নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
সোমবার এমনিতেই কাজে আসতে বিরক্ত লাগে। প্রতি সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই ইচ্ছা করে বসকে ইমেইল করি, "প্রিয় ডারলা, আজকে আমার অফিসে আসতে একটু দেরী হবে।"
তার উপর আজকের ওয়েদারটা দারুন! দেশের আবহাওয়া অফিসের ভাষায় "বজ্রসহ বৃষ্টি" হচ্ছে। টেক্সাসের অতি কুখ্যাত সামারের গরম কেটে গিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস বইছে। এইরকম একটা সুন্দর সকালে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকার মজাই আলাদা!
অফিসে এসে ফেসবুক দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমাদের ক্যানভাসের বিখ্যাত কবি Ranya Rahim একটা লিঙ্ক শেয়ার করেছে, যার সারকথা হচ্ছে, "গত তেইশ বছর ধরে যে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নারী, সেই দেশে এখনও কেন কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার অপরাধে মাকে মেরে ফেলা হয়?"আমির খানের satyamev jayate অনুষ্ঠানেও এরকম একটি বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছিল যে, ইন্ডিয়াতে এখনও মেয়ে সন্তানের জন্মের আগেই ভ্রুণ হত্যা করা হয়। এখনও ইন্ডিয়ার অনেক গ্রামে মেয়ে সন্তানদের জীবিত কবর দেয়া হয়। বছরের পর বছর ধরে এই কুপ্রথা চালু থাকায় এখন এমন অনেক অঞ্চল পাওয়া যাচ্ছে যেখানে বিয়ে করার জন্য ছেলেরা মেয়ে খুঁজে পাচ্ছে না। কারন, মেয়ে নেই। ফলে আরও অনেক কুপ্রথার জন্ম নিচ্ছে। একই মেয়েকে চার পাঁচজনের সাথে পালাক্রমে বিয়ে করাটা হচ্ছে তার একটি।
অনেক শতাব্দী আগে আরবদেশেও এমন বর্বরোচিত প্রথা চালু ছিল। সেদেশের বিভিন্ন গোত্রে মেয়ে সন্তানদের জীবিত কবর দেয়া হতো।একদিন এক সাহাবি (নবীজির সঙ্গী) স্বয়ং নবীজির কাছে নিজের ইসলামপূর্ব জীবনের অপরাধ স্বীকার করছিলেন।
"আমি আমার মেয়েকে জীবিতাবস্থায় যখন কবর দিচ্ছিলাম, তখন তাড়াহুড়া করায় আমার দাড়িতে বালু লেগে যাচ্ছিল। আমার মেয়েটা তখনও সে অবস্থাতেও নিজের হাতে আমার দাড়ির সেই বালু সরিয়ে দিচ্ছিল।"
নবীজির (সঃ) মন অত্যন্ত নরম ছিল। তিনি প্রচন্ড ব্যথিত কন্ঠে বললেন, "কি করে করলে এই কাজ? কি ভাবছিলে তুমি সে সময়ে?"
বলতে বলতে তাঁর চোখ ভিজে উঠেছিল। চোখের পানি গড়িয়ে এসে তাঁর দাড়িও ভিজিয়ে দিয়েছিল। সেই বর্বর যুগেও নবীজির নিজের বেশ কজন কন্যা সন্তান ছিল, এবং তিনি তাঁদের প্রত্যেককেই প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসতেন। হয়তোবা সাহাবি নিজের মৃতা সন্তানের কথা মনে করে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিলেন।
আরবদের এই বর্বরোচিত প্রথা ধ্বংশ করতেই নাযেল হলো পবিত্র কোরআনের সেই বিখ্যাত আয়াত, "আসমান সমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা উভয়ইদান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। তিনি তো সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।" [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৪৯-৫০]
আমাদের দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হবার পরেও এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এখনও ছেলে সন্তানকে "বংশের প্রদীপ" ধরা হয়ে থাকে। যার কোন ছেলে সন্তান নেই, তার দিকে মানুষ করুণার দৃষ্টিতে তাকায়। আহাম্মকেরা ভুলে যায়, স্বয়ং নবীজির কোন পুত্র সন্তান জীবিত ছিলেন না। তাঁর ইন্তেকালের সময়ে একমাত্র জীবিত সন্তান ছিলেন তাঁর কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ)। এখান থেকেই কি শিক্ষা নেয়া যায়না? বংশের প্রদীপের কথা বলতে আসছেন!
আপনি মারা গেলে আপনি কবরে যাবেন। ছেলে সন্তান থাকলেও একা যাবেন, মেয়ে থাকলেও একা যাবেন, কেউ না থাকলেও একাই যেতে হবে। কাজেই এই "বংশের প্রদীপ" ট্রদীপ সব ভূয়া কথা।
আমার আব্বুর দুইটা ছেলে সন্তান ছিল। কিন্তু আদর বেশি পেয়েছে আমার বড় বোন। বেচারা কোন বিয়ে বাড়িতে গেলেই চোখ ভিজিয়ে ফেলতেন। কারন একটা সময়ে তাঁকেও তাঁর মেয়েকে বিদায় দিতে হবে। আমার বোন যখন ফ্রক পড়ে স্কুলে যায়, তখন থেকেই চলছে এই ঘটনা।
ছেলে সন্তানদের কাছে আব্বুর একটাই আশা ছিল। তাঁর যানাজায় তাঁর ছেলেরা কাঁধ দিবে। দুইদুইটা ছেলে থাকার পরেও তাঁর সে শখ পূরণ হয়নি। তারা তখন বিদেশে! ছেলে সন্তান থাকায় তাঁর লাভটা কি হলো?
আমাদের দেশের সামাজিক ব্যবস্থাও এমন যা মেয়েদের 'বোঝা' ভাবতে বাধ্য করে।মেয়েকে বড় করে বিয়ে দিতে হবে, বিয়ের খরচ আছে। যৌতুক না হলেও জামাইকে "উপহার" দিতে হবে। মেয়ের গায়ের রং কালো (মেয়েদের ক্ষেত্রে শ্যামলা গায়ের রংকেও কালো বলে ধরা হয়ে থাকে। এমন ভাব যেন বাংলাদেশ না, আয়ারল্যান্ডে বসে মেয়ে দেখা হচ্ছে) হলেতো কথাই নেই। বিয়ের টেনশনে রাতের ঘুম হারাম। তারপর আছে মেয়ের বয়স বেড়ে যাবার ভয়। বিশ পঁচিশ হলেই বিয়ে দিতে হবে। তিরিশ হলেতো কথাই নেই। মেয়ে বুড়ি হয়ে গেছে!
কিছুদিন আগে আমার মামাতো ভাই একটা পত্রিকার বিজ্ঞাপনের ছবি শেয়ার করলো। পোস্টের আগে ক্যাপশনে লিখলো, "শালার পুতের অবস্থা দেখেন।"
পোস্ট পড়ে আমারও একই অনুভূতি। পোস্টটা হুবহু তুলে দিচ্ছি,
"আমি অস্ট্রেলিয়ার সিটিজেন (২০১৩), অস্ট্রেলিয়ায় মাস্টার্স(২০০৮) এবং অধূমপায়ী। তিনটি আবশ্যক রিকয়ারমেন্ট হচ্ছে - পাত্রীর চমৎকার হাসি, ফর্সা এবং উচ্চতা ৫'২" থেকে ৫'৫"। এছাড়াও হতে হবে মুসলিম, শিক্ষিতা, মেধাবী, গুড লুকিং এবং পারিবারিক মূল্যবোধ সম্পন্ন। প্লীজ, শীঘ্রই ছবি ও বায়োডাটা প্রেরণ করুন। probashi১৪@gmail.com"
ইচ্ছা করছিল প্রবাসীকে দাওয়াত দিয়ে বাসায় ডাকি। তারপর ফাজিলের আওলাদের গাল ভর্তি করে জুতা পেটা খাওয়াই। ফাইজলামির একটা সীমা থাকা উচিৎ! এত ডিমান্ডতো গৌরীকে বিয়ে করার সময়ে শাহরুখ খানেরও ছিল না। এইধরনের ফাজিলেই দেশ ভর্তি। খেসারত দিতে হচ্ছে মেয়েদের। মা বাবারা পারলে সেই শৈশবেই অ্যাবর্সন করিয়ে ফেলছে। যদি মেয়ে বেঁচেও থাকে, তবে এমন সব কথা শোনাচ্ছে যা শুনলে মেয়ের মনে হতেই পারে এরচেয়ে ছোটবেলায় মেরে ফেলাটাই ভাল ছিল।
"মুখে একটু ক্রিম ট্রিম মাখতে পারিস না? পাতিলের তলার মতন মুখ নিয়ে ঘুরে বেড়াস!"
"একটা প্রেমও করতে পারলি না জীবনে? প্রেম করে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেললেতো তোর বিয়ে নিয়ে আমাদের আজকে এত টেনশন করতে হতো না।"
"লজ্জা করে না? বিয়ে হচ্ছেনা একটা মেয়ে, অথচ ধেই ধেই করে ঘুরে বেড়াস!"
উপরের একটা কথাও আমি নিজে থেকে বানিয়ে বলছিনা। আমি নিজের কানে শুনেছি এসব। হয় আমার সামনে কেউ বলেছেন, নাহলে মেয়েটা আমাকে বলেছে। কথা শুনলে মনে হয় যেন বিয়েই একটা মেয়ের জীবনের শেষ গন্তব্য। যেই মেয়ের বিয়ে হলোনা, তার যেন কিছুই হলোনা।
কেউ এতটুকু ভাবেনা, যেই ছেলে রূপ দেখে বিয়ে করবে, সেই রূপ যখন কিছুদিন পরেই ধুয়ে যাবে, তখন সেই সম্পর্কের কি কোন মানে থাকবে?
যেই ছেলে বিয়ে করছে স্রেফ যৌতুক থুক্কু 'উপহার' পাবার লোভে, তার কি মুখ বেশি হা হয়ে যাবেনা? তার লোভ সামাল দিতে পারবেন আপনি?
বা উপরের পোস্টের ফাজিলটার কথাই ধরুন। পোস্টের ভাষা পড়ে মনে হচ্ছে যেন কোন মেয়েকে বিয়ে করে সে দয়া দেখাচ্ছে। তাহলে এমন ছেলেদের সাথে কেনই বা বিয়ে দেয়া?
কথা শুরু করেছিলাম মেয়ে সন্তান হত্যাকান্ড দিয়ে। এই বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহ কন্যাসন্তান হত্যাকারীদের সাবধান করে বলেছেন,"জীবন্ত কবর দেয়া কন্যা সন্তানকে কেয়ামতের দিন জিজ্ঞেস করা হবে কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।" (সূরা তাকবীর, আয়াত:৭-৮)।
তখন সেই ভীষণ দিবসে সেই নিরপরাধ শিশুর মা বাবা আল্লাহকে কি জবাব দিবেন?
নবীজির অতি বিখ্যাত হাদীস, "মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত" - এখানে এই মাও কিন্তু একজন নারী। এই বোধটা যতক্ষণ না আসবে, ততদিন যতই স্কুল কলেজে পড়ানো হোক না কেন, যতই সভা সেমিনার করা হোক না কেন, কিছুতেই কিছু যাবে আসবে না।
১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:০৯
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
২| ১৪ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:০২
আরজু পনি বলেছেন:
সচেতনতা বৃদ্ধি পাক ।
ভাবনা শেয়ারে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই ।
পোস্ট প্রিয়তে নিয়ে গেলাম ।।
৩| ১৪ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪৩
দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: খুব ভাল একটা বিষয় নিয়ে আপনি লিখেছেন , আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । শুভ কামনা রইল ।
৪| ১৪ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:১৫
নীল জোসনা বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ । শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই বাস্তবতা ।
৫| ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৮
তার আর পর নেই… বলেছেন: দু হাজার চৌদ্দ তে লেখা … এখনো পত্রিকায় এরকমই বিজ্ঞাপন দেখা যায়। অবস্থার পরিবর্তন হয়নি, যদি হয়েও থাকে এতই কম যে চোখে পড়ে না।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:০৪
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: চমৎকার বিষয়ে আরো চমৎকার করে লিখেছেন।
নবীজির অতি বিখ্যাত হাদীস, "মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত" - এখানে এই মাও কিন্তু একজন নারী।এই বোধটা যতক্ষণ না আসবে, ততদিন যতই স্কুল কলেজে পড়ানো হোক না কেন, যতই সভা সেমিনার করা হোক না কেন, কিছুতেই কিছু যাবে আসবে না।
এই বোধ জাগ্রত হোক। কথিত ভূয়া নারীবাদের নামে বেলল্লাপনা, ভৌগবাদ আর পূজিবাদের কু-ধারা বন্ধ হোক। নারী প্রকৃত মুক্তি ঘটুক সত্যিকার ভাবে।