নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a house wife, I love to write something
হিমালয়ের আদুরে কন্যা নেপাল ।আমার স্বপ্ন আর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আজও চোখ বুঝলে রোপকারে চড়ে মনোকামনা মন্দিরে যাই। নগরকোটে সুর্যদোয় দেখি আর পোখরা থেকে দেখি হিমালয় আর কাঞ্চনসঝংঘার মায়াবী রূপ।
২০০৫ সালে ঢাকা থেকে উড়ে গেলাম হিমালয়ের দেশ নেপালে। হোটেল অন্নপুর্ণার লোকজন বিমান বন্দর থেকে আমাদের রিসিভ করে নিয়ে গেল হোটেল। সেদিন রাত হয়ে গেল তাই ফ্রেস হয়ে ডিনার সেরে ঘুম দিলাম।
খুব ভোরে জানালা দিয়ে দেখলাম কাঠমন্ডুকে।বাথরুমে টুনটুন স্নান করতে যেয়ে বাথটবে সোনার আংটি হারিয়ে ফেল্লো। আমি দেখতে থাকলাম শরতের মেঘমুক্ত পাহাড়ী মেয়ে নেপালকে।
ব্রেকপাস্ট সেরে আমরা চলে গেলাম পশুপতি মন্দিরে। সঙগে ছিল আমার সুদেব দাদার মেয় নিকিতা। ওরা সকলে ইন্ডিয়ান হিনাবে ঢুকলো। ধরা পড়লাম আমি। আমি হিন্দি বলতে পারিনা। বাংলা বলায় ওরা বুঝে নিল আমি বাংলাদেশী। বেকায়দা বুঝতে পেরে টুনটুন এগিয়ে এলো। হিন্দিতে বল্লো,” আমার মা বাংলাদেশী কিন্তু বাবা ইন্ডিয়ান তাই মা হিন্দি জানেনা। টুন টুন আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেল। আর দূরে দাড়িয়ে মজা দেখলো অশোক।
মন্দির দর্শণ শ্মশানঘাট দর্শন শেষে এবং কিছু ঠাকুর দেবতার মূর্তি কিনে ফিরে এসে চলে গেলাম নগরকোটে।
যেতে যেতে আমার দার্জিলিং এর কথা মনে হলো, অনেক সাদৃশ্য খুঁজে পেলাম। দুপাশে পাহাড় দাঁড়িয়ে যেন হাত নাড়াচ্ছে। আমারা চলেছি নিরিবিলি রাস্তা ধরে। রাতে হোটেলে খেলাম আলু পরাটা। আর সকালের সুর্যদয় দেখার জন্য রাত ভোর অপেক্ষায় থাকলাম।
ভোর না হতেই স্পটে চলে গেলাম। সুর্য়দয় দেখার জন্য ছোট ছোট মাচা করা। তার একটায় উঠে দেখলাম রক্তিম আলোর ছটা ছড়িয়ে সুর্য় উঠা। তাকে স্বাগত জানিয়ে আবার চলে এলাম কাঠমন্ডু। রাত পার করে সকালে গেলাম এক মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, হাইকোর্ট ইস্কন মন্দিরে।
দুপুরে রওনা হলাম হ্রদকন্যা পোখরা শহরে। সংগী হলো সুদেব দাদা, রীতা বৌদি মেয়ে নিকিতা আর আত্মীয় রাজা।
পথে রোপকার করে যেতে হবে মনোকামনা মন্দিরে। ভয় পেলাম। কিন্তু সকলে উঠে গেল রোপকারে। আমি ভাবলাম, মরে গেল তো গেলাম। কিন্তু সবাই বেচে থেকে ফিরে এসে গল্প করবে তখন কেবল আপসোস হবে। এইসব ভেবে চেপে বসলাম রোপকারে। কতগুললো পাহাড় পার হয়ে এলাম মনোকামনা মন্দিরে। আস্ত নাড়কেল কিনে পুজা দিলাম।
ফিরে এসে আবার পোখরা যাত্রা।সারা পথ সুদেব দাদা আর আমি বাংলা পুরানো সিনেমার গান গাইতে গাইতে পথ চলতে লাগলাম। এখানে উল্লেখ্য সুদেব দাদা ঢাকা মুন্সীগজ্ঞের ছেলে।
রাত ৮টার দিকে পোখরা গেলাম। লেকের ধারে রুম নিয়ে রাতে ঘুমালাম। সকালে দেখলাম প্রকুতির অপার সেন্দৈর্য। লেকের পাড়ে বসে দেখতে লাগলাম হিমালয়ের মাথায় জমে থাকা বরফ এর খেলা। সুর্যের আলো বরফের উপর পড়ে আর বরফ গলতে তাকে বাস্প ছড়িয়ে এক এক সময় এক এক রং এর খেলা। কথিত আছে এ লেকটি বলে এক রাতে গড়ে উঠেছিল।
সন্ধ্যায় গেলাম ফোক গানের আসর দেখতে। নেপালী থালি খেয়ে ডিনার সারা হলো্। অনেক রাত অবধি বসে থাকলাম রাস্তার উপর। কেউ কোন বিরক্ত করলো না।
পরদিন সকালে আবার কঠমন্ডু। সারা পথ সাথী নেপালের একমাহ্র নদী। দুপুরে লাঞ্চ হলো পাথর ঘেরা নদীর ধারে এক রেস্টুরেন্টে। সময়টা ছিল দুর্গা পুজার সময়। তাই পথে দেখতে পেলাম আমাদের দেশের মতো সকলে গাদাগাদি করে যে যেমনে পারেছে চলছে বাড়ী্ মা বাবাকে দশহরার প্রণাম করতে। দেখতে পেলাম যেন আর একটা বাংলাদেশকে।
রাতে এসে গেলাম ক্যাসিনো তে। বিচিত্র অভিজ্ঞতায় রাত পার করে ভোরে ফিরে এলাম সুদেব দাদার বাসায়। কি নিরাপদ। রাত ৩টায় হেটে নির্ভয়ে চলে এলাম দাদার বাসায়। পরদিন সকাল করে সুনধারা দেখে শপিং সেরে ঢাকায় রওনা হলাম। ঢাকায় এসে টুনটুন আর মিষ্টি কেঁদে বুক ভাসালো, তাদেরকে আবার নেপাল নিয়ে যেতে হবে।
সেই থেকে নেপালের সংগে আর নেপারের মানুষের সংগে আমার প্রেম। আজ প্রেমিকদের ব্যথায় আমি ব্যথিত। বেদনার্ত।
©somewhere in net ltd.