নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a house wife, I love to write something
ইনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। বীর মুক্তিযোদ্ধা।১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন একজন অখন্ড যৌবনদীপ্ত দেশপ্রেমিক, বাংলা মায়ের অকুতোভয় নির্ভীক একজন সন্তান। যিনি দেশ মাতার জন্য জীবনকে বাজী রেখে যুদ্ধ করেছেন।তিনি তখন বেঁচে গেছেন। আজ সরকার তাকে ভাতা প্রদান করে সম্মানিত করেছেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি জীবিত থেকে এক মানবেতর জীবন পার করছেন।
ইনি বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী বিনয় কৃষ্ণ বিশ্বাস। নিবাস হলো মাগুরা জেলার শালিখা থানার হাটবারীয়া গ্রাম।১৯৭১ এর উত্তাল মার্চে তিনি নীলমনি গজ্ঞে(বর্তমান চুয়াডাংগা জেলার অন্তর্গত) পিটিআইতে কর্মরত ছিলেন।
৭ই মার্চের বঙ্গ বন্ধুর ভাষণের পর হতেই বোঝা যাচ্ছিল কিছু একটা হতে যাচ্ছে। স্কুল কলেজ সব বন্ধ হয়ে গেল।বিনয়বাবু তখন বাড়ীতে চলে এলেন, মায়ের কাছ খেকে বিদায় নিতে।মাতা একমাত্র পুত্র সন্তানকে ছেড়ে দিতে চান না। কিন্তু যুদ্ধের ডামাডোল বিনয় বাবুকে উন্মত্ত করে তোলে। দেশ মাতার ডাকে সেদিন নিজ বিধবা মাতা. স্ত্রী, এক বিবহিতা কন্যা ও ৩ পুত্রকে (মধ্যম পুত্র অন্ধ এবং মানসিক প্রতীবন্ধী) রেখে তিনি মাকে প্রণাম করে গৃহ ত্যাগ করেন। বলে যান, ”তোমরা পারলে কোথাও চলে যেও, আমি চললাম।” একবারে তিনি ওপারে যেয়ে (ভারতে)মাইজদী ক্যাম্পে নাম লেখান এক জন বীর মুক্তি যোদ্ধা হিসাবে ।যার মুক্তি বারতা নং ০৪০৮০৪০০৪৬।
দীর্ঘ ৯ মাস পরিবার পরিজনের কথা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দেশ মাতাকে মুক্ত করে নিজ বাড়ীতে ফিরে আসেন।
পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে তিনি একজন প্রথম শ্রেনীর সরকারী কর্মকর্তা হিসাবে চাকরী থেকে অবসর গ্রহন করেন।
ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি খুব সৌখিন এবং আয়েসী ছিলেন। চাকরী থেকে অবসর নিয়ে তিনি লেখা লেখি করে মাগুরা শহরে দোতলা বাড়ীতে তার্ শেষ জীবন কাটাবেন বলে তিনি নিজ হাতে মাগুরা জজকোর্ট পাড়াতে দোতালা বাড়ী নির্মাণ করেন। যার প্রতিটি ইটে তার হাতের আর ভালোবাসার ছোঁয়া আছে।
তিনি এরই মধ্যে প্রায় ডজন খানিক গ্রন্থ রচনা করে প্রকাশ করেন যা সুধী সমাজে পঠিত এবং সমাদৃত।
এই সময়ই তিনি পারিবারিক পলিটিক্সের স্বীকার হন। যার নেপথ্য নায়ক তার জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং কনিষ্ঠা কন্যা। তাদের নীল নকশা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে তারা ধীর গতিতে এগুতে থাকে।
এই পুত্রও এবং কন্যা তখন থেকেই ষড়যস্ত্রে লিপ্ত হয়ে অন্য ছেলে মেয়ে থেকে তাকে এবং তার স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তাদেরকে মানসিক ভাবে দুর্বল করে দেয় এই বলে যে, তাদের বৃদ্ধ বয়সে শুধুমাত্র তারাই তাদের দেখবে । অন্য ছেলেমেয়ে দূরে থাকে তাদের দেখবে না। বৃদ্ধ বয়সে তিনি এবং তার স্ত্রী এই চতুরতায় বিশ্বাস করে তাদের হাতের পুতুল বনে যান।
এরই মধ্যে বিনয় বাবুকে অথর্ব করে দেবার জন্য তারা ভাই বোনে যুক্তি করে তাদের অশিক্ষিত, নীরিহ মাতা কে সহযোগী করে ঐ অবলা সরল মায়ের মাধ্যমে অনিয়্ন্ত্রিত ঘুমের বড়ি সেবন করাতে থাকে।
এক সময় তার স্মৃতি শক্তি লোপ পায়। চিকিতসকের ভাষাতে তিনি এ্যালজাইমার্স রোগী হয়ে যান।
মাঝে ২০১৪ সালে তার স্ত্রীর ব্রেষ্ট ক্যান্সার ধরা পড়লে উন্নত চিকিতসার জন্য তিনি এবং তার স্ত্রী ঢাকাতে মেজ ছেলের কাছে যায় এবং চিকিতসা খরচ তার পেনসনের জমা টাকায় করতে থাকেন।এর পূর্বে তার স্ত্রীর চোখে ছানি পড়ে। তখন তা চিকিতসা না করে এখন বলে ব্রেস্ট অপারেশন করায় তার চোভ অন্ধ হয়ে গেছে।
এসময় তার জ্যেষ্ঠ পুত্রও এবং কনিষ্ঠা কন্যা দেখলো এতে করে বিনয় বাবু চাকরী হতে অবসর নেবার সময় এককালীন যে টাকা পান তা হয়তো শেষ হয়ে যাবে। তা হলে তাদের আর লুটে খওয়া হবে না।(যদিও তারা এরই মধ্যে এই অর্থের সিংহভাগ বিভিন্ন কৌশলে তছরূপ করেছে) । তাই তারা সেখান হতে কৌশলে তাদেরকে বের করে আনে এবং বিনা চিকিতসায় তাকে রেখে দেয়। ইতিমধ্যে বিনয় বাবুর স্ত্রী একবার স্ট্রোক করেছেন।
বাড়ীতে নিয়ে এসে তাদেরকে ভয় দেখিয়ে এবং ছলে বলে কৌশলে জ্যেষ্ঠ পুত্র বিনয় বাবুর নামে তার যে জমি এবং অর্থ্ সম্পদ ছিল সব নিজের নামে করে নেয়।
এখন বিনয় বাবু এবং তার এক অন্ধ, পংগু স্ত্রীর জায়গা হয়ে হাটবাড়ীয়া গ্রামের বাড়ীতে বারন্দায়। বর্তমানে শীত পড়ায় একটি ঘর তাদের বরাদ্দ করা হয়েছে ।যে বিছনায় তারা থাকেন সেখানে আছে কেবল একটি ছেড়া কাঁথা।
খাদ্য হিসাবে কুকুরের মতো ৩ বেলা থালায় করে এক থালাতে ভাত দিয়ে যায়। তাই ২ জনে ভাগ করে খায়। এই মুক্তি যোদ্ধা এখন খালি গায়ে বাই রে গেলেও তার গায়ে একটা জামা জোটে না।
একটু চা এর নেশায় তাকে যেতে হয় কয়েক মাইল দূরে স্থানীয় বাজারে এবং গ্রামের লোকজন তাকে দয়া করে এক কাপ চা খাওয়ালে তার ভাগ্যে সেদিন চা জোটে।
তার স্ত্রী নিজে কিছু করতে পারে না। তাকে স্নান করানো, কাপড় পড়ানো সব কিছুই এই স্মৃতি লোপ পাওয়া বৃদ্ধ কে করতে হয়। তাদের কাছ থেকে মোবাইল সীজ করে নেওয়া হয়েছে, যাতে তারা কোন আত্মীয় স্বজনের সংগে সম্পর্ক রাখতে না পারে।
কথায় কথায় তার জেষ্ঠ পুত্র ভয় দেখায় যে, এই ভাতা (মুক্তি যোদ্ধা ভাতা ) বন্ধ হয়ে গেলে আপনাদের খাওয়া এবং ঔষধ সব বন্ধ হয়ে যাবে। এই ভাবে মানসিক নির্যাতন চলছে তাদের উপর।
অথচ বিনয় বাবুর মাসিক আয় এখন ভাতা সহ প্রায়(মাগুরার বাড়ী ভাড়া সহ)২৫০০০ টাকা। এই ভাতার টাকা বিনয় বাবুকে দিয়ে জোর করে সই করিয়ে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র উত্তোলন করে এবং ইচ্ছে মতো তা ব্যয় করে যা বিনয় বাবু হাতে পাওয়া তো দূরে থাক চোখেও দেখতে পান না।
তার বিস্মিৃত স্মৃতিকে পুজি করে বাসা ভাড়ার টাকাটা সম্পুণ মেরে দিয়ে বলা হয় সরকার ভাতা বন্ধ করলে আপনাদের না খেয়ে মরতে হবে।
বিনয় বাবু স্মৃতি থেকে যেমন হারিয়ে ফেলেছেন তার বিশাল জমি জায়গার কথা তেমনি স্মৃতি শক্তি লোপ হয়ে গেলে সব কিছু তাকে দিয়ে সই করিয়ে জমি জায়গা সর্বস্ব বড় ছেলে গ্রাস করেছে। আর এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেছে তার কনিষ্ঠা কন্যা এবং তার স্বামী। বিনিময়ে তারা কিছু দালালি পেয়েছে।
স্মৃতি শক্তি লোপ বিনয় বাবু তার পংগু, অন্ধ অসুস্থ স্ত্রী কে নিয়ে(যাকে তিনি সময়ে সময়ে মা বলে ফেলেন) বিনা চিকিতসায়, অনাহারে অর্ধাহারে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন আর ২ জনে মৃত্যুর দিন গুনছেন কবে তারা মরে যেয়ে বেঁচে যাবে।
স্মৃতি হীন এই বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা প্রায় বলেন, “ আমি কি মুক্তি যোদ্ধা ছিলাম?”
যদি কেউ মনে করিয়ে দেয়, ”আপনি তো মুক্তি যোদ্ধা ছিলেন,” অমনি বলেন,”হ্যা, বীর মুক্তি যোদ্ধা।”
২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৭
দেবজ্যোতিকাজল বলেছেন: কি আর করবে । সবাই সব কিছু পায় না
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৬
প্রামানিক বলেছেন: স্মৃতি হীন এই বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা প্রায় বলেন, “ আমি কি মুক্তি যোদ্ধা ছিলাম?”
এই প্রশ্ন এখন অনেক মুক্তিযোদ্ধাই করে থাকেন। চমৎকার একটি বিষয় তুলে ধরেছেন।