নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
"তুমি দেখেছো, ওর স্ট্যাটাসে আমাকে নিয়ে কী লিখেছে?"
"হু।"
"হু মানে? তুমিও কী একমত?"
আমি বুঝতে পারলাম না কী বলবো। আমার এক বন্ধু এক বান্ধবীকে খুঁচিয়ে একটা স্ট্যাটাস লিখেছে। স্ট্যাটাসের লেখা পড়ে মনে হওয়া স্বাভাবিক তাদের দুজনের মাঝে বুঝিবা খুব ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব আছে।
"ও কী তোমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু?"
"কিসের বন্ধু? জীবনে হাই হ্যালো পর্যন্ত হয়নি।"
তাহলে ব্যপারটা যথেষ্ট আপত্তিকর। যার সাথে হাই হ্যালো সম্পর্কও নেই, তাকে নিয়ে এভাবে পাবলিকলি এইধরনের স্ট্যাটাস লেখা যায় না।
"তুমি প্রতিবাদ কর।"
"করেছি। আমি বলেছি আমাকে নিয়ে তোমার এভাবে লেখা উচিৎ হয়নি।"
"গুড! ও কী বলল?"
"ও এটাও পাবলিকলি প্রকাশ করলো। তার সাথে তাল মেলাতে চলে এলো ওর আরো কিছু বন্ধু!"
ব্যপারটি দুঃখজনক। এক বন্ধু একটি অনুচিত কাজ করলো, আর তাকে সঙ্গ দিতে আরো কিছু বন্ধু উড়ে আসলো। ফেসবুকেও তাদের অদৃশ্য দাঁত কেলানো দেখা যাচ্ছে। একটি মেয়েকে ছোট করার চেষ্টায় সবাই খুব মজা পাচ্ছে। একটি মেয়েকে অপমান করাতেই জগতের সকল সুখ নিহিত!
মেয়েটা আমাকে খুব আহত হয়ে বলল, "আমাদের দেশের ছেলেরা এমন কেন?"
আমি তাকে কিছু একটা বুঝিয়ে বললাম। যদিও আমি নিজেও সেই প্রশ্নের উত্তর জানিনা।
আসলেই, আমাদের দেশের ছেলেরা (সবাই নয়, তবে বেশির ভাগ) এমন কেন? নিজের মা এবং বোনকে সম্মান করতেই তাদের সব পুরুষত্ব শেষ হয়ে যায়। অনেকে সেই কষ্টও নেয় না। মা আর ঘরের কাজের লোকের মাঝের ব্যবধানটুকু তাদের চোখে পড়েনা।
একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। শরীর ঢেকে রাখার মত যথেষ্ট শালীন পোষাক সে পড়েছে। তারপরেও আমাদের চোখ তাদের শরীর থেকে সরে না। মুখ থেকে এমন কিছু একটা শব্দ বেরিয়ে আসবে যা শুনলে মেয়েটির পুরো শরীর কেঁপে উঠবে। আসেপাশের বন্ধু বান্ধব আবার সেটা দেখে খুব মজা পাবে। বিরাট বড় কাজ করে ফেলেছিস ব্যাটা! শাবাস!
একটা মেয়ে বাসের পিছের সীটে বসেছে। সামনের সীটের যাত্রীর সিগারেটের ধোঁয়ায় তার কষ্ট হচ্ছে। কয়েকবার অনুরোধ করার পরেও সে সিগারেট ফেলা যাবেনা। পয়সা দিয়ে বিড়ি কিনছি, একজন 'লেডিসের' কথায় ফেলে দিব?
ভিড়ের মধ্যে এক সুন্দরীকে খুঁজে পাওয়া গেছে। যাই, তার গাটা একটু টিপে আসি। এত ভিড়ে বুঝতেও পারবে না কে করেছে। আর যদিওবা বুঝতে পারে, লজ্জায় কিছু করতে পারবে না। হিহিহি।
কিছুদিন আগে একটা ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম। সেখানে এক শ্বেতাঙ্গিনিকে 'ডেয়ার' করা হয় ইন্ডিয়ান লোকাল বাসে চড়ে একঘন্টা ঘুরতে হবে।
মেয়েটা অফিস টাইমে বাসে উঠে পড়লো। এক ঘন্টা পর বেচারী নেমে আসলো। তার চোখ মুখ ফুলে গেছে। চেহারা কাঁদো কাঁদো। ক্যামেরার সামনে সে দেখালো, লোকজন টিপে তার শরীরকে একদম লাল করে দিয়েছে। মৌমাছি কামড়ালেও এই অবস্থা হয় না! অথচ বাসটিতে তখন সব অফিসগামী ভদ্রলোকেরাই ছিলেন।
ইন্ডিয়ায় যা ঘটে, অবধারিতভাবে বাংলাদেশেও তা ঘটে। নিউমার্কেটে শপিংয়ে গেছেন, অথচ এই ধরনের নোংরা শোষনের শিকার হননি এমন সুন্দরী বাংলাদেশে কেউ আছে বলে আমি বিশ্বাস করিনা।
এটাই সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট। এটাও একধরনের ধর্ষণ।
এই সমস্যা সমাধান কিন্তু সরকার বা বিরোধী দলের হাতে নেই। আমাদের হাতে আছে। কিন্তু আমরা শুধরাবো না। আমরা পাবলিকলি একটি মেয়েকে নিয়ে মজার মজার স্ট্যাটাস দিব। আমার বন্ধু বান্ধবের সেই স্ট্যাটাস পড়ে লাইক দিবে। মেয়েটা প্রতিবাদ করতে কমেন্ট করবে। সেই কমেন্টেও তাকে অপমান করবো। এবার আমার বন্ধু বান্ধবেরাও যোগ হবে। লাইকের পর লাইকে ভরে যাবে আমাদের কমেন্টগুলো। একটি মেয়েকে অপমান করাতেই জগতের সকল সুখ নিহিত।
১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:৫৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:১৮
ফারদি বলেছেন: ধন্যবাদ, সত্যটা তুলে ধরায়।