহরের নামাজ মসজিদে নববীতে যেন পড়তে পারি সেভাবে নিয়ে যেতে হবে।

বিলাল মসজিদ, মসজিদে ফাত্তাহ জিয়ারা করে ওয়াদিয়ে জ্বীনের উদ্দেশ্যে গাড়ি ছুটলো। যাওয়ার পথে একটা সুন্দর দৃশ্য দেখলাম। মসজিদে নববীর ওজুর পানি যেখানে এসে জমা হয়, সে জায়গাটা একটা ছোট লেকের মতো। রাস্তা থেকে পানি সাদা না কালো বুঝা যাচ্ছিল না কিন্তু আশেপাশে জন্মানো ঘাস-গুল্ম পাহাড়ের ফাঁক গলে আসা সূর্যের আলোতে ঝকমক করছিল। যেন শিল্পীর তুলিতে আকা কোনো দৃশ্য! এখনো চোখে ভাসছে! ওয়াদিয়ে জ্বীন কেন যেন আমার কাছে এমন বিশেষ কিছু লাগেনি। জ্বীন বা ম্যাগনেটিক ফিল্ড যাই হোক, তাদের তামাশা দেখে যোহরের আগেই মসজিদে ফিরে এলাম। নামাজ শেষে আব্বুর সাথে দুপুরের খাবার কিনতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে দেখি রাস্তা ফাঁকা আর সামনেই কবুতরের ঝাক। এ সুযোগ বারবার আসে না। দৌড়ে গিয়ে উড়িয়ে দিলাম। মদিনার নবীজী সাঃ এর রওজা ছাড়া আরো দুইটা জিনিস আমরা খুব মিস করি কবুতর আর সাকিফাহ বনু সাঈদা পার্কের বিড়ালের বাচ্চা।

আসরের নামাজ পরে কার্পেটে বসে চা পান করছি আর ছাতা বন্ধ হওয়া দেখছি এমনসময় এক এরাবিয়ান ফ্যামিলি সামনে দিয়ে যাচ্ছে। তাদের সাথে থাকা দুই-আড়াই বছরের মেয়ে বাবুটা হেটে যাচ্ছে আর একটানা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি হাত নেড়ে যেই না ওয়েভ দিলাম, সে দৌড়ে আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমি আর পল্টু খুব অবাক হয়েছি। বিকেলে হকার্স মার্কেট আর পার্কে ঘুরলাম।আগামীকাল বদর যাওয়ার প্ল্যান করেছি।

।০৯ ডিসেম্বর ২০১৮।

সকাল ৭টায় বের হওয়ার প্ল্যান ছিল কিন্তু সম্ভব হয়নি। ৭ঃ৩০ টায় বের হয়েছি। একটানা লম্বা ড্রাইভে ঘুমে চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে। খুব কষ্টে চোখ খুলে আছি। রাস্তা, রাস্তার পাশে পাহাড়, পাহাড়ে ছোট ছোট গুল্ম, পাহাড়ের উপর ছাগল বা দুম্বার পাল, আবার কখনো একটানা পাহাড়ের পর কিছুটা সমতল জায়গা, সমতলে উটের বিচরণ; চোখ বন্ধ করলে তো সব মিস হয়ে যাবে! তবুও কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছি। ঘুম ভাঙার পর শুনলাম, আমরা বদরে প্রবেশ করেছি। এখন আর ঘুম নেই। চারপাশ দেখছিলাম। ১৪০০ বছর আগের ইতিহাসের সেই দিনগুলোতে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। পাথুরে পাহাড় শেষ; রাস্তার দুইপাশে সোনালী রঙের, ছোট-বড় পাহাড়। বালুর পাহাড়! পাহাড়গুলো দেখে একটা অদ্ভুত টান অনুভব করছি। ড্রাইভার সাহেব পাহাড় দেখিয়ে বললেন, বদরের যুদ্ধে এই পাহাড়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ফেরেশতা নামিয়েছিলেন। ইসলামের প্রথম যুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সাহাবীদের যেখানে সমাহিত করা হয়েছে, সে কবরস্থানের সামনে গাড়ি থামলো। কবরস্থান উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা, দেয়ালের উপর কাটাতারের বেড়া। দেয়ালের পাশে সিমেন্টের ভাঙা ব্লক। তার উপর উঠে একনজর দেখার ব্যবস্থা। মোনাজাত করার সুযোগ নেই। এখানে কবরস্থানের সামনে মোনাজাত করলেও পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হয়। ফাতিহা-দরুদ শরীফ পড়ে মসজিদের দিকে গেলাম। রাস্তার দুইপাশে ১৪০০ বছরের পুরনো, পরিত্যক্ত বাড়িঘর দেখলাম। নবীজী সাঃ কে সম্মান জানিয়ে তার কথায় যেই মানুষগুলো জনমানবহীন প্রান্তরে বসবাস শুরু করেছিল, এই বাড়িঘরগুলো তাদের। নিজেদের ঈমান কোন লেভেলের! হাশরের মাঠে আমরা তো তাদের ধারেকাছে দাড়ানোর মতো ও না! মসজিদে পৌছে দেখি একজন খাদিম, একজন চা বিক্রেতা, একজন হার্বস বিক্রেতা আর দু-একটা গাড়ির সামনে তার ড্রাইভার ছাড়া আশেপাশে আর কোনো মানুষ নেই। এই প্রথম বাংলাদেশে আছি ফিলিংস হচ্ছে। আমরা সবাই যে বাংলাদেশি!

মসজিদের অজুখানা বন্ধ। কোনো এক মাদ্রাসার সামনে গিয়ে অজু করতে বললো। আবার গাড়িতে উঠে বসলাম। যেখানে নামলাম তা মাদ্রাসা মনে হলো না। জায়গাটা যে কি ছিলো তা জানাবোঝার সময় বা ইচ্ছে কোনোটাই ছিল না। একটা খোলা জায়গায় আমাদের অজু করতে বলে ড্রাইভার দেয়ালের ঐপাশে আড়ালে দাড়ালো। এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এতোটা খোলা জায়গায় অজু করার অভিজ্ঞতা হলো। প্রথমবার মক্কার হেরেম শরীফে এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সেইবার অজু করতে বসে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম, ক্লক টাওয়ার থেকে আমাকে দেখা যাচ্ছে না তো!?

মসজিদে আ'রিশা, এইস্থানে আমাদের নবীজী সাঃ আল্লাহর সাহায্য চেয়ে দোয়া করেছিলেন এবং আল্লাহ যুদ্ধে মুসলমানদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দুই রাকাআত নামাজ পড়ে বী'রে রওহার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। যাওয়ার সময় একটা বালুর পাহাড়ের কাছে গাড়ি দাড় করালো। জুতা খুলে পাহাড়ে কিছুটা উঠলাম। বালুগুলো এতো নরম! একটুও pinch করে না। পা দেবে যাচ্ছিল, তাই বসে পড়লাম। মাথার উপর সূর্যের কি তেজ! অথচ বালু ঠান্ডা! সবাইকে দেখানোর জন্য একটু বালু নিয়ে এসেছি।

বী'রে রওহা একটি পানির কুয়ার নাম। বদর যুদ্ধ শেষে মুসলিম বাহিনী যখন মদিনায় ফিরে আসছিল, তখন সাহাবীগণ ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। তারা একটি কুয়া পেলেন কিন্তু তার পানি পানের অযোগ্য। আল্লাহর ইচ্ছায়, নবীজী সাঃ এর লালা মোবারকের উসিলায়, সে কুয়ার পানি পানযোগ্য হয়ে গিয়েছিল। নবীজী সাঃ এর মোযেজার নিদর্শনগুলো একটা সময় পর বন্ধ বা সবার আড়াল করে ফেলা হয়েছে। বর্তমান সময়ে, আমরা শুধু আজওয়া খেজুর, বীজবিহীন খেজুর আর বী'রে রওহা পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ! এ...ই কম কিসে!

বদরে যাওয়ার সময় মা অনেকগুলো ছোট বোতল নিয়ে গিয়েছিল। বী'রে রওহার কাছে গ্যালন-বোতল বিক্রি করে। দুইটা গ্যালন আর ছোট ছোট অনেকগুলো বোতল ভরে শেষমেশ নিজের বোতল ভরলাম। সকাল থেকে পানি পান করিনি, বী'রে রাওহার পানি বেশি করে খাবো বলে। আধা লিটার পানি আমার কাছে কোনো ব্যাপার ই না কিন্তু এই পানি ২০০মিলি -র বেশি ঢুকছে না। পানি ডাবের পানির মতো, একটু ভারী। ফেরার পথে যখনই ঘুম পাচ্ছিল তখনই এক ঢোক পানি পান করছিলাম। যোহরের নামাজ নিয়ে এমনিতেই টেনশনে আছি। তার উপর পুলিশ মামা গাড়ি দাড় করিয়ে ড্রাইভারের কাগজ চেক করা শুরু করলো।

গাড়ি থেকে নেমে দেখি, নামাজ শুরু হয়ে গেছে। ডানে বামে না তাকিয়ে দৌড়ের গতিতে হাটা দিলাম। নামাজ শেষে মা আর নানুকে খুজে পেলাম। সবাই খুব ক্লান্ত। বিকেলে নানু মসজিদেই ছিলো, হাটতে বের হয়নি। আমরা যখন হাটাহাটি করে এসে মাগরিবের আগ দিয়ে মহিলাদের নামাজের জায়গায় ঢুকবো তখন দেখি ভলিন্টিয়াররা সবাইকে হাটা বন্ধ করে নামাজের কার্পেটে যেতে বলছে। এক তার্কিশ মহিলা একটা হুইল চেয়ার আর বেবি স্ট্রোলার ঠেলে যাচ্ছিল। ভলিন্টিয়ার নামাজের নির্ধারিত অংশে যেতে বলায় তিনি তাড়াতাড়ি করে বেবি স্ট্রোলার ঠেলে সেদিকে হাটা দিলেন। হুইল চেয়ারে বসা তার আত্মীয়কে কিছু বলে না যাওয়ায় সে খুব অস্থির হয়ে গেল। হাতে থাকা লাঠি ফ্লোরে ঠেকিয়ে পিছন দিকে যাওয়া শুরু করলো। পল্টুকে বললাম, যা সাহায্য কর। পল্টু হুইলচেয়ার ঠেলে উনাকে তার আত্মীয়ের কাছে নিয়ে গেল। দুই জন কৃতজ্ঞতা জানালো। কি কি যেন বলেছে, পল্টু থ্যাংক ইউ আর মোসাফাহা ছাড়া কিছুই বুঝেনি। পল্টু তো মহাখুশি! তার নাকি হুইলচেয়ার ধাক্কা দেয়ার শখ অনেকদিনের! আজ তা পূরণ হয়েছে। আজকের সন্ধ্যার আকাশ বাড়াবাড়ি রকমের সুন্দর, সুবহানআল্লাহ!

বাকী সময় মসজিদে কোরআন পড়ে, মানুষ দেখে, গল্প করে পার করলাম। পরের পোস্টে নানুর প্রথমবার রওজা জিয়ারাতের ঘটনা লিখবো ইনশাআল্লাহ।

ছবি - নেট

জাজাকাল্লাহ খাইরান!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: আরও লিখুন। ধর্মীয় কথা তো মানুষজন ভুলেই গেছে। আপনি লিখুন। লিখে যান।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:০২

মায়মুনা আহমেদ বলেছেন: জাজাকাল্লাহ খাইরান!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.