নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a house wife, I love to write something
আমি তখন এ বাড়ী ও বাড়ী ঘুরে ঘুরে ছেলে মেয়ে পড়িয়ে বেড়াই। কলেজে পড়ি আর মা বোনকে কে নিয়ে সংসারের ব্যয় বহন করি।
এরই সুবাদে ওই সময়ে আমি চুয়াডাংগা জেলা superintendent of vested property এর বাসাতে তার ৩ ছেলেমেয়ে রোজী, রুমি আর সেলিমকে পড়াতে যেতাম।
আমার শিডিউল ছিল টাইট।পড়ানোর পর কলেজ তারপর নিজের পড়া। এই সব নিয়ে আমার অবস্থা ছিল অনেকটা ছুটা কাজের দিদিদের মতো।অনেকের মন্তর্যে ছিল, আমাকে নিয়ে “মুরেগীর পা দুটো এক জায়ংগায় হয় কিন্তু আমার পা হয় না।”
যাই হোক আমি রোজীর বাবাকে কাকা আর ওর মাকে কাকিমা বলতাম। একদিন সকালে ওদের পড়িয়ে আমি বের হয়ে যাবো, এতমন সময় কাকাবাবু আমাকে ডাকলেন, বসতে বললেন। উনি বললেন”আগামী কাল থেকে তোমার একজন নতুন ছাত্রী হচ্ছে।”আমি ভেবে আকুল, এ বাসায় তো আর কেউ পড়বার মতো নেই। জিজ্ঞাসা করতে উনি বললেন, সেটা তোমার কাকীমার কাছে জেনে নিও।
পরদিন সকালে যথাসময়ে গেলাম। একটু পরেই দেখি স্বয়ং কাকমিা বই আর কলম নিয়ে হাজির।আমার আর বুঝতে বাকী রইলো না, আমার নতুন ছাত্রীটি কে?
জানতে চাইলাম, ”আপনি কতহদূর পড়েছেন?” দৃঢতার সাথে উত্তর, “আমি ফা্ইভ পাশ, এস এস সি দেবো “
শুরু করবো কোথা থেকে? আমি তো ভেবে না পাই।
আমি যখন দিশেহারা তখন একটু আলো দেখলাম, এই ভেবে যে তিনি তো বীজ গণিত চেনেন না। তাই ৬ষ্ঠ শ্রেণীর বই থেকে বীজগণিত করাতে লাগলাম। ৯ম শ্রেণীর মানবিক বিভাগের বই থেকে সম্ভাব্য পড়া বুঝিয়ে পড়তে দিয়ে যেতাম। আমি মুগ্ধ হলাম তার অধ্যাবসায় আর নিষ্ঠা দেখে।
জানতে পারলাম মানিকগজ্ঞ ঘিওর উপজেলাতে তাদের বাড়ী।বাবা প্রাইমারি শিক্ষক। পরিবেশের অভাবে ৫ম শ্রণী পাশ করিয়ে তাকে বিয়ে দেন। কিন্তু শিক্ষার প্রতি অনুরাগ তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়।
এক দিনের কথা।লিখতে যেয়ে কলম ভাংবার উপক্রম। অংকও যা বোঝাই কিছুই বুঝতে পারে না। শেষে রেগে যেয়ে আমি বলি, “আপনি রাঁধবেন ভাত, কে আপনাকে পড়তে বলেছে?” যে দিন থেকে পড়তে এসেছে সেদিন থেকে আমি তার শিক্ষক। তার ছিল অকুন্ঠ ভক্তি আর শ্রদ্ধা।
আর একটা বিষয় আমাকে মোহিত করেছে। সেটা হলো কাকা বাবুর ত্যাগ। তার পড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওযা। রোজীর ছোট ভাই দুটি তখন অনেক ছোট্ । আমি গেলেই তিনি ছোট ছেলে দুটোকে নিয়ে বাইরে চলে যেতেন। নির্বিঘ্ন পরিবেশ গড়ে দিতেন।
যা হোক রেোজীর মা প্রাইভেট ছাত্রী হিসবে ৩য় শ্রেণীতে এস, এস সি পাশ করলো্ ভর্তি হলো নিয়মিত ছাত্রী হিসেবে চুয়াডাংগা মহিলা কলেজে।
এরপর আমি উচ্চ শিক্ষার্থে ঢাকা চলে এলাম। তারাও চাকুরীর সুবাদে বদলি হয়ে গেল্।
একদিন সম্ভবত ১৯৯২/৯৪ হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্যার্ড বিল্ডিং এ পিছন দিক থেকে ডেকে রোজী বলে,, “দিদি মা বি এ পাশ করে ফেলেছে।”
একজন মানুষের নিষ্ঠা তাকে কতদূর নিয়ে যায় সেদিন আমি বুঝতে পারলাম।
অনেক দিন পর ফে বু এর কল্যানে রুমির সংগে আলাপ। জানতে পাররলাম ,কাকা বাবু চলে গেছেন্। ওর মা আমার সেই ছাত্রীটি এখন রুমির কাছে থাকেন। ছেলে মেয়েরা সকলেই প্রতিষ্ঠিত। এবং মেয়ে জামাই পুত্র বধু শাশুড়ী সকলেই গ্রাজুয়েট।
©somewhere in net ltd.