নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

হে নারী জাতি! প্রতিবাদ করতে শিখুন!

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ২:৩২

গাউছিয়া নিউমার্কেট একজন নারীর জন্য বেহেস্ত হলেও কোন পুরুষের জন্য মোটেও সুখকর স্থান না। সেখানে পুরুষের ব্যবহারের জন্য কিছুই পাওয়া যায়না। তবুও সেখানে একদল পুরুষকে দেখা যায় শপিং করতে। শপিংয়ের মূল কাজটা তার সঙ্গিনীই সারেন, সে বেচারা স্রেফ ব্যাগ বহনকারী কুলির ভূমিকায় অভিনয় করে।

একদিন আমিও এই কুলির কাজ করতে গাউছিয়া মার্কেটে ঘুরছি। সাথে নতুন বউ। এই দোকান, সেই দোকান ঘুরে ঘুরে জিনিস পত্র নেড়েচেড়ে দেখছে। তার উৎসাহের সীমা নেই। আমি ধৈর্য পরীক্ষায় তখন রবার্ট ব্রুসের সাথে পাল্লা দিচ্ছি।

এমন সময়ে কারো সাথে আমার পিঠে ধাক্কা লাগলো। আমি পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা। "স্যরি" বলতে যাব তার আগেই মহিলা জ্বলে উঠলেন, "মেয়ে মানুষ দেখলে হুশ থাকেনা, না? চোখ কই থাকে? যত্তসব বদমাইশের দল!"

হয়তো তিনি আরও কিছু কথা বলেছিলেন। এখন ঠিক মনে করতে পারছি না। আমি সাথে সাথে বউয়ের দিকে তাকালাম। তার চোখের দৃষ্টিতে কৌতূহল এবং আমার "ইজ্জত পাংচার হওয়ায়" মজা পাওয়া হাসি! মাত্রই আমি তাকে ব্যখ্যা করছিলাম আমার চরিত্র কতটা পবিত্র! আশেপাশে সবার দৃষ্টি তখন আমার উপর। আমার মেজাজ গেল বিগড়ে। গলায় জোর মাশাআল্লাহ কম নেই, সেই জোর খাটিয়ে চিৎকার করে উঠলাম, "আপনি কি উল্টাপাল্টা কথা বলা শুরু করেছেন? আমিতো পেছন ফিরে ছিলাম, ধাক্কা তাহলে কে দিয়েছে? আপনার সাথে আমি কেন শুধু শুধু ধাক্কা খেতে যাব? কি মনে করেন নিজেকে?"

মহিলা ভদ্র ছিলেন। আমার অভদ্র আচরণে সরে পড়লেন। তিনি স্যরি বললেনও না, আমার স্যরি শুনলেনও না।

আশেপাশের দোকানদার কয়েকজন দাঁত ক্যালিয়ে বলল, "জবর কইছেন ভাইজান!"

আমার গায়ে কাদা ছুড়ে মারা হয়েছিল। আমি শুধু সেটাই পরিষ্কার করে ফেললাম।

আমার বউ তখন বলল, "আসলে মহিলার দোষ দিয়ে লাভ নেই। এই এলাকায় আসলেই এমন সব বদমাইশ ছেলে-পিলে আছে, যারা ইচ্ছা করে মেয়েদের সাথে ধাক্কা খায়। তাদের শরীরের এখানে ওখানে টিপ দেয়। মহিলা হয়তো ভেবেছিলেন, তুমিও তাদেরই একজন।"

ঘটনা আসলেই সত্যি। আমার বোনকে আমি দেখেছি নিউমার্কেট এলাকায় গেলে প্রথমেই একটা কাঠের বেলুনি (রুটি বেলা হয় যা দিয়ে, বেলুনিইতো বলে নাকি?) কিনে, তারপর শপিং করে। কিছুক্ষণ পরপর তাকে দেখি সেই বেলুনি দিয়ে সজোরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া ছেলেদের হাতে, পিঠে, পায়ে পেটাচ্ছে। অবাক হয়ে দেখতাম ছেলেগুলো প্রতিবাদ পর্যন্ত করতো না। মার খেয়ে রীতিমত পালিয়ে বাঁচতো। একদুইবার এক আধজন কেবল বলে উঠতো, "আমারে মারলেন ক্যান?"

আপু মারের পরিমান আরও বাড়িয়ে দিয়ে বলতো, "জানিস না কেন মারছি? হারামজাদা! আয়, তোকে বুঝাই কেন মারছি!"

একবার এক সুন্দরী তরুণীকে দেখলাম একটা ছেলের কলার চেপে ধরতে। তারপর তার গালে সপাটে চড় মেরে দিল। ছেলেটা প্রতিবাদ করে উঠলো, "আমি কি করছি?"

মেয়েটা তীব্র গলায় বলল, "বলতে হবে কি করেছিস?"

রাস্তার একজন লোক বলে উঠলো, "হ্যা, বলেন সে কি করছে?"

লোকটার মুখ চকচক করছে। চোখে লোভাতুর দৃষ্টি। সে রগরগে কিছু একটা শুনতে আগ্রহী।

মেয়েটির পাশে এসে দাঁড়ালো রাস্তার আরেকজন নারী। "আপনি বুঝতে পারেননা এ কি করতে পারে? মারেন আপা! মারেন হারামজাদাকে!"

রাস্তার কয়েকজন লোকও পাশে এসে দাঁড়ালো মেয়েটির। ছেলেটাকে পিটাতে চায়। ছেলেটা কোন রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে পালিয়ে বাঁচলো।

আরেকবার আমার পরিচিতা এক সুন্দরী মহিলা শপিং সেন্টারে এক দোকানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। দোকানদার তাঁকে দেখে রসিকতার সুরে বলল, "আপা আসেন, আমাদের সাথে খেয়ে যান!"

মহিলা সত্যি সত্যিই দোকানে ঢুকে বেচারা দোকানদারের লাঞ্চের খাবার খেয়ে চলে এসেছিলেন। পুরো সাফা! লোকটাকে সেদিন নিজের লাঞ্চ কিনে খেতে হয়েছিল। আমার মনে হয়না আর জীবনেও এই লোক কোন মেয়েকে তার সাথে খেতে ডেকেছে।

আরেকবার আরেকটি মেয়ে বাসে করে বাড়ি ফিরছিল। তার পাশে খালি সীটে একজন বৃদ্ধলোক এসে বসলেন। বসার আগে তিনি বললেন, "মা, আমি তোমার পাশে বসতে পারি?"

মেয়েটি দেখে লোকটি তার বাবার বয়সী। সে হাসিমুখে বলল, "বসুন আঙ্কেল!"

লোকটা ভদ্রভাবেই বসলো। তারপর তার পা ক্রমেই মেয়েটির দিকে সরে আসতে লাগলো। মেয়েটি তার শরীরে পরপুরুষের স্পর্শ পেয়ে ধীরে ধীরে নিজেও সরে আসতে লাগলো। কিন্তু ঢাকার বাসের সীটে কতটুকুই বা সরা যায়?

লোকটা তাকে বলল, "মা! তোমার কোন অসুবিধা হচ্ছে নাতো?"

মেয়েটি ভাবলো, ভদ্রলোক বৃদ্ধ মানুষ। হয়তো ছড়িয়ে বসে আরাম পায়।

সে বলল, "না। ঠিক আছে। কোন সমস্যা হচ্ছে না।"

এবারে লোকটা তার হাত ঘষা শুরু করলো। তখন মেয়েটা বুঝে গেল বুড়ার উদ্দেশ্য। মেয়েটি তীব্রভাবে জ্বলে উঠলো।

"হারামজাদা বুড়া! এক পা কবরে চলে গেছে, তবু বদমাইশির শখ যায়না, না? জওয়ান মেয়ে দেখলে হুশ থাকেনা?"

বৃদ্ধ সাথে সাথে বাস থেকে নেমে গেল। নামার আগে সে একটা টু শব্দও করলো না। বাসের অন্যান্য যাত্রীরাও বুঝে গেছে ঘটনা। তারাও কিছু বলল না। এমন ঘটনা দেখে তারা সবাই অভ্যস্ত।

একই থীম নিয়ে এর আগেও একবার লিখেছিলাম। আজকে হঠাৎ মনে হলো লাভ হয়নি। মূল ম্যাসেজ হয়তো এখনো পৌছায়নি। নিউমার্কেটে এখনো আমার বোনের মতন অনেক মেয়েকেই কাঠের বেলুনি কিনে শপিং শুরু করতে হয়।

আমার মূল বক্তব্য হচ্ছে, "হে নারী সমাজ! সাহস করে প্রতিবাদ করতে শিখুন।"

না পেটালে লোহা সোজা হয়না। বেঁকে যাওয়া পুরুষদের সোজা করতে আপনাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। একটি গ্রাম্য প্রবাদ আছে, "নরম মাটিতে বিলাইও হাগে।" আপনারা শক্ত না হলে কিছুই পরিবর্তন হবেনা।

আজকে একটি ছেলের অশোভন আচরণে আপনি লোকলজ্জার ভয়ে, অথবা অন্য যে কোন কারনেই হোক চুপ করে থাকলে, ঐ একই ছেলে আরেকটি মেয়ের সাথে গিয়ে একই কাজ করবে। এরা মা মেয়ে কাউকেই ছাড়ে না। আপনার হাতে মার খেলে অন্তত দ্বিতীয়বার কাজটি করার আগে সে আপনার কথা স্মরণ করে শুধরেও যেতে পারে!

সাপোর্টের কথা ভাবছেন? সাপোর্ট আপনি পাবেন। আগে কোন এক লেখায় লিখেছিলাম, জাতি হিসেবে আমরা "ফলোয়ার্স।" সবসময়ে অপেক্ষা করি, কেউ একজন "লিডার" হয়ে আওয়াজ তুলুক, তাহলেই আমরা তাঁর পাশে এসে দাঁড়াবো। আপনি আওয়াজ তুলে দেখুন, লোকজন আপনার পাশে থাকবে ইন শা আল্লাহ!

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ২:৪০

সীমানা ছাড়িয়ে বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। প্রতিবাদ উঠলে বদমাইশরা ঠান্ডা হয়ে যাবে। অন্যায় কখনো সততার জোরের সাথে পারে না।

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ২:৪৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ++

২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৩:২০

আমিই মিসিরআলি বলেছেন:

৩| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ ভোর ৪:৪১

নীলতিমি বলেছেন: অসাধারন। এই নষ্ট সমাজে প্রতিবাদী হওয়া ছাড়া উপায় নেই।

লেখার জন্য ধন্যবাদ। :)

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৪৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনি প্রতিবাদি হলেই ভাববো আমার লেখা সফল।

৪| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:১৩

প্রকৌশলী মোঃ জুলফিকার আলী জুয়েল বলেছেন: জাতি হিসেবে আমরা "ফলোয়ার্স।" সবসময়ে অপেক্ষা করি, কেউ একজন "লিডার" হয়ে আওয়াজ তুলুক, তাহলেই আমরা তাঁর পাশে এসে দাঁড়াবো। আপনি আওয়াজ তুলে দেখুন, লোকজন আপনার পাশে থাকবে ইন শা আল্লাহ!

৫| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:১৪

বেবিফেস বলেছেন: ইজ্জত পাংচার হওয়ায়" মজা পাওয়া হাসি! সব চেয়ে সুন্দর এটা।

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৪৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

৬| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৪০

উজবুক ইশতি বলেছেন: সীমানা ছাড়িয়ে বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। প্রতিবাদ উঠলে বদমাইশরা ঠান্ডা হয়ে যাবে। অন্যায় কখনো সততার জোরের সাথে পারে না।

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৫০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আর মুখ বুজে থাকলে অন্যায় বাড়তেই থাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.