![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রশিদের কপাল চুয়ে ঘাম জড়ছে।তার হাফহাতা শার্টটাও ঘেমে ভিজে একাকার।পিচডালা পথ রোদের তীব্রতায় যেন উত্তপ্ত ফুলকি।পা ঘেমে জুতো কেমন
আঠা আঠা হয়ে যাচ্ছে। সূর্যটা ঠিক মাথার উপরে। আজ রোদের তীব্রতা অন্যান্য দিনের থেকে একটু বেশিই মনে হচ্ছে ।
যাকে বলে কাঠফাটা রোদ।বাড়িতে লোপা একা আছে ।ঘরে রান্না করার মত তেমন কিছু নেই।পকেটের টাকাও ফুরিয়ে এসেছে।
যা ছিল গত কয়েকদিনেই শেষ। নতুন
সংসার গোছাতে গেলে কত কিছুই
তো দরকার।কিন্তু ....।একটা দীর্ঘশ্বাস
বেরিয়ে গেল।এই দীর্ঘশ্বাসের শেষ
কোথায়? এই ক্লান্ত দীর্ঘশ্বাসের
সমাপ্তি রশিদ দেখতে পায় না।
দুজনের সংসার।রশিদ পিয়নের চাকুরী করে।
রোজ দুপুরে সে নিয়মকরে লাঞ্চ করতে আসে।ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে তার বাসায় কাছিঝুলিতে হেটে আসতে সময় লাগে পনের মিনিট। রিক্সায়
আসলে আরো কম সময়ে আসা যায়।কিন্তু
সে হেটেই আসে।তাতে তার রিক্সা ভাড়াটা বেচে যায়।অভাবেরসংসারে এই বেচে যাওয়া টাকাটা সামান্য হলেও,তার কাছে অনেক।এই অল্প টাকায় ফুটপাত থেকে রেশমি কাচের চুড়ি ,খয়েরী লিপস্টিক নিয়ে লোপার হাতে দিলে লাজুক
কন্ঠে বলবে কি দরকার ছিল টাকাগুলো নষ্ট করার?
বিয়ের চুড়িগুলো তো দিব্যি নতুনই রয়ে গেছে।
টাউনহলের মোড়ে পাশে চায়ের দোকান
থেকে একঝাটকা ময়লা পানি এসে তার
সারা শরীর ভিজিয়ে দিল।আর সংবিত
ফিরে রশিদ রাগান্বিত স্বরে বলে উঠল।ওই
শ্যালা দেইখা পানি ফেলতে পারস না। চোখ কই রাখস?মামা ভুল হইয়া গেছে।চায়ের দোকানদার গামছা দিয়ে তার শরীর মুছে দিতে চাইল।রশিদ ঝাটকা দিয়ে হাত সরিয়ে বলল আর দরদ দেখাইতে অইব না।
দিছসতো জামাকাপড়ের বারোটা বাজাইয়া।য্যা শ্যালা,বলে রশিদ হাটা দিল।শ্যালা চায়ের দোকানদার মেজাজটাই খারাপ করে দিল।গেইটের কড়া নাড়া দিল
সে।একবার, দুইবার,তিনবার। কিন্তু ভিতর
থেকে গেইট খোলার কোন সারাশব্দ
নেই।সব মরছে নাকি আজকে।এই
ভরদুপুরে ভিতর থেকে গেইট লাগিয়েই
রাখতে হবে কেন? লোপা গেইট
খুলে দিল।তুমি !মিলন কই।মিলন বাড়ি গেছে?
মিলন বাড়িওয়ালা ফিরোজ সাহেবের কাজের ছেলে গ্রামে থাকত কয়েকদিন যাবত এসেছে।ফিরোজ সাহেবের দুই
নাতীকে স্কুলে আনা নেওয়া আর
বাজারসদাই করে।
আপনার শরীরের এই অবস্থা কেন?
আর কইও না শ্যালার চায়ের
দোকানদার পানি ফেলতে গিয়া ভিজাই দিসে।দেখে নাই।দেখলে কি আর
গায়ে ফেলত?গামছাটা দেও গোছল
কইরা আহি।
গা মুছে এসে দেখে লোপা ভাত
নিয়ে বসে আছে।কি রান্না করেছ।
চিংড়ি মাছ দিয়ে লাউ
রান্না করেছি।বাজার তো ছিল না।
মিলনরে দিয়ে আনাইছি।
টাকা পাইলা কই?
মাথা নামিয়ে লোপা বলল আমার
কাছে ছিল।আপনি মাঝে মাঝে দিতেন সেই
টাকা।রশিদ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
এইমেয়েটা কত অল্প সময়েই
সংসারটা গুছিয়ে নিচ্ছে? কত আপন
করে নিয়েছে?
তুমি খেয়েছ?
আমি আপনাকে ছাড়া খাব
কেমনে?
কেমনে খাব মানে।
ক্ষুদা লাগলে খাবা না।খেয়ে নিবা।
তা কি হয়?হয় না মানে খেয়ে নিলেই
হয়।খেয়ে নিবা।
কি অদ্ভুত টান?
একজন খাবে না বলে আরেকজন খাবার
নিয়ে অপেক্ষা করবে।কি সরল
স্বীকারোক্তি আপনাকে ছাড়া খাব
কেমনে? অথচ গত দুই মাস আগেও
তারা একে অপরকে জানত না।চিনত
না পরস্পরকে।অল্পকটা দিনেই
তারা অপার সম্পর্কে জড়িয়েছে তারা।কি নিরন্তর টান?
এই সম্পর্কের রহস্য কি?এর উৎস কি?রশিদ
ভেবে কুল পায় না।একই ছাদের
নিচে বসবাস করলেই কি এমন হয়?
বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেই
কি এমটা অনুভূত
হয়?সকল নব দাম্পত্য জীবনেই কি হয়?
নাকি শুধু সম্পর্কের শুরুতেই হয়?দীর্ঘদিন
এমন সম্পর্কের ভিতর
দিয়ে গেলে কি এই
টান ফিকে হয়ে যাবে?এতসব প্রশ্নের
উত্তর তার জানা নেই।হয়তো লোপারও
জানা নেই।
©somewhere in net ltd.