একুশের চেতনায় বাংলা ভাষার আওয়াজ তুলি সকলের প্রাণে

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:১৮

মো. মামুনুর রশীদ

একটি মহৎ দিন হঠ্যাৎ কখনো কোন জাতির জীবনে আসে যুগান্তরের সম্ভাবনা নিয়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসে একুশে ফেব্রুয়ারী এমনি একটি যুগান্তকারী দিন। শুধু পাক ভারত ইতিহাসে নয় , এটি সারা বিশ্বের ইতিহাসে একুশে ফেব্রুয়ারী একটি যুগান্তকারী ঘটনা। দুনিয়ার মানুষ হতচকিত হয়েছে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার জন্য বাঙ্গালি জনতার দুর্জয় প্রতিরোধের শক্তিতে, শ্রদ্ধায় মাথা নত করেছে ভাষার দাবীতে বাঙ্গালি তরুণদের ঐতিহাসিক আত্মত্যাগে। জাতিগত অত্যাচারের বিরেুদ্ধে, জনতার গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য পৃথিবী জুড়ে মানুষের যুগ যুগ ধরে যে সংগ্রাম, একুশ ফেব্রুয়ারী তাকে এক নতুন চেতনায় উন্নিত করেছে।

ভাষা আন্দোলন বাঙ্গালীকে দিয়েছে নতুন পথের সন্ধান, নির্মাণ করেছে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের নতুন সড়ক। ভাষাভিত্তিক একটি জাতি হিসেবে বাঙ্গালীর ঐতিহাসিক আত্মপ্রকাশ ইতিহাসে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারী যথার্থই একটি মহাত্তম দিন। আপন সত্তাকে বিপুল মহিমায় ঘোষনা করার দিন, সঙ্ঘশক্তিতে আবদ্ধ হয়ে শোষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উচ্চারনের দিন। বাস্তিল দিবসে ফরাসি জাতি শত বছরের গ্লানি মুছে লাভ করেছিল নবজন্ম, তেমনি একুশ ফেব্রুয়ারীতে বাঙ্গালী জাতি খুজে পেয়েছিল তার আত্মপরিচয়ের প্রজ্জ¦লিত নতুন ঠিকানা।

ভাষা আন্দোলনের অপর নাম প্রতিবাদী চেতনা। একুশে ফেব্রুয়ারী আন্দোলনে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার সরব প্রতিবাদের মাঝেই সুপ্ত ছিল গণতান্ত্রিক , ধর্মনিরপেক্ষ, ইহলেীকিক ও স্বাধিকারের আকাক্সক্ষা। ভাষা আšেদালন বাঙালীকে উদ্বুদ্ধ করেছে প্রতিবাদী চেতনায়। একুশের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা- সকলের রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের চেতনা, ভাষা আন্দোলন বাঙালিকে করেছে রক্তমুখী, স্বপ্নমুখী, সূর্যমুখী। ভাষা আন্দোলনের সাফল্যে বাঙালী বিভোর হয়েছে স্বাধীনতার স্বপ্নে। স্বাধীনতার দীর্ঘ দিন পর পর্যন্ত বাঙালি পূর্বের স্বপ্ন থেকে নানাভাবে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে একে একে। আজ একাবিংশ শতক। এখন আমাদের পাবার পালা। সমগ্র পৃথিবী এগিয়ে চলেছে জ্ঞানে বিজ্ঞানে। আমরাও এই যাত্রাপথের অভিযাত্রী। সমাজের দুখিঃত-বঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলা ভাষা তথা আমরা বাঙালিরা যে অর্জন করেছি তা যেন আত্মকলহের নিঃসার বিড়ম্বনায় ফুরিয়ে না যায়। চাই একতা। সুশীল সমাজের স্বপ্ন , স্বপ্নের বাস্তব রুপ যে অর্জন করতে হয় ভাষা আন্দোলন আমাদের সেটা শিখিয়েছে। মাতৃভাষার মান উন্নত করার সংকল্প ব্যক্ত করে আগামী দিনে এই অর্জনকে নিয়ে যেতে হবে অনেকদূরে। মায়ের কোলের মতো নিরাপদ করতে হবে আমাদের বাংলাকে। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের অর্ধশতাব্দী পার হয়ে গেলেও আমাদের মায়ের ভাষার প্রতি নেই কোন সম্মান, নেই কোন শ্রদ্ধা। বরং শ্রদ্ধার চেয়ে পরভাষার চর্চায় আমরা আমাদের মাকে প্রতিনিয়ত করছি অপমান। বর্তমানে এফএম রেডিওগুলোতে চলছে ভাষার অপব্যবহার। যে বাংলার জন্য আমাদের এতো আত্মত্যাগ সে বাংলাকে আজ আমরা কোন কার্যক্ষেত্রে লজ্জায় রাখতে পারিনা সবখানেই দরকার হচ্ছে দ্বিতীয় ভাষার। তাহলে এই ভাষার জন্য কী দরকার ছিল এতো প্রাণ? এভাবে অবহেলা , অবজ্ঞায় আমাদের মাতৃভাষাকে আমরা ভুলতে বসেছি। ভাষা শহীদদের প্রতি আমাদের নেই কোন কৃতজ্ঞতাবোধ । তাই নতুন বছরের এই মাতৃভাষার মাসে আমাদের উচিত মাতৃভাষার প্রতি সম্মান ও ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলা ভাষাকে আরো সমৃদ্ধ করা।

০ টি +০/-০