![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বৃষ্টি প্রহর
এম মামুন হোসেন
১
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, খালাম্মা আজই চলে যাবেন?
অনেকদিন একসঙ্গে থেকেছি। তোমাদের ছেড়ে গিয়ে প্রথম প্রথম আমাদেরও অনেক খারাপ লাগবে।
আপনাদের নতুন বাড়ীতে সব কিছু নেয়া হয়ে গেছে?
না, ফ্রিজটা বাঁকি আছে। কাল নিয়ে যাব।
ঢাকা শহরে আমাদের মত যারা ভাড়া থাকেন, বাড়ীওয়ালার সঙ্গে সম্পর্ক না হলেও অন্যান্য ভাড়াটিয়াদের মধ্যে সম্পর্কটা আপন আত্মীয়ের মতন। একসঙ্গে আমরা অনেক বছর ভাড়া ছিলাম। আপদে বিপদে তারা এগিয়ে এসেছেন। প্রয়োজনে আমরাও গিয়েছি। ডেমরা শনির আখড়ায় তারা বাড়ী করেছেন। সেমি দালান বাড়ী। সেমি দালান মানে হচ্ছে ওপরে ছাদের বদলে টিনের চাল আর চারদিকে ইট সিমেন্টের দেয়াল।
খালাম্মা আমার মায়ের সাথে দেখা করে বিদায় নিতে এসেছেন। তিনি মাকে বললেন, আপা একসাথে কত দিন কাটিয়েছি। কত কিছু বলেছি। ভুল হলে মাফ করবেন।
মা বললেন, আরে কি যে বলেন, আপনার সাথে কখনো কিছু হয়েছে? দোয়া করি সহিসালামতে থাকেন। মাঝেমধ্যে আসবেন।
আপনিও যাবেন, আপনার বোনের বাড়ীই তো। গেলে ভালো লাগবে। খালাম্মা আমার হাতটা ধরে বললেন, রফিক বাবা, তুমি এসো।
কাল মাসের দুই তারিখ। নতুন ভাড়াটিয়ারা বাসায় উঠবে। নতুন কারা ভাড়াটিয়া হয়ে আসেন, তাদের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়াটা কেমন হয়? এনিয়ে আমাদের ঘরের সবার মন মোটামুটি খারাপ। খালাম্মার সাথে মা’র সম্পর্ক যেমন ভাল ছিল তেমনি খালুর সঙ্গে আব্বার। প্রতি রাতে আব্বা আর খালু দাবা নিয়ে বসতেন। কত বেলা যে আমি তাদের বাসায় খেয়েছি। তাদের একটা মাত্র ছেলে ক্লাশ সিক্সে পড়ে।
আমাদের পরিবারে আমি, এক বোন আর মা বাবা। গত বছর এম.কম পাশ করেছি। এখনও বেকার। তবে দু’টা টেবিল ব্যবসা আছে। টেবিল ব্যবসা মানে টিউশনি করি। আরেকটা কাজ করি সাটিংফিকেট বোঝাই ফাইল বগলদাবা করে চাকুরির খুঁজে ঘুরে বেড়াই। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে। আরেকটা ইমপটেন্ট কাজ করি। ঘরের বাজার করা।
কাল ছোট খালার বাসায় øিগ্ধাকে নিয়ে যেতে হবে। øিগ্ধা আমার ছোট বোন। মাঝে মধ্যেই øিগ্ধাকে নিয়ে ছোট খালার বাসায় যেতে হয়। øিগ্ধাকে পৌছে দিয়ে চলে আসতে চাইলেও খালা আসতে দিবেন না। তিনি জোর করে রেখে দিবেন। এদিকে নতুন ভাড়াটিয়ারা আসছে। আর আমি থাকতে পারছি না। আফসোস।
ছোট খালার একটি মাত্র মেয়ে। দু’বছর আগে বিয়ে হয়েছে। বিয়ে হলেও আমার খালাতো বোন মনি আমার চেয়ে বেশ ছোট। তার মেয়ের জামাই হিসেবে খালার সুনজরে আমিই ছিলাম। তবে নো চাকরি, বাকরি তাই নো, বিয়ে। আসল কথা চাকরি নয়, আমারই অমত ছিল। খালাতো বোনকে বিয়ে করতে চাইনি।
২
সকাল সাতটা। চটপট রেডি হতে হবে। গোসল না করলেও চলবে তবে ক্লিন সেভ করতেই হবে। কারণ খালার খোচা দাড়ি অপছন্দ। দাড়ি নিয়ে তার বাড়িতে যাওয়া মানে নির্ঘাত জমের সঙ্গে পাশা খেলা।
খালার বাড়িটা বেশ সুন্দর। পুরাতন জমিদারি স্টাইলের দু’তলা বাড়ি। নিচতলা ভাড়া আর দোতলার পুরোটায় খালা একা থাকেন। বছর পাঁচেক হলো খালু মারা গেছেন। পুরনো উচু উচু সিড়ি বেয়ে আমি আর øিগ্ধা উপরে উঠলাম। থেমে থেমে দু’বার কলিংবেল টিপতেই ভেসে এলো আসসালামু আলাইকুম দরজা খোলিয়ে। আসসালামু আলাইকুম দরজা খোলিয়ে।
খালা দরজা খুললেন। আমি বললাম, তুমি কেন, বুয়া আসেনি? কেমন আছো খালা?
øিগ্ধা খালাকে জড়িয়ে ধরলো। খালা আর øিগ্ধা কথা বলতে বলতে ভিতরে ঢুকলো। আমি ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে রিমোট নিয়ে টিভি ছেড়ে ড্রয়িংরুমে বসে পড়লাম। খালা ভিতর থেকে জিজ্ঞেস করলেন, নাস্তা করেছিস?
হু, করেছি।
খালা বললো, মনি এসেছে।
তুমি আগে বলবে না, ও কোথায়?
ওর রুমে আছে।
আমি দৌড়ে ওর রুমে গেলাম। মনি বিছানায় শুয়ে আছে। ওর চোখ বন্ধ। ঢিমেতালে মিউজিক বাজছে। কিসব ছাইপাস শোনে। কোন গান হয়না। কেবল সুর। কোন শিল্পী কে জানে।
আমি ডাকলাম, মনি।
কখন এলে?
এইতো কিছুক্ষণ।
অভিযোগের সুরে মনি বললো, একবারও আমার কথা মনে পড়ে না। কই একবারের জন্য তো দেখতে গেলে না। আর কে এসেছে?
øিগ্ধা। খালার সঙ্গে ফিসফাস করছে।
তুমি বস, আমি ওর সঙ্গে দেখা করে আসছি।
মনি পালালো। আমাকে দেখলেই পালায়। পালিয়ে গিয়ে ওর কাজ হচ্ছে পাশের রুমে গিয়ে কাদা। আচ্ছা, মনি কি আমাকে ভালোবাসত? মনির স্বামী বিরাট ব্যবসায়ী। ওর তো দুঃখে থাকার কথা না। সুখেই আছে মনে হয়। মনি নাস্তা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। ওর চোখমুখ ফোলা। আমি জানতাম ও কাঁদবে। ও কেঁদেছে। মেয়েদের চোখের পানি এমনি এমনিই ঝরে। অপাত্রে অশ্র“ ঝরিয়ে কি লাভ।
তোর জামাই কই?
সিঙ্গাপুর গিয়েছে। তুমি একবারও জিজ্ঞেস করলে না, আমি কেমন আছি?
তুই তো সুখে থাকবিই তোর জামাই মস্ত ধনী। সিঙ্গাপুর থেকে আসার সময় তোর জন্য কত কিছু নিয়ে আসবে।
টাকা পয়সাই কি সব? তোমার কাছে অন্য কিছু বলতে কি কিচ্ছু নেই?
অন্য কিছুটা আবার কি?
তুমি বুঝবা না।
খালা কিছু বলবেন? আমি জিজ্ঞেস করলাম। খালা দরজায় দাড়িয়ে ছিলেন খেয়াল করিনি।
তিনি বললেন, হু, তোকে বলতে ভুলে গেছি ডাক্তার জিনাতকে সিরিয়াল দিয়েছি। তুই কাল মনিকে বিকেলে তার কাছে নিয়ে যাবি।
মনিকে দেখলে বোঝা যায়না, ও অসুস্থ। মনিকে বিয়ে করলে সুখিই হতাম। জমিদারি বাড়িসহ জমিদার কণ্যা হা হা হা।
মনি, তুই আমাকে বারবার এড়াতে চাচ্ছিস তাই না? তুই যে, অসুস্থ একবারও তো বললি না?
তুমি কি আমার জিজ্ঞেস করেছ?
আমার প্রতি তোর খুব বিদ্বেষ তাই না, মনি?
এসব কি বলছ?
তুই তো বললি, আমি কিছু বুঝি না, তাই তো তোকে জিজ্ঞেস করছি।
তুমি নিজেকে জিজ্ঞেস কর।
আমি প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বললাম তোর স্বামী মানুষটা কেমন?
ও ছোট্ট উত্তর দিল, ভাল।
তোকে খুব ভালবাসে?
হু।
তুই ও ভালবাসিস অনেক তাই না?
একজন কয়জনকে ভালবাসতে পারে, রফিক ভাই?
øিগ্ধা এসে বলল, ভাইয়া তোমায় খালা ডাকছে।
খালা আমায় ঠিক সময় ডেকেছেন। আমিও মনির কাছ থেকে পালাতে চাইছিলাম। তা না হলে ওর সামনে অপরাধীর মত বসে থাকতে হত।
৩
রাত হয়ে এলো। খাওয়া শেষে সটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। এই বাড়িতে এলে আমার একটা সাংঘাতিক ঘুম হয়। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে সকাল দশটা বাজবে হয়ত। যত বার এসেছি তত বারই একই সময়ে খালার ডাকে না হয় কখনো øিগ্ধার ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। আর মনি থাকলে, মনিই ডেকে তুলে।
সন্ধ্যায় মনিকে বিরাট লম্বা একটা সিরিয়াল ঠেলেঠুলে ডাক্তার দেখিয়ে আনলাম। মেয়েলোকের ডাক্তার মানে গাইনি চিকিৎসক। মেয়েদের বিয়ে হলে যা হয় তাই হয়েছে। আমার খালা নানি হবেন। আর আমি মামা হচ্ছি। মনি জানতো। আজ ছিল রুটিন চেক আপ। ভাবছি কালকেই বাসায় চলে যাবো। øিগ্ধা কিছুদিন এ বাসায় বেড়াবে।
খালার বাসা থেকে বেড়িয়েছি। ঘন কালো মেঘে ছেয়ে আকাশটা ছেয়ে গেল। এখনি ঝুমঝুম নামবে বৃষ্টি। এখনি রিক্সা ঠিক করতে হবে। না হয়, বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলে রিক্সা পাওয়া মুশকিল। তখন রিক্সাওয়ালারা জমিদার হয়ে যাবেন। এই বেকারের পক্ষে জমিদার রিক্সাওয়ালার রিক্সায় ওঠা বড্ড রিস্কি। যাক রিক্সা পেয়ে গেলাম। এবার বৃষ্টি আয়। যত পারিস বৃষ্টি আয়। এ যা সত্যি সত্যিই তো টুপাটুপ শুরু হলো। ও, ভাই পলিথিন আছে? পলিথিন নেই। তাহলে ভিজতে হবে। আল্লাহ, আল্লাহ জোরে বৃষ্টি দিও না।
রাস্তার মোড়ে নেমে যেই রিক্সা বিদায় দিয়েছি। তখনি জোরসে বৃষ্টি শুরু হলো। আমি তো ভোঁ দৌড়। এক মিনিটেই একেবারে কাক ভেজা অবস্থা।
নতুন ভাড়াটিয়ারা এসে গেছে। বৃষ্টির আচলা যাতে জানালা দিয়ে ভিতরে না ঢুকতে পারে এক সুন্দরী অষ্টাদশী জানালা লাগাচ্ছে। আমাকে দেখেই একেবারে হিম হয়ে গেছে। কয়েক মুহুর্তের চাহনি। তারপর হৃদয়ের জানালা ঠাস করে বন্ধ করে দিল। বুঝলাম না অভিমানটা আমার উপর না বৃষ্টি কনার উপর।
৪
সকালে দরজা খুলতেই সেই মেয়েটির সঙ্গে দেখা। ঘর ঝারু দিচ্ছে। মেয়েটা বড্ড বেশি সুন্দর। পুরোপুরি সুন্দর। আমি যাকে খুজছি। প্রতিদিনই টুকটাক দেখা হয়। বিকেলে ছাদে কিছুটা সময় চোখাচোখি হয়। কিছু বলে না। আমারও সাহস হয়না। তারপরেও চোখে চোখে কত কথাই না হয়। অনেকদিনই এরকম চললো। আমার বন্ধু সিরাজের প্রেমিকার ক্লাসমেট। সিরাজের প্রেমিকা সুইটিকে দিয়ে পটাতে হবে। সিরাজের বুদ্ধিতে চিঠি লিখলাম। ওর কাছে পৌছে দেবার দায়িত্ব নিল সুইটি। প্রেমের চিঠি কখনো লিখিনি। অল্প কথায় কাজ হলে বেশি কথার প্রয়োজন কি বঙ্কিমের এই তত্ত্বে চিঠিতে লিখলাম, প্রিয়া,
তোমার নাম আমার জানা নেই। আমি শুধু তোমাকে ভালবাসি এটুকু জানি।
ইতি রফিক
পরেরদিন সিরাজ জানালো মেয়েটির নাম তানিয়া। ওরা কাল একুশের প্রভাত ফেরিতে কলেজ থেকে যাচ্ছে আমি গেলে সিরাজও যাবে। খুব ভোরে উঠে আমি আর সিরাজ দু’জনে গুলিস্তানে গিয়ে দাড়িয়ে থাকলাম। প্রভাত ফেরিতে ওদের কলেজের ব্যানার দেখলাম। সিরাজ ওর প্রেমিকার খোঁজ পেয়েই সুইটিকে নিয়ে কাট্টি মারলো। আমি তানিয়ার পাশাপাশি হাটতে লাগলাম।
অনেকক্ষণ নীরবতা শেষে বললাম, তুমি আমার চিঠি পড়েছ? তানিয়া কোন উত্তর দিল না। আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম, তুমি আমার চিঠিটা পড়েছ? যদি পড়ে থাক কোন উত্তর দিবে না?
এমন সময় ওদের কলেজের স্যার আমাকে দেখে ফেললেন। জিজ্ঞেস করলেন, এই তুমি কোন কলেজের?
আমি কোন উত্তর না দিয়ে চলে এলাম। তারপর শহীদ মিনারে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম। শহীদ মিনারে তানিয়ার সঙ্গে আমার দেখা হল। ওকে পেয়েই প্রশ্ন করলাম, তানিয়া তুমি কি আমাকে ভালবাস? না, ভালবাস না? চুপ করে থেক না। উত্তর দাও।
এবারো চুপচাপ রইল। একটি বারের জন্য ওর মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না। তীব্র রাগ হল। রাগ করে চলে এলাম। এরপর আমি রুটিন করে প্রতিদিন ওর কলেজের সামনে দাড়িয়ে থাকতাম। আমাকে দেখে তাকাত। কিচ্ছু বলে না। নীরবতা আর নীরবতা।
৫
তানিয়া প্রতিদিন ছাদে উঠে। আজ এখনো ছাদে উঠেনি। তানিয়া ছাদে উঠেছে আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো। স্বপ্ন দরজা ভেঙ্গে এগিয়ে আসছে। আমি ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম। তানিয়া? কোন জবাব নেই। আমি বললাম, তোমার সঙ্গে তো আমি ভালবাসার অভিনয় করিনি। তবে কেন আমার কথার জবাব দাও না। প্লিজ বল, উত্তর দাও।
তানিয়া বলল, আস্তে বলুন। কি করছেন। কেউ শুনে ফেলবে।
তানিয়ার এই কথাটা বোধহয় উপরওয়ালা শুনে ফেলল। ঠিক ওই সময়ে তানিয়ার মা ছাদে উঠল। তিনি দেখে ফেললেন আমি তানিয়ার সঙ্গে কথা বলছি। কি বুঝলেন জানি না। ছাদ থেকে নিচে নেমে গেলেন। তানিয়াও ওর মার পিছু নিল। আমি ছাদেই বসে রইলাম। এরপর খুব দ্রুত অনেক কিছু ঘটে গেল। হঠাৎ তানিয়ারা বাসা বদল করল। সিরাজের প্রেমিকার কাছে শুনলাম তানিয়া কলেজে আসা না। অনেক খুজলাম আমার ভালবাসাকে পেলাম না।
৬
স্বপ্ন আর ভালবাসাবিহীন তিন, তিনটে বছর আমার জীবন থেকে চলে গেছে। বেসরকারি একটি ফার্মে চাকরি করছি। শুধু কাজ আর কাজ নিয়ে আছি তাই উন্নতি ধরা দিয়েছে খুব সহজে। সিরাজ আর সুইটি পালিয়ে বিয়ে করেছে। সুখেই আছে হয়ত। সরকারি কলেজে মাস্টারি করছে সিরাজ। ওর পোস্টিং ময়মনসিংহে। ঢাকায় খুব একটা আসে না। হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক। সারাদিন কোচিং করায়। দেখা হলেই বলে দোস্ত ভিষণ ব্যস্ত।
বাংলা শ্রাবন মাস চলছে। কথা নেই বার্তা নেই বৃষ্টি আবার রোদ। এই বৃষ্টি ভেজা একদিন দেখা হয়েছিল আমার ভালবাসার সঙ্গে।
রফিক ভাই, রফিক ভাই।
আমাকেই তো ডাকছে মনে হয়।
চিনতে পারেননি?
কেমন আছ?
ভাল। আপনি? আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই তানিয়া বলল, দাড়ান পরিচয় করিয়ে দেই আমার হাজবেন্ড।
আমি আমার হাত বাড়িয়ে দিলাম, নাইস টু মিট ইউ। আমি রফিকুল ইসলাম।
তানিয়া আমার দিকে মিষ্টি করে হেসে জিজ্ঞেস করলো, বলেন তো এটা কে?
তোমার বাবু? আমি বাবুটার গালে হাত ছুইয়ে বললাম কি নাম রেখেছ?
ও ছোট্ট করে উত্তর দিল, অন্তর।
তানিয়া কথা বলতে বলতে একটু এগিয়ে এসেছে। আমাদের দু’জনের কথা এখন ওর স্বামী শুনতে পাবে না। এটা হয়ত ও ইচ্ছে করে করেছে।
আমি বললাম, কেমন আছ, তানিয়া? আমায় ছেড়ে পালিয়ে গেলে। কত খুজেছি তোমায়।
তানিয়া বলল, হঠাৎ করে আপনাদের বাড়ি ছেড়ে ওই এলাকা ছেড়ে আমরা চলে গেলাম। নতুন বাড়িতে যাবার দু’ সপ্তাহ পরেই আমার বিয়ে হয়ে গেল।
তানিয়া আরো কিছু বলবে এমন সময় ওর হাজবেন্ড ডাক দিল। ও আসছি বলে ইশারা দিলো। যাওয়ার আগে আমাকে বলল, আসি রফিক ভাই। ভাল থাকবেন।
হু, ভাল থাকব।
হঠাৎ পিছনে আমার স্মৃতি আমাকে নিয়ে গেল। এমন এক বৃষ্টির দিনে তানিয়া আর আমি মিলে মিশে একাকার। তারপর সব ওলটপালট। আবার তিন বছর পর ও আর আমি এবং বৃষ্টি। আমি ওর চলে যাওয়া পথে তাকিয়ে। আকাশ থেকে অজস্র জনকনা বিন্দু বিন্দু ঝরছে। মনে হচ্ছে আমার কষ্টের বরফ খণ্ড গলে গলে ঝরছে। প্রকৃতি আমার বেদনার প্রকাশ করছে। হৃদয়ের কান্না বৃষ্টির জলরাশি হয়ে পৃথিবীর বুকে পড়ছে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জুন, ২০১২ রাত ১০:০১
sushama বলেছেন: সুন্দর লেখা