![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৪ ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা ভালোবাসা দিবস। তরুন প্রজন্মের কাছে বছরের সবচেয়ে কাঙ্খিত দিন। তারুন্যের অনাবিল আনন্দ আর বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাসে ভালবাসার নদীতে হংসমিথুন হয়ে ভেসে বেড়ানোর দিন। খোলা জানালা দিয়ে বইছে আসন্ন বসন্তের দক্ষিনা বাতাস । ফুরফুরে হাওয়ায় দুলছে প্রেয়সীর কেশ। এমন দিনেইতো ভালবাসা যায়।
একাবিংশ শতাব্দীতে এসে ভালোবাসার সংজ্ঞার সাথে স্টাইলটাও বেশ পাল্টে গেছে। সেই আদিকালে সুতো দিয়ে পায়রার পায়ে চিঠি বেঁধে দেয়া বা গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে পিয়ন চাচার হাতে টাকা গুজে দেয়ার দিন শেষ। এখন সেটি দখল করেছে মুঠোফোনের এসএমএস, ইন্টারনেট মেইল এবং ফেইসবুক। আমাদের আজকের নতুন প্রযুক্তির বিশ্বে আগেকার চেনা গল্প অনেকটাই পাল্টে গেছে।
একরত্তি জীবনে বলোনা কিভাবে সম্ভব ভালোবাসা তার জন্য চাই আরো দীর্ঘ অনন্ত জীবন , ভালবাসা কিভাবে সম্ভব, অতিশয় ছোট এ জীবন একবার প্রিয় সম্বোধন করার আগেই শেষ হয় এই স্বল্প আয়ু- হয়তো একটি পরিপূর্ণ চুম্বনেরও সময় মেলে না করস্পর্শ করার আগেই নামে বিচ্ছেদের কালো যবানিকা ; এতো ছোট সামান্য জীবনে কিভাবে হবে ভালবাসা। ভালবাসা কথাটি বলতেই হয়তো কেটে যাবে সমস্ত জীবন , হয়তো বা তোমার চোখের দিকে তাকাতেই লেগে যাবে অনেক বছর ,হয়তো তোমার কাছে একটি প্রেমের চিঠি লিখতেই শেষ হয়ে যাবে লক্ষ লক্ষ নিদ্রাহীন রাত; এটুকু ছোট্ট জীবন , এখানে সম্ভব নয় ভালবাসা তার জন্য চাই আরো অনেক জীবন অনন্ত সময় তোমাকে ভালোবাসার জন্যে জানি তাও খুবই স্বল্প ও সংক্ষিপ্ত মনে হবে।
হায়, ছোট্ট এই জীবন , তাই কবির এই স্বল্প সময়ে ভালোবাসার সাধ মিটে না। কবি ব্যাকুল কন্ঠে গেয়ে উঠেন, তাই একরত্তি জীবন বলোনা কিভাবে সম্ভব ভালোবাসা । তাই যুগে যুগে প্রেমিক, কবি ভালোবাসার অতৃপ্ত , তীব্র তৃষ্ণা নিয়ে চলে যান অনন্তের পথে। শুধূ প্রেমিক ,কবি নয় প্রতিটি মানুষই ভালোবাসার জালে আবদ্ধ।
ভালোবাসার চেয়ে আর বড় নেশা কি হতে পারে? ভালোবাসা, ভাই বোনের ভালোবাসা ¯্রষ্টার সৃষ্টির ভালোবাসা র্এ চেয়ে পবিত্রতম। সুন্দরতম পৃথিবীতে আর কি হতে পারে? এই চিরচেনা অথচ রহস্যময়ী ভালোবাসাকে ঘিরে দিনের পর দিন নয়, বছরের পর বছর নয়, যুগের পর যুগ নয় শুধু এমনকি শতাব্দীর পর শতাব্দী নয়, নয় লক্ষ কোটি বছর ধরে চলেছে গবেষণা।
নিরন্তর সমুদ্রের অতলে হারিয়ে যাওয়া টাইটানিকের মত অন্বেষণ করা হয়েছে ভালোবাসার স্বরুপ। একটাই প্রশ্ন উচ্চারিত হয়েছে বারংবার ভালোবাসা কি? ডুবন্ত টাইটানিকের সন্ধান পাওয়া সম্ভব ; কিন্তু ভালোবাসার পূর্ণাঙ্গ স্বরুপ নয়। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী প্রশ্নের উত্তর মিলেছে সেটা হলো ভালোবাসা কি? এই প্রশ্নোত্তর সাগরে সাঁতরে বেড়ালেও বোধকরি ভালোবাসার পূর্ণাঙ্গ স্বরুপ জানা কোনকালেই সম্ভব নয়। বড় ঘোমটা দেয়া বউয়ের মুখের মতো , কুয়াশা ঢাকা শীতের সকালের মতো চিরকালই অস্পষ্ট থেকে যাবে।
ভালোবাসা দিবস অর্থাৎ ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিল তা নিয়ে বিভিন্ন রুপ কথার কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। তবে আজও বিতর্কের উর্ধ্বে কোন কাহিনীকে চিহ্নত করা সম্ভব হয়নি। ঐতিহাসকরা প্রাচীন কাহিনী ঘেটে যে তথ্য প্রদান করেছেন সেসব হলো-
পোপ ভ্যালেন্টাইন ৮২৭ খ্রীষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে রোমের পোপ নির্বাচিত হন। পোপ সেন্ট পাসকল-১ এর অধীনে তিনি ধর্মযাজক হিসেবে কাজ করতেন । ভ্যালেন্টাইন ছিলেন অসম্ভব সৎ ও ভালো মানুষ। তিনি সকলের প্রিয় পাত্র ছিলেন; কিন্তু পোপ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার ৪০ দিনের মাথায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। প্রিয় মানুষটির মৃত্যুর পর শোকার্ত রোমবাসী তার স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এ অনুষ্ঠানে সাধারনত প্রেমিক- প্রেমিকারা অংশ নিত। এভাবে শুরু হয় ভ্যালেন্টাইন ডে।
অন্য এক তথ্য মতে, খ্রিস্ট্রীয় শতাব্দীর ১৪ ফেব্রুয়ারী সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক দু’জনকে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন রোমের পাদ্রী। অন্যজন টনি শহরের আর্চবিশপ। ঐতিহাসিকরা জানান , যেহেতেু এই দুজনই ছিলেন রোমের ধর্মযাজক , তাই তারা এই দুজনের হত্যার পর ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশেষ দিন হিসেবে পালিত হয়। সম্ভবত ধের্য্যর প্রতি তার দৃঢ় ভালোবাসা ও সততার কারণেই এর সঙ্গে মানসিক প্রেম ভালোবাসা জড়িয়ে যায়।
ভ্যালেন্টাইন ডে’র সাথে যুবক-যুবতীর প্রেম ভালোবাসা ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাবার একটি প্রচলিত কাহিনী হলো, ১৪ ফেব্রুয়ারীকে প্রাচীন রোমানরা তাদে ‘ফার্স্ট অব লুপার কেলিয়ার’ হিসেবে পালন করত। ফার্স্ট অব লুপার কেলিয়ার এই দিনে যুবকরা প্যালেস্টাইন পর্বতের চারিদিকে দৌড়ে গিয়ে ছাগলের চামড়ার তৈরি চাবুক দিয়ে যুবতীদের এই বিশ্বাসে আঘাত করত যে, এ আঘাতের কারণে তারা গর্ভবতী হবে। এছাড়া ১৪ ফেব্রুয়ারীতে কুমারীরা প্রেমপত্র লিখে বিশাল পাত্রে রাখত এবং সেখান থেকে পুরুষরা পত্র তুলে যে মেয়েটির পত্র পেত তার উদ্দেশ্যে যাত্রা করত। রোমানদের তৎকালীন চার্চ এই উৎসবকে একটি দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে’র সাথে সম্পৃক্ত করেন।
মধ্যযুগের শেষ দিকে ইউরোপীয়রা বিশ্বাস করত , ১৪ ফেব্রুয়ারী থেকে পাখিদের মিলনমেলা শুরু এবং তারাও সেটা পালন করতে চাইলো। ইংল্যান্ডেও এ ধারনায় বিশ্বাসী ছিল। তারপর সে ধারনা আটলান্টিক পেরিয়ে আমেরিকা ক্রমান্বয়ে সারাবিশ্বে। বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে বাংলাদেশের ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করে ভ্যালেন্টাইন ডে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলো এমনকি দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও এর আমেজ দেখা যায়। এদিনে তাবৎ প্রেমিক প্রেমিকাদের হৃদয় দুয়ার খুলে যায় মুহুর্তেই। হু হু করে ঢুকে পড়ে বসন্তের দক্ষিণা হাওয়া। এ বিশেষ দিনে হৃদয়ের উষ্ণতা আরো গাঢ় হয়। তারা পরস্পরকে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী যেমন, পারফিউম, ওডিকোলন শেভিং লোশন , ফুল , ক্যাসেট, ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র কার্ড উপহার দেয়। আর সবচেয়ে কমন ও নিঃখরচার যে উপহারটি তারা দেয় সেটি হচ্ছে চুমু। একথা সত্যি আগে একজন যুবক কোন যুবতিকে তার ভালোবাসার কথা সহজে বলতে পারতো না। আড়চোখে তাকানো , দৃষ্টি বিনিময় এসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এখন সেটা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। প্রথম দিন দেখলো, ভালো লাগলো এবং পরেরদিন মুহুর্তেই বলে ফেলে ভালোবাসি।
তারপর কখনো রমনায়, কখনো সোহরায়ার্দী, বা ক্রিসেন্ট লেক ,কখনো চাইনিজ রেস্টুরেন্টে চলে ডেটিং। এতকিছুর পরও আশার কথা হলো বর্তমানে স্ট্রাগল করে এখনো যুবককেরা ভালোবাসে। এখনো তারা অস্ত্র না ছুঁেয় সদ্য ফোটা জলে লাল গোলাপ নিয়ে দাড়িয়ে থাকে ভালোবাসার মানুষের পানে। আমাদের সমাজে ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে বিভিন্নজনের বিভিন্ন মত থাকতে পারে। কেউ কেউ সরাসরি এই দিবসটির বিরোধীতা করেন। আবার কেউ ওবায়দুল কাদেরের রম্য ভালোবাসার বক্তব্যর সমালোচনা করেন। অনেকেই এই দিবসটিকে ভিনদেশী কালচার হিসেবে নাক সিটকান।
তাদের যুক্তি হলো দেশের মানুষ তিন বেলা খেতে পারে না , বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান নেই লাখ লাখ দরিদ্র মানুষের, সেই দেশে ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? আমাদের কথা হলো ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন না করলে কি দরিদ্রতা দূর হয়ে যাবে? বাংলাদেশে এই দিবস পালনে কত টাকা ব্যয় হয়? দুর্নীতি , ঋনখেলাপী , জনসেবকদের রাজকীয় লাইফ স্টাইল ত্যাগ করে সাধারন মানুষের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করলে ফল হতে পারে। পরিশেষে বলবো ভালোবাসা মানে শুধু যুবক-যুবতীর ভালোবাসা নয়। বাবা-মা, ভাই-বোনের সাথে গড়ে উঠুক মধুর ভালোবাসা ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে আমরা ভালোবাসতে শিখি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে। ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে শুধু প্রেমিকাকে উপহার দিতে হবে এমন নয়, বাড়ির পাশের বস্ত্রহীন ছেলেটিকে কোন উপহার দিয়ে তাকে উৎসাহী করতে পারি। ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে আমাদের অঙ্গিকার হোক,আমরা কেবলি নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসবো। প্রেয়সীর পানে থাকবে নিখাদ ভালোবাসা, তার শরীর নয় হৃদয়ই থাকবে সর্বাগ্রে। আমাদের অঙ্গিকার হোক নোংরা রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে, সমস্ত জীর্ণতা, সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে এসে ভালোবাসার উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত হবো। অন্ধকারাচ্ছন্ন হৃদয় হবে ভালোবাসার আলোয় উদ্ভাসিত।
©somewhere in net ltd.