নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আব্দুল্লাহ আল মামুন

মানুষ মানুষের জন্য ধন্যবাদ

আবু আব্দুল্লাহ মামুন

মানুষ মানুষের জন্য। ধন্যবাদ

আবু আব্দুল্লাহ মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুরআনের আলোকে ইবাদুর রহমানের পরিচয় ও গুণাবলী

১০ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৬

শেষ পর্ব

রহমান এর বান্দাদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো :

এবং যাদেরকে তাদের রব (পালন কর্তার) আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে বধির ও অন্ধের মত তাতে ঝুঁকে পড়ে না।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীর 'ফাতহুলকাদীরে' বলা হয়েছে, আল্লাহর আয়াতসমূহের উপর তাদের অবস্থান বধির ও অন্ধের মত নয় এবং তারা তাতে ঝুঁকে পড়ে এবং অবস্থায় যে তারা শোনে, দেখে এবং তা থেকে উপকৃত হয়। আয়াতসমূহের ব্যাপারে তারা মোটেই গাফেল নয়। (খ: ৪ পৃ: ৮৮)

মুমিনদের অবস্থা এমন হতে পারে না যে, তাদেরকে আল্লাহর আয়াত স্মরণ করানো হবে। আর তাদের মধ্যে তা কোন প্রভাব ফেলবে না। মুমিন যখন আল্লাহর মহান কিতাব কুরআন পড়বে তখন সে তা গভীর মনোযোগ সহকারে পড়বে। কুরআন বুঝবে, বুঝার চেষ্টা করবে, কুরআনের আয়াতসমূহ নিয়ে গবেষণা করবে। কুরআন পড়বে অথচ কুরআন বুঝার চেষ্টা করবে না, কুরআন নিয়ে গবেষণা করবে না, এতো মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। এটি তো এমন লোকদের বৈশিষ্ট্য যাদেরকে আল্লাহ অভিসম্পাত করেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন; এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদের বধির ও দৃষ্টি শক্তিহীন করেছেন। তারা কি কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা করে না। না তাদের অন্তরসমূহ তালাবদ্ধ? (সূরা মুহাম্মদ ২৩-২৪)

এ আয়াত থেকে বুঝা গেল যে, কুরআন নিয়ে গবেষণা না করা আল্লাহর অভিসম্পাতপ্রাপ্ত অন্ধ-বধিরদের বৈশিষ্ট্য।

আল্লাহর মহান কিতাব কুরআনের আয়াত একদিকে আল্লাহর নেক বান্দাহদের ঈমান বাড়িয়ে দেয়। অপরদিকে যাদের অন্তরে রয়েছে অবিশ্বাস ও কপটতা তাদের মনের অপবিত্রতা বৃদ্ধি করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন; তারাই তো মুমিন যাদেরকে আল্লাহর স্মরণ কেরিয়ে দেয়া হলে তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে। আর যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াত পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের ঈমানকে বৃদ্ধি করে। আর তারা তাদের প্রভুর উপর ভরসা করে। (২ : আনফাল)

যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে এটি তাদের (অন্তরের) কলুষতার সাথে আরো কলুষতা বৃদ্ধি করছে। (১২৫ : তাওবা)

সূরা ফোরকানের শেষাংশে উল্লিখিত রাহমান করুণাময় আল্লাহর বান্দাদের বৈশিষ্ট্য সমূহের মধ্যে সর্বশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য দোয়া করে।

এবং যারা বলছে হে আমাদের প্রভু! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে আমাদের চোখের শীতলতা স্বরূপ বানিয়ে দাও এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের ঈমাম বানিয়ে দাও। (সূরা ফুরকান: ৭৪)

আল্লাহর বান্দগণ নিজেরাই শুধু উত্তম বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর অধিকারী হবে তা নয়, তারা চায় তাদের সন্তানরাও যেন এ ধরনের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী অর্জন করে। তারা চায় তাদের স্ত্রীগণ যেন তাদের মত উত্তম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয় তাহলে মন আনন্দে ভরে যাবে। আর এ আনন্দে শুধু মানসিক প্রশান্তি ও তৃপ্তি পাওয়া যাবে না, বরং আনন্দে চোখ জুড়িয়ে যাবে।

আল্লাহর নেক বান্দাগণের আকাঙ্খা তাদের সন্তান ও স্ত্রীগণ যেন আল্লাহকে যারা ভয় করে চলে তাদের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হয়। তারা তাদের আকাঙ্খা পূরণের জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানায়। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে আল্লাহ যেন তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের এমন বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর অধিকারী বানিয়ে দেয় যাতে তাদের চোখ জুড়িয়ে যায়। আল্লাহ যেন তাদেরকে মুত্তাকীদের ঈমাম (নেতা) বানিয়ে দেয়।

স্ত্রী সন্তানদের উত্তম গুণাবলীর অধিকারী করে চোখের শীতলতারূপে বানানো ও তাদেরকে মুত্তাকীদের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ বানানোর জন্য দোয়া করাকেও আল্লাহ তাঁর নেক বান্দাদের একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ স্ত্রী সন্তানরা হচ্ছে একজন লোকের সবচেয়ে কাছের মানুষ। এদের সম্পর্ক সবচেয়ে বেশী জবাবদিহী করতে হবে। স্ত্রী ও সন্তান যদি আল্লাহর অনুগত হয়ে চলে তাহলে একজন মুমিনের জন্য এর চেয়ে বড় প্রশান্তি আর কিছু নেই। আর যদি তারা আল্লাহর অবাধ্য হয় তাহলে এর চেয়ে বড় বেদনার কিছু নেই।

আয়াতে চোখের শীতলতা বলতে রূপ, সৌন্দর্য, পার্থিব মেধা, যোগ্যতা ও সফলতাকে বুঝানো হয়নি। বরং এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে আল্লাহর আনুগত্য ও বাধ্যতা। আল্লামা ইবনে কাসীর এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, অর্থাৎ যারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে যে, তিনি যেন তাদের ঔরশ থেকে এমন সন্তান সৃষ্টি করেন, যে তাঁর আনুগত্য করবে ও শুধু মাত্র তারই ইবাদত করবে। তার কোন শরীক নেই। (তাফসীর ইবনে কাসীর খঃ ৩ পৃঃ ৩২৯)

এ আয়াত সম্পর্কে হযরত হাসান বসরীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ, সন্তান, সন্তানের সন্তান, ভাই অথবা বন্ধুকে আল্লাহর অনুগত দেখবে মুসলমানের চোখকে ঠাণ্ডা ও শীতল করার জন্য এর চেয়ে উত্তম কোন বিষয় নেই। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, খ. ৩ পৃ: ৩২৯)

উপরের আলোচনা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হলো যে, আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে হলে শুধু নিজে ভাল গুণ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হলেই চলবে না, স্ত্রী ও সন্তানদেরকে ভালগুণ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বানানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে।

রাহমান করুণাময়ের বান্দাহদের বৈশিষ্ট্য আলোচনার পর তাদের পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে এভাবে তাদেরকে পুরস্কার দেয়া হবে (জান্নাতের) কক্ষ তাদের ধৈর্যের প্রতিদানে। তাদেরকে সেখানে অভিবাদন ও সালাম দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হবে। সেখানে তারা চিরকাল বসবাস করবে। বসবাস ও আবাসস্থল হিসেবে তা কতই না উত্তম।

বলা হয়েছে তাদেরকে পুরস্কার দেয়া হবে (জান্নাতের) কক্ষ। যাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে তারা কারা? তারা রাহমান পরম করুণাময় আল্লাহর বান্দা। যারা পূর্বের আয়াতসমূহে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্য ও গুণবলীর অধিকারী।

তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে, ‘তারা যে ধৈর্যধারণ করেছিল তার প্রতিদানে। এর থেকে বুঝা গেল রাহমান এর বান্দাহদের যেসব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর উল্লেখ করা হয়েছে এসব গুণাবলী অর্জন সম্ভব নয়, নফস প্রবৃত্তির লাগামহীন কামনা বাসনাকে দমন করে কঠোর সাধনার মাধ্যমে এ গুণাবলী অর্জন করতে হবে। দৃঢ় সিদ্ধান্ত ও প্রবৃত্তির উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকলেই এসব গুণ ও বৈশিষ্ট্য অর্জন করা সম্ভব। আল্লাহর নেক বান্দাহদের জান্নাতে সালাম ও শুভেচ্ছার মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানানো হবে। তাদেরকে এ অভ্যর্থনা জানাবে জান্নাতের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাগণ। আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন : যারা তাদের রব (প্রভুকে) ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের কাছে পৌঁছবে আর জান্নাতের দরজাগুলো আগ থেকেই খোলা থাকবে তখন জান্নাতের রক্ষীগণ বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখে থাক, তোমরা স্থায়ীভাবে থাকার জন্য জান্নাতে প্রবেশ কর। (৭৩ : যুমার)

রাহমান এর বান্দাহদের স্থায়ী আবাস হবে জান্নাত। জান্নাতের পরিচয়ে বলা হয়েছে ; বসবাস ও আবাসস্থল হিসেবে তা কতই না উত্তম। ঠিক এর বিপরীত কথা বলা হয়েছে জাহান্নাম সম্পর্কে। যে জাহান্নাম থেকে রাহমান এর বান্দারা বাঁচতে চায়। বসবাস ও আবাসস্থল হিসেবে এটি কতই না নিকৃষ্ট। নিকৃষ্ট আবাস জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য রাহমান এর বান্দাগণ তাঁর দরবারে আকুতি জানায়, শুধু আকুতিই নয় এর থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যসমূহ অর্জন করে। আর এভাবেই তারা উত্তম আবাস জান্নাতের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে।

আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের বৈশিষ্ট্য ও তাদের সর্বোত্তম পুরস্কার ও প্রতিদান ঘোষণার পর বলেন,বল! আমার প্রভু তোমাদেরকে পরোয়া করে না যদি তোমরা তাকে না ডাক। তোমরা মিথ্যা বলছ। অতএব শীঘ্র তোমরা সম্মুখীন হবে অনিবার্য শাস্তির।

এ আয়াতের তাফসীরে ইবন কাসীর রহ. বলেন: যদি তোমরা (আল্লাহর) ইবাদত না কর তাহলে তিনি তোমাদের কোন পরোয়া করেন না। কেননা তিনি তাঁর ইবাদত ও তাঁর একাত্মতা স্বীকারের জন্য এবং সকাল সন্ধ্যায় তার পবিত্রতা বর্ণনার জন্য বিশেষ সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন।

হে কাফেররা (তোমরা মিথ্যা বলছ) আর তোমাদের এ মিথ্যাই তোমাদেরকে আখিরাতে শাস্তি এবং দুনিয়ায় ধ্বংস ও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। (তাফসীরে ইবন কাসীর খঃ ৩ পৃঃ ৩৩০)

এ আয়াতের মূল বক্তব্য হচ্ছে আল্লাহ যে বান্দাহদেরকে তার একক প্রভুত্ব ও নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে বাস্তব জীবনে তাঁর দাসত্ব মানার জন্য আদেশ করেন। এটি এ জন্য নয় যে, তিনি এর প্রয়োজন বোধ করেন। বরং আল্লাহ তার গোটা সৃষ্টির আনুগত্য ও দাসত্ব থেকে মুখাপেক্ষীহীন। আল্লাহকে মানা ও তাঁর দাসত্ব ও গোলামী করা মানুষেরই দায়িত্ব, এতে তাদেরই কল্যাণ দুনিয়াতে ও আখিরাতে।

সূরায়ে ফোরকানের শেষাংশে রাহমান এর বান্দাদের যেসব গুণ ও বৈশিষ্ট্যের আলোচনা করা হয়েছে সংক্ষেপে সেগুলো হলো :

১. বিনয় ২. ধৈর্য্য ও সহনশীলতা ৩. তাহাজ্জুদ আদায় ৪. জাহান্নামের ভয় ও তা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ৫. অপব্যয় ও কৃপণতা না করা ৬. শিরকমুক্ত থাকা ৭. যেনা ব্যভিচার ও হত্যার সাথে জড়িত না হওয়া ৮. তাওবা করা ৯. মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা ও অর্থহীন কাজকে এড়িয়ে চলা, ১০. কুরআনের আয়াত অনুধাবন করা ও তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। ১১. স্ত্রী ও সন্তান যেন আল্লাহর অনুগত হয় এ জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করা।

আল্লাহ এসব গুণাবলী অর্জন করে আমাদেরকে জান্নাতের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার তাওফিক দিন।







মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.