নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
"উফ্! আবারও তোমার এই হিন্দি সিরিয়ালের যন্ত্রণা! এই অত্যাচারেতো দেখছি বাড়ি ছেড়ে পালাতে হবে!"
"তা তোমাকে বাঁধা দিচ্ছে কে? পালিয়ে যাও! তুমি পালালে আমি অন্তত শান্তি মত টিভি দেখতে পারবো।"
"সিরিয়াসলি আমাকে একটা কথা বলো তো। কি মজাটা পাও এইসব ছাইপাশ দেখে? শ্বাশুড়ি বউয়ে লড়াই, ননদের কূটনামি, আর নায়িকার গ্যালনে গ্যালনে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কি দেখায় এতে? সবকটাতেই একই গল্প। একটা দেখে ফেললেইতো সবগুলোর ঘটনা জানা হয়ে যায়। তাহলে কেন শুধু শুধু এই যন্ত্রণা?"
"আর তোমারই বা তাহলে ঘন্টায় ঘন্টায় খবর দেখার মধ্যে নতুনত্বের কি আছে? সকাল ন'টায় যে খবর প্রচার করে, সেটাই রাত এগারোটা পর্যন্ত একই থাকে। আমি তো বদলাতে দেখি না।"
"তোমার ফালতু সিরিয়াল আর দেশ বিদেশের সংবাদ এক হলো?"
"চিৎকার করবে না। আমি তোমার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলছি, তুমিও ভদ্রতা বজায় রাখবে।"
"তোমার কথা শুনে মাথা ঠিক রাখা যায় নাকি যে গলা নামিয়ে কথা বলবো? সংবাদকে তুমি তুলনা করছো যতসব রাবিশ সিরিয়ালের সাথে? যেখানে কেউ একজন মরলে তিন চার মাস পর আবার বেঁচে ফিরে আসে? এইসব কি গাঁজা খেয়ে লিখে নাকি? তাদের বলো শস্তা গাঁজা বাদ দিয়ে একটু ভাল কোয়ালিটিরটা যেন খায়। তাতে যদি লেখায় একটু লজিক আসে!"
"চুপ থাকো। তুমি লজিকের কি বোঝ?"
"এই যা! আমি লজিক বুঝি না? আর তুমি বিরাট 'লজিকবতি' এসে গেছো! অবশ্য তোমারই বা কি দোষ! মেয়েদের বুদ্ধি বলে কিছু থাকলেই না তোমারও থাকবে।"
"খবারদার! মুখ সামলে কথা বলো। আর এইরকম বিশ্রি ভাবে হাসবে না।"
"আমি বুঝিনা। এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি মাস্টার্স ডিগ্রী কি করে পেলে? পরীক্ষায় নকল টকল করেছিলে নাকি?"
"ব্যস! যথেষ্ট হয়েছে! তোমার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে আর কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। আমি আর তোমার সাথে থাকবো না।"
"থাকবো না থাকবো না করে করে তো গত চারটা বছর পার করে দিলে।"
"এইবারই শেষ! আমি যদি তোমার সাথে থাকি, তাহলে আমি মানুষের ঘরে জন্মাই নি।"
"তা তো তুমি আসলেই জন্মাওনি। তোমার জন্ম হয়েছে পরীর রাজ্যে! দেখি তো। আমার পরী বানু একটু হাসোতো!"
"ফাজলামি ছাড়ো! তুমি সিনেমার জোকার না যে সবসময়ে ফাজলামি করে বেড়াবে!"
"আর তুমিও তো নানা পাটেকর না যে সবসময়েই ভ্রু কুচকে থাকবে! অবশ্য কুচকানো ভ্রুতেও তোমাকে সেরকমই লাগছে। যাকে বাংলায় বলে আবেদনময়ী, আর ইংলিশে সেক্সী!"
"চুপ থাকো! অসভ্যের মত কথাবার্তা বন্ধ করবে?"
"আহা! কে বলে ঈশ্বর নেই? একেবারে সঠিক সময়েই কারেন্টটা গেল! জয় লোডশেডিং! কই? একটু কাছে আসো তো!"
"উফ্! ছাড়োতো! অন্ধকারে হাত ধরে টানাটানি করছো! দাঁড়াও চার্জ লাইট টা আগে জ্বেলে নেই!"
"আলোতেই করতে চাও? বেশ তো!"
"আবারও নোংরা কথা! আচ্ছা। তোমরা পুরুষেরা কি এসব ছাড়া আর কিছু চিন্তা করতে পারো না?"
"এর বাইরে চিন্তা করার মত কিছু আছে নাকি? বাহ! আধো আলো, আধো আঁধারে তোমাকে তো দারুণ লাগছে! তোমাকে এখন দেখলে কে বলবে যে এই মেয়ে স্বামীর সাথে সারাদিন খিটমিট করে?"
"আমি সারাদিন খিটমিট করি? আর আপনি সাধু পুরুষ?"
"আমি কিন্তু সারাদিন বলেছি। সারারাত কি করো, সেটা কিন্তু বলিনি। হাহাহা। আহা! চললে কোথায়?"
"আমার আরও অনেক কাজ আছে। রান্না না করলে সারারাত উপোস দিতে হবে।"
"যেয়ো না, যেয়ো না ফিরে-
দাঁড়াও বারেক, দাঁড়াও হৃদয় আসনে!!"
"হয়েছে। বাঙ্গালি পুরুষদের এই এক বদভ্যাস। নিজেরা কিছু পারে না, রোমান্স করতে হলে এখনও রবীন্দ্রনাথের কাছে হাত পাতে।"
"আর বাঙ্গালি রমনীরা যেন রোমান্স সাগরে ডুবোজাহাজ? উপরওয়ালা লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে রোমান্স করার কি সুন্দর ব্যবস্থা করে দিল, উনি এসেছেন অন্ধকারে চাল ধুতে!"
"বাবু সাহেবের বুঝি এতে খুব মন খারাপ হয়েছে?"
"তাতো হবেই! আমার ভাগ্যেই পৃথিবীর সবচেয়ে আন রোমান্টিক বউটা পড়লো!"
"আহারে! এসো। চুমু দিলে রাগ কমবে?"
"কমতে পারে। চেষ্টা করে দেখতে পারো। প্রথম প্রথম নাও কমতে পারে, তবে তুমি হতাস হয়ো না, চেষ্টা চালিয়ে যেও। সবুরে মেওয়া ফলে। আমারও রাগ পড়বে।"
"এইভাবে তাকিয়ো নাতো। আমার বুঝি লজ্জা করে না?"
"এই যাহ! কারেন্ট দেখি ঠিক সময় মতই এসেছে! এখনই অস্ট্রেলিয়া আর সাউথ আফ্রিকার মধ্যে টি টোয়েন্টি শুরু হয়ে যাবে! আজকের ম্যাচটাও ক্লাসিক হবার চান্স আছে! ডার্লিং তুমি আরও কিছুক্ষণ চাল ধোও। আমি চলি!"
"এই না তুমি কত রোমান্টিক মুডে ছিলে? আমাকে আনরোমান্টিক বলে কত গালি দিলে! এখন তোমার রোমান্স কই?"
"রোমান্সকে আপাতত বাইরে পাঠিয়েছি। ঘন্টা দুয়েক পরেই সে দ্বিগুণ উৎসাহে ফেরত আসবে।"
"কি যে মজা পাও এই খেলায়। একটা বলকেই তো পিটাচ্ছে ব্যাট দিয়ে। এর বেশি তো কিছু না।"
"হিন্দি সিরিয়াল ভক্তের মুখে এরচেয়ে ভাল কি কথাই বা আশা করতে পারি। যত্তসব!"
"দেখো! তুমি কথায় কথায় আমার সিরিয়ালগুলি নিয়ে আজে বাজে কথা বলবে না। আমি এখন তোমার খেলা দেখায় বাধা দিচ্ছি না, তুমিও আমাকে রাতের শো দেখতে বাঁধা দিবে না।"
"ঐসব ফালতু সিরিয়াল দেখে দেখেই তুমি এমন ঝগড়াটে হয়ে গেছো। ওখানেতো ঝগড়াঝাটি ছাড়া আর কিছু দেখায়ও না।"
"তুমিই বা কি মধুর মিলনের দৃশ্য দেখছো? এ বল ছুড়ে মারছে, ও ব্যাট দিয়ে বলকে পেটাচ্ছে, আর ওটা নিয়েই সবার লাফালাফি!"
"উইল ইউ প্লিজ শাট আপ ইউ স্টুপিড মোরণ?"
"ইংলিশে গালাগালি করছো? ভেবেছো আমি ইংলিশ বুঝিনা? জেনে নিও, আমিও ম্যানেজম্যান্টে মাস্টার্স করেছি। শুধু তোমার সাথে বিয়ে হয়েছে বলেই আজ আমার জীবনটা একদম ধ্বংস হয়ে গেল!"
"আমাকে কি প্লিজ শান্তিমত খেলাটা দেখতে দিবে?"
"দেখো। খেলাই দেখো। আমি আজকেই মায়ের বাড়ি চলে যাবো। তোমার যতখুশি খেলা দেখো তখন।"
"কথায় কথায় মায়ের বাড়ি যাওয়া যাওয়ি কি? নিজের বাড়ি ছেড়ে কেউ যায় নাকি?"
"এটা আমার নিজের বাড়ি নাকি? এটাতো তোমার বাড়ি। এইজন্যই তো এখানে আমাকে ঝিঁ চাকরের মত থাকতে হয়।"
"আমি নিজেই তো তোমার। 'আমি যে কে তোমার, তুমি তা বুঝে নাও!'"
"হয়েছে। এত বেসুরো গলায় গাইতে হবে না।"
"আলবাৎ গাইবো। 'এসেছি গো এসেছি, মন দিতে এসেছি! যারে ভাল বেসেছি!'"
"হয়েছে। তুমি খেলাই দেখো।"
"তোমার জন্য একটা খেলা কেন, হাজারও খেলা কুরবান করে দিতে পারি জান! এই নাও রিমোট, যা খুশি দেখো তুমি! তুমিও কি মনে রাখবে আমি নিজে খেলা না দেখে তোমার হাতে রিমোট তুলে দিয়েছি।"
"সত্যিই তুমি দেখবে না?"
"রিমোট তোমার হাতে। তারপরও বিশ্বাস হচ্ছে না?"
"না! তুমি এত ভাল হয়ে গেলে কি করে?"
"ভাল কাজ করলে পুরষ্কার দিবে না?"
"কি পুরষ্কার চাও? খরবদার! এই হাসি হাসবে না! অসভ্য!"
"হাহাহা! আচ্ছা তোমাকে একটা সত্যি কথাই বলি। রিমোট কেন তোমার হাতে দিয়েছি যানো?"
"কেন?"
"কারন বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ আছে। হাহাহা!"
"বদমায়েশ!"
"আহা! জয় লোডশেডিং! আচ্ছা আজ একদম ঠিক ঠিক সময় মতই কি করে কারেন্ট চলে যাচ্ছে বলোতো? কারেন্টওয়ালা কেউ কি উকি ঝুকি দিয়ে আমাদের কান্ডকারখানা দেখছে নাকি? হা হা"
©somewhere in net ltd.