নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
অমিতাভ বচ্চনের ষাটতম জন্মদিনে তাঁর ছেলে অভিষেকের সাথে কাপুর পরিবারের কন্যা, সুপারস্টার কারিশমা কাপুরের বাগদান সম্পন্ন হয়েছিল। অভিষেকের সাথে নাকি অনেকদিন ধরেই কারিশমার প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। এখন প্রেমের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি হওয়ায় দুই পরিবারই ভীষণ খুশি।
কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাঁদের বাগদান ভেঙ্গে যায়। দুই পরিবারের অভিভাবকদের মধ্যে মনোমালিন্য হওয়াতেই নাকি এমনটা ঘটেছে।
অভিষেকের হয়তোবা সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল। বেচারার হয়তো মনে হয়েছিল এ জীবন রেখে আর লাভ নেই। কারিশমাকে ছাড়া সে কি করে বাঁচবে? কেনই বা বাঁচবে?
কয়েক বছরের মাথায় আমরা দেখলাম ঐশ্বরিয়া রাইর সাথে তাঁর বিয়ে হয়ে গেল। কারিশমা কাপুরের চেয়ে ঐশ্বরিয়া রাই কয়েকগুণ বেশি রূপসী। তিনি সাবেক বিশ্বসুন্দরী। কারিশমা কাপুরের চেয়েও তিনি অনেক বড় তারকা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি গুটিকয়েক পরিচিত ভারতীয়দের একজন।
বলিউডের সবচেয়ে সুখী দম্পতিদের একটি তাঁরা দুজন। দুজনের সংসারে এখন আশীর্বাদ হয়ে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানও এসেছে। অভিষেক নিশ্চই এখন আর কারিশমাকে ভেবে আফসোস করেননা।
বলিউডের উদাহরণ টানলাম কারণ আমি জানি এতে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষিত হবে। নাহলে আমাদের আশেপাশের মানুষের জীবনের গল্প কয়জন মন দিয়ে পড়ে?
তারকাদের জীবনও বাস্তব জীবন। তাঁদের জীবনেও চড়াই উতরাই থাকে, এবং একটা বিষয় সবার জীবনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সত্যি, এর শেষটা সবসময়েই সুখের হয়। সাধে কি আর "time is the best healer" বলে ইংরেজিতে একটি কথা প্রচলিত আছে?
কথাটি তুললাম কারন মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে খবরের কাগজে বেশ কয়েকটা আত্মহত্যার খবর পড়েছি। একটি মানুষের কাছে নিজের জীবনের চাইতে প্রিয় কিছুই হতে পারেনা। সেই জীবনকেই যখন সে নিজে থেকেই শেষ করে দিচ্ছে, তখন তাঁর মনের ভিতরে কি চলতে পারে, সেটার ধারনা পাওয়া আমাদের কারও পক্ষেই কোনদিনও সম্ভব নয়। কাজেই তাদের দোষারোপ করে গালাগালি করা আমি সমর্থণ করিনা। কিন্তু একটি কথাতো অবশ্যই বলতে চাই, আত্মহত্যা কোনভাবেই কোন সমস্যার সমাধান হতে পারেনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছেলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখে রেললাইনে গিয়ে শুয়ে যায়। পরে জানা যায় চাকরি না পাওয়ার হতাশায় সে এমন কাজ করেছে।
পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে ফেলেন।
সালমান এফ রহমানরা যখন শেয়ার মার্কেটে বিরাট বিরাট ধস নামান, তখন চারিদিকে আত্মহত্যার হিরিক পরে যায়।
আর প্রেমের কারনে আত্মহত্যার ঘটনাতো প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে।
কিন্তু এই সব আত্মহত্যাকারী কি কখনও একটিবারের জন্যও ভাবে না যে তাঁর প্রাণের বিনিময়ে কিছুতেই সেই সমস্যার সমাধান হবেনা? চাকরির বাজার চাঙ্গা হবেনা, সালমান রহমান লুটকৃত টাকা ফিরিয়ে দিয়ে হজ্জে চলে যাবেনা, প্রেমিকাও সারাজীবন অবিবাহিত থেকে তাঁকে ভালবেসে যাবেনা। উল্টো তাঁর প্রিয়জন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবরাই কষ্ট পাবেন। তাহলে কেন শুধু শুধু বোকার মত নিজের প্রাণটা কেড়ে নেয়া?
ছোটবেলায় একবার আব্বু নিতে আসতে দেরী করছে দেখে কোচিং সেন্টার থেকে একা রিকশা নিয়ে বাসায় চলে এসেছিলাম। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই আব্বু উদভ্রান্তের মত ঘরে ফিরে আসেন। দরজায় আমার বোনকে দেখে হাহাকার করে উঠেন, "রাজীব ঘরে ফিরেছে?"
আপু বলে "হ্যা।"
আব্বু ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমোয় চুমোয় মুখ ভরে দিয়েছিলেন।
এই ভালবাসা তাঁর আমৃত্যু ছিল।
এমনকি অ্যামেরিকাতে, যখন আমরা পুরোপুরি বেড়ে উঠেছি, তারপর এখানে বেড়াতে আসার পরে একটা টিভি নাটকের শ্যুটিং শেষ হতে হতে মধ্যরাত হয়ে যাওয়ায় কিছুক্ষণ পরপর আমার সেল ফোনে ফোন করে জিজ্ঞেস করছিলেন, ফিরতে আর কত দেরী হবে। মায়ের ক্ষেত্রেও একই।
এই ভালবাসার জন্যেইতো বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করে। হোক পৃথিবীর অনেকের কাছে আমি অকর্মার ঢেঁকি, আমি অপদার্থ, ভালবাসার অযোগ্য - কিন্তু নিজের পরিবারের কাছেতো আমি ফ্যালনা না।
কেউ কেউ পরিবারের কাছে নিগৃহিত হয়ে থাকেন। কিন্তু সেক্ষেত্রেও দেখা যায় বন্ধু বান্ধবরা ভালবাসা দিয়ে পুষিয়ে দিচ্ছে। পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষের জন্যই নির্দিষ্ট পরিমান ভালবাসা বরাদ্দ থাকে। কেউ না কেউ তাকে সেটা পৌছে দিবেই।
কিছুদিন আগে একটি চমৎকার ঘটনা শুনেছিলাম। প্রসঙ্গক্রমে সেটা এখানে বলা যেতে পারে।
বেশ কয়েক বছর আগে সোমালিয়া থেকে এক ভদ্রলোক সাউথ আফ্রিকার কেপটাউনে যখন আসেন, তখন তাঁর হাতে খাবার কিনে খাওয়ারও পয়সা ছিল না। পুরোপুরি কপর্দকশুন্য অবস্থায় লোকটি নতুনভাবে জীবন শুরু করেন একটি নতুন দেশে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একটি ব্যবসা দাঁড়া করান।
অবস্থা যখন মোটামুটি ভাল যেতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই একটি দূর্ঘটনায় তাঁর দোকান আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়ে যায়।
সর্বশান্ত লোকটির কাছে একজন এসে জানতে চান, "তোমার দোকানের কি ইন্সুরেন্স করা ছিল?"
লোকটি জবাব দেন, "আমার ধর্মে নিষেধ আছে বলেই আমি ইন্সুরেন্স করাইনি।"
প্রশ্নকর্তা এবারে জিজ্ঞেস করেন, "তাহলে তুমি সার্ভাইভ করবে কি করে?"
লোকটি দৃঢ় স্বরে জবাব দিলেন, "আমি যখন এদেশে প্রথম আসি, তখন আমার পা ঢাকার জন্য একটি জুতাও ছিল না। আল্লাহ আমাকে সব দিয়েছিলেন। এই পৃথিবীর সবকিছুরই মালিক তিনি। তিনি আমাদের কিছুদিনের জন্য ব্যবহার করতে দেন মাত্র। তাঁর দান, তিনি আবার ফিরিয়েও নিয়ে গেছেন। কাল থেকে আমি আবারও নতুনভাবে পরিশ্রম শুরু করবো। তিনি চাইলে, অবশ্যই আগের চেয়ে ভাল অবস্থানে আমি যেতে পারবো এবং দ্রুত যেতে পারবো।"
লোকটির ধর্মীয় বিশ্বাস আপাতত পাশে থাকুক, লোকটির মানসিক দৃঢ়তার জন্যইতো তাকে সালাম দিতে ইচ্ছা করে। হার মানার জন্য মানুষের জন্ম হয়নি। যদি হতো, তাহলে সেই আদি যুগের মানুষেরা কিছুক্ষণ পাথরে পাথর ঘষাঘষি করে আগুন সৃষ্টি করতে না পেরে হাত গুটিয়ে বসে থাকতো।
একটি পরীক্ষায় ফেল করেছি তো কি হয়েছে? সামনে আরও অনেক পরীক্ষা পরে আছে। যদি তাও ভাল না করি, তাহলে কাজ করে তা পুষিয়ে দিব, তবু হার মানবো না।
একটি মেয়ে আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে? খুব ভাল। এমন কিছু করে দেখাবো, যাতে ঐ মেয়েই একটা সময়ে আফসোস করে ভাবে, "কেন আমি তাকে ফেরালাম!"
শেয়ার মার্কেটে পুঁজি করা সব টাকা সালমাইন্যা লুটে নিয়েছে? তাতে কি হয়েছে? ভবিষ্যতে আর শর্টকাটে বড়লোক হবার পথ খুঁজবো না। পরিশ্রম করবো, টাকা পয়সা আমার ভাগ্যে থাকলে আসবে। না থাকলে আরও বেশি পরিশ্রম করবো, যাতে ভাগ্যে টাকা পয়সা নতুন করে লেখা হয়।
প্রিয় ভাই বোনেরা, আত্মহত্যার আগে কেবল একবার চিন্তা করে দেখুন, কে জানে ভবিষ্যত আপনার জন্য কি নিয়ে অপেক্ষা করছে! হয়তোবা চাকরি না পেতে পেতে আপনি নতুন ব্যবসা করতে শুরু করতেন, এবং কয়েকদিনের মধ্যেই ফুলেফেপে কোটিপতি হয়ে যেতেন।
প্রেমিকা চলে যাবার কিছুদিনের মাথায় আপনার জীবনে এমন কেউ আসতো যে আগেরজনের চাইতেও অনেকগুণ ভাল।
আর মা বাবার উপর অভিমান? আপনি মারা গেলে সবচেয়ে বেশি অশ্রু এই তাঁরাই ফেলবেন। আপনিতো মারা গিয়ে বেঁচে যাবেন। তাঁরা জীবিত থেকে প্রতি মুহূর্তে মারা যাবেন। আপনাকে পৃথিবীতে আনার অপরাধে আপনি তাঁদের এত বড় শাস্তি দিবেন?
ভাবুন, ভাবতে থাকুন। রেললাইন ওখানেই পরে থাকবে, ট্রেনও কিছুক্ষণ পরপর আসতেই থাকবে। কিন্তু জীবন একবার গেলে আর ফিরে পাবেননা।
©somewhere in net ltd.