নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইং ১৯৬২ সনের ১১ই সেপ্টেম্বর মুর্শিদাবাদ জেলার মরাদিঘী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করি। মাধ্যমিক পাশ করে সংসার জীবনে জড়িয়ে পড়ি। কর্মরত ব্যস্ততম জীবনের অবসর সময়ে ২০১৪ সালের শেষের দিকে মানব সমাজ ও প্রকৃতির হাত ধিরে লিখতে থাকি গল্প ও কবিতা।

আব্দুল মান্নান মল্লিক

abdul mannan mollick

আব্দুল মান্নান মল্লিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৬

মা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

তখন আমার বয়স দেড় মাস। খুব বড় না হলেও খুব ছোটো ছিলনা সেই বীলটি। ওপারে জল ছেড়ে বালিয়াড়ির উপর কাশবন, আর এপারে পাড়ের উপর বিভিন্ন জাতের বড়বড় গাছ, আর নিচে ছোট ছোট আগাছায় ভরা। একটি বড়সড় পিটুলি গাছে ছিল আমাদের বাসা। ওটাই আমার জন্মস্থান। শুধু মা আর আমি। গায়ের রঙ কালো বলে অন্যান্য পাখিরা আমাদের সঙ্গে মিশতে চায়না।
মাঝভর শীতকাল। যখন আমি ডিম ফুটে বেরিয়ে আসি পৃথিবীর আলোতে, তখনও আমার কাছে গোটা পৃথিবীটা অন্ধকার। দুই-তিনদিনের মধ্যেই আমার চক্ষু আস্তে আস্তে খুলে যায়। সেদিনই আমার প্রথম সূর্যের আলো দেখা। সেদিনের কথা আজও খুব মনে পড়ে। মা কোথায় থেকে মাছ ধরে এনে অর্ধ-পরিপাকে মুখ উগড়ে আমাকে খাওয়াত।
একদিন মা আমার খাবারের সন্ধানে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে। অল্প কিছুক্ষণ পর পাড়ার কতগুলো চেঙড়া ছোঁড়ারা গাছের গোঁড়ায় দাঁড়িয়ে বলাবলি করছে, মনে হয় বাসাটায় বাচ্চা আছে। একজন বলল এখনি গাছে উঠে পেড়ে নিয়ে আসি। বলতে বলতেই চেঙড়াটা গাছে উঠে পড়ে। আমাদের বাসাটা ছিল একটি সরু ডালে। ভেঙে যাওয়ার ভয়ে চেঙড়া ছোঁড়া আমার কাছে পৌঁছাতে না পেরে ডালটা জোর নড়াতে থাকে। আমি পায়ের নখ দিয়ে বাসার খড়কুটো আঁকড়ে ধরে থাকি, আবার কোনোকোনো সময় নিরুপায় হয়ে ঝুলে পড়ি। অবশেষে ধরে রাখার ক্ষমতা আর ধরে রাখতে না পেরে বাসা থাকে বিচ্ছেদ হয়ে জলের উপর পড়ে গেলাম। গাছের গোঁড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা ছোড়ারা আমাকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে লাগলো। আমি তখন প্রাণের ভয়ে জলের উপর ডানা ঝাপটিয়ে ঝাপটিয়ে ওপারে বালিয়াড়িতে উঠে আসি। এমনিতে শীতকাল তার উপর ঠাণ্ডা জলে এতক্ষণ সাঁতার কেটেছি। মনে হচ্ছে সারা শরীর শীতে জমে গেছে। ক্লান্তও হয়েছি বেশ। মৃদু তপ্ত বালি আর মৃদু সূর্যের তাপ গায়ে লাগায় বেশ আরাম বোধ করছি। ধীরেধীরে ক্লান্ত সেরে উঠতেই ওপারে তাকিয়ে দেখি কখনো ফেলে আসা বাসাতে কখনো গাছের মাথায় মাথায়, মা আমাকে হন্যি হয়ে খুজে বেড়াচ্ছে। আমি মাকে সাড়া দিতে চিৎকার করছি, সেই চিৎকার এপার হতে ওপারে মায়ের কাছে কিছুতেই পৌঁছয়না।
এপার থেকে আমি মাকে দেখতে পাচ্ছি, পাগলের মতো খুজে বেড়াচ্ছে। ক্লান্ত হয়ে মা কদম গাছের মাথায় বসে চারিদিক চোখ মেলে খুজতে থাকে।
হঠাৎ চোখ পড়ে গেল আমার দিকে। মা পাগলিনী হয়ে ছুটে এসে বসল আমার কাছে। তখনো মায়ের চোখে জল ছলছল করছে। গলায় গলা পেঁচিয়ে, ঠোটে ঠোট মিলিয়ে কত আদর করল মা আমাকে। সেদিন থেকে বুঝে গেছি সন্তানের প্রতি মায়ের কত মমতা। এরপর থেকে বাসা ছাড়াই মা আমাকে খাইয়ে দাইয়ে বড় করে তুলেছে। বিপদ সম্ভাবনায় মা আমাকে নিয়ে লুকিয়ে পড়তো কাশবনের ভিতর। বীলের জলে ডুবিয়ে ডুবিয়ে মাঝ ধরে খাওয়াত, আমাকে জলে নামতে দিতো না।
কাশবনের ভিতরে মা আর আমি নিরাপদে থাকার মতো জায়গা করেছিলাম। একদিন রাতের বেলায় এক বনবিড়াল হানা দিয়ে মাকে ধরে নিয়ে যায়। কান পেতে শুনি পাশে কোথায় ছটফট শব্দ। বুঝতে পারলাম মা বনবিড়ালের হাত থেকে বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। একসময় ছটফট শব্দ বন্ধ হয়ে গেল। সারারাত মায়ের চিন্তায় কেটে গেল। ভোরে উঠে খুঁজাখুঁজি করে পাশে এক জায়গায় খুজে পেলাম বনবিড়ালে খাওয়া মায়ের অবশিষ্ট অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৩

কানিজ রিনা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ, ভীষন ভাল লাগা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.