নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মামুনুর রশী২৪৩৭

বাস্তবতায় বিশ্বাসী

মামুনুর রশী২৪৩৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইভটিজিং ও নতুন প্রজন্মের ভাবনা

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:০৫

ইভ টিজিং প্রকাশ্যে যৌন হয়রানি, পথেঘাটে উত্যক্ত করা বা পুরুষ দ্বারা নারীনিগ্রহ নির্দেশক একটি কাব্যিক শব্দ যা মূলত ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নেপালে ব্যবহৃত হয়। ইভ দিয়ে পৌরানিক আদিমাতা হাওয়া অর্থে সমগ্র নারীজাতিকে বোঝানো হয়।

এটি তারুণ্যে সংঘটিত একধরনের অপরাধ। এটি এক ধরনের যৌন আগ্রাসন যার মধ্যে রয়েছে যৌন ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য, প্রকাশ্যে অযাচিত স্পর্শ, শিস দেওয়া বা শরীরের সংবেদনশীল অংশে হস্তক্ষেপ। কখনো কখনো একে নিছক রসিকতা গণ্য করা হয় যা অপরাধীকে দায় এড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।. অনেক নারীবাদী সংগঠন আরো উপযুক্ত শব্দ দিয়ে ইভ টিজিংকে প্রতিস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে ইভ শব্দের ব্যবহার নারীর আবেদনময়তাকে নির্দেশ করে যে কারণে উত্ত্যক্ত হওয়ার দোষ নারীর উপর বর্তায় আর পুরুষের আচরণ আগ্রাসনের পরিবর্তে স্বাভাবিক হিসেবে ছাড় পায়।



ইভ টিজাররা নানান সৃজনশীল কৌশলে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে থাকে। ফলে এ অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন। এমনকি অনেক নারীবাদী একে "ছোটখাটো ধর্ষণ" বলে আখ্যায়িত করেছেন।



কেউ কেউ ইভ টিজিং থেকে রেহাই পেতে নারীদের রক্ষণশীল পোশাক আশাক পরতে উৎসাহিত করেন। তবে রক্ষণশীল পোশাক পরিহিত নারীরাও ইভ টিজিং-এর শিকার হচ্ছেন এমন উদাহরণও অগণিত।



ইভ-টিজিং (Eve-teasing) কি?



খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থের নাম বাইবেল। বাইবেলের আরেক নাম ইনজিল। খ্রিষ্টান ও মুসলমানেরা বিশ্বাস করেন যে, বাইবেল একটি আসমানী কিতাব। বাইবেলের প্রধান চরিত্র Adam ও Eve, পবিত্র কোরানে তাঁদেরকে বলা হয়েছে আদম ও হাওয়া। বাইবেলের Eve ও কোরানের হাওয়া একই ব্যক্তি। কাজেই Eve শব্দটির উৎপত্তি বাইবেলে। বাইবেলে Eve শব্দ দ্বারা হাওয়াকে বুঝালেও বর্তমানে শব্দটির অর্থের ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যায়। Eve শব্দটির যৌগিক অর্থ হাওয়া, কিন্তু রূরার্তে রমনী, নারী, নায়িকা, প্রিয়তমা। ব্যবহারিক অর্থে আরো আছে। আমাদের লক্ষ্য 'Eve' শব্দটির প্রায়োগিক অর্থ তুলে ধরা। এ ক্ষেত্রে শব্দটি যোগজয় অর্থের দিকে নজর দিব। সাধারণত ১৩ থেকে ১৯ বছরের মেয়েদেরকে বোঝায়, যাদের বলা হয় 'teen ager'। Eve teasing বলতে নারীকে বিরক্ত করা অর্থে ব্যবহৃত হয়। ইয়ার্কি ঠাট্রার মাধ্যমে আমরা দাদি নানিকেও বিরক্ত করি। কিন্তু সেটা Eve teasing এর মধ্যে পড়ে না। বিরক্ত করার মধ্যে দিয়ে যদি কোন অনৈতিক প্রস্তাব, প্রেম ভালোবাসার প্রস্তাব, লোভ লালসার ইঙ্গিত, ভয় দেখিয়ে বা জিম্বি করে স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা, অবৈধ কাজে প্রলুব্ধ করা।

Eve teasing যে কেবল টিন এজারের মধ্যেই ঘটে তা নয়। যে কোন মেয়ে বা নারী- যে বয়সের হোক না কেন, অন্য কোন পুরুষ কর্তৃক আপত্তিকর আচরণের শিকার হলেই তা Eve teasing। বিবাহ-পূর্ব ভালোবাসা অশালীন কথাবার্তা বলা, প্রেমপত্র, মোবাইল ফোনে শ্রুতিকটু আলাপ, জনতার ভিড়ে পরপুরুষ কর্তৃক ইচ্ছাকৃত ধাক্কা ধাক্কি, ষ্পর্শ করা, চোখের ভাষায় অশুভ ইঙ্গিত করা, কথনে, ইঙ্গিতে ইন্দ্রীয় অনুভুতি উপলব্ধি করবার দূরভিসন্ধিকে Eve teasing বলা হয়।



ইভ-টিজিং কেন হয়?

প্রত্যেকটি মানুষের রক্তের ভেতরেই তার স্বভাবের পরিচয় নিহিত রয়েছে। কেও সেটি বিবেকের শাসনে দমিত রাখে, কেও পারে না। যে পারে না, তার যুক্তি নজরুল ইসলামের ভাষায় ' তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সেকি মোর অপরাধ?'

না অপরাধ নয়, চেয়ে থাকা অপরাধ নয় যদি সে চাহনিতে কোন দূরভিসন্ধি না তাকে। কিন্তু অনেকের চাহনি নিষ্কলুস নয়, বিশেষ করে টিন এজারদের, যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৯। এই বয়সের ছেলে মেয়েরা আবেগ প্রবন হয়ে থাকে। যৌবনের উত্তাপে ধীরে ধীরে উষ্ণ থেকে উষ্ণতা হয়। পিতামাতা বা অভিভাবক কর্তৃক নৈতিক শিক্ষা না পেলে বেয়ারা বা বখাটে হয়ে যায়। তখন সে ইভ-টিজিং সহ অন্যান্য অপরাধে আসক্ত হয়।



যে কারণে ইভ-টিজিং হয়-

১) ধর্মীয় অনুশাসন না থাকার কারণে, ২) নৈতিক জ্ঞানের অভাব থাকলে। ৩) নারীকে অবলা মনে করলে, ৪) পাশ্চাত্যের ফ্রি সেক্সের প্রভাবে, ৫) প্রেমের কারণে বা প্রেমে ছ্যাকা খাওয়ার কারণে, ৬) রমণীর দেহ উপবোগের মোহে, ৭) অভিভাবকের অতি প্রশ্চয় বা উদাসিনতার কারণে, ৮) নাটক, সিনেমা, গল্পে, উপন্যাসে বিবাহ পূর্ব প্রেমলীলা/পরকীয়া প্রেমের কারণে, ৯) সমেচ্ছ মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে, ১০) ইভ-টিজিং এর পরিনাম না জানার কারণে, ১১) ধনী লোকের জামাই হওয়ার লোভে, ১২) অতি আধুনিকা মেয়েদের অশালীন আচরণের কারণে, ১৩) ভূক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় না নেয়ার কারণে, ১৪) আইন শক্তিশালী না হওয়ার কারণে, ১৫) আইনের প্রয়োগ না থাকার কারণে, ১৬) পাঠ্য পুস্তুকে আছে, এমন কিছু অনৈতিক পাঠ্য করে বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখাতে যেয়ে।



ইভ-টিজিং এর কূ-প্রভাব-

১) স্কুল কলেজগামী মেয়েরা রাস্তাঘাটে নিরাপত্তার অভাববোধ করে, ২) মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়, ৩) মেয়েদের বাইরে কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়, ৪) অপমানিত হয়ে অনেক মেয়ে আন্তহত্যার মত পথ বেছে নেয়, ৫) চরিত্রবান হয়ে উঠবার পথে বাঁধা হয়ে দাড়ায়, ৬) বংশের মান মর্যাদা ক্ষুন্য হয়, ৭) পারিবারিক শান্তি ব্যহত হয়, ৮) অভিভাবক চিন্তিত হয়ে পড়েন, ৯) সমাজে বখাটে ছেলেদের দৌড়াত্ব বৃদ্ধি পায়, ১০) আইন শৃংখলার অবনতি ঘটে।



প্রতিকার-

ইভ-টিজিং হতে নিস্তার পেতে হলে ধর্মীয় বিধি নিষেধ মেনে চলা তথা কোরআন ও হাদিসের আলোকে নিজেদেরকে পরিচালিত করলেই শুধূ ইভ-টিজিং এর কবল হতে মূক্তি পাওয়া সম্ভব। কারন সকল সমস্যার সমাদান দিতে পারে একমাত্র আল-কোরআন। আসুন আমরা আমাদের সকলের ব্যক্তিগত জীবনের একমাত্র অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে আল-কোরআনকে বেছে নেই। শুধু ব্যক্তিগত জীবনেই নয় রাস্ট্রের অপারেটিং সিস্টেমও যেন আল-কোরআন হয় সেই প্রচেষ্টায় আমরা শরীক হই।



আজ বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুশাসন কি অনেকেই জানেন না তাই তাদেরকে পৃথকভাবে ইভ-টিজিং প্রতিরোধে কিশোর/তরুদের করনীয় ও কিশোরী/ তরুনীদের করনীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হ'ল। আশাকরি এগুলো মেনে চললে কিছুটা সূফল পাওয়া যাবে আমার বিশ্বাস।



কিশোর তরুনদের করণীয়-

১) ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে, ২) আবেগকে সংযত রাখতে হবে, ৩) অনৈতিক চিন্তা বাবনা পরিহার করতে হবে, ৪) নিজেকে সৎ হতে হবে, ৫) বিবাহ পূর্ব প্রেম-প্রীতি পরিহার করতে হবে, ৬) বখাটে বন্ধুদের এড়িয়ে চলতে হবে, ৭) মেয়েদেরকে মায়ের জাত মনে রেখে তাদের উপযুক্ত সম্মান দিতে হবে, ৮) কোন মেয়ে আক্রান্ত হলে তাকে সাহয্যের জন্য এগিয়ে আসতে হবে, ৯) সম্প্রীতির মনোভাব বজায় রাখতে হবে, ১০) হিংসা প্রতিহিংসা পরিহার করতে হবে।



কিশোর তরুনীদের করনীয়-

ইভ-টিজিং বন্ধে তরুনিদেরকেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে হবে। কথায় বলে- এক হাতে তালি বাজে না। ইভ-টিজিং এর জন্য কেবল পুরুষদেরকেই দায়ী করা যায় না, নারীরাও অনেক ক্ষেত্রে জড়িয়ে পরে। কাজেই তরুনী তথা নারীদের করনীয় ভূমিকা উল্লেখ করা হ'ল।

১) ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে, ২) সবক্ষেত্রে উগ্রতা পরিহার করতে হবে, ৩) আচার আচরণে নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী হতে হবে, ৪) অশালীন আচরন ও পোষাক পরিহার করতে হবে, ৫) পর-পুরুষদের এড়িয়ে চলতে হবে, ৬) পর্দা প্রথা মেনে চলতে হবে, ৭) আপত্তিকর আচরনের শিকার হলে শিক্ষক ও অভিভাবককে জানাতে হবে, ৮) লজ্জা নারীর ভূষন- মনোভাব বজায় রেখে চলতে হবে।



শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের করনীয়-

১) শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমন্বয়ে সাপ্তাহিক, বা পাক্ষিক বা মাসিক মিটিং করে ছাত্র ছাত্রীদের ইভ-টিজিং এর কুফল বা পরিনাম সম্পর্কে সজাগ করে দিতে হবে, ২) শ্রেণী শিক্ষক নিয়োগ করে শিক্ষার্থীদের যেকোন অভাব অভিযোগ শোনা ও শুনানীর ব্যবস্থা করতে হবে, ৩) প্রত্যেক শ্রেণী বা বিভাগ থেকে ৩/৪ জন করে ছাত্রীর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে- যারা আক্রান্ত ছাত্রীদের পাশে দাড়াবে এবং তাৎক্ষনিকভাবে শ্রেণী শিক্ষকের কাছে রিপোর্ট করবে, ৪) ৪/৫ জন শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি প্রাথমিক কমিটি গঠন করতে হবে যাদের কাছে শ্রেণী শিক্ষকগন প্রাথমিক ভাবে রিপোর্ট করবেন, ৬) প্রতিষ্ঠান প্রধান যিনি- তিনি সবসময় কমিটির কার্যক্রম মনিটরিং করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন, ৭) ক্যাম্পসে ক্লাস চলাকালে কেউ ক্লাস ফাকি দিচ্ছে কিনা- সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন, ৮) ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আনাগোনা আছে কিনা সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন, ৯) প্রতিষ্ঠান প্রধান রাজনৈতিক দল সমূহের স্থানীয় শাখার সকল সদস্যদের সাহায্য সহযোগিতা চাইবেন এবং পর্যায়ক্রমে সাপ্তাহিক/পাক্ষিক/মাসিক মিটিংএ তাদেরকে আমন্ত্রন জানাবেন।



সামজিকভাবে করনীয়-

১) সামজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বখাটের পরিবারকে‌ 'একঘরে' করে রাখতে হবে, ২) শান্তির স্বার্থে সংকীর্ন দৃষ্টি ভংগি উদার করতে হবে। অপরের দুঃখে সমবেদনা জানাতে হবে, ৩) ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হতে হবে, ৪) উঠতি বয়সী সন্তানদেরকে চোখে-চোখে রাখতে হবে, ৫) মেয়েদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপর হতে হবে, ৬) রাস্তার মোড়ে, গাছ তলায়, ব্রিজের উপর, চায়ের দোকানের সামনে বকাটে ছেলেদের আড্ডা বন্ধ করে হবে।



মেয়েদেরকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারিরীক ও মানসিকভাবে হয়রানি করা বা ইভটিজিং নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যপকভাবে আলোচনা হচ্ছে। ইভটিজিং এখন শুধু যৌন হয়রানীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। যৌন নির্যাতন এবং হত্যার মত ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। আইন ও শালিস কেন্দ্রের এক রিপোর্টে বলা হচ্ছে ২০১০ সালের প্রথম নয় মাসে অন্তত ২৫ জন নারী যৌন হয়ররানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আরও ১৭ জন, যাদের মধ্যে ১ জন মহিলাও রয়েছেন, খুন হয়েছেন দুস্কৃতিকারীদের প্রতিবাদ করতে গিয়ে। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির গবেষণায় দেখা গেছে ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সী শতকরা প্রায় ৯০ জন নারী যেীন হয়রানির শিকার হয়। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে ‘ইভ টিজিং’ নামক সমাজিক ব্যাধিটির ব্যাপকতা। কারণ বিশ্লেষণ করলে যে বিষয়গুলো অনায়াসে আমাদের চোখে আসে তা হল পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যাবস্থা, রাজনৈতিক দুরাবস্থা, আইনের শাসনের অভাব ইত্যাদি। কিন্তু এসব মৌলিক সমস্যা তো নতুন করে আবির্ভাব হয়নি। তাহলে সাম্প্রতিক সময়ে ইভটিজিং এর তীব্রতা এতটা বৃদ্ধি পেল কেন? এই প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর খোঁজা হয়েছে এই লেখায়।

স্বাধীনতার পর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ খ্যাত বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সে অনুপাতে শিক্ষিতের হার বাড়লেও শিক্ষার মান একেবাড়েই বাড়েনি। বিভিন্ন উপায়ে মানুষের হাতে টাকা এসেছে ফলে ধনী লোকের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু সুশিক্ষিত জনবল গড়ে উঠেনি। এই অসম বিকাশের অন্যতম একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল ‘ইভটিজিং’ এর মতো ঘটনা।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি ভাবনার কারণ তা হল, তথ্যপ্রযুক্তি তথা মোবাইল ফোনের অবাধ ব্যাবহার। তথ্যপ্রযুক্তির এই অগ্রগতিকে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য অনেকেই সাধুবাদ জানালেও সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর অভাবে এর নেতিবাচক দিকটাই আমাদের বেশি নাড়া দিচ্ছে। কর্পোরেট কোম্পানিগুলো শুধু মুনাফার লোভে সামাজিক দ্বায়িত্ব ভূলে গিয়ে ইঁদুরদৌড়ে মেতে উঠেছে। ‘রাতভর কথা’, ‘বিরামহীন কথা’ ইত্যাদি প্যাকেজ দিয়ে তারা আমাদের কিভাবে উপকার করছে তা বোধগম্য হচ্ছে না। এসব রাতভর সস্তা কথার প্রলোভন দেখানোর মুল টার্গেট যে তরুন সমাজ তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু কি কথা বলবে ছেলে-মেয়েরা রাত ভর? আর কার সাথেই বা বলবে এত কথা? আর এজন্যই সম্ভবত এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে প্রায় বলে থাকে “দোস্ত, একটা নাম্বার হবে নাকি?” এই নাম্বারটা অবশ্যই কোনো একটা মেয়ের। এরপর যদিও একটা নাম্বার পাওয়া গেল, অপর পক্ষ কি প্রস্তুত কথা বলার জন্য? দু’ এক কথার পর বাগবিতন্ডা। এর পরবর্তী দৃশ্য কি হবে তার জন্য খুব বেশি ভাবতে হচ্ছে না। চোখ রাখুন সিনেমা আর নাটক তথা সিরিয়ালের দিকে। সব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখানো হচ্ছে তাতে। আর এভাবেই জন্ম হচ্ছে হাজারো ‘স্ট্রিট রোমিও’র। যারা কিনা পরে ভয়ানক ভিলেনে রূপান্তরিত হচ্ছে।

তৃতীয় কারণটিও প্রথম দুটির সাথে সম্পর্কিত। আর তা হল দেশীয় নিজস্ব সংস্কৃতিক পরিচয়ের বিকাশের অভাব। তথাকথিত অত্যাধুনিক বিশ্ব আর বিশ্বায়নের সাথে আমরা একাত্বতা প্রকাশ করে ভিনদেশী সংস্কৃতির অবাধ গলাধঃকরণ নিশ্চিত করেছি। দিনশেষে দেখা যাচ্ছে আমাদের অপ্রস্তুত তরুণ সমাজে তার বদহজম শুরু হয়েছে। ভালোমন্দের পরিশোধন করতে না পেরে তারা সবই অবাধে গ্রহণ করার চেষ্টা করছে কিন্তু ঠিকভাবে পেরে উঠছে না। ফলে তৈরি হচ্ছে হিংস্র ও পশুসুলভ আচরণের। বলি হচ্ছে শত শত কোমলমতি মেয়ে। আর এক্ষেত্রেও প্রভাবকের ভুমিকায় রয়েছে সেই কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। ‘দুই মাস ওদেরেকে ডিস্টার্ব করবেন না, প্লিজ’ আওয়াজে টিভি রেডিওতে মাতম তোলার কোনো ইতিবাচক দিক কি আছে?

‘ইভটিজিং’ এ আক্রান্তদের শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেও ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পরে। তারা ভয়, উদ্বেগ্যতা , দুঃশ্চিন্তা, আত্মহত্যার প্রবণতা, অসহায়ত্ব, হতাশা, আত্মসম্মান বোধের হ্রাস ইত্যাদি মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকে। যেহেতু পরিবার বা স্কুলে এ ব্যাপারে সাধারণত তারা পর্যাপ্ত মনো-সামাজিক সহযোগিতা পায়না বা পাবার ব্যাবস্থাও নেই, সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে প্রকট হতে থাকে।

অত্যন্ত ভয়ানক হয়ে উঠা এই ব্যাধির দ্রুত প্রতিরোধ করার জন্য কঠোর শাস্তির বিধানের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতৈক্য একান্ত অপরিহার্য। ক্ষতিগ্রস্থদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবার ব্যাবস্থা করাও জরুরী। সেই সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সামাজিক বিকাশে ব্যাবসায়ী, রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যম, বুদ্ধিজীবী সহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের যে দ্বায়িত্ব রয়েছে সে সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। এ কথা অতীব সত্য যে, আজ যদি আমরা আমাদের মেয়েদের সহায়তা না করতে পারি, দিনশেষে আমরা সবাই চরম অসহায়ত্বের মধ্যে পড়ব।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.