নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
আরবদের সাথে কার কেমন মেলামেশা হয়েছে আমি জানিনা, তবে আজ পর্যন্ত আমি যত আরবের সাথে মিশেছি, তাদের চরিত্রে একটা বৈশিষ্ট্য আমি লক্ষ্য করেছি। তারা কাউকে কোন অনুরোধ করতে পারেনা। তারা এমন ভাবে কিছু চায় যেন তারা কোন কিছুর নির্দেশ দিচ্ছে। তাহাদের কথা শুনিবা মাত্র নির্দেশ পালনে শ্রোতা বাধ্য থাকিবেন।
অ্যামেরিকায় এই ধরণের স্বভাবকে খুবই অভদ্রচিত আচরণ হিসেবে দেখা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই একই। একারণেই বিশ্বের সব উন্নতদেশে আরবদের "বর্বর জাতি" হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। কিন্তু আরবরা এসবের পরোয়া করেনা।
তাদের এই চারত্রিক বৈশিষ্ট্যের একটাই কারন, তারা কারও বশ্যতা স্বীকারে রাজি নয়। তাদের দেশে তারা হুকুম দিয়েই অভ্যস্ত, কারও হুকুম শুনতে নয়।
আমাদের দেশের লোকেদের বাইরের দেশে খুব সুনাম। আমরা খুব ভদ্র হয়ে থাকি। চাটুকারিতায় আমাদের জুড়ি নেই। "জ্বী হুজুরি" করতে করতে আমাদের মেরুদন্ড বেঁকে গেছে কয়েক শতক আগেই। রক্তের প্রতিটা বিন্দুতে বিন্দুতে অন্যর গোলামী করার স্বভাব ঢুকে গেছে। আমাদের ভদ্র না হয়ে উপায় আছে?
ভেবে রেখেছিলাম বাংলাদেশ না জেতা পর্যন্ত এশিয়া কাপ নিয়ে কিছুই লিখবো না। এখন অবস্থা দৃষ্টে যা মনে হচ্ছে, সেই সুযোগ নাও আসতে পারে। কাজেই টাইপ করতে বসা।
ইন্ডিয়া পাকিস্তান খেলা হয়ে গেল সেদিন। এরচেয়ে জমজমাট লড়াই খুব একটা হয়না। ওয়ানডে ক্রিকেটকে এরচেয়ে বেশি রোমাঞ্চকর করা বোধয় সম্ভবও নয়। দুই দলেরই সেজন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য।
সমস্যা অন্য জায়গায়।
গ্যালারীভর্তি দর্শক গায়ে রং মেখে পাকিস্তান, ভারতের ফ্ল্যাগ সেজে, পতাকা উড়িয়ে তাঁদের সমর্থন করতে গেলেন।
দুইদেশের খেলায় যে কোন একটা দলকে সমর্থণ করাটা স্বাভাবিক। আমি রিয়ালমাদ্রিদের সমর্থক হলে আর সবাইকেও তাই হতে হবে এমন একগুঁয়ে স্বৈরাচারী স্বভাবের লোক আমি নই। আমার কাছে সমর্থন ততটুকুই হওয়া উচিৎ যতটুকু প্রাপ্য। অতিরিক্ত সমর্থনকেই কিন্তু "গোলামী" বলা হয়ে থাকে।
ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান এরা সবাই আমাদের অতিথি। তাঁরা যতদিন আমাদের দেশে থাকবেন, আমাদের উচিৎ তাঁদের আতিথেয়তা করা। কিন্তু তাই বলে অতিথি খাওয়াতে গিয়ে নিজের বাড়ি ঘর বেঁচে দিব নাকি? বিদেশে গেলে (বাংলাদেশের ভারত সফরের সৌভাগ্য এখন পর্যন্ত হয়নি) কয়জন বিদেশীকে দেখা যায় বাংলাদেশের পতাকা মুখে এঁকে আমাদের ছেলেদের সমর্থণ করতে? আমাদের অধিনায়কেরা বলতে পারেননা, "এখানে খেললে মনে হয় ঢাকায় খেলছি।" এতে কি বিদেশীদের দোষ দেয়া যায়? অবশ্যই না! কারণ তাঁদের মেরুদন্ড সোজা, আমাদের মত "জ্বী হুজুরী" স্বভাব তাঁদের নেই। আমরাই পারি মিরপুরকে লাহোর, ইডেনে বদলে দিতে।
আমাদের একটা বান্ধবী ছিল। ভীষণ বোকা স্বভাবের। সে একদিন বলেই ফেলেছিল, "I love Pakistan! Specially শোয়েব আখতার! এমনকি যেদিন বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারিয়েছিল, সেদিনও আমি পাকিস্তানের সাপোর্ট করছিলাম!"
আমরা হায় হায় করে উঠি! বলে কি এই মেয়ে! মেয়েটি বোকা ছিল বলেই মনের কথা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিল। উল্লেখ্য, মেয়েটির বাবা কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা! সেক্টর আটের হয়ে তিনি যশোর এলাকায় লড়েছিলেন।
মেয়েটি ক্রিকেটের কিছুই বুঝে না। দেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়েছিল বলে দেশের ইতিহাস সম্পর্কেও জ্ঞান নেই। এখানে আমি একটা কথা উল্লেখ করতে চাই, আমিও ক্লাস ফোর পর্যন্ত ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েছিলাম, আমার যতদূর মনে পড়ে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিস্তারিতভাবে না জানলেও হালকা পাতলা ধারণা আমাদের ছিল। জাতীয় দিবসগুলো সম্পর্কেও আমাদের স্পষ্ট জ্ঞান ছিল। "একুশে ফেব্রুয়ারীর দিনে খুব যুদ্ধ হয়েছিল, আমরা এইদিন স্বাধীন হয়েছিলাম" জাতীয় আহাম্মক আমরা কেউই ছিলাম না। তাহলে মূল সমস্যাটা কোথায়? অতিআধুনিক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের? নাকি ছাত্রছাত্রীদের? নাকি তাদের অভিভাবকদের?
যাই হোক, মেয়েটি পাকিস্তানের সমর্থন করতো তাদের "গুড লুকিং" "হ্যান্ডসাম" ক্রিকেটারদের জন্য। আমাদের আমিনুল ইসলাম, মিনহাজুল আবেদিন, আকরাম খানের থেকে তার চোখে শোয়েব আখতার, শাহিদ আফ্রিদি অনেক হ্যান্ডসাম!
মানলাম, অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী। আবার অতিরিক্ত ক্রিকেট জানা পাবলিক হলেও কিন্তু সমস্যা আছে।
বাংলাদেশ যখন ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতকে নকআউট করলো, তখন আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ট এক বাংলাদেশী বন্ধু বলল, "বাংলাদেশ জিতেছে ঠিক আছে, খুব খুশি হয়েছি। কিন্তু ওয়ার্ল্ডকাপের খাতিরে ইন্ডিয়া জিতলে বেশি ভাল হত। চিন্তা করে দেখ, বাংলাদেশ সেকেন্ড রাউন্ডে গিয়ে কিই বা করতে পারবে? ইন্ডিয়া গেলে বরং কম্পিটিশন হতো।"
নিজের দেশের গর্বের চেয়ে ওয়ার্ল্ডকাপের চিন্তায় বেচারাকে খুব দুঃখিত মনে হলো! ছেলেটির বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কিনা আমি নিশ্চিত না।
এরা দুইজনই সৎ। তাঁদের নিজেদের মনের কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই হিপোক্রেট। ইন্ডিয়া-পাকিস্তানের সমর্থণ করা তাঁদের মজ্জায় মজ্জায় ঢুকে গেছে। বাংলাদেশের খেলার সময়েও দেখা যায় মনে মনে তারা প্রার্থণা করেন যাতে তাদের প্রিয় দল জিতে। মুখে বলেন "ভারত পাকিস্তান দুইটাই আমাদের প্রতিপক্ষ, এদের জয় পরাজয়ে আমাদের কিছুই আসে যায়না।" কিন্তু দুই দলের খেলার সময়েই তাঁদের আসল চেহারা বেরিয়ে আসে। প্রিয় দলটির(মনে মনে) কাছে নিজের দেশ হেরে গেলেও স্ট্যাটাসে শুধু লেখা থাকে, "ওয়েল প্লেড বাংলাদেশ! টাইগার্স!"
অথচ চিরশত্রুর সাথে প্রিয় দল হারলেই গাত্র দাহ শুরু হয়ে যায়। ইন্ডিয়া হারলে "রাজাকার" "যুদ্ধাপরাধী" স্ট্যাটাসে ফেসবুক ভরে যায়, পাকিস্তান হারলে সবার স্ট্যাটাসে দেখি তখন "ফেলানি" "সুন্দরবন" "তিস্তানদী" "রামপাল" "বিএসএফ" সবার স্মরণসভা চলছে। যদি ম্যাচটি নিয়ে আসলেই কারও কিছু আসত যেত না, তাহলে সবার ফেসবুক স্ট্যাটাস নির্বিকার থাকতো। যেমনটা থাকছে সাউথ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট সিরিজের সময়ে। স্টেইন, ফিলান্ডার, এবি, হাশিম, ক্লার্ক, জনসন জান-প্রাণ দিয়ে খেললেও বাঙ্গালি দর্শকের সমর্থণলাভে ব্যর্থ হচ্ছে। বেচারারা!
খেলায় যদি কেউ শুধু খেলার স্বার্থেই কোন দলের সমর্থক হয়ে থাকতো, তাহলে নিঃসন্দেহে তারা বাংলাদেশ পরেই অস্ট্রেলিয়া, অথবা সাউথ আফ্রিকার সমর্থণ করতো। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন ডিপার্টমেন্ট মিলিয়ে ওয়েল ব্যালেন্সড টিম বলতেতো কেবল তারাই এখন পৃথিবীতে টিকে আছে। তাই না? কিন্তু আমরা কেবল মুখেই বলি, "আমরা নিরপেক্ষ। বাংলাদেশ ছাড়া আমাদের কোন দলের প্রতিই দূর্বলতা নেই।" কাজের বেলায় সেই ভারত-পাকিস্তান সমর্থণ! গ্যালারিতে বসে বুলন্দ আওয়াজ তুলি, "জিতেগা ভাই জিতেগা, হিন্দুস্তান জিতেগা!" "জিতেগা ভাই জিতেগা, পাকিস্তান জিতেগা!"
কথা যখন বলছিই, আরেকটা বিষয় নিয়েও বলে ফেলা যাক। বাংলাদেশে আয়োজিত টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের থিম সং নিয়ে দেখলাম তুমূল হইচই চারপাশে। একদল বলছে, নকল করা সুর, বলিউডি ধাচের মিউজিক ভিডিও হয়েছে ইত্যাদি। আরেকদল "অসাম" "জোস্" বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে।
আমি সংগীতের খুব বড় ওস্তাদ নই। গানটি শুনে আমার মনে হয়নি আগে কোথাও শুনেছি। অবশ্য আমি খুব একটা গান শুনিনা। কাজেই আমি ভুল হতেই পারি। তবে মিউজিক ভিডিও দেখে আমার মনে হয়েছে এরচেয়ে জঘন্য মিউজিক ভিডিও বানানো সম্ভব হতো না। বেকুব নির্মাতা কোন আক্কেলে কিছু দেশী পোলাপানকে ঢোলা জিন্স, "NY" লেখা ক্যাপ পরিয়ে হিপহপ নাচ নাচালো? ছক্কার সাইনকে কেন এমনভাবে পরিবেশন করা হলো যে দেখে মনে হয় বাংলার নববিবাহিত দম্পতি, ক্ষেতে কাজ করা কৃষক "বাল্লে বাল্লে" করে ভাংরা ড্যান্স করছে? ওয়েস্টইন্ডিজের তৈরী বিশ্বকাপ থিম সংয়ের কথা কারও মনে আছে? ক্যারিবিয়ান সংস্কৃতিকে সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছিল। যেকোন ইভেন্টের যে কোন থিম সংকেই নেয়া হোক না কেন, সব জায়গাতেই নিজের দেশ, নিজের সংস্কৃতিই প্রাধান্য পায়। আধুনিকতার নামে নকল করা সংস্কৃতির উপর মিউজিক ভিডিও বুঝিবা একমাত্র বাংলাদেশেই বানানো সম্ভব হতো। কারণ? কয়েক শতাব্দী ধরে গোলামী করতে করতে বেঁকে যাওয়া মেরুদন্ড কি মাত্র চল্লিশ বছরেই সোজা হয়ে যাবে?
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ ভোর ৫:৩১
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক কথা!
২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ ভোর ৬:০০
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: কয়েক শতাব্দী ধরে গোলামী করতে করতে বেঁকে যাওয়া মেরুদন্ড কি মাত্র চল্লিশ বছরেই সোজা হয়ে যাবে? খাঁটি কথা বলেছেন।
০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০৮
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: স্যাড বাট ট্রু।
৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:৫৮
সাদা মনের মানুষ বলেছেন: ভাইজান চা কফি যা ইচ্ছা খান, আমি আপনার সাথে আছি
০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০৮
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
৪| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:২১
হেডস্যার বলেছেন:
লেখা খুবই চমৎকার হইছে জনাব। এর পর ও আমরা ভালো হব না।
ইন্ডিয়া পাকিস্তান খেলার দিন ষ্টেডিয়াম এলাকা দিয়ে যাইতেছিলাম......বুঝতে পারতেছিলাম না যে ইন্ডিয়া এসে পরলাম না পাকিস্তান চলে গেলাম......
কত নির্লজ্জ/বেহায়া যে বাঙ্গালী হইতে পারে ঐদিন পরিস্কার হইলো।
০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০৯
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক।
৫| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০৮
পাঠক১৯৭১ বলেছেন: বাংগালী সংস্কৃতি, শিক্ষা ও মনোবল শক্ত নয়!
৬| ০৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০৯
মিনেসোটা বলেছেন: বাংগালী সংস্কৃতি, শিক্ষা ও মনোবল শক্ত হবে কি করে, পাঠক১৯৭১ বিদেশে চলে যাওয়াতে ম্যাড ডিক্টেটরের অভাব ঘটেছে
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ রাত ২:৩৭
সীমানা ছাড়িয়ে বলেছেন: ভাল লেখা। টিকে থাকতে হলে আমাদেরকে মেরুদন্ড সোজা করেই টিকে থাকতে হবে।