নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

madam

I am trying to publish my story, poem etc

মঞ্জু রানী সরকার

I am a house wife, I love to write something

মঞ্জু রানী সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসি

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৩৮




বাড়ীর পাশেই মাথা ভাঙ্গা নদী। ছোট বেলায় এই নদীর নাম নিয়ে লাবণীর মনে অনেক প্রশ্ন ছিল। এর নাম মাথাভাঙ্গা কেন? কোথায় যেয়ে এর মাথা ভেঙ্গে গেছে? মা আর মাসীমাদের মুখে শোনা-এই নদী বলে চুন্নী নদী নামে পশ্চিম বাংলা দিয়ে ভারতে ঢুকেছে। তখন ভাবতো লাবণী নৌকা চড়ে এই নদীর শেষ খুঁজে বের করা যায় না? এসব কথা ভাবতো লাবণী সারাদিনের স্কুল, মায়ের হাতের কাজ করে দিয়ে বিকালে অবসরে বসে, নদীর পাড়ে সন্ধ্যার আঁধার ঘিরে আসা পর্যন্ত এই সব নানান কথা ভাবতো। কখনও মনে মনে বলতো “বলো নদী, কোথায় তোমার দেশ?” পরে বইতে পড়েছে এটি পদ্মার শাখা “গড়াই’ , আর “গড়াই এর শাখা এই মাথাভাঙ্গা।

লাবণীর বেড়ে উঠা মফস্বল শহরে। সেখানে সে ১লা বৈশাখ পালন করেছে। প্রাইমারী স্কুলের মাঠে ৩ দিন ব্যাপী বৈশাখী মেলাও করেছে। সেখানে লাবণী আর মহুয়ার চাটনি বেঁচে অনেক লাভও করেছে।ছোট বোন শ্রাবণী আর তার বান্ধবী বন্যা দিয়েছিল চুড়ী মালার দোকান। তারা এত কম দামে চুড়ী মালা বেচেছে যে সব বিক্রি হয়ে গেছে। এতে তারা যে কি খুশী। মেলা শেষে হিসাব করে দেখা গেল পুরোটাই লস। যে দামে কিনেছে, তার চেয়ে কম দামে বিক্রি বেশী হচ্ছে দেখে সব বেঁচে দিয়েছে। অবশেষে লাবণীদের চাটনি বিক্রির লাভ দিয়ে এই ক্ষতি পোষানো হলো। ভোর হতেই স্কুল মাঠে আল্পনা আঁকা প্রাংগনে এসো হে বৈশাখ গাওয়া, স্কুলে রবি, নজরুলের জন্ম দিবস , স্বাধীনতা, বিজয় দিবসে মাঠে যেয়ে মার্চ পাস্ট আর ২১শে ফেব্রুয়ারীতে মা বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ভোরের আলো ফুটার আগে প্রভাত ফেরীতে যোগ দেওয়া। এর বাইরে আর কোন দিবস পালন করা হয় নি।
ঢাকাতে এসে অফিসে শুনলো ১লাপ ফাল্গুনের কথা। আগের দিন ১২ই ফেব্রুয়ারী অফিসের সকল মেয়েরা প্লান করলো আগামীকাল সবাই হলুদ শাড়ী পড়বে। পরদিন সকালে রাস্তায় বের হয়ে দেখে পুরো ঢাকা যেন হলুদ রং এ ছেয়ে গেছে। আর কি সুন্দর সেজেছে মেয়েরা। অফিস ছুটির পর দল বেঁধে বই মেলায় যাওয়া এ যেন আর এক আনন্দ।

আরও একটা দিনের কথা লাবণী জেনেছে, সেটা হলো, ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইন ডে -ভালোবাসা দিবসের কথা।কিন্তু ঐ দিন লাবণী কি করবে, শুনেছে সে লাল শাড়ী পরে ভালোবাসার মানুষের সাথে দিন কাটাতে হয়, তাকে বিভিন্ন উপহার দিতে হয়। কিন্তু কি দেবে লাবণী আর কাকেই বা দেবে? তার তো ভালোবাসার মানুষ নেই। কাউকে ভালোবাসার সময় সে পাইনি।
যখন ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে অণির্বান এগিয়ে এলো, তখন তা বিয়েতে পরিণত হলো ৩ মাসেই। একদিন বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাবে লাবণী। আসবে অণির্বান । তাইতো সকাল সকাল উঠে লাবনী লুচি আর আলুর তরকারী করে নিল অণির্বানের জন্য। টিফিন বাটি হাতে কিছু সময় বসে থাকতেই অণির্বান এসে হাজির। এসেই বলে, ”আমাকে যদি বিশ্বাস করো, তবে আজকেই বিয়ে করতে হবে, নইতো আর হবে না।” অমনি লাবণীও রাজী হয়ে গেল, সন্ধ্যায় এক কালি মন্দিরে লাবণী আর অণির্বান এর বিয়ে হয়ে গেল।
পরের বছরের কথা। লাবণী সকাল করে অফিস থেকে ফিরে এলো, ভালোবাসা দিবস আজ। আজ ঘুরবে অণির্বানকে নিয়ে, অণির্বান এর সাথে। অনেক আশা করে কথাটা বলতেই অণির্বান বলে,” সারাদিন অফিসের পরে বাসায এলে, ছেলেটাকে একটু সময় দাও, এখন আর বাইরে যেয়ে কাজ নেই”। জোড় করতে পারলো না লাবণী। সত্যিই তো ছেলেটাকে তো সময় দেওয়া দরকার। সব আশা বুকে নিয়ে স্বপ্নীলকে সে বুকের ভিতরে নিয়ে বিছানায় ক্লান্ত শরীরটা নেতিয়ে দিল। আর আশা তুলে রাখলো, আগামী বছর সে যাবেই যাবে।

ফেব্রুয়ারী মাস পড়তেই বেতন পেয়ে লাবণী একটা লাল শাড়ী কিনে রাখলো। দেখালো না, বল্লোও না অণির্বানকে। ঠিক ১৪ তারিখে সারপ্রাইজ দেবে। ১২ তারিখে অফিসে বেরুবে, এমন সময় সিঁড়িতে পড়ে গেল লাবনী। পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা। অফিসে যাওয়া হলো না, বিছানায় শুয়ে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকলো, বিকালে অণির্বান অফিস থেকে এসে নিয়ে গেল ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার দিল বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষা্ । আর তার রিপোর্ট দেখে ডাক্তার যা বল্লেন তা হলো আর বছর দুই এক লাবণী চলতে পারবে, তারপরে সে বিছানায় পড়ে যাবে।এটা হলো তার নার্ভের সমস্যা। নার্ভগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে।

প্রথম শুনে অণির্বান এর এ কষ্ট বহন করতে খুব কষ্ট হয়েছে। পরে নিজে থেকে শক্তি সাহস যুগিয়েছে।অণির্বান ব অনেক কথা ভাবে, কেন লাবণীর এমন হলো? তবে কি ব অণির্বান এর মা যে অুভিশাপ দিলো, তা লেগে গেল।অণির্বান নিজ পছন্দে বিয়ে করেছিলো বলে মা আজও লাবণীকে মেনে নেয় নি। কিছুদিন আগে অণির্বান এর মা এসে মাসখানেক ছিল। একদিন সকালে ওরা ২জন অফিসে বের হবে, এমন সময় মা,” শোন অণির্বান, আমাকে অনিতার ওখানে রেখে আয়, এখানে ফ্রিজের বাসী তরকারী খেতে খেতে আমার বাত হয়ে গেল। বৌমা চাকুরী করে বলে রোজ ফ্রিজের তরকারী খেতে হয়, এমন চাকরী না করলে কি হয়? তুই কি যে আয় করিস, ছেলে বউ খাওয়াতে পারিস না?” লাবণী উত্তর করে, ” মা আপনার ছেলের আয়ে আমার খাওয়া পড়া চলে, আমি তো আমাদের জন্য চাকরী করি না, আমি চাকরী করি আমার স্বপ্নের জন্য।” “আমি তো চাকরী করিনি, অণির্বান , অনিতা কি মানুষ হয় নি? অনিতা লেখা পড়া শিখে এখন তো তোমার চেয়েও ভালো চাকরী করছে।” লাবণী অফিসে যাবার সময় আর তর্কে গেল না, চলে গেল অফিসে।

বিকালে অফিস হতে দুজন প্রায় একই সময়ে ফিরলো। ফিরে দেখে অনিতা বাসায়। অনিতা বলে, ”দাদা, আমি মাকে নিয়ে যাই, বৌদি অফিস করে রান্না বান্না করতে পারে না।” বিঅণির্বান বলে, “ তুই ও তো অফিস করিস, সমস্যা তো একই,” ,মা বলে উঠলো, তাতে কি, রোজই কি রান্না করতে হবে? একদিন রান্না করে ফ্রিজে রাখবি, ঐ গরম করে জামাই আর আমি খেয়ে নেব, রোজই যে টাটকা রাঁধতে হবে, এমন কি কথা আছে? বৌ কে দিয়ে চাকরীও করাবে, আবার বৌ এর হাতের রান্নাও খাবে, তাই কখনও হয়?” অণির্বান আর লাবণী দুজনেই বুঝতে পারে সমস্যাটা অন্য কোথাও। আর আপত্তি না করে মাকে অনিতার কাছে পাঠিয়ে দিল।
আজ ২০ বছর হয়ে গেল , লাবণী বিছানায়, হুইল চেয়ারটা তার সংগী। আস্তে আস্তে লাবণী সব জানতে পারলো, অণির্বান বহু চেষ্টা করেছে, বহু দেশে বিদেশে চিকিতসা করিয়েছে, লাভ হয় নি। শেষে লাবণীই আনন্দের সংগে এই জীবনকে মেনে নিয়েছে। এতে তার কোন দু:খ নেই। আর এই নিয়ে অণির্বান এরও কোন অভিযোগ নেই। ভালই আছে তারা। এই তো সে দিন লাবণী আব্দার করলো, “একাদশীর পরদিন পারন, আমিত তো করতে পারি না, কল্পনা বৌদি আর মনোরমা মাসিকে বলি, আমার বাসায় এসে পারন করতে।” অণির্বান বল্লো,” আমি তো তোমার কোন কাজে বাঁধা দেই নি। তুমি যদি ভালো থাকো, করো, বৌদি তার ছেলে মেয়ে নিয়ে পারন করে খেয়ে যাক, তাতে তো আমার কোন আপত্তি নেই, আমার কথা হলো , তোমার ভালো থাকা। আগে বলো, আমি বাজার করে দেবো।”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.