নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a house wife, I love to write something
রাত ভোর হতেই দুইটা গরুর গাড়ী এসে থামলো মিরাদের বাড়ী প্রসাদ ভবনের দরজার সামনে। একটায় যাবে তারা আর একটায় যাবে সন্ধা দিদিরা। সন্ধ্যা দিদিরা যাবে আলমডাঙগা তার বৌদির বাবার বাড়ীতে আর মিরারা যাবে নিশ্চিন্দিপুর তার পিশিমার বাড়ীতে। পিশিমার বাড়ীতে যাবে শুনে তার খুব খুশী লাগছে। ওখানে গেলে বৌদি দুধের চাঁছি, আমসত্ব খেতে দেয়। বাবা বলছে এক সপ্তাহের মধ্যে বংগবন্ধুকে ছেড়ে দিলে দেশ স্বাধীণ হয়ে যাবে এবং তারা পিশিমার বাড়ী থেকে চলে আসবে। এত তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে জেনে মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কেন দেশ এত তাড়াতাড়ি স্বাধীন হবে? দেরী হলে তো বেশ কিছুদিন পিশিমার বাড়ীতে থাকা যাবে। এমনি তে বাবা কোথাও রাতে থাকতে দেয় না। এর আগে যতবার গেছে বাবা সাথে করে নিয়ে গেছে। আবার এক রাতের পরই নিয়ে এসেছে। গত রাতে মা যখন বস্তায় সংসারের সব জিনিস পত্র গুছিয়ে নিচ্ছিল, বাবার সেকি বকা। কয়দিনের জন্য যাচ্ছ তবে এত কিছু নেবার দরকারটা কি? মা জানতে চায় কয়দিন মানে কি? হ্যাতো ২/৩ দিন এরপরে দেশ স্বাধীন হলে তো আমরা চলে আসবো।মা যখন ল্যাম্ফটা বস্তায় ভরে বাবা তখন চিতকার করে উঠে। মা বলে বক না, যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। এগুলো নিতে হবেই। পরে ১০ মাস গ্রামে থাকতে যেয়ে একে একে সবই লেগেছিল। গতকাল প্লেনে করে বোম্বিং হওয়ার পরে আর কেউ ভাত খায় নি। তাই জল দেওয়া রাতের ভাতগুলো মা নদীর ধারে মিনার মাকে দিয়ে আসলো। মিরা মা বোন , দিদির সাথে উঠে বসলো গরুর গাড়ীতে। পিছনে সাদা ধুতি পরা বাবা আর কালো কুকুর ভৃলু হাঁটছে। কিছুক্ষণ পর বাবা একা । ভুলুকে আর দেখা গেল না। দেশ স্বাধীন হলে সকলে ফিরেছিল কিন্তু ভুলু আর ফিরে নি। আজও মনে হয় মা রাতে রান্না শেষ করে মিরার ছোট বোনদের ঘুম পাড়াতে যেত তখন রান্না ঘর পাহাড়ার দায়িত্বটা ভুলু পেত। মিরার মা এনে দেখতো ভুলু রান্না ঘরের ডোয়াতে মুখ বাধিয়ে বসে আছে।গ্রামের পথ ধরে যখন গরু গাড়ী চলছে,চৈত্র মাসের প্রখর রোদ মাথার উপরে। সে কি তৃষ্ণা। পথে যখন গাড়ী থামছে লোকজন মুড়ী গুড় আর শীতল জলে মধুর প্রাণে আপ্যায়ন করছে। ছোট বোন হাসি তখন কেবল হাঁটতে পারে। তাই সে জামার কোচ ভরে গাছের নীচে পড়ে থাকা আমের গুটি কুড়িয়ে আনন্দ জড়ো করছে।
মিরারা সন্ধ্যা নাগাদ নিশ্চিন্দিপুর পিশিমার বাড়ী এসে পৌছালো। ৫/৬ টা হিন্দু পরিবার নিয়ে পিশিমাদের হিন্দু পাড়া। গরূ গাড়ী থামতেই সকল বাড়ী থেকে লোকজন ছুটে এলো, চোখে মুখে ব্যাকুলতা। শহরে কি হচ্ছে জানতে সকলে অধীর আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এলো।
বাবা মিরাদের রেখে পরদিন আবার শহরের বাড়ীতে এসে গেল। সেই ধুতি পড়েই চলতে লাগলো। ১৭/১৮ দিন পর সকালে একটা কাঁসার বাটিতে ছাতু নিয়ে খাওয়া শুরু করেছে এমন সময় বাবু এবং কাবু দুই ভাই এসে বলে কাকা আপনি কোথায় যাবেন চলে যান এখনই, আমরা ভারতে চলে যাচ্ছি। তবে আপনি এখনই ধুতি ছেড়ে লুঙ্গি পড়েন , ওরা হিন্দু খুঁজে খুজে ধরছে। য়খন আবার আক্রমন হলো তখন ধুতি রেখে লুঙ্গি পড়ে ছাতুর বাটি ঝোলার মধ্যে ভরে সারাটা পথ এরকম স্ক্রলিং করে পিশিমার বাড়ী পৌছা্ল।
মিরার বাবার দিন কাটতে লাগলো সব্জি বাগান করে।পিশিমার বাড়ীর পশ্চিমদিকে ইন্দিরা পাড়ে বেশ কিছু পতিত জমি পড়ে ছিল। বাবা সেখানে গড়ে- তুললেন সুদৃশ্য এক সব্জি বাগান। নিজের হাতেম বাঁশ চেঁছে চটা বের করে বেড়া দিলেন বাগানে। বিকাল হলে ইন্দিরা থেকে জল তুলে বাগানে দিতেন।সেই বাগানের সব্জি দে্র্র্র্র্রেখ বাবার দিন গলো ব্যাস্ত ভাবেই কেটে যেতে লাগলো।
পিশিমাদের গ্রামের মুসলমান পাড়া ১ মাইল দূরে।
মুসলমান পাড়ায় এক ডাকাত বাস করতো। মজিবর ডাকাত। সে এসে রাত্রে পিশিমার বাড়ী পাহারা দিত।কালো মোচওয়ালা মজিবরকে দেখেই মিরার মনে হতো রবীন্দ্র নাথের বীরপুরুষের কথা।কিন্তু বাস্তবে বীরপুরুষ হতে পারেনি তারা্। কারন যখন জানা গেল আজ রাতে পিশিমার বাড়ী লুট হবে তখন ঘরের দামী জিনিসপত্র সব মুসলমান পাড়ায় রেখে আসতে হলো। মিরার মায়ের টিনের বাক্সে ছিল ২৬টা শাড়ী। ওর মধ্যে তার বিয়ের শাড়ী মিরার দিদিমার বিয়ের গোরাপী ব্যানারসীটি েছিল। সেইটাই তার মায়ের বিয়ের শাড়ী। কিন্তু যখন বাক্স আবার ফেরত আনলো তথন পাওয়া গেল মাত্র ৫টা শাড়ী। মিরার মায়ের শাড়ীর জন্য কান্না আজও মনটাকে কেমন যেন ব্যাথা দিয়ে যায়। এর পর থেকে ডাকাতি হবে শুনলেই কাঁসার থালা বাসন সব নদীতে কাদার মধ্যে লুকিয়ে রাখতো।
নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম থেকে প্রায় আড়াই মাইল দূরে ছিল খাস কড়ড়া গ্রাম। খাসকড়ড়া বাজারে ভূপেন ডাক্তারের ট্রানজিস্টারে যুদ্ধের খবর মোনার জন্য প্রতি হাটবারে মিরার বাবারা যেত খাস কড়ড়া বাজারে খবর শুনতে। একদিন মিরার বাবার শরীরটা্ একটু খারাপ। তাই তিনি গেলেন না খবর শুনতে। এজন্য কেউই গেল না। সন্ধ্যায় আসর বসলো্ পিশিমার বারবাড়িতে।সরষের তেল দিয়ে মাখা মুড়ির সংগে চলতে লাগলো রাজনীতি। এমন সময় একজন হাঁফাতে হাঁফাতে এসে বলে কালি দা আপনি আর করিম শাহের ওখানে খবর শুনতে যাবেন না। করিম শাহ একজন হোমিওপাথ ডাক্তার। খাসকড়রা বাজারে তার রোগী দেখার চেম্বার। সেখানেই যেত তারা খবর শুনতে। ডাক্তার সাহেব আমাকে পাঠালো সংবাদটা আপনাকে দেবার জন্য। কি সংবাদ শোনার জন্য সকলে উদগ্রিব হলো । উসকো খুসকো চুলের লুঙ্গি পরা রোকটি বল্লো আপনাকে খুঁজতে আজ খোদন রাজাকার এসেছিল। জানতে চায় যে, এখানে কালি পদ সরকার আসেনি খবর শুনতে? ডাক্তার সাহেব বুঝতে পেরে বলেন, এখানে তো কালিপদ নামে কেউ আসে নি, এখানে এসেছে কালিরাম আগরওয়ালা, আর তার বাড়ীতো চুয়াডাংগাতে না, আলমডাংগাতে।এই কথা শুনে আশ্বস্ত হয়ে চলে গেল খোদন রাজাকার। আর বেঁচে গেল কালিপদ, একটি পরিবার যারা ৭১ এর বিজয় দেখেছিল।
©somewhere in net ltd.