![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিভাগীয় প্রধান, গার্মেন্টস ডিজাইন অ্যান্ড প্যাটার্ন মেকিং বিভাগ, চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
শিক্ষা বলতে বলতে সাধারন মানুষ বুঝে বিদ্যালয় কিংবা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুথিগত জ্ঞানার্জন। কিন্তু বর্তমান সময়ে শিক্ষা শুধুমাত্র পুথি পুস্তকের মধ্যেমেই সীমাবদ্ধ এ কথা শিক্ষাবিদরা বিশ্বাস করেন না।Education শব্দটির অর্থ হচ্ছে কোন কৌশল আয়ত্ত করা। প্রাচীনকালে মানুষ বেচে থাকার জন্য এরূপ অনেক তথ্য আহরন করত। আর সে তথ্যের আলোকে শিক্ষার বিজ্ঞানসম্মত অর্থ হলো জীবনের নতুন অভিজ্ঞতা, যে অভিজ্ঞতা আমাদের আচরনে পরিবর্তন আনয়ন করে এবং নতুন আচরনের সৃষ্টি করে। শিশু ভূমিষ্ট হবার পরক্ষনেই তার জীবনের প্রতি পদক্ষেপে আয়ত্ত করে নিত্য নতুন কলাকৌশল, চলে বিকাশের লীলাখেলা, আর তার শেষ হয় মৃত্যুতে।
যেখানে শিক্ষা সম্বন্ধে সাধারন মানুষের রয়েছে ভ্রান্ত ধারনা সেখানে কারিগরি শিক্ষাতো আরও ব্যাপার আর তাই কারিগরি শিক্ষা সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে হলে আমাদের প্রথমেই জানতে হবে কারিগরি শিক্ষা কি ? কারিগরি শিক্ষা হলো সেই শিক্ষা যা শিক্ষার্থীকে বাস্তব জীবনের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রত্যক্ষ জীবিকা অর্জনে সহায়তা করেৰ।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, আমাদের দেশকে আলোকময় নতুন বিশ্বের সাথে তুলনা করতে হলে চাই বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার। আর এ ব্যাপারে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও হয়েছে অনেক নতুন সংযোজন।এখন দরকার সে সংযোজনের সুশ্ঠ ব্যবস্থাপনা ও তার প্রয়োগ। পুথিগত বিদ্যার লড়াই ও কৃত্তিম আর্দশের ঝুলিতে আমরা যতটুকু অগ্রসর হয়েছি,ততটুকু অগ্রসর হতে পারেনি কারিগরি বিদ্যায়। সুতরাং বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রয়োজন কারিগরি শিক্ষার। প্রয়োজনের তুলনায় যথার্থ না হলেও আমাদের দেশে রয়েছে কারিগরি প্রতিষ্ঠান, অধিকাংশ বিদ্যালয়ে রয়েছে বিজ্ঞান শাখা।
বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষায় ছাত্র/ছাত্রীদের আগ্রহের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এক শ্রেণীর সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত সমাজ। একজন মেধামী ছাত্র কারিগরি শাখায় পড়তে চাইলে তার আগ্রহকে ভিন্ন খাতে ঠেলে দেয়া হয়। তাদের এ আচরনের যেদিন পরিবর্তন হবে সেদিনই শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে কেবল ডিগ্রী আর চাকুরী লাভের চিন্তা না করে দু’হাতে তুলে নিবে মেশিন টুলস। আর তখনই আড়াই কোটি বেকার যুবকের পাচঁ কোটি হাত হবে শক্তিশালী, তবেই সম্ভব হবে আমাদের সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া।
বাংলাদেশে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের দশকে প্রথম কারিগরি শিক্ষার প্রচলন ঘটে। সে সময় সারাদেশের মধ্যে একমাত্র রাজধানী ঢাকায় মধ্যম শ্রেণীর প্রকৌশলী তৈরির জন্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু করা হয়। তৎকালীন ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের জন্য আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমানে বুয়েট) প্রতিষ্ঠিত হয়। আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের সাথে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ৪ বছরের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের প্রচলন ছিল। পঞ্চাশের দশকের শেষভাগে ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট চালু হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ এর অভ্যুদয় ঘটলে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর প্রতিষ্ঠা সারাদেশে বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট মিলে এ ধরনের প্রায় দুইশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
মধ্যম শ্রেণীর প্রকৌশলী সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটসমূহ যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে। বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে মানবসম্পদের উন্নয়ন ছাড়া কোন বিকল্প নেই। পৃথিবীর উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কারিগরি শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে তারা দ্রুত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। কারণ কারিগরি শিক্ষার সাহায্যে স্বল্প সময়ে বিপুল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করা সম্ভব। নানা ধরনের সমীক্ষায় দেখা যায় যে, যে দেশে কারিগরি শিক্ষার হার যত বেশি সে দেশের মাথাপিছু আয় তত বেশি।
যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো দেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত অধিক সংখ্যক দক্ষ জনশক্তি থাকার ফলে তথাকার মানুষের বাৎসরিক মাথাপিছু আয় ৮ থেকে ৪৫ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে ৭-৮ শতাংশের কিছু বেশি দক্ষ জনসম্পদ রয়েছে, আর তাতে আমাদের মাথাপিছু আয় মাত্র ৬০০ মার্কিন ডলারের কাছাকাছি।
এ তথ্য অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা সবচেয়ে বেশি জড়িত। উৎপাদন ও সেবামূলক কর্মকান্ডেও তাদের অংশগ্রহণ রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম খাত বিদেশ থেকে আসা রেমিটেন্স। বিদেশে কর্মরত দক্ষ জনশক্তির সিংহভাগই ডিপ্লোমা ও ডিগ্রি প্রকৌশলী। এদেশের ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা সুনাম ও দক্ষতার সাথে মধ্যপ্রাচ্য, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে কর্মরত। এছাড়াও যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ দেশের ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা চাকরি করে দেশের জন্য বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করছেন।
বিদেশে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর মতো দক্ষ জনসম্পদ আরো বেশী পাঠানো সম্ভব হলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হারও বৃদ্ধি পেত। দেশের আর্থসামাজিক সমৃদ্ধি বাড়াতে হলে কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ ছাড়া বিকল্প নেই।
দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশে TVET এর বর্তমান অবস্থার আরও সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন দরকার। এ ছাড়াও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের শিল্পকারখানা ও সেবামূলক কাজে যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে তদনুযায়ী শ্রম সরবরাহের ব্যবস্থা থাকা দরকার। বাংলাদেশে TVET শিক্ষার সম্প্রসারণ অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষা যে হারে দ্রুত প্রসারণ লাভ ঘটছে, কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে তা হয়নি। বর্তমানে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থায় কারিগরি শিক্ষার অধীনে শিক্ষা গ্রহণরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭ শতাংশ মাত্র, অথচ জাপানে এ ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল ৬০ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪০ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৪২ শতাংশ।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পটভূমিতে কারিগরি শিক্ষা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এর আশানুরূপ বিকাশ ঘটেনি দেশের পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটগুলোর। ফলে দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নের উজ্জ্বল সম্ভাবনার ক্ষেত্রটি নানা কারণে অবহেলিতই রয়ে গেছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়ন কর্মকান্ড। দক্ষ জনশক্তির অভাবে উৎপাদন ও সেবামূলক উন্নয়ন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। বিদেশে অদক্ষ শ্রমিক পাঠানোর ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে না। অথচ দেশকে সমৃদ্ধ করতে হলে শ্রমপোযোগী দক্ষ জনশক্তি বিশেষ প্রয়োজন। কাজেই কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণের মাধ্যমে মধ্যম স্তরের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দেশের উন্নয়নের ধারায় বেশি করে যুক্ত করা হলে তা দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি এর ফলে ত্বরান্বিত হবে।
২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৫১
চাঁদগাজী বলেছেন:
কারিগরী শিক্ষা দরকার।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২২
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ