নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙ্গালীর যে স্বাভাব অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:১৪

আমাদের ছোটবেলায় আমার বন্ধুদের অভিভাবক এবং আমার নিজের মা বাবার মধ্যে একটা পার্থক্য আমি খেয়াল করতাম। যেখানে আমার বন্ধুদের মা বাবারা নিজেদের সন্তানদের দোষ ধামাচাপা দেয়ার জন্য অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে দিতেন, সেখানে আমার বাবা মা প্রথমেই দেখতেন আমাদের নিজেদের দোষগুলো কোথায়। তারপর সেটা শোধরানোর জন্য আমাদের শাসন করতেন।

আমার এক বন্ধু ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পায়নি। তার অভিভাবক বলে বেড়ালেন, "কোচিংয়ে স্যার ভাল পড়াননি বলেই সে পায়নি। স্যারের আরও বেশি যত্নবান হওয়া উচিৎ ছিল।"

উল্লেখ্য, সেই বৃত্তি পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়া ছেলেটিও কিন্তু সেই একই স্যারের ছাত্র ছিল।

তারপরে ছেলেটি উর্মিলা মাতোন্দকারের (সেই সময়ের সানি লিওন) কিছু স্বল্পবসনা স্টিকার সহ মায়ের হাতে ধরা পড়লো। মায়ের জেরার শুরুতেই সে বলল, "অমুক বন্ধু(নাম বলতে চাইছি না, গিট্টু লেগে যাবে! ধরা যাক তার নাম করিম) আমার কাছে রাখতে দিয়েছে।"

মা তাৎক্ষণিকভাবে ছেলেকে ক্ষমা করে দিয়ে বললেন, "ওর সাথে আর মেলামেশা করবে না।"

এর কিছুদিন পর সে সিগারেট সহ ধরা পড়লো। মা এবার চরম বকাঝকা করলেন এবং পরিচিত মহলে রটিয়ে বেড়ালেন, "করিমের সাথে মিশে মিশেই ছেলেটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে!"

আন্টির মাথায় এখনও উর্মিলার স্টিকার গেঁথে আছে। অথচ করিম একজন খুবই ভাল ছেলে। সে সিগারেট খায় না। লুকিয়ে লুকিয়ে উর্মিলার ছবি জমিয়ে রাখার স্বভাবও তার নেই।

এর কিছুদিন পর আন্টি ফোন পেলেন তাঁর ছেলেকে আটকে রাখা হয়েছে। একটি মেয়ের সাথে প্রেমের চেষ্টা করার সময়ে মেয়েটির ভাই তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। এখন ছেলের মা বাবাকে ডেকে পাঠিয়েছে। তাঁরা এসে তাঁদের ছেলের বিচার করুক।

আমাদের একই কোচিং সেন্টারে পড়তো ছেলেটা। তাই আমরাও মজা দেখতে গেলাম।

আন্টি এসে উল্টো মেয়ের ভাইকে ঝাড়া শুরু করলেন। মেয়েটাই নাকি তাঁর ছেলেকে উসকে দেয়। ছেলেটিকে ইশারা ইঙ্গিত করে। গোপন চিঠিও দিয়েছে। আগুনের সামনে গেলে মোমতো গলবেই। অন্যের ছেলের উপর দোষ দেয়ার আগে ভদ্রলোক যেন নিজের বোনকে সামলান। ইত্যাদি।

আন্টির গলার স্বর এমন ছিল যে মেয়ের ভাই কিছুক্ষণের জন্য বিশ্বাস করে ফেলেন দোষ আসলেই বোধয় তাঁর বোনের।

আন্টি বীরদর্পে নিজের সুপুত্রকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন।

এর কিছুদিন পর ছেলেটি আরেকটি মেয়ের সাথে প্রেম করে বিয়ে করতে উতলা হয়ে উঠে। পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ টিদ্রোহ করে একেবারে বেরাছেড়া অবস্থা! এবারেও আন্টি সবাইকে বলে বেড়াতে লাগলেন, "করিমের সাথে মিশেমিশেই আমার ছেলেটা প্রেম করা শিখে ফেলল! নাহলে আমার পরিবারে কেউ কী কখনও প্রেম করেছিল নাকি?"

উল্লেখ্য, তাঁর বড় ছেলে ছিল এলাকার নামকরা রোমিও। সেই ছেলেটির ইভটিজিংয়ের শিকার হয়নি এমন মেয়ে এলাকায় খুব কমই ছিল। সময়কালে মায়ের পছন্দ করা মেয়ের সাথে বিয়ে করে সুবোধ বালক হয়ে গিয়েছিল বলে তার সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়।

আন্টির ভিত্তিহীন পাল্টা অভিযোগ শুনে আমরা সবাই মজা পেতাম। লোকজনও আড়ালে হাসতো। তারপর করুণা করে বলতো, "আহারে বেচারী!"

আন্টি এখনও ভাল আছেন। এখনও তাঁর এবং তাঁর আপনজনদের দোষ তাঁর চোখে পড়েনা। এখনও তিনি অনায়াসেই অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে মনে মনে শান্তি পান।

আমরা সেরকম হইনি। আমরা চেষ্টা করি, অন্যকে দোষারোপ করার আগে নিজে কতটুকু নিষ্পাপ সেটা খতিয়ে দেখতে। তাই দেখা যায় অন্য সংস্কৃতির মানুষের বদনাম করার আগে, আমি আমাদের বঙ্গদেশীয় ভ্রাতাদের সমালোচনা করি। এতে অনেকেই বলেন, আমি বিদেশীদের দালাল।

আমার মতে, নিজেদের দোষগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে না দেখালে কেউ দেখতে চায়না। দোষ যদি নাই দেখেন, তাহলে শুধরাবেন কী করে?

আজকেও একটি বাঙ্গালী ভাইয়ের বদনাম করতে যাচ্ছি। ঘটনা একজনের, কিন্তু তাঁর সেই স্বভাবটা বেশিরভাগ বাঙ্গালীর মধ্যেই আছে বলে আমি লক্ষ্য করেছি।

আমি তখন ওয়ালমার্টে কাজ করি। আমার স্বভাব হচ্ছে, অপরিচিত কারও সাথে যেচে পরে কথা বলতে পারিনা। আমার কেমন কেমন লাগে। অনেকে এতে মনে করে থাকেন যে আমি বোধয় অহংকারী। আসলে অহংকার নয়, লাজুক স্বভাবের বলতে পারেন।

ওয়ালমার্টে আমি কাজ করার সময়ে নিজের মত করে কাজ করতাম। ব্রেকের সময়ে নিজের গাড়িতে ফিরে গিয়ে গান শুনতাম। কাজ শেষে বাড়িতে এসে পড়তাম বা বন্ধুদের আড্ডায় যেতাম।

ওয়ালমার্টে আমার এক ফুপাতো বোন কাজ শুরু করলে সেই আমাকে প্রথম ব্রেকরুমে নিয়ে যায়। পরিচয় করিয়ে দেয় কিছু মানুষের সাথে।

যার কথা বলছি তিনিও আমার সাথে ওয়ালমার্টেই কাজ করতেন। একদিন খুব বিমর্ষ মুখে তাকে ব্রেক রুমে বসে থাকতে দেখলাম। জিজ্ঞেস করলাম, "আজকে আপনাকে এত উদাস লাগছে কেন?"

তিনি বললেন, "আর বলো না, একজন মহিলার কাহিনী শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেল।"

আমার আবার 'কাহিনী' শুনতে ভালই লাগে। তখনও লেখালেখি শুরু করিনি। তবে করবো করবো ভাবছি। নিজের লেখায় ব্যবহার করতে বাস্তব 'কাহিনীর' বিকল্প নেই!

জানতে চাইলাম ঘটনা কী। তিনি ঘটনা বললেন, যা সংক্ষিপ্ত করলে এইরকম দাঁড়ায়; নিউইয়র্ক থেকে ডালাসে মুভ করা এক বাঙ্গালী রমণীর দুই সন্তান। একটির বয়স চৌদ্দ, একটির সাত। কয়েকবছর হলো মহিলার স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তিনি আমাকে ছাড়াছাড়ির কারন বলতে চাইলেন, কৌতূহল ছিল না বলে জানতে চাইনি।

মহিলার বড় মেয়েটি নাকি এখানের এক 'কাউলা' ছেলেকে ভালবেসে ফেলেছে। ছেলেটা সন্ত্রাসী! (বাঙ্গালীদের চোখে সব আফ্রিকান অ্যামেরিকানই 'কাউলা' সন্ত্রাসী!) বাঙ্গালী মা মেয়েকে বাঁধা দিতে গেলে মেয়ে পুলিশকে ফোনে জানিয়ে দেয় তার মা তাদের মারধর করে। এদেশে চাইল্ড অ্যাবিউজ ভয়াবহ ধরনের অপরাধ! পুলিশ এসে দুই মেয়েকে নিয়ে চলে যায়। এখন তাদেরকে অন্য অভিভাবকের হাতে তুলে দেয়া হবে। দুই মেয়েকে হারিয়ে মায়ের অবস্থা এখন দিশাহারা।

শুনে আমারও মন উদাস হয়ে গেল। চোখে ভাসলো আমি ছোটবেলায় কী কী কুকর্ম করেছি, এবং আমার মা বাবা আমাকে কী কী শাস্তি দিয়েছিলেন। এই বয়সে আমি এসে উপলব্ধি করলাম, সেই বয়সে ওসব শাস্তি না পেলে আমি এ অবস্থানে পৌছাতে পারতাম না। যে যাই বলুক, বাঙ্গালী পোলাপান মানুষ করার জন্যে মাইরের বিকল্প নাই। লোহাকে না পেটালে তাকে সোজা আকৃতি দেয়া যায়না।

কয়েকদিন পর ঐ ভাইয়ের সাথে আবার দেখা। এবারে তাকে আমি মহিলার কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি জ্বলে উঠলেন, "আরে বইলো না মিয়া! ঐ মহিলা আমাকেও বিপদে ফালানোর পায়তারা করছে!"

আমি ভুরু কুঁচকে জানতে চাইলাম, "কিভাবে?"

"মহিলা উকিলের কাছে গেছে। উকিল তাকে বলেছে কিছু আত্মীয়, প্রতিবেশীর কাছ থেকে রিটেন স্টেটমেন্ট নোটারি পাবলিক করে আনতে যেখানে তারা সাক্ষ্য দিবেন যে তারা কখনও তাকে বাচ্চাদের মারধর করতে দেখেননি। এবং তাদের চোখে তিনি একজন আদর্শ মা।"

আমি বললাম, "এতে আপনাকে বিপদে ফেলল কোথায়?"

"আরে মিয়া! পুলিশী ঝামেলা হতে পারে। আমি এইসবে নাই! লিখিত টিখিত কোন 'ইস্টেটমেন্ট' আমি দিতে পারবো না।"

"আপনি বলছিলেন মহিলা নিউইয়র্ক থেকে এখানে নতুন এসেছেন। আপনারা ছাড়া তাঁর আর কোন পরিচিত কেউ আছেন এখানে যিনি তাঁকে সাহায্য করতে পারবেন?"

"সেটা সে বুঝুক। পুলিশী ঝামেলায় আমি নাইরে ভাই!"

আমরা সবাই জানি বাঙ্গালির দৌড় গলাবাজি পর্যন্তই। যখন আসল সাহায্য করার কথা আসে, তখন বেশিরভাগই পিছিয়ে যান। এই ভদ্রলোকও ব্যতিক্রম নন।

মহিলাটির জন্য মনে মনে আফসোস হলো।

এর কয়েকদিন পরে আবারও তার সাথে আমার দেখা। এবারে তিনিই আমার কাছে এগিয়ে এসে বললেন, "জানেন একটা মজার ঘটনা শুনছি! হিহিহি!"

আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কী?"

"আরে ঐ মহিলাতো একটা চিটার! তার আরেক ব্যাটার সাথে অ্যাফেয়ার আছে! মেয়ে জেনে ফেলেছে বলেই মেয়েকে মারধর করছে। এখন মায়ে-মেয়েতে লড়াই হচ্ছে কে আগে বিয়ে করতে বসবে। হেহেহে।"

উনার কথা শোনার আর রুচি হলো না। ইচ্ছে হলো টান দিয়ে ব্যাটার ঠোটের উপরের পাতলা মোচ ছিড়ে ফেলি।

'বিদায়' বলে চলে আসলাম।

বাঙ্গালির এই আরেক স্বভাব যেটা খুবই চোখে লাগে। নিজে সাহায্য করতে পারবে না ভাল কথা। চুপ করে থাক! তা না। উল্টো তার নামে উল্টাপাল্টা কথা ছড়িয়ে তাকে ছোট করে নিজের অপারগতাকে বৈধতা দেয়ার হাস্যকর চেষ্টা করে। সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে, যখন কিছু আহাম্মক সেটা বিশ্বাসও করে।

পরিশিষ্ট: কাউকে সাহায্য না করতে পারলে সরাসরি বলে দিন আপনি অপারগ। একই সাথে এইটা নিশ্চিত করুন তাঁকে ছোট করার চেষ্টা করবেন না। মহিলার যদি অন্য জায়গায় অ্যাফেয়ার থেকেও থাকে, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যপার। আপনার কাছে তিনি বিপদে পড়ে সাহায্য চেয়েছিলেন, আপনি করেননি। এটাই এখানে মূখ্য বিষয়।

বিঃদ্রঃ উপরের লোকটির মতন কাউকে যদি আপনি আপনার সামনে পান, যিনি একজনকে সাহায্য করতে পারেননি, অথচ তাঁকে ছোট করার চেষ্টা করছেন, তাহলে সরাসরি লোকটির মুখের উপর বলুন অফ যেতে। এইসমস্ত লোককে শোধরানো সম্ভব নয়। কিন্তু আস্কারা না দেয়াটা খুবই সম্ভব।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:১৭

আমি ভাল আছি বলেছেন: কথা সত্য

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৩০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: +

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৫৯

পাঠক১৯৭১ বলেছেন:





" যেখানে আমার বন্ধুদের মা বাবারা নিজেদের সন্তানদের দোষ ধামাচাপা দেয়ার জন্য অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে দিতেন, সেখানে আমার বাবা মা প্রথমেই দেখতেন আমাদের নিজেদের দোষগুলো কোথায়। তারপর সেটা শোধরানোর জন্য আমাদের শাসন করতেন। "


-নিজের ঢোল নিজে বাজাচ্ছেন?

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৫:০২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: পাঠক১৯৭১, আপনার মানসিক সমস্যা আছে। আমি লক্ষ্য করেছি, আপনি কখনই সহজ কথাকে সহজভাবে নিতে পারেননা। আপনার চিকিৎসকের পরামর্ষের প্রয়োজন আছে।
আমি বলছি, আমরা কিভাবে বেড়ে উঠেছি, এবং একই সাথে উদাহরণও দিয়েছি এক অভিভাবকের।
আপনার মত নিজের ঢোল পেটানোর স্বভাব আমার নেই। আপনার আলতু ফালতু লেখা কেউ পড়ে না বলেই কি অন্যের লেখায় গিয়ে ফালতু কথা বলার অভ্যাস হয়েছে?

৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:১৫

মিনেসোটা বলেছেন: আপনাদের ডালাস তো বাঙালীতে ভরে গেল দেখি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.